নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুহাম্মদ (সা) এর কার্টুন নিয়ে তুরস্কে বিতর্ক, আর মুসলিম সমাজের একমুখী প্রতিবাদ

০৩ রা জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:১৪


সম্প্রতি তুরস্কের জনপ্রিয় ব্যঙ্গাত্মক পত্রিকা LeMan-এ প্রকাশিত একটি কার্টুন ঘিরে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কার্টুনে দেখা যায়, বোমাবর্ষণে ধ্বংস হওয়া শহরের ওপর দিয়ে আকাশে দুই চরিত্রের সাক্ষাৎ। একজন বলছেন, *"Selamün aleyküm, ben Muhammed!" (বাংলা: “সালামু আলাইকুম, আমি মুহাম্মদ !”)। অন্যজন জবাব দিচ্ছেন, "Aleyhem salom, ben de Musa..." (বাংলা: “আলেহেম শালোম, আমি মূসাও…”)। দৃশ্যপটে শহরের আগুন, ধ্বংসস্তূপ, বোমা আর ধোঁয়া— অর্থাৎ এক ভয়াবহ যুদ্ধক্ষেত্রের চিত্র। আর আকাশে শান্তির অভিবাদন বিনিময়।

এই চিত্র দেখে দর্শকের প্রথম প্রতিক্রিয়াই হয়, নবী মুহাম্মদ (সা.) ও মূসা (আ.)-কে দেখানো হয়েছে। যদিও শিল্পীদের বক্তব্য, এটি নবী মুহাম্মদ (সা.) নন, বরং গাজায় নিহত এক মুসলিম যার নাম মুহাম্মদ। এমন একটি পবিত্র নাম ও ঐতিহাসিক চরিত্র, যিনি ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তি— তাঁকে নিয়ে এমন উপস্থাপনা প্রথম দর্শনেই আপত্তিকর মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আবার পালটা প্রশ্ন করা যায়: তাহলে ‘মূসা’ নামটাই বা কেন ?

তুর্কি সরকার ইতোমধ্যেই চারজন LeMan কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং আরও দুইজনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছে যারা বিদেশে অবস্থান করছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এই কার্টুনকে "ঘৃণার অপরাধ" এবং "ভয়ঙ্কর উসকানি" হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর জেরে ইস্তাম্বুলে LeMan কার্যালয়ের কাছে ৩০০ জনের সংঘর্ষে রূপ নেয় প্রতিবাদ, যেখানে একদিকে ছিল ম্যাগাজিনের সমর্থকরা এবং অন্যদিকে ক্ষুব্ধ জনতা।

এই ঘটনায় লক্ষণীয় যে মুসলিম বিশ্ব তীব্রভাবে মুহাম্মদ (সা.) নামটি ব্যবহারের প্রতিবাদ করলেও, মূসা (আ.)-কে নিয়েও যে একই রকম অবমাননা ঘটেছে সেটি নিয়ে কোনও প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যায়নি। মূসা (আ.)-ও ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিম তিন ধর্মেই সম্মানিত নবী। কিন্তু কেন মুসলিম সমাজ কেবল মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়েই ক্ষিপ্ত হল, মূসা (আ.)-কে নয় ? এই দ্বৈত মানদণ্ড একটি বড় প্রশ্ন তোলে: মুসলিমদের ধর্মীয় আবেগ কি শুধুই মুহাম্মদ (সা.) কে ঘিরেই আবদ্ধ ? মুসলিমদের প্রতিবাদ একটি নির্দিষ্ট নাম বা আবেগকেন্দ্রিক : তাত্ত্বিক বা ধর্মব্যাখ্যাগত নয়।

এদিকে চিত্রশিল্পী ডোগান পেহলেভান পুলিশের কাছে বলেন, “আমি এই চিত্রে শান্তির কথা বলতে চেয়েছি। আমি কখনোই ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ করিনি।” তিনি বলেন, “মানুষকে দেখাতে চেয়েছি, শান্তি হয়তো আসে, কিন্তু ততক্ষণে আমরা মৃত।” তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, যুদ্ধের বিপরীতে ধর্মীয় ঐক্য তুলে ধরাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু সমস্যা হলো: ঐতিহাসিক ও পবিত্র নাম ব্যবহার করে শান্তির বার্তা দেওয়া গেলে, সেটি যদি লক্ষ লক্ষ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করে, তবে তা কি আদৌ শিল্পের স্বাধীনতা হিসেবে গ্রহণযোগ্য ? এখানে নীতির সংঘাত স্পষ্ট— একদিকে বাক্-স্বাধীনতা, অন্যদিকে ধর্মীয় মর্যাদা।

কার্টুনটির গভীরে রয়েছে এক গা শিউরে ওঠা বার্তা: “তুমি মরলে তবেই শান্তি সম্ভব?” যখন ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষ চলছে, গাজা ধ্বংস হচ্ছে, মুসলমানরা মরছে, তখন এই চিত্র যেন ব্যঙ্গ করে বলছে । "ধর্মের নামেই তো তোমরা মরছো, আর উপরে নবী-মুহাম্মদ আর নবী-মূসা বসে তোমাদের ধ্বংস দেখছেন।" এখানে শান্তি নেই, বরং এক নির্মম পলিটিকাল মিরর।

এই কার্টুন যেন এক নির্মম রাজনৈতিক ব্যঙ্গ: বোমার নিচে ধর্মের নামে মানুষ মরছে, আকাশে দাঁড়িয়ে নবীরা শান্তি কামনা করছে ! বাস্তবে যারা যুদ্ধ চালাচ্ছে তারা হয়তো এই দুই ধর্মের অনুসারী, অথচ শান্তির কথা কেবল মৃত্যু এসে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। সবচেয়ে ভাবার বিষয় হলো, মুসলিমদের প্রতিবাদ একমুখী: শুধুই মুহাম্মদ (সা.) নামটি নিয়ে ক্ষোভ, অথচ একই চিত্রে থাকা মূসা (আ.)-র প্রসঙ্গে চুপচাপ। এটি কি আবেগপ্রবণ সমাজের পরিচায়ক নয়, যেখানে ধর্মের অনুভূতি পবিত্রতা নয়, বরং প্রতীকী ‘নিজস্বত্ব’ রক্ষার অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায় ?

ধর্ম, রাজনীতি, গণমাধ্যম সব মিলিয়ে আজকের সমাজে ব্যঙ্গচিত্র শুধু শিল্প নয়, এক বিপজ্জনক অস্ত্র। আমরা কাকে লক্ষ্য করছি, কীভাবে প্রতিবাদ করছি সেটিই বলে দিচ্ছে আমাদের অন্তর্গত বিভাজন। শান্তি, সহনশীলতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ সবই যেন ব্যঙ্গচিত্রের ছুরিতে খণ্ড-বিখণ্ড। আমাদের দরকার আরেকটু আত্মসমালোচনা, আরেকটু সহমর্মিতা শুধুমাত্র ক্ষোভ নয়, বরং যুক্তিবোধ দিয়ে বোঝার চেষ্টা।


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:০৯

নূর আলম হিরণ বলেছেন: আসলে এসব কার্টুন থেকে, শান্তি, অশান্তি, যুদ্ধ সবই বুঝা সম্ভব। লেখক যদি বিস্তারিত না বলে থাকেন তাহলে যে যার মত করে বুঝে নেয়।

০৪ ঠা জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:১৭

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: মুহাম্মদের নাম ব্যবহার করে ধরা যাক ২০ কোটি মানুষের নাম মুহাম্মদ। কিন্তু মূসার নাম ইউস করাও কি কাকতাল ? আমার মনে হয় না ।

২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২৫ রাত ১:৫৬

ইয়া আমিন বলেছেন: কার্টুনটি আপাতদৃষ্টিতে হয়তো একটি শান্তির প্রতীক হিসেবে আঁকা হয়েছিল, কিন্তু তাতে ব্যবহৃত নাম ও প্রসঙ্গগুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল, বিশেষ করে যখন তা মুহাম্মদ (সা.) এবং মূসা (আ.)-র মতো পবিত্র ব্যক্তিত্বদের ঘিরে। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রেক্ষাপটে তাঁদের নামের ব্যবহার নিঃসন্দেহে কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ে আঘাত করে। এখানে শিল্পীর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই—শিল্প যতই প্রতীকী হোক, তার পরিণতি ও প্রভাবকে উপেক্ষা করা যায় না।

তবে এই ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো প্রতিক্রিয়ার বৈপরীত্য—মুহাম্মদ (সা.)-কে ঘিরে মুসলিম সমাজের তীব্র ক্ষোভ, অথচ মূসা (আ.)-র প্রসঙ্গে প্রায় নীরবতা। দুজনই নবী, সম্মানিত, পবিত্র চরিত্র—তবুও এই ভিন্ন প্রতিক্রিয়া আমাদের ধর্মীয় সংবেদনশীলতার সীমাবদ্ধতাকেই তুলে ধরে। এই দ্বৈত মানদণ্ড আমাদের সমাজের আবেগ-নির্ভরতা এবং আত্মপরীক্ষার অভাবকে প্রকাশ করে।

লেখাটিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক বাস্তবতা উঠে এসেছে—ধর্মের নামে যুদ্ধ চলছে, অথচ ধর্মের প্রতীকরা ‘শান্তির’ নামেই ব্যঙ্গের শিকার হচ্ছেন। শিল্পের স্বাধীনতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেটি যদি অসংবেদনশীল হয়, তবে তা ‘শান্তির বার্তা’ নয়, বরং ব্যঙ্গের আঘাত হিসেবেই পৌঁছায় মানুষের হৃদয়ে। আবার, প্রতিবাদের নামেও আবেগের অন্ধ বিস্ফোরণ সমাজে কেবল ঘৃণা বাড়ায়, সমাধান নয়।

সবশেষে, আমাদের প্রশ্ন করা উচিত—আমরা কিসের জন্য লড়ছি, কিসের নামে মরছি, আর কাদের শত্রু করে তুলছি? ধর্মীয় অনুভূতি হোক সম্মানজনক, কিন্তু তার প্রতিক্রিয়াও যেন হয় সংযত, যুক্তিবান এবং আত্মসচেতন।

৩| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২৫ রাত ২:০৭

ওমর খাইয়াম বলেছেন:



কামাল পাশার দেশে এখন মোল্লারা ক্ষমতায়; এদের মাথায় মগজ নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.