নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“ছোট ছোট মুখ জানে না ধরার দুখ, হেসে আসে তোমাদের দ্বারে। নবীণ নয়ন তুলি কৌতুকেতে দুলি দুলি চেয়ে চেয়ে দেখে চারিধারে\"_____ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গফুর রায়হান

গফুর রায়হান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিঃ ব্রাইড এবং ওরা ক\'জন

১১ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৮

রাত ২টা বেজে ৫১ মিনিট। আত্মহত্যা করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। রাতের এই সময়টা সুখী মানুষটিকেও একাকিত্বে ভোগায়। আকাশ জুড়ে ভাসতে থাকে শুন্য অন্ধকার। বিকেলের পোকামাকড়ের ডাক গুলো প্রতিধ্বনি হয়ে তখনো জীবিত থাকে বাতাসে। উঁচুতম গাছের শাখাগুলো ভয়ংকর ভাবে আলোকিত হয়ে থাকে। একটু কুয়াশার ছোঁয়া পেলে আরও ভয়ংকর রুপ নেয়। নেশাকাতুর প্রকৃতি সারাদিন ব্যাস্ততার পর একটু স্থির থেকে দম নেয়। শক্তি সঞ্চয় করে পরের সকাল থেকে রাত অবধি একটানা ব্যাস্ত থাকার জন্য।

মিঃ ব্রাইড সন্ধ্যার দিকে একটা হুইস্কির গ্লাসে একপাতা ঘুমের ট্যাবলেট ভিজিয়ে রেখেছিলেন। অদূরের একটা গীর্জায় মৃত ব্যাক্তির স্মরণে একযোগে প্রার্থনা চলছে। একটু পর পর কোরাসের শব্দ আত্মাকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিচ্ছিলো। একমগ কড়া কফি হাতে ঘড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ঘড়ি দেখছেন মিঃ ব্রাইড। অনেকটা ধীর স্থির শান্ত মন নিয়ে জীবনের শেষ সেকেন্ডগুলি উপভোগ করে যাচ্ছেন। তার সামনে সেই হুইস্কির গ্লাস ভর্তি ঘুমের সিরাপ। কফি রেখে গ্লাস তুলে নিলেন হাতে। তখনও কোরাস ভেসে আসছিলো। মিঃ ব্রাইড একটু থামলেন। ফিশ ফুড এর প্যাকেট হাতে নিয়ে পুরো খাবারটা ঢেলে দিলেন এ্যাক্যুরিয়ামের ভেতর। মাছগুলোর ছুটোছুটি দেখে আত্মতৃপ্তিতে মন আরও শান্ত হয়ে গেলো তার। কফিগুলো সম্পুর্ন ঢেলে দিলেন তার প্রিয় ক্যাকটাসের গোড়ায়। একটা মাত্র পার্পল কালারের ফুল ছিলো গাছটায়, যেটা মাত্রাতিরিক্ত উষ্ণতায় ধীরে ধীরে মলিন হয়ে যাবে কিছুক্ষন পর।

মিঃ ব্রাইড সম্পুর্ন সিরাপটা গিলে খেলেন। এরপর নিজের রেকর্ড করা একটা গান শুনতে শুনতে সোফায় গা এলিয়ে দিলেন। গান শেষ হতেই দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সী এর সেই বুড়ো জেলে, যে টানা ৮৬ দিন যাবৎ একটি মাছও পায়নি, তার ঘুম ভাঙালেন। তাকে একটি বিশাল নীলতিমি ধরার গল্প শোনালেন। অনেক কৌশলে, অসংখ্য মাছের সাথে যুদ্ধ করে জেলেটি তিমি মাছের শুধু হাড়টাই তীরে আনতে পেরেছিলেন। তার জীবনের সমস্ত কষ্টের ফলাফল ছিলো একটা বিশাল তিমি মাছের কঙ্কাল, যার বাজারমূল্য ছিলো শুন্য। এক অক্লান্ত যুদ্ধ শেষে জেলেটি সাদা হাতির স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।

মিঃ ব্রাইড সমুদ্রের খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। কোন শব্দ নেই। একটা আটকে পরা নিস্তব্ধতা সমুদ্রের ঢেউগুলোকে থামিয়ে রেখেছে। বুড়ো জেলেটি একটা ছোট্ট নৌকার ছিড়ে যাওয়া পাল জোড়া দিচ্ছেন। তার হাতে সারা জীবনভর দাড় টানার শক্ত ছাপ অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে। মাস্তুলে সব কিছু রেডি। তারা আবার তিমি ধরতে যাবে। সময় হলে নির্জন দ্বীপে ২৭ বছর ধরে আটকে পড়া রবিনসন ক্রুসোর কাছে গিয়ে বাইবেল শুনবে। রাইডার্স টু দ্যা সী এর শত শত নাবিকদের সাথে খোশ গপ্পে মাতবেন, যারা জীবনের জন্য যুদ্ধ করে জীবনকে বিসর্জন দিয়েছিলেন। প্রতিটি বিন্দু সমুদ্রজল যাদের দুঃসাহসিক সমুদ্র অভিজানের গল্প মুখে মুখে বলে দিতে পারে।

দুইজন নৌকায় চড়ে বসলেন। কিছুদুর যেতেই তীর থেকে কেউ ডাক দিলো। রাইম অফ দ্যা এনসিয়েন্ট ম্যারিনারের সেই ধুসর নীল চক্ষুর বুড়োটি, যে মানুষকে হিপনোটাইজ করে তার সমুদ্রযাত্রার গল্প ফেরী করতেন। হাপাতে হাপাতে নৌকায় উঠলেন। মিঃ ব্রাইড কথা বললেন না। তিনজন তিন দিকে তাকিয়ে আছেন। বন্দরের আলোকবর্তিকা তখনো দেখা যাচ্ছিলো। একটা এলবাট্রস পাখি এসে তাদের জানিয়ে দিলো, তাদের এই জার্নি চিরন্তন। এই যাত্রায় আর কখনো পুব আকাশ লাল করে দিন হবে না। রাতের তারারা সুর্যের আলোয়ে আর কখনো মুখ লুকোবে না। তিনজনই মহাকালের পথে তারাদের সঙ্গীত্ব পেয়েছে। তিনজন আনমনে সব শুনলেন এবং আবার তিন দিকে মনোযোগ দিলেন। বুড়ো জেলে তখনও মাছ পায়নি। ধুসর নীল চোখের নাবিকটি এবার তাদের দুইজনকে হিপনোটাইজ করলেন না। মিঃ ব্রাইড খেয়াল করলেন, ভুল করে সে ঘুমের সিরাপের মগটি হাতে করে নিয়ে এসেছেন। এ্যাক্যুরিয়ামের মাছগুলো তার নৌকার পিছু পিছু ছুটে যাচ্ছিলো। মিঃ ব্রাইড শান্ত মনে মাছগুলোর ছুটোছুটি দেখছেন। গীর্জায় শেষ ঘন্টা বাজার সাথে সাথে কোরাস থেমে গেলো। ভাসমান আসংখ্য পার্পল রংয়ের ক্যাকটাসদের বুক চিড়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছে শেষের পথে। ততক্ষনে বন্দরের আলোকবর্তিকা মলিন হয়ে চার দিকে সমান গভীরতায় নিমজ্জিত হয়ে গেলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.