নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফয়জুল কবীর

আমি এক নরাধম। মানুষ হবার প্রাণপণ চেষ্টায় রত।

ফয়জুল কবীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ কথা বলবে

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১২


মার্কশীটটা হাতে পেয়ে রেদোয়ান রোমাঞ্চিত হল একটু। আনন্দে সে আত্মহারা। কারণ সে দেখল গণিতে সে A+ পেয়েছে। অথচ তার জীবনে এই গণিত নিয়ে নানা ধরণের কাহিনী রয়েছে। যখন ক্লাস নাইনে পড়ে তখন ১ম ও ২য় সাময়িক পরীক্ষায় ফেল করে। কারণ কোনদিনও সে বইয়ের অংক গুলো করত না। তার মতে মান্ধাত্মা আমলের এই অংক গুলো করে উন্নতি সম্ভব নয়। তাই ফাও অংক গুলো করে কোন লাভ নেই। ফলে যা হবার তাই হল। পর পর দুইবার ফেল। তারপরও তার কোন ভাবান্তর নেই। বাবা-মা, ভাই-বোন এত করে বোঝায় তবু কথা একটাই- এই অংক তার পক্ষে করা সম্ভব নয়।
রেদোয়ানের পিতাও স্কুলের একজন শিক্ষক। ছেলের এই অবস্থা নিয়ে সারাদিনটাই চিন্তার ভিতরে কাটাতেন। কি করে ছেলের কাঁধ থেকে এই ভূত নামাবেন তাই ভাবেন। একদিন তো তার গণিত শিক্ষকের মুখে গল্প শুনে তিনি থো মেরে গেলেন। শিক্ষক ক্লাসে ঢুকে বীজগণিতের একটি অংক করতে দিলেন। অন্যান্য ছাত্ররা অংক করে খাতা জমা দিলেও রেদোয়ান লাপাত্তা। স্যার তাকে ডেকে বললেন - তোমার খাতা কই?
রেদোয়ানের সোজা উত্তর -স্যার আমি অংক করেছি কিন্তু বইয়ের নিয়মে নয়।
শিক্ষক- তার মানে? দেখি তোমার খাতা।
খাতার হিজিবিজি লেখার কিছুই বুঝতে পারে না স্যার। ওকে জিজ্ঞাসা করে - এগুলো কি?
ওর ভাবলেশহীন মুখের সরল উত্তর- স্যার বীজগণিত কবে কে লিখে গেছে তা নিয়ে পড়ে থাকলে তো আর সামনে এগোনো যাবে না। তাই আমি চেষ্টা করছি নিজের মত করে কিছু আবিষ্কার করার!!
ক্লাসের সবাই গাল ভরা ব্যঙ্গ হাসি উপহার দিল হো হো করে। এ কথা শুনে তো রফিক সাহেব হা হয়ে গেলেন। লজ্জায় আর একটা কথাও বলতে পারেননি। মাখা নিচু করে চলে এলেন।

আরেকদিন বিজ্ঞান ক্লাসে স্যার পানির নিচের উদ্ভিদ গুলো কিভাবে শ্বাস নেয় তা বুঝাচ্ছেন। হঠাৎ স্যার লক্ষ্য করলেন রেদোয়ান অন্যমনস্ক।
স্যার বললেন- রেদোয়ান, কি ভাবছ?
রেদোয়ন- কিছু না স্যার....... না মানে, ভাবছি এটা তো একটা প্রমাণিত বিষয়। এটা নিয়ে এভাবে পড়ে না থেকে আমরা অন্য কোন বিষয় নিয়ে ভাবলে তো একটু এগিয়ে যাওয়া যায় স্যার!
কি আর বলবেন স্যার! এভাবেই দিন গুলো কেটে যেতে লাগল। বার্ষিক পরীক্ষা কোন মতে শেষ করল। ক্লাসে উঠে পরিচয় হল মিজান ভাইয়ের সাথে। প্রথম সাক্ষাতে সালাম দিয়ে বাবা-মায়ের কুশল জিজ্ঞাসা করল মিজান ভাই। মিজান ভাইয়ের কথা গুলো এত মধুর মনে হল যে সে অভিভূত হয়ে গেল। পরদিন আবার দেখা, খুব বেশী কথা হয় না। সাধারণ বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা। তবুও মোহনীয় সেই কথা গুলো এখনো স্পষ্ট মনে আছে ওর। দিন দিন যেন সম্পর্ক অন্তরঙ্গ হতে লাগল। একদিন মিজান ভাই জিজ্ঞাসা করল সে নামাজ পড়ে কিনা। রেদোয়ান তো লজ্জায় লাল হয়ে গেল। আব্বু-আম্মু অনেকবার বলেছে, কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমতা আমতা শুরু হয়ে গেল। মিজান ভাই বুঝতে পেরে কিছু না বলে অন্য কথা বলে ছেড়ে দেয়। সে দিন বাড়ি এসে শপথ করে নামাজ পড়বে। কিছুদিন পর পড়ালেখা বিষয়ে কথা হয়। একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় ওর মধ্যে। আগে যেখানে পড়তে বসার নাম গন্ধ ছিল না, এখন সেখানে নিয়মিত পড়া,খেলাধুলা, নামাজ পড়া সবকিছুই চলছে নিয়ম মাফিক। ১ম পরীক্ষায় কিছু ফলও দেখা গেল। সবাই তো হতবাক, কিভাবে সম্ভব হল এ কাজ। আব্বু-আম্মুও মনে মনে খুব খুশি হলেন। ভালই চলছিল, কিন্তু যে মিজান ভাই তার জীবন গড়ে দিচ্ছিল সে হারিয়ে গেল একদিন। মিজান ভাই ছাত্রদের নিয়ে এলাকায় মাদক বিরোধী প্রচারণা শুরু করেছিল। ফলে চোরাচালানদের খুব অসুবিধা হচ্ছিল। তাছাড়া কিছু মানুষ মাদক গ্রহণ থেকে ফিরেও এসেছে। ফলে ব্যবসায়ের আসন্ন ক্ষতি টের পেয়ে ওরা মিজান ভাইকে রাস্তায় খুন করল। রেদোয়ান দৌড়ে গেল হাসপাতালে। মিজান ভাইয়ের শেষ কথাটা ছিল-"রক্ত দেখে তোরা ভয় পাস না, আমার রক্ত অবশ্যই কথা বলবে.........."
আজ খুব মনে পড়ছে মিজান ভাইকে। যার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকের এই সফলতা, আজ যদি ভাই থাকত তাহলে নিশ্চয় রেদোয়ানকে বুকে জড়িয়ে নিত।
এ কথা ভাবতেই গোল্ডেন A+ পাওয়ার আনন্দ মুহুর্তেই তুচ্ছ মনে হল ওর। কি করবে স্থির করে দু'রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নিল। মার্কশীটটা টেবিলে রেখে বেরিয়ে পড়ল। আব্বু-আম্মু ভেবেছিল ভাল রেজাল্টের পর নিশ্চয় ও তাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কিন্তু ছেলের এমন উদাস আচরণে বিস্ময় ধরে রাখতে পারল না তারা। ছেলের পিছু পিছু এগিয়ে চলল নিঃশব্দে। রেদোয়ান গিয়ে মিজান ভাইয়ের কবরের পাশে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ দোয়া দুরূদ পড়ে চোখ বুজে হাত তুলল আকাশের দিকে। অঝোর ধারায় অশ্রু নেমে গেল। অন্যদিন হলে আব্বু-আম্মু ওকে বুকে টেনে নিয়ে স্বান্তনা দিত, আজ কিছুই বলল না। ইতিমধ্যে আরো অনেকে এসে হাত তুলেছে নিঃশব্দে। হঠাৎ রেদোয়ান কান্না চেপে রাখতে না পেরে ডুকরে কেঁদে উঠল। পিছনে সবার চোখ ভেজা। সে বলে উঠল," আল্লাহ, তুমি মিজান ভাইকে জান্নাত নসীব করো।" সবাই স্বমঃস্বরে বলে উঠল,"আমিন"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.