![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফালতু কথা।
..............
কয়েকদিন যাবত ছোটবেলার খেলার সাথীদের খুব মনে পড়ছে। লিটুল, বকুল, শওকত, মুরাদ, আসাদ এরাসহ আরো অনেকেই ছিলো আমার খেলার সাথী। একটা বিষয় অবশ্য খেয়াল করেছি অামি, যখন নিজের মন খারাপ থাকে, শরীর খারাপ থাকে অথবা একটু অবসর সময় পাই তখনই ছোটবেলার ঐ বন্ধুরা এসে ভিড় করে আমার সামনে। আমার বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে প্রায় সকলেই ছিলো ডান পিটে। একমাত্র নরম-ধরম, হাবা-গোবা,টাইপের আমেরসাধু ছিলাম আমি্। এতো ভীতু টাইপের ছিলাম আমি যে, কোন দিন কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ,মারামারিতে জড়াইনি। এমনকি কখনো কখনো আমাদের সাথে অন্য পাড়ার ছেলেদের মারামারি বেধে গেলে, বিসমিল্লাহ বলে সকলের আগে দৌড়ে পালিয়ে প্রথম হতাম। যদিও স্কুলের কোন দৌড় প্রতিযোগিতায় কোনদিন নামই লেখাইনি্, কেউ ল্যং মেরে পা ভেঙ্গে দেবে এই ভয়ে। তাই বলে প্রতিযোগিতায় নাম লেখাইনি তা নয়, কোরআন তেলাওয়াত, গান, গজল ইত্যাদিতে নাম লিখিয়ে রিতিমত পুরস্কার নিযে তবেই ঘরে ফিরেছি। হাত-পা ভাঙ্গার ভয় নেই বলে এ সকল প্রতিযোগিতায় নাম লিখাতাম। ফুটবল, হাডুডু, গোল্লাসুট,দাড়িয়াবান্দা,ইত্যাদি খেলায়ও আমি অংশ গ্রহন করতাম,তবে সেটা রেফারী অথবা দর্শক হিসাবে। পলানটুক, আর বুদ্ধিমন্তর খেলাই আমি বেশি অংশ নিতাম। রাস্তার পাশের বিভিন্ন খাদ সেচে মাছ ধরতাম আমরা্। এ জন্য খড় দিয়ে কুড়েঘর বানিয়ে রাতে সেখানেই থাকতে হতো। আমাদের সাথে রফিককে প্রায়ই ভুতে ধরতো। এ জন্য আমি ওর থেকে দুরে থাকতাম। এমন কোন রাত ছিলো না যে ওকে ভুতে না ধরতো। একবার কুড়ে ঘরে থাকা অবস্থায় রাতের বেলা একটি শিয়াল এসে ওর গাল চেটে দিয়ে গিয়েছিলো। সেই রাতে ও অনেক ভয় পেয়ে পাগোল হয়ে গিয়েছিলো। তিন চার দিন ওর পাগলামী ছিলো্। মোল্লানী ভিটা, বুড়ির ভিটা, রসুলপুরের বাগের থেকে আম, ডাব, চুরি করতাম আমরা্। মুরগী চুরিতেও অংশ নিতে হয়েছিলো বেশ কয়েকবার। অবশ্য গাছে ওঠা বা মুরগীর খোপে হাত দেয়ার মত কাজ আমাকে করতে হতো না। কেউ এসে পড়ে কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব পড়তো আমার উপর। একবার লুৎফার শেখের মুরগী চুরি করে পিকনিক করেছিলাম। পরের দিন সকালে লিটুলের হাতে হলুদের দাগ খাকায় ধরা খেয়ে গিয়েছিলাম। জরিমানা দিয়ে সে যাত্রা রক্ষা হয়েছিলো। অকর্মান্য হওয়া সত্বেও ওরা আমাকে ওদের সাথে রাখতো। একসাথে অামরা যেমন দল বেধে বেড়াতোম তেমনি দলবেধে জঙ্গলের মধ্যে গল্প করতাম আর পায়খানা করতাম। চুরি, চুট্টামী আর দশ্যিপনার কারনে যারা অামাদের ঠেঙাতে আসতো অথবা বাড়িতে নালিশ দিতো তাদের বাগানেই এই কাজ বেশি করতাম।অবশ্য সে সময় গ্রামের কারো বাড়িতেই স্যনেটারী পায়খানা ছিলো না। সবাই জঙ্গলে গিয়ে এ কাজ সারতো। একটা বিষয় মনে পড়লে আজো হাসি পায়। গোলাপীর বাগানের আম চুরি করায় সে বাড়িতে নালিশ করেছিলো। বাড়িতে ভিষন বকুনি খেযে রাতে গিয়ে তার বাড়ির উঠোনে সবাই মিলে পায়খানা করে এসেছিলাম। পরদিন সকালে গোলাপীর সে কি কান্না! গালি-গালাজ, আর বদ্দোয়া যা পেরেছিলো সে সব করেছিলো। যারা এ কাজ করেছে তাদের যেন, কলেরা হয়, ডায়রিয়া হয়, আজ রাতেই যেন মরে ইত্যাদি ইত্যাদি। ডায়রিয়া, কলেরা কিছুই না হলেও ঐ রাতে আমার ভীষন আমাশয় হয়েছিলো। ভয়ে আমার সে কি অবস্থা। পরদিন সকালে ওয়াসিম ডাক্তার আসলেন আমাদের বাড়িতে। তার নিকট বল্রাম গোলাপী আমাকে বদ্দোয়া করেছে। আমি বোধ হয় মরেই যাবো আজকে। ওযাসিম ডাক্তার বললেন গোলাপীর বদ্দোয়ায় নয় বরং খোলা যায়গায় পায়খানা করলে, তার উপর মশা-মাছি পড়ে সেই মশা-মাছি থেকে কলেরা, অামাশয়র মতো রোগ ছড়ায়। পায়খানা থকে এসে সাবান অথবা ছাই দিয়ে হাত ভাল করে পরিস্কার করে নিতে হয়। সেদিন তওবা করেছিলাম জীবনে আর কারো বাড়ী তো দুরের কথা কোন দিন খোলা যায়গায টয়লেট করবো না। যে কথা সেই কাজ। আজ পর্যন্ত এ তওবা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলছি। কিন্তু সেদিন হঠাৎ সেঝ কাকা অসুস্থতার খবরে রাজশাহী যেতে হলো। ঢাকা থেকে ট্রেনে যাবার সময় ট্রেনের মধ্যে কিছু টয়লেট দেখলাম। যেখানে বসলে রিজার্ভ ট্যাঙ্কি না থাকার কারনে সব মল ট্রেন লাইনের উপরেই পড়ে। দেশে যতোগুলো লঞ্চ, ফেরীতে টয়লেট আছে সব গুলোর মল পানিতে গিয়ে পড়ছে। দুষিত হচ্ছে পানি। ছড়া্চেছ রোগ জীবানু। সরকার বই পুস্তক, রেডিও টেলিভিশনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করেছে ঠিকই কিন্তু নিজে অচেতন হয়ে পড়ে আছে। তা না হলে প্লেনের মতো এসকল সেক্টরেও যথোপযুক্ত ব্যাবস্থা গ্রহন করছেনা কেন?
©somewhere in net ltd.