নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“ছোট ছোট মুখ জানে না ধরার দুখ, হেসে আসে তোমাদের দ্বারে। নবীণ নয়ন তুলি কৌতুকেতে দুলি দুলি চেয়ে চেয়ে দেখে চারিধারে\"_____ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গফুর রায়হান

গফুর রায়হান › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে ভাবনার কোন শেষ নেই

১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:০৪

সমুদ্রের অতল থেকে একলাফে এভারেস্ট চূড়োয়। মেঘ ফুড়ে আকাশ ডিঙ্গানো। নক্ষত্রমেলায় গোল্লা ছুট।
স্পেস শিপ। ছায়াপথে ঘুরোঘুরি। লক্ষ- কোটি সৌরজগত। তন্ন তন্ন করে পানির সন্ধান। প্রান সমৃদ্ধ নতুন পৃথিবী...

এই গামলা! এখনও ঘুমোচ্ছিস! রুমমেট এর কনুইর ধাক্কায় চোখ মেলে নীল। হাই তুলতে গিয়ে থমকে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে দৃষ্টি ডান বাম করে। চারপাশটা দেখে নেয়। না, সে মত্তেই আছে। তীব্র পানির তৃষ্ণায় কথা বলতে পারছে না। উঠে পানি খেলো, তারপর সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।

কিছুদিন যাবত উদ্ভট স্বপ্নগুলো কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে নীলকে। অবিরাম ছুটে চলা স্বপ্নের শহরে হাজারো ভীড়ের মাঝে সে একা ছোটে। সে এক উদ্দেশ্যবিহীন ছুটে চলা। কখনো পৃথিবীর বাইরে, কখনো হাজার মাইল গভীর সমুদ্রে, কখনো নির্জন ভয়াল এমাজনে। নাহ, সাইকিস্ট্রিক দেখাতে হবে, এভাবে চলতে পারেনা।

স্বপ্নের সেই ভয়াবহতা বাস্তবেও হয়তো আমাকে খেয়ে ফেলবে, নীল ভাবছে। এতক্ষন সিগারেটে একটি ফুকও দেয়া হয়নি। তার কল্পনায় অনেকগুলো মুহুর্ত ইতোমধ্যে অতীত হয়ে গেছে।

না খেয়েই বেরিয়ে পড়লো নীল। মেস জীবনে না খেয়ে থাকাটা আহামরি কোন ঘটনা না। ঘড়িতে তখন এগারোটা সাত। রাস্তায় মগজ তাতানো রোদ। আলুসেদ্ধ গরম। যেনো চামড়া ফুড়ে মাংস ভেদ করবে। সে কেয়ার করে না। ফুটপাত ধরেই হাটতে থাকে।

রাস্তায় যানজট। সমস্ত ট্রাফিক থমকে আছে। বাস-ট্যাক্সি, রিকশা-স্কুটার গাদাগাদি। আগুপিছু হবার সামান্য ফাক নেই। জ্যাম ছাড়তে ঘন্টা পেরিয়ে যাবে। সে রাজপথ ছেড়ে রেলপথে হাটে।

হাতের বামে বস্তি। ডানে বিরাট জলা। গোটা শহরের আবর্জনার গোডাউন। পচা-গলার স্তুপ ভরাট করেচলছে মস্ত দীঘি। বস্তির মানুষেরা এখানেই গোসল করছে। কাপড় কাচছে। থালা বাসন ধুচ্ছে। হঠাত নীলের চোখ আটকে যায় একটি ঘাটে। দূর্লভ দৃশ্য। টগবগে এক যুবতি দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের খেয়ালমত গোসল করছে। শরীর নাচিয়ে হাসছে। কথা বলছে কাছে দাঁড়ানো আরেক মহিলার সাথে। পাশ দিয়ে মানুষ জনের ব্যাস্ত চলাচল। মেয়েটির পরোয়া নেই। কে দেখলো, কি ভাবলো এসবে যেন কিছুই যায় আসে না। বস্তি জীবনে আব্রুর অতো তোয়াক্কা করলে হয় না। নীল আক্ষেপে ঠোট কামড়ায়। ক্ষোভে মুঠো করে হাত। সে যায়গাটা দ্রুত পেরিয়ে আবার রাজপথ ধরলো।

আজ ফেব্রুয়ারীর দশ। সামনে ভ্যালেন্টাইন ডে। দাবদাহ উপেক্ষা করে এরিমধ্যে কপত কপতিরা মার্কেটে হুমরী খেয়ে পড়ছে। ওর নিজেরও একটা লুঙ্গি কেনে দরকার। কিনি-কিনছির মধ্যে কেটে গেছে তিন মাস। মেসে বেশির ভাগ সময়ই প্যান্ত পড়ে থাকতে হচ্ছে। এবারের ভ্যালেন্টাইন ডে তে আর কিছু না কিনলেও একটা লুঙ্গি নিতেই হবে।

-এই নীল! মীমোর মার্সিডীস পাশে থামে। “কোথায় যাচ্ছ?”
* কোথাও না। এমনি এমনি ঘুরছি।
-গাড়িতে ওঠো।
*কি ব্যাপার?
-আগে ওঠো। তারপর বলছি।

মীমো ধনীর দুলালী। ওর ক্লাসমেইট। খুবই সেন্টিমেন্টাল। একটু এদিক ওদিক হলেই সিনক্রিয়েট করবে। নীল গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি চলতে থাকে।

-দুপুর রোদে টো-টো করছ কেনো?
*এমনিতেই। তুমি কিজন্য বের হয়েছো?
-তোমাকে খুজছি। গত তিন দিন যাবত। কোথায় থাকো তুমি? মোবাইল অফ কেন?

নীল অবাক হল না, কোন উত্তরও দিলো না। সে কাল রাতে স্বপ্নে জলপরী দেখেছিলো। অনেকগুলো জলপরী মাঝ সমুদ্রের গভীরে ভেসে বেড়াচ্ছিলো। একটি জলপরী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলো নীলের দিকে। কিছু বলতে চাচ্ছিলো।

মসৃন পথে গাড়ি ছুটছে ধীর গতিতে। জ্যামের জন্য কখনো থেমে থেমে। উল্লাসিত মীমো উচ্ছ্বাসে বর্ননা করছে নীলের সেথে তার ভ্যালেন্টাইন ডে পরিকল্পনা। নীলের তাতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। উলটো বিরিক্ত বারছে। ভেতরে মোচড় খাচ্ছে ক্ষোভ। হঠাত কিছু একটা দেখে নীল চেচিয়ে উঠলো।

এই ড্রাইভার সাব! একটু থামান তো!
-আবার কি হলো? মীমোর জিজ্ঞাসা;
*একটা জরুরী কাজ মনে পড়েছে।
-বিকেলে সেরো।
*তখন টিউশনি।

গতি শ্লথ হতেই টুপ করে নেমে পড়লো নীল। মীমো জানালা দিয়ে ঘুরে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে। নীল একটি বারের জন্যও পেছনে তাকায় না। মিশে যায় জনস্রোতে। মীমো অবাক। চোখে বিস্ময়। হৃদয়ে হতাশা।
আশা ভাঙ্গা কন্ঠ থেকে বেরিয়ে আসে একটি মাত্র শব্দ --পাগল।

পৃথিবীর সবাই কোন না কোন বিষয়ে উদ্ভট। কারো না কারো দৃষ্টিতে পাগল। এই পাগলামির শেষ হচ্ছে মৃত্যু। একজনের পাগলামিই হচ্ছে আরেকজনের জীবনের অস্বস্তির কাটা। আলো চলে যায়, মানুষ মরে যায়। কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে এই পাগলামিগুলোই মানুষের চিহ্ন রেখেযায় মানুষের মাঝে।

নীল হেটে যাচ্ছে একটি সাইকিয়াস্ট্রিক চেম্বারের দিকে, পাছে রেখে যাচ্ছে পাগলের ছাপ। একশ গজ সামনেই ওর ভবিষ্যত। ওর দুচোখে আগুনের হ্রদ। জ্বল্পজ্বল করছে আগামীর ইতিহাস।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.