নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের নিগূঢ় সত্যটি হচ্ছে, কখনো এমন কোনো আবেগকে প্রশ্রয় না দেয়া যা অশোভন।

মোস্তফা অভি

আমি ফেরী করি, আমি ফেরীওয়ালা।

মোস্তফা অভি › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীল নীলিমা

১৬ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৫৯

নীল নীলিমা
নীল কাদিঁতেছে। সে মন ভার করিয়া অস্ফুটস্বরে কাদিঁতেছে।
গভীর নিস্তব্ধ রাত, বাহিরে জোৎসনার ফিনিক ফুটিয়াছে। এই স্বপ্নময় আবেষ্টনীর মধ্যে দুগ্ধফেনিল রঙয়ের চাদরের শয্যায় সে উবু হইয়া কাদিঁতেছে। একাঁ!-সাধারণত ঘরে আর কেহ নাই। জানালার ফাঁক দিয়া এক ফালি চাদেঁর আলো তাহার মুখের উপর আসিয়া পড়িয়াছে। সেই জোৎসনার আলো আজ এই ব্যাথাতুর অশ্রুমুখী যুবতীকে উতলা করিয়াছে। কি হইতে পারে এই ক্রন্দনের হেতু? প্রেম!- হইতেই পারে। এই জোৎছনা পুলকিত যামিনীতে সুন্দরী রমনীর নয়ন পল্লবে অশ্রুজলের আর কোন কারণ থাকিতে পারেনা। নীলের জীবনে একবার স্বর্গ প্রেম আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিল। তখনো তাহার বিবাহ হয় নাই। প্রতিবেশি এক যুবা পুরুষ তার প্রতি মায়ার দৃষ্টি দান করিয়াছিল। বয়সে সে তাহার চেয়ে কিছুটা বড়। তবে কি এক অনুভুতি যে তাহার হইয়াছিল তাহা সে জানেনা। যুবকটিকে সে মনে মনে শ্রদ্ধা করিত। অতীব সঙ্গোপনে আর নীরবে। এই শ্রদ্ধাই যে তাহার প্রতি কতটা মায়ার জন্মদিয়েছিল তাহা বিশদভাবে আর কি বলিব। যুবকের যাত্রাপথের সময় তাহার জানা ছিল। তাহার দৃষ্টির সীমানায় পড়িবার জন্য নীল সাজঁগোজ করিয়া কপালে একটি রক্তাভার মতো লাল টিঁপ পরিয়া যাবার পথে কোন এক ছল করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিত। হাটিঁয়া যাওয়ার সময়ে যুবক তাহার নেত্রে নীল কে বারংবার অবলোকন করিয়া বড় বড় দুটি চোখের মায়া তাহার মাঝে ছড়াইয়া দিয়া যাইত। নীলের ইহা খুব ভাল লাগিত। একদিন নীলকে ডাকিয়া বড় কাঁপিয়া কাঁপিয়া মনের কথাটি বলিয়া দিয়াছিল যুবক। তাহার মনে নাকি নীলের মুখখানি ছাড়া আর কাহারো মুখ ভারী সুন্দর মনে হয়না। নীল তাহার হৃদয়ের গোপন ভীরু বার্তাটি শুনিয়া মনে একটা আকাঙ্খা করিয়াছিল। তাহার নয়নেও ওই যুবকটির ন্যায় ভারী সুন্দর মুখ আর দ্বিতীয়টি কাহারো আছে বলিয়া মনে হইত না।
তরু পল্লবের ন্যায় কচিঁ সবুজ মনটি শপেঁ দিয়েছিল নীল। যুবক তাহাকে একদা ডাকিয়া নিরবে নির্জনে নিয়া লোমশ বুকের মাঝে জড়াইয়া, বিথীকার মত চুলের সিথিঁর উপর চুম্বন আকিঁয়া বলিয়াছিল। আমি তোরে নজরবন্দী করিয়া, বুকের খাচাঁয় বদ্ধ করিয়া সারা জীবনের জন্য আমার করিয়া লইমু। কিন্তু অবশেষে বিবাহ তাহাদের আর হয়নাই।
একদিন পাড়ার দাদা নীলের বাড়িতে আসিয়া কোমরের বন্ধনি হইতে একখানা কি যেন বাহির করিয়া কহিল,- তোমাদের ঘরে যে ফুলটি সুবাস বিলাইতেছে তাহা আর তোমাদের ঘরে থাকিবেনা। কাল হইতে সে আমার বগানে বিচরণ করিবে, আমাকে সকাল বিকাল গান গাহিয়া শুনাইবে, আর সারা জীবনের জন্য আমার ভাত রাধিঁয়া বাড়িয়া কাটাইয়া দিবে। যদি ইহার অন্যথা হয় তাহা হইলে যদু মধু-দের দিয়া ঘরদোর জ্বালাইয়া সবাইকে অপমান করিয়া এলাকা হইতে বাহির করিয়া দিবে। দাদার সাথে আর পারা গেল না। সেই হইতে নীল নেশায় বুদ হওয়া অর্ধউন্মাদ মানুষটার ঘর করিতেছে। সব কিছু রহিয়া সহিয়া সে কাটাইয়াছে। এভাবে অনেকটা বছর সে অতিবাহিত করিয়া আসিয়াছে।
আজ সন্ধ্যার পর থালার মত একখানা চাঁদ উঠিয়াছে। সম্মুখের বাগানে রজনীগন্ধাগুলি স্বপ্নবিহ্বল হইয়াছে। চারদিকে জোৎছনার আলো ছড়াইয়া পড়িয়াছে। মনে হয় আজ অনেক বছর পর মনের কবাট খুলিয়া গিয়াছে। পুরোনো দিনের কথা তাহার মনে চিরল ব্যাথা হইয়া জাগিয়াছে।। সেই পুরোনো ভালবাসার মানুষটির কথা স্বপ্নময় স্মৃতির মতোন দোলায় দুলিতেছে। হঠাৎ বুকের নিচে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করিয়াছে। বুকের ভেতরকার ঢেউগুলি জাগিয়া উঠিয়াছে। ফোঁফাইয়া ঢেউ তুলিয়া কান্না আসিয়াছে।জোৎছনার আলোকটি তাহার এমন আচরণ দেখিয়া মুখ টিপিয়া হাসিতেছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.