![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক পর্যায়ে মুনী শৌনক সৌতির কাছে কুরুবংশের ইতিহাস প্রথম থেকে শুনতে চেয়েছিল।আর কুরুবংশের এই গল্প শুরু হলো যযতি থেকে।যযতির আগে দেবযানীর কথা জানা আবশ্যক।দেবযানী শুক্রচার্যের মেয়ে।শুক্রচার্য নয় গ্রহের একটি।শুক্র অসুরদের গুরু আর বৃহঃস্পতি দেবতাদের গুরু।অসুর আর দেবতাদের লড়াইয়ে যেই দেবসেনারা নিহত হতো তাদের উপশম সম্ভব হতো না।কারন, তখন পর্যন্ত দেবতারা অমর ছিলেন না।তবে অসুর সেনাতে যারা নিহত হতো, তারা পুনরায় জীবিত হয়ে যেত।এদেরকে শুক্র পুনর্জীবিত করতো।কারন, তিনি সঞ্জীবিনী বিদ্যা জানতো।তবে এ বিদ্যা দেবতাদের জানা ছিল না।তখন, দেবতাগন ফন্দি এটে বৃহঃস্পতির পুত্র কচ কে বললেন, তুমি শুক্রের কাছে জ্ঞান নিয়ে আসো।
কচ ও পরিচয় গোপন করে শুক্রের কাছে উপস্থিত হলো এবং বিদ্যা অর্জন করা শুরু করলো।এরই মধ্যে দেবযানী কচকে বড় পছন্দ করতে লাগলো।সে কচের সেবা টেবা করতো।একদিন অসুররা জেনে গেল যে, কচ আসলে বৃহঃস্পতিপুত্র।তারা ফন্দি করে কচকে মেরে টুকরো টুকরো করে কুকুরকে খাইয়ে দিল।শূক্র আর দেবযানী কচকে খুব পছন্দ করতেন।তারা কচকে না দেখে বিচলিত হলেন।তখন দেবযানী পিতা শুক্রকে বললো," পিতা, কচ আমার খুব প্রিয়।যদি সমগ্র অসুর জাতীর বদও করতে হয় তবুও আপনি তাকে ফিরিয়ে আনুন।" কন্যার কথা শুনে শুক্রচার্য সঞ্জিবীনী বিদ্যা কাজে লাগালো।ওখন কচ কুকুরের শরীর ভেদ করে বেরিয়ে এলো।এমন করে অসুররা আবারও কচকে মারার চেষ্টা করলো।তৃতীয় বার অসুরেরা কচকে মেরে মদের সাথে গুলিয়ে শুক্রকে খাইয়ে দিল।তখন, শুক্র বললেন," বৎস কচ মদ পান করে অধর্ম করেছি।তাই তোমাকে সঞ্জিবীনী বিদ্যা শিখিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই।পুত্র, তুমি যদি কচরুপী ইন্দ না হও তবে বেরিয়ে আসো।তখন কচ শুক্রের দেহ ভেদ করে বেরিয়ে এলো।এতে শুক্রের কিছুই হয়নি।তখন কচ বললো, আচার্য, আমি আপনার দেহ থেকে বেরিয়েছি।আমাকে পুত্র জ্ঞান করুন।"
সঞ্জিবীনী বিদ্যা টিদ্যা নিয়ে একদিন কচ স্বর্গে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন।তখন দেবযানী তার পথে এসে দাঁড়ালো।দেবযানী কচকে বললো, " প্রিয়, আমি সর্বদা তোমার সেবা করেছি, ভবিষ্যতেও করতে চাই।তুমি আমাকে গ্রহন করো।"কচ তখন হাত জোর করে বললেন," দেবযানী, তুমি যে পিতার মেয়ে আমি তার দেহ ভেদ করে বেরিয়েছি।ধর্মমতে তুমি আমার দিদি হও।তোমাকে গ্রহন আমার পক্ষে সম্ভব নয়।" দেবযানীর নানান কথায়ও কচ তার প্রেমে সাড়া দিলো না।দেবযানী বড় অহংকারী ছিল, ক্রোধ তার মাথায় চড়ে থাকতো।সে রেগে কচকে অভিশাপ দিলো, " কচ, যে বিদ্যে তুমি ছল করে আমার পিতার কাছে আয়ত্ত করেছ তা কখোনোই ফলবে না।" অর্থাৎ সঞ্জিবীনী বিদ্যা ফলবে না।তখন কচ উত্তরে বললো," দিদি, তুমি কামনার বসে আমাকে অভিসম্পাত করলে।আমি তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি, তোমার কামনা ঋষি দ্বারা পূর্ন হবে না।তোমার বিবাহ কোনো ঋষিপুত্রের সাথে হবে না।এই বলে কচ স্বর্গে চলে গেল।দেবযানী কুমারীই রইলো।
একদিন, জঙ্গলে দেবযানী স্নান খেলা করছিল।তার সাথে ছিল অন্যান্য কন্যারা।এদের মধ্যে অসুররাজ বৃষপর্বার কন্যা শর্মিষ্ঠাও ছিল।শর্মিষ্ঠা রুপের দিক দিয়ে দেবযানীর চাইতেও সুন্দর।কন্যাদের স্নান করতে দেখে ইন্দ্রদেব একটু দুষ্টু হয়ে উঠলেন।তিনি সবার বস্ত্র উলটে পালটে দিলেন।তাই স্নান শেষে শর্মিষ্ঠা ভুলক্রমে দেবযানীর পোশাক পড়ে ফেলে।এটা দেখে দেবযানী খুব রাগে গেল।সে বললো," অসুরী, তুই দাসের মেয়ে হয়ে মুনিবকন্যার বস্ত্র পড়িস? তোকে এ সাহস দিলো কে?" তখন শর্মিষ্ঠা বললো, " আমার পিতা অসুরদের রাজা, তোর পিতা গুরু বটে তবে ভৃত্যতুল্য।" একথায় দেবযানী রেগে গেল।সে শর্মিষ্ঠা দেহ থেকে বস্ত্র টানতে আরম্ভ করলো।পথ না পেয়ে শর্মিষ্ঠা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো এক কূপে।
কূপ থেকে উঠে দেবযানী রাগন্বিত হয়ে পিতার কাছে যায়।শুক্র তাকে বলে, " কন্যা, তোমার আগের কোনো পাপ থাকলে তা মোচন হয়েছে।তুমি শান্ত হও।"
তখন দেবযানী বললো,"রাখুন আপনার পাপ!জানেন, ওই শর্মিষ্ঠা আপনাকে ভৃত্য বলেছে? আমার দিব্যি রইলো আপনি অসুরদের বিদ্যা দেবেন না।" শুক্র নিরুপায় হয়ে অসুরদের বিদ্যা দেয়া বন্ধ করলো।তখন অসুররা পড়লো বিপদে।তারা দেবযানীর হাতে পায়ে ধরলো।বৃষপর্বা বললেন," দেবযানী, তুমি যা খুশি বর চাও, কিন্তু শুক্রাচার্যকে আমাদের বিদ্যা দিতে দাও।" তখন, দেবযানী বললো," তবে শর্মিষ্ঠা সহ এক সহস্র কন্যা আমার দাসী হোক।" বৃষপর্বা তাই করলেন।শর্মিষ্ঠা তার দাসী হলো।
এবার যযতির কথা বলি। একদিন যযতি শিকার করতে বনে গেলেন।বনে তিনি দেখতে পেলেন, এক অপরুপ সুন্দরী শুয়ে আছে এবং আরেক সুন্দরী তার পদসেবা করছেন।এরা দেবযানী এবং শর্মিষ্ঠা।দেবযানী যযতিকে দেখে প্রেমে পড়ে গেলেন এবং যযতি কে বললেন, "তুমি আমার হৃদয় কেড়েছ,বীর্যবান।আমাকে বিবাহ করো।তখন যযতি বললেন, " তোমায় দেখে ঋষি বা দেবকন্যা মনে হয়,সুন্দরী।তোমার পিতা ক্ষত্রিয় কে কন্যাদান করবেন কি?
তখন দেবযানী পিতাকে গিয়ে বললো," পিতা, কচের শাপে ঋষির সাথে আমার বিয়ে হবার নয়। আপনি এই ক্ষত্রিয়ের সাথে আমার বিবাহ দিন।" শুক্র এবারও কন্যার কথা মানলেন।বিবাহের পর দেবযানী যযতির সাথে রাজধানীতে গেল, শর্মিষ্ঠাও গেল সাথে।তবে শুক্র যযতিকে বললো," সাবধান! বৎস, শর্মিষ্ঠাকে কখনো শয্যায় নিও না। সে অসুরী।"।।।।।।।।।।।(চলবে)
©somewhere in net ltd.