নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Follow Us\ninstagram.com/fatih.solaiman\nMy Page\nfacebook.com/Fatihsolaimanofficial

FATIH SOLAIMAN

instagram.com/fatih.solaiman facebook.com/Fatihsolaimanofficial

FATIH SOLAIMAN › বিস্তারিত পোস্টঃ

বালিকা বধু।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২২




ইহা উপন্যাস নহে। দীর্ঘ আখ্যান মাত্র। প্রকাশিত হইয়াছিল ‘দেশ’ পত্রিকায়। কিঞ্চিৎ পরিবর্ধন করিয়া গ্রন্থাকারে আত্মপ্রকাশ ১৯৬৫ খ্রীষ্টাব্দে। উপসংহার পর্ব ব্যাতিরেকে ইহার হাস্যরসাত্মক উপযোগিতার পূর্ব ইতিহাস জানানো কর্তব্য মনে ধরি।

বহুকাল পূর্বে এক লেখক শ্রী বিমল কর মহাশয় ‘দেশ’ পত্রিকার জন্যই একটি কৌতুকাশ্রয়ী গদ্য লিখিয়াছিলেন। তাহা পাঠ করিয়া শ্রী শিবরাম চক্রবর্তী মান্যবরেষু প্রভূত আনন্দ লাভ করেন। শুধু তাহাই নয়, তিনি রচয়িতাকে একেবারে বৃক্ষে তুলিয়া দিয়াছিলেন। শিবরামবাবুর প্রশস্তি সর্বসময় বিশ্বাসযোগ্য মনে করিতেন না বিমলবাবু। তাই একসময় তাঁহার মনে হইল, বৃক্ষের যে শাখায় তিনি অবস্থান করিতেছেন তাহা যেন দোদুল্যমান। তবু একবার তাঁহার মনে সাধ জাগিল সরস গল্প তাঁহার হাতে আসে কীনা তাহা পরখ করিয়া দেখিবার।

একটি চটি রেখা বিধৃত খাতায় পেন্সিলে তিনি মকশ করিতে শুরু করিলেন। প্রাচীনতার মাধুর্য হাস্যরসে সিঞ্চিত রাখিতে তিনি বাংলা গদ্যের চলিত রূপ বর্জন করিয়া সাধুরূপ গ্রহণ করিলেন। বেশ খানিক লিখিবার পরে ভাবিলেন, পত্রিকা সম্পাদক শ্রীযুক্ত বাবু সাগরময় ঘোষ মহাশয়কে একবার দেখাইয়া লইবেন। কিন্তু লেখকের পরিচয় গোপন রাখিলেন। এমনও ভাবিলেন যে সত্যই যদি তাহা প্রকাশিত হয় তাহা হইলে তিনি ছদ্মনাম ব্যবহার করিবেন।

সাগরবাবুর তখন স্বতন্ত্র নিজস্ব দফতর। বিমলবাবু সে কক্ষে পদার্পন করিয়া সসঙ্কোচে কহিলেন,
‘‘একটা লেখা সাগরদা। একটু পড়িয়া দেখিবেন?’’
‘‘কাহার লেখা? আপনার?’’
‘‘না, মানে হাতে আসিয়াছে। দেখুন না একটু পড়িয়া।’’
এক প্রহর কাটিতেই সম্পাদকের কক্ষে লেখকের ডাক পড়িল।
‘‘সত্য করিয়া বলুন ইহা কাহার রচনা?’’
সাগরবাবুর অক্ষি যুগলে হাস্য ঝলক। লেখক বুঝিলেন নিজেকে লুক্কায়িত রাখা যাইল না। তিনি হস্তরেখা চিনিয়া ফেলিয়াছেন। তাই লজ্জবনত হইয়া জানাইলেন, স্বনাম ইহা প্রকাশিত হউক ইহা চান না।
‘‘ছদ্মনাম কেন?’’ সাগর বাবু জানিতে চাহিলেন।
লেখকের জবাব, ‘‘আমায় গাল খাইতে হবে...,’’
‘‘আমি বলিতেছি হইবে না। আপনার স্বনামেই ইহা প্রকাশিত হইবে।’’

হইয়াছিল তাহাই। দুই সংখ্যায় প্রকাশিত হইল ‘বালিকা বধূ’। গল্পের নামকরণ হইল জনৈক চৈতন্যর ইচ্ছায়। উহাদের দেশে বাল্যবিাহ বহুল প্রচলিত ছিল। লেখক স্বয়ং জানাইয়াছেন, এই কাহিনী সর্বজনপ্রিয় হয় নাই। বরং আশাহত ভক্তকুল অভিযোগ তুলিলেন, এ হেন বায়ু সদৃশ রচনা তাহার হাতে মানায় নাই।
লেখক যাহাই বলুন, বঙ্গসাহিত্যের সংখ্যাগুরু রসপিপাসুই ‘বালিকা বধূ’তে নিমজ্জিত হইলেন। ঝোপ বুঝিয়া তাহার চলচ্চিত্রায়নের হিড়িক উঠিল। এবং অন্য এক অনুজ সাহিত্যসেবীর মনে হইল, চলচ্চিত্রের সৌজন্যেই জনমানস যারপরনাই আন্দোলিত হইয়া বিমল কর মহাশয়কে সাদরে তাহাদের হৃদয় মধ্যে আসন দিলেন।

বিগত শতাব্দীর আশির দশকের স্মৃতি স্মরণ করিতে বসিয়া ও পার বাংলার এক যুবক জানাইলেন, ‘বালিকা বধু’ চলচ্চিত্র দেখিয়া তাঁহার কেমন উন্মাদপ্রায় অবস্থা হইয়াছিল। দুই বালক-বালিকার পারস্পরিক নৈকট্যলাভের আকাঙ্ক্ষা উল্লিখিত দর্শককেও ব্যাকুল করিয়া তুলিল। অচিরে আখ্যান গ্রন্থ ক্রয় করিয়া তিনি আত্মস্থ করিলেন এবং তাঁহার মনের গভীর গহ্বরে ভালবাসার ঘোর লাগিল। সেই ঘোরাচ্ছন্ন কালের যুবক-যুবতী বাল্যবিবাহের ‘কু’ কথায় কানে আঙুল দিল। শুনিল না যে বিশ্বের পঁচিশ শতাংশের অধিক বাল্যবিবাহের প্রকোপে অবস্থিত একান্নটি দেশের কেবলমাত্র ১১টি দেশ ইহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবার উদ্যোগ লইয়াছে। শুনিল না, ঋতুস্রাবের পূর্বেই নেপালের এক বালিকার বিবাহ হইয়াছে। পঞ্চদশ বর্ষে পদার্পনে সে মেয়ে তিনি কন্যার মাতা। ‘আইনি আকবরি’তে বাল্যবিবাহের পুঙ্খানুখ বর্নায় তাহার উৎসাহ নাই। স্ক্র্যাফটন সাহেবের আঁকা সন্তানসহ দ্বাদশবর্ষীয়া কন্যের প্রতি ভ্রক্ষেপ করে না। বিবাহিত শিশুকন্যায় গ্রোথিত লিঙ্গ নির্যাতন যেন তাহার সিলেবাস নহে। কবীন্দ্র রবি ঠাকুরের বাল্যবিবাহিতা কন্যাদের বারমাস্যা, বিদ্যাসগর মহাশয়ের যুগান্তক পদচারণের শব্দ তাহাদের বিন্দুমাত্র টানিল না।

সে কর্ণে তুলট গুঁজিল। তাহার সম্মুখে সত্য কেবল রজনীর চাঁদমুখ। মাতা ঠাকুরানির নানাবিধ অলঙ্কারের দঙ্গলে আত্মগোপন করিয়া থাকা মিনার কাজে ভরা প্রজাপতির ন্যায়। শাড়িতে, জামায়, গহনায় তাহার সর্বাঙ্গ ঢাকা। নানা রঙ-উজ্জ্বলতাও তাহার ক্ষুদ্র অবয়ব ঢাকিয়া দিয়াছে। মুখমণ্ডল লম্বা, চিকণগড়ন। বরফিকাটা চিবুক। বাঁশির মত নাক। কপাল ছোট। পাতাকাটা খোঁপার জন্য কপালের অনেকখানি এবং কান ঢাকা পড়িয়াছে। কাজললতা টানা চোখের তলায় চঞ্চল কৌতুকভরা মণি। বাঙালি মাত্রেরই রজনীকে চোখে ধরিল। রঙটি সামান্য চাপা না হইলে বুঝি আরও ভাল লাগিত।

সে কালের যৌবন তখন আক্ষরিক মোহাচ্ছন্ন। তাহাকে ইথিওপিয়ার গল্প শুনাইয়া লাভ কী? যদি বলি ওহে প্রজাপতিবৃন্দ, তোমরা খানিক মাসাবার কাহিনীও শোনো। যে দেশের মেয়ে সে, তথায় কন্যার পিতাই যৌতুক পায়। এগারো বছরের মাসাবার পিতা পাইয়াছে বারো খানি গোমাতা। কিন্তু বাবলার জঙ্গলের লুকোচুরি ছাড়িয়া মাসাবা কিছুতেই স্বামীগগৃহে যাইবে না। আবার গোসম্পদে বলীয়ান পিতাও তো শুনিবে না। মাসাবা কাঁদিতেছে। পিতার চোখ লালসায় উজ্জ্বল। সে বধির।
বধির যেন ‘বালিকা বধু’-র সেই কালও। ‘মাসাবার দুঃখ’ নয়, তাহারা শুধু শরতের ন্যায় ফুলশয্যার সংলাপ শুনিতেছে কান পাতিয়া।
দামাল বাতাসের শব্দে সচকিত রজনী বলিতেছে, ‘‘কি শব্দ?’’
‘‘গাছের।’’
‘‘কি গাছ?’’
‘‘আম।’’
‘‘কাঁচামিঠে?’’
‘‘কাঁচায় কাঁচা, পেকে গেলেই পাকা।’’
অপ্রসন্ন রজনী মুখে সন্দেহের ভাব ফুটাইয়া বলিতেছে, ‘‘তোমায় বলেছে...।’’

গ্রন্থকে অমরত্ব দিতে প্রচ্ছদশিল্পী সুবোধ দাশগুপ্ত আঁকিয়াছিলেন বালিকাবধূর শোভিত মুখমণ্ডল। পারিপার্শ্বিকে আল্পনার ঘনঘটা। কিন্তু সে যে বহুকালের কথা। আশির দশকে এসে প্রাচীন-অবার্চীন প্রচ্ছদ নিক্ষিপ্ত হল আস্তাকুঁড়েতে। চিরতরে। নতুন শিল্পী আপন কল্পনায় রজনীর শ্রী মুখ আঁকিবার ঝুঁকি লইলেন না। সে জায়গায় বসিল ‘লাইভ শো’, যাহা কীনা হিন্দি ভাষায় নির্মিত ‘বালিকা বধূ’বেশী চরিত্রাভিনেত্রীর স্থিরচিত্র। হয়তো চলচ্চিত্রের আভাস না থাকলে গ্রন্থ বিকোবে না ভাবিয়া। আজ যেন সত্যই অন্য এক সময়ের মোড়ে আমরা দাঁড়াইয়াছি। এবং অনেকাংশে বিস্মৃত বিমল করের সেই অনুজ লেখকবন্ধু দেখিতেছেন, গ্রন্থাগারের তাকগুলোতে শুধুই ধূলা জমিতেছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩

JM Miso Jannat বলেছেন: বলেছেন: আসলেই ভাইয়া আপনার লিখাগুলি খুবি চমৎকার!
যতই পরছি ততই শুধু মুগ্ধহচ্ছি।
আপনি যেহেতু এই ব্লগে নতুন তাই বলছি আপনার লিখার মান খুবি ভাল,প্রতিনিয়ত লিখেযান সারা পাবেন।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৪

FATIH SOLAIMAN বলেছেন: ধন্যবাদ।
আমাকে উৎসাহিত করার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.