নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনীতির লাভ-লোকসান ও মৌলিক অবকাঠামো

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:৪৭




রাজনীতির লাভ-লোকসান ও মৌলিক অবকাঠামো
ফকির ইলিয়াস
==============================================
সবার সামনে এখন ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচন। কী হচ্ছে, কী হতে পারে। সবার চোখ সেদিকেই। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে। এই সার্চ কমিটির প্রধান করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে। বর্তমান ইসি গঠনে গতবারও একই দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। এবারো সার্চ কমিটিতে হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক থাকছেন। এবার এই দায়িত্ব পেয়েছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। গতবারের মতোই সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ও কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) পদধারী ব্যক্তিরা থাকছেন এই কমিটিতে। তারা হলেন- পিএসসির এবারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক এবং সিএজি মাসুদ আহমেদ। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য শিরীন আখতারকে সার্চ কমিটিতে নেয়া হয়েছে।

২০১২ সালের সার্চ কমিটি ২২ জানুয়ারি গঠনের পর ৭ ফেব্রুয়ারি ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছিল। তার মধ্য থেকে ৫ জনকে ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপ্রধান। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম মিডিয়াকে জানিয়েছেন, ‘অনুসন্ধান কমিটির কার্যপদ্ধতি কমিটির সদস্যরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা দেব। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের কাছে নাম চাওয়া কিংবা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে সাবেক উচ্চপদস্থদের নাম সংগ্রহ করার বিষয়ে সহায়তা চাইলে আমরা দেব।’

এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই নিরপেক্ষ এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। অন্যথায় এ দেশের মানুষ কখনোই এই নির্বাচন কমিশনকে মেনে নেবে না। সেটা আওয়ামী লীগের বশংবদ হবে, তাদের ইচ্ছানুযায়ী হবে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘নিরপেক্ষতার চরম যে নিদর্শন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদেরকে সেটা দিয়েছেন। আমরা শুধু হতাশ হইনি, আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছি। এই সার্চ কমিটি কী ধরনের নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, তা এখনই বুঝতে পারছি।’ বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, আমরা বলতে চাই, রাজনৈতিক সংকট নিরসন যদি না করা যায়, তাহলে মানুষকে প্রতারণা করে রাজনীতি চলবে না। বোকা বানিয়ে এই ধরনের সার্চ কমিটি করে, যে সার্চ কমিটি গঠনের সঙ্গে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কোনো প্রতিফলন নেই, সেখানে এটা কোনো দিন তার কাজ করতে সক্ষম হবে না।’

বিএনপি দলীয়ভাবে বলছে, রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে খালেদা জিয়া যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছিলেন সেগুলো আমলে নিয়ে একটা নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি গঠন করতে পারলে সেটা সরকারের জন্যই ভালো হতো। কারণ নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে দেশ একধাপ এগিয়ে যেত। কিন্তু সেটি না করে রাষ্ট্রের লাভজনক পদে থাকা ৬ জন ব্যক্তিকে দিয়েই গঠন করা হয়েছে সার্চ কমিটি। এই কমিটির কাছ থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন আশা করা যায় না। সব মিলিয়ে কোন দিকে যাচ্ছে আগামী দিনের রাজনীতি? এই প্রশ্ন এখন জোরালো হচ্ছে। একটা কথা মনে রাখা দরকার, ২০১৯-এর নির্বাচনকে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি তাদের মূল টার্গেট হিসেবে দেখছে। তারা এই নির্বাচনে যে কোনোভাবে জিতে আসতে চায়। কিন্তু তাদের সেই গণভিত্তি আছে কি?

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে এখন চলছে নানামুখী দাবার চাল। কে কোন দিক থেকে ফায়দা হাসিল করে, কার স্বার্থরক্ষা করছে তা বলা খুবই কঠিন।

ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত একটি গোলটেবিল আলোচনা থেকে ‘পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী পরিবর্তন প্রতিরোধে’ সারা দেশে বৃহত্তর শিক্ষা আন্দোলনেরও ডাক দেয়া হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী’ পরিবর্তন এনে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ প্রবেশ করানো হয়েছে অভিযোগ করে সভার আলোচকরা বলছেন, হেফাজতে ইসলামের মতো ‘ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে’ তুষ্ট করতেই এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। নাট্যজন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু অভিযোগ করে বলেছেন- ‘আমাদের দেশে তিন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা- বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসা। ছোটবেলা থেকেই তাদের আমরা বিভক্তি, বিভাজন শেখাচ্ছি। এখন শেখাচ্ছি সাম্প্রদায়িকতা। এই দ্বিধাবিভক্ত প্রজন্ম কি করে ঐক্যবদ্ধ হবে?’ অভিনেতা ও নাট্য সংগঠক রামেন্দু মজুমদার বলেছেন- হেফাজতে ইসলামের মতো ধর্মীয় গোষ্ঠীর দাবি বিবেচনায় নিয়েই সরকার পাঠ্যবইয়ে এবারের পরিবর্তন এনেছে। তিনি বলেন, ‘থলের বিড়াল তো হেফাজত নিজেই বের করে ফেলেছে। প্রেস কনফারেন্স করে সরকারকে যখন ধন্যবাদ দিল, তখনই বুঝতে আর বাকি থাকল না। শিক্ষামন্ত্রী সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা না দিলে তিনি পদত্যাগ করুন।’ অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম অভিযোগ করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী শক্তি কৌশলে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখছে। তিনি প্রশ্ন করেন- ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের কথা শুনবেন? নাকি দুর্দিনে, সংগ্রামে পরীক্ষিত সৈনিক এই সাংস্কৃতিক জোটের কথা শুনবেন?’ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার তোয়াক্কা না করে শিক্ষা বিশেষজ্ঞ কিংবা গ্রন্থ সম্পাদনায় যুক্ত বিশেষজ্ঞ কারো মতামত না নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে তুষ্ট করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিফলনকারী রচনাগুলো বর্জন করা হয়েছে।’ বাংলাদেশে পাঠ্যবই নিয়ে যা হয়েছে, তা দেশবাসী কারো অজানা নয়। সোস্যাল মিডিয়াতে এ নিয়ে ঝড় উঠেছে। তারপরও সরকার এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেছেন, ‘জামায়াত তো সেদিনই ¯েøাগান দিয়েছে- ‘বাংলা হবে আফগান, আমরা হবো তালেবান’। সেদিকেই কি দেশ চলে যাবে? প্রশাসনের মধ্যে জামায়াত-বিএনপির চক্রটি টাকা দিয়ে সব কিনে নিচ্ছে। এভাবেই তো এসব হচ্ছে।’ তার কথাগুলো কিন্তু ফেলে দেয়ার নয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার চালাতে আর দেশের উন্নয়নের ফিরিস্তি দেখাতেই ব্যস্ত থাকছে। কিন্তু নেপথ্যে একটি বিশেষ মহল কি আমাদের প্রজন্ম, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে তাদের দখলে নিতে চাইছে? এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কতটা সতর্কতা অবলম্বন করছেন?

একটি পুরনো বিষয়কে আবার জিইয়ে দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে ইউনূসের বিদায়ের বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন- ‘আমাদের দেশের কোনো এক স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদক আর ড. ইউনূস মিলে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এরপরই আমেরিকার ফরেন সেক্রেটারি হিলারি ক্লিনটনসহ এদের সবার লবিংয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের টাকা দেয়াটা বন্ধ করে দেয়া হলো।’ পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উল্টো দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলো। যেখানে এক পয়সাও ছাড় হয়নি। বলা হলো- দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে!’ প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, ‘আমরা কিন্তু ড. ইউনূসকে সরাইনি। তিনি মামলায় হেরে গেছেন। মামলা করার পরামর্শদাতা ছিলেন ড. কামাল হোসেন ও তার মেয়ে। উনি মামলায় হারলেন। আইনের কারণে উনার এমডি পদ চলে গেল। এরপর উনি আমাদের ওপর ক্ষেপে গেলেন। সেই ক্ষ্যাপাটা পড়ল আমার পদ্মা সেতুর ওপর।’

আমি আমার এই লেখায় বিষয়গুলো এ জন্য বলছি, তা হলে দেখা যাচ্ছে সরকার যতই ভালো কাজ করুক না কেন- তাদের একটি শত্রুপক্ষ রয়েছে দেশে এবং বিদেশে। এরা আগেও তৎপর ছিল। এখনো আছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিষয়ে আমরা একটু পেছনে ফিরে তাকাতে পারি। ঢাকাস্থ তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা গ্রামীণ ব্যাংকের প্রসঙ্গ টেনে বলেছিলেন- ‘অধ্যাপক ইউনূস যা করেছেন সে জন্য আমি তার প্রশংসা করি।’ একই সময়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট পদে ইউনূসের নাম প্রস্তাব প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ‘আমি নিশ্চিত এই পদে মনোনয়নে তিনি সম্মত হলে সব দিক থেকে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’

আমাদের মনে আছে, এর আগে গেল ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করতে গিয়েছিল ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় হাসিনা নোবেল বিজয়ী ইউনূসকে ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্বব্যাংকের প্রধান করার প্রস্তাব দেন তাদের। আমাদের জানা আছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কোনো না কোনো আমেরিকান। শেখ হাসিনা এই প্রস্তাব করার পর অনেকে এর বিরূপ মন্তব্যও করেছিলেন। বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ড. ইউনূসকে নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে। তার ভাষায় এটা ব্যঙ্গ করেই বলা হয়েছে। কিন্তু কথা হলো এই, একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন কিছু বলেন, তখন তিনি তা দায়িত্ব নিয়েই বলেন। মির্জা ফখরুল সবখানেই নেতিবাচক মানসিকতা পোষণের মনোভাব দেখাচ্ছিলেন কেন?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে কে কখন কার মিত্র কিংবা শত্রু হয়, তা বলা কঠিন। তবে একটি কথা স্পষ্ট হওয়া দরকার, দেশের মানুষকে কারা পরিচালিত করতে চাইছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কারা রাষ্ট্রটির মৌলিক আদর্শ বিশ্বের দরবারে তুলে ধরছেন। এসব বিষয় বিবেচনায় না রাখলে একটি জাতি সামনে এগোতে পারবে না। মনে রাখতে হবে, ঘাপটি মেরে বসে থাকা শক্তি কিন্তু এখনো বসে নেই। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-গুপ্তহত্যা এগুলো কিন্তু সেই অশান্তিরই একটি অংশ। তাই সরকারকে চোখ-কান খোলা রেখেই সব হিসাব-নিকাশ করতে হবে।
---------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.