নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রবাসে এসে বিভিন্ন জাতি-সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয়েছি৷ যেদিকে তাকাই দেখি যেন যে যার পতাকা মাথায় বেঁধে দেশের সুনাম অক্ষুন্ন-সমোন্নত রেখে কাজ করছে
বাংলাদেশীরা পরিশ্রমি জাতি হিসাবে ভালোই সুনাম অর্জন করেছে৷ বিশেষ করে পুরো সৌদি পরিচ্ছন্ন রাখা, ভবন নির্মান কার্য, নিত্যপন্য উৎপাদন, কৃষি ক্ষেত্রের সিংহভাগ বাংলাদেশিদের দখলে৷
এর পরেও কেন জানি বাংলাদেশী নাগরিকদের মান সৌদিদের কাছে অম্লান৷ ওদের একটা কথা বিষের মতো কানে বাজে, "বাঙালী মুখমাফি (জ্ঞানহীন)"৷ কারন খুঁজতে গিয়ে বুঝতে পারি প্রবাস করি অধিকাংশ ভাই তেমন পড়াশোনা নাই৷ আক্ষরিক অর্থেই অনেক ক্ষেত্রে কান্ডজ্ঞানহীন কাজ করে অনেক প্রবাসি ভাই৷
তাই যখনই সুযোগ পাই সৌদিদের কাছে সম্মানের সাথে তুলে ধরি লাল-সবুজের পতাকাটা৷ তেমনি একটা সুযোগ পেয়েছিলাম গতকাল৷
আমাদের প্রতিষ্ঠানের এক সৌদি কর্মী চাকরী ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে গেছে৷ সৌদির নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের পূর্বতন প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়৷ করোনার কারনে দাম্মাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পূর্ব অনুমতিপত্র ছাড়া কাওকে বন্দরের ভেতর ঢুকতে দিচ্ছেনা আবার আমাদের অফিস কর্মকর্তারা কিছু করোনা আক্রান্ত হয়ে বাসায়-হাসপাতালে৷
এমতাবস্থায়, ছাড়পত্র নেবার কোন সমাধান পাচ্ছেনা৷ এইচআর/ফাইন্যান্স অফিসে ফোন দিতে দিতে ক্লান্ত-শ্রান্ত৷ বাধ্য হয়ে সৌদি লেবার অফিসে আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিরোদ্ধে অভিযোগ দিল৷ দিনক্ষন ঠিক করে লেবার আদালতে হাজিরা দিল আমাদের এইচআর ম্যানেজার৷ দুই পক্ষের কথা শুনে আদালত রায় দিল যে করেই হোক এক সপ্তাহের মধ্যো ওর পাওনা+ছাড়পত্র দিতে৷
ফাইন্যান্স-এইচআর ইমেইল চালাচালি করে এই দায়িত্ব দিল আমাকে৷ উল্লেখ্য দায়িত্ব দেবার আগ পর্যন্ত আমি কিছুই জানতামনা৷
আমি এক তুড়িতে কাজ শেষ করার চেষ্টা করলাম৷ ফোন দিলাম ঐ সৌদি কর্মীকে৷ প্রথমেই আন্তরিক ক্ষমা চাইলাম ওর ভোগান্তি ও বিলম্ব হবার জন্য৷ বললাম তুই কখন আসতে পারবি বল৷ বলল, কাল বিকেল ৩টায়৷ ঠিক আছে বলে আমি জিএম অফিসে ফোন করে ওদের ড্রাইভার সহ গাড়ী সহযোগীতা ঠিক করলাম, ওর কি কি কাগজ সাক্ষর/আঙুলর ছাপ দিতে হবে তা একটা ফাইল করলাম৷
পরেরদিন দুপুর ১টায় ফোন দিয়ে বলে অফিসের কাজে আটকে গেছে আজ আসতে পারবেনা৷ বললাম কোন সমস্যা নাই৷ তোর অফিস কখন শেষ হবে? বলল, ৫টার পরে৷ জিজ্ঞেস করলাম অফিসের বাহিরে দাম্মাম শহরের কোথাও এসে রাতে নিতে পারবে কিনা৷ আমার প্রস্থাব শুনেই রিতিমত অবাক হলো মনে হইলো৷ উচ্ছাসিত কন্ঠে বলল, হ্যাঁ আসতে পারবো৷
এশার আযানের কিছু আগে ফোন দিল আমাকে৷ প্রয়োজনীয় সব নিয়ে বের হয়ে ওকে খুঁজছি, ও আমাকে খুঁজছে৷ যে লোকেশান দিয়েছি এর আশেপাশে দুইজন কিন্তু কি কারনে কেউ কাউকে দিখছি না৷ চার-পাঁচ মিনিট খুঁজে বললাম এভাবে হবেনা, তুই এক কাজ কর রিয়াদ ব্যাংকের মেইন দরজার কাছে যা আমিও আসছি৷
এরই মধ্যো আমি গরমে ঘেমে একাকার৷ অবশেষে পেলাম তাকে৷ সালাম-কুশল বিনিময় করে এক এক করে সবগুলো কাগজ সাক্ষর-অঙুলের ছাপ নিয়ে বিদায় নিব এমন সময় ও পকেটে হাত দিয়ে কিছু টাকা বের করে আমাকে দিচ্ছে আর বলছে, দয়া করে এটা নে-এটা আমার পক্ষ থেকে হাদিয়া৷
দেখ তোর উপকার হয়েছে বলে তুই খুব খুশি হইছছ বুঝতে পারছি কিন্তু এই টাকা আমি নিতে পারবোনা৷ ও আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করলো যে কাজ গত ১৫-২০ দিন ধরে করতে পারছেনা, কেউ তাকে সহায়তা করছেনা, বাধ্য হয়ে লেবার অফিসে গেছে সেই কাজ একদিনেই সমাধান সাথে আমার এমন ব্যাবহার৷ খুব খুশি হয়েই দিচ্ছে বলে আবার জোড় করছে৷
বিনিত ভাবে বললাম, ভাই তোর এই টাকা আমি নিব না৷ তুই যদি সত্যিই কিছু দিতে চাস তবে আমার জন্য দোয়া করিস৷
তার চোখে-মুখে খুশি আর আবেগ উপচে পরছিল৷ এবার যা বলল তাতে আবেগে আমার চোখই ছলছল করছিল৷ উচ্ছাস-আবেগ মেশানো কন্ঠে বলল, "আল্লাহ কসম করে বলছি বাঙালি অনেক ভালো"
"লাখ শহীদের রক্তে কেনা লাল-সবুজের পতাকা তোমায় ভালোবাসি"
২২ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৫৮
ফুয়াদের বাপ বলেছেন: ইনশাআল্লাহ, চেষ্টা থাকবে ভালো ও গঠনমূলক মৌলিক লেখার মাধ্যেমে প্রথম পাতায় স্থান পেতে...
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি নিয়মিত লিখতে থাকুন।
খুব শ্রীঘই আপনার লেখা প্রথম পাতায় আসবে।