নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এত বুড়ো কোনোকালে হব নাকো আমি, হাসি-তামাশারে যবে কব ছ্যাব্লামি। - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ছাত্রদের আমরা একটা কথা প্রায়ই জিজ্ঞেস করি , তোমার রোল কত ?
যখন শুনি ১/২ বা ৩ , আমার মনটা খারাপ হয়ে যায় । চোখের সামনে ভেসে উঠে এক লাইভ রোবটের ছবি ।
যারা ভোরে উঠে নাকে মুখে নাস্তা গুঁজে বইয়ের বিশাল বোঝা নিয়ে ছুট লাগায় প্রাইভেট পড়তে , এর পরেই স্কুলের ক্লাশ , স্কুল থেকে ফিরে খেয়ে দেয়ে ফ্রেশ হতে না হতেই প্রাইভেট পড়াতে চলে আসছে ধর্মীয় টিচার , কারো নাচের , গানের টিচার । সন্ধ্যার পরেই অংক ইংরেজির প্রাইভেট টিচার । ঘুমানোর আগ পর্যন্ত পরের দিনের স্কুল,প্রাইভেট ,কোচিঙের পড়া রেডি করতে চলে বই খাতা নিয়ে ফাইট।
কোথায় এদের খেলাধুলা, কোথায় বিনোদন , আর কোথায় বিশ্রাম । অদুরদর্শী শিক্ষা পদ্বতি আর অভিভাবকদের গোঁয়ার্তুমি কেড়ে নিচ্ছে তাদের আনন্দময় শৈশব ।
ক্লাশে ১৫০ জন ছাত্র , সবার রোল ১ হওয়া সম্ভব নয় । একথা অভিভাবকরা বুঝতে চান না । যে সব অভিভাবক একাডেমীক জীবনে পরীক্ষার খাতায় বেশির ভাগই গোল্লা পেয়েছেন , বা পেয়েছেন টেনে টুনে ৩৩ ।
তথাকথিত ভাল ছাত্র হতে না পারার লজ্জা তাঁদের কুরে কুরে খায় । তারা নিজেরা যা হতে পারেন নি সেই ব্যর্থতা পুষিয়ে নিতে চান তাদের ছেলে মেয়ের জীবনে । এঁরা রোল ১ আর জিপিএ ৫ ছাড়া অন্য কিছু বুঝেন না, এঁদের বিলাসী চাহিদার নিচে চাপা পড়ে পিষ্ট হচ্ছে শিশুদের জীবন ।
আমি আসলে ''শিবের গীত''এর দিকে চলে যাচ্ছি ! আমি লিখতে চাইছিলাম আজ যারা জিপিএ ৫ পাবেনা তাদের নিয়ে ।
আজ এস,এস,সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে । আমি দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি তোমাদের উপর আজ কটু বাক্যবান বয়ে যাচ্ছে , কারো পিঠে পড়ছে দুদ্দাড় কিল । কোন বাড়ী থেকে ভেসে আসছে অষ্টম শ্রেণীতে ৩ বার ফেল করা মায়ের মরা কান্না ''হায় হায় রে ! কি অপদার্থ পোলা/মাইয়া পেটে ধরেছিলামরে , !!!!''
এই সবে তোমরা একটুও মন খারাপ করবেনা । আমাদের দেশের অমিত নামের একজনকে টেস্টে ফেল করায় পরিক্ষাই দিতে দিচ্ছিলনা শিক্ষকরা , আজ তিনি ক্যানাডা ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ভিসি । এডিসনকে পর পর তিন বার একই ক্লাসে ফেল করায় স্কুল থেকে বের করে দিয়েছিলেন শিক্ষকরা , এরকম নজীর ভুরি ভুরি ।
মহাজ্ঞানী মহাজন বা সভ্যতাকে এগিয়ে নেয়ার কাজে যারা আমাদের কাছে প্রাতঃস্মরণীয় তাঁরা কেউ জীবনে ভাল ছাত্র ছিলেন না ।
পৃথিবীতে সফল মানুষের ইতিহাস এক কথায় ''ফেল্লা''দের ইতিহাস ।
যারা ভাল ছাত্র তাদের কোন ভাবেই আমি ছোট করছিনা । সমস্যা হচ্ছে ভাল ছাত্রদের জীবন নির্দিষ্ট চকে বন্দী হয়ে যায় ভাল রেজাল্টের কারনে ।
উদাহরণ স্বরূপ এইচ এস সিতে ভাল রেজাল্ট করা ছাত্রটি তখনি তার জীবনের লক্ষ্য স্থির করে ফেলছে , সে হবে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার । এর বাইরে সে কিছু ভাবছেনা । অথচ খারাপ রেজাল্ট করা ছাত্রটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য খোলা রয়েছে হাজার হাজার পথ যা ভাল ছাত্রটির নেই ।
হতাশ হওয়ার কিছুই নেই , তোমরাই এগিয়ে নেবে দেশকে , তোমাদের দিকে চেয়ে আছে বিশ্ব ।পরিশেষে অভিভাবকদের নিকট আবেদন, আপনাদের বুঝতে হবে পরীক্ষায় পাশ না করার ফলে সবচেয়ে বেশি যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকে তাহলে তা পাচ্ছে আপনার সন্তান।
আমি জানি “তুমি পারবে” বা “চেষ্টা করলেই তুমি পারো” এধরনের উৎসাহব্যঞ্জক কথা বলুন। - আপনার সন্তানকে বুঝাতে হবে যে আমরা সবাই মানুষ আর প্রত্যেকটা মানুষকেই অনেক চরাই-উৎরাই পার হয়ে সামনে বাড়তে হয়। খারাপ কিছু হলে তাই ভেঙে পরতে হয়না। - আপনার সন্তান কেন পরীক্ষা খারাপ করলো আগে সেটা বুঝার চেষ্টা করুন। - যেই কারনে পরীক্ষা খারাপ হয়েছে সে কারণগুলো যেনো পরবর্তীতে আবার না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। - কোন বিষয়ে দুর্বল থাকলে আপনার সন্তানকে সেই বিষয়ে আরও জোর দিতে সাহায্য করুন। হঠাৎ করেই প্রেশার দেয়া শুরু করবেন না, আপনার সন্তানকে আগে পড়ালেখার গুরুত্ব ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন তাহলে সে নিজেই আরও বেশি মনোযোগী হবে ।
- সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি আপনার সন্তানকে নিয়ে কয়েকদিন বাইরে কোথাও ঘুরে আসেন, তাকে আরেকটু বেশি সময় দেন। তাহলে তাঁর মন ফ্রেশ হবে আর আবার নতুন করে শুরু করার আগে রিফ্রেশমেন্টের দরকারও বটে।৷
(আজ এসএসসি'র রেজাল্ট দিয়েছে, সময়ের প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় রিপোস্ট। লিখাটি পুর্বে দৈনিক ডেস্টিনিতে প্রকাশিত হয়েছিল।)
২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫১
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: সময় নিয়ে দীর্ঘ মন্তব্য করেছেন, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানবেন।
অস্বস্তির সহিত বলছি, স্কুলের ১০ ক্লাশের ৬ ক্লাসে আমার রোলও এক ছিল। আমাদের সময় অবিভাবকগন পড়াশোনা চাপিয়ে দিবেন কি অনেক অবিভাবক জানতোই না ছেলে কোন ক্লাসে পড়ে। এখন অবস্থা ভিন্ন। শিশুদের উপর পড়াশোনার চাপটা এখন রীতি মত নির্যাতনের পর্যায়ে চলে গেছে।
লেখাটি ব্লগ,ফেসবুক, পত্রিকায় দিয়েছিলাম সম্ভবত ১৭ সালে। সে সময় রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কারণে অনেক স্টুডেন্ট আত্মহত্যা করেছিল। আমার বন্ধুস্থানিয় এক ব্যবসায়ীর ইন্টার ফেল কন্যা আত্মহত্যা করার ফলে এরকম একটা লেখার প্রয়োজন বোধ করি।
এবং পরবর্তী এসএসসির রেজাল্টের দিন এই লেখা পাব্লিশ করি।
আপনি যা বলেছেন তা সর্বাংশে সঠিক। সেই সময়ে ফেল করা একজন ছাত্রও যদি এ লেখা পড়ে তার মনোবল ফিরে পায় সেই উদ্দেশেই এই লেখা।
২| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৩২
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
সন্তান কিসে ভালো অভিভাবকগণ বেশিরভাগ বুঝতে পারে না, সহজ প্যারামিটার হলো GPA5।
২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫২
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: সঠিক বলেছেন শুন্য --।
৩| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:২২
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: মা বাবা সন্তানের সাফল্য চায় শুধু আমিও ব্যতিক্রম নই
২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৪
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: সন্তানের সাফল্যে কে না খুশী হয়।
সাফল্যের জন্য সন্তান যেন শারিরীক মানষিক নির্যাতনের শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৪| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৫৪
ঢাবিয়ান বলেছেন: ফেসবুকে দেখছি এ প্লাস এর ছড়াছড়ি। মার্কশীটও আপ্লোড করেছে অনেকে। যে বাচ্চারা পায়নি তাদের ও তাদের পিতা মাতাদের কেমন লাগে বুঝতে পারি। যারা ভাল করেছে তাদের উচিত নয় এভাবে শো অফ করা।
২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৮
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: চমৎকার বলেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এ এই সব দেখে খারাপ রেজাল্ট করা ছাত্র, অবিভাবক অধিক মনোকষ্টে ভোগেন।
৫| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:১৬
সোনাগাজী বলেছেন:
প্রশ্নফাঁস কি বন্ধ?
২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৯
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: গত দুই পরিক্ষায় এরুপ কিছু শোনা যায় নি।
৬| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৯
নাহল তরকারি বলেছেন: সুন্দর।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৩
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন নাহল।
৭| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩২
গেঁয়ো ভূত বলেছেন: অনুভূতিশীল অভিবাবকের দৃষ্টিকোণ থেকে খুব ভালো একটা লেখা।
আমি আমার সন্তানকে সারা বছর পড়াশোনা করতে উৎসাহিত করি, পরীক্ষার আগে বলে দিই তোমার উপর কোনো চাপ নেই রিলাক্স এ পরীক্ষা দাও এবং রেজাল্ট এর আগেও বলে দিই টেনশন নিও না রেজাল্ট যাই হোক না কেন তোমার কোনো সমস্যা নাই।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৫
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: যারা আজীবন পেছনের বেঞ্চে বসে দুচার ক্লাশ পাশ দিয়েছে তারা তাদের সন্তানের রোল ১ ছাড়া অন্য কিছু বুঝে না।
৮| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৫৭
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
ভাল লিখেছেন ।
ছাত্রদের মেধা মুল্যায়ন এর বর্তমান পদ্ধতির আরো সংস্কার প্রয়োজন ।
এ বিষয়ে সামুসহ অন্যান্য গনমাধ্যমে একটি মুক্ত আলোচনার
আয়োজন সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করি ।
শুভেচ্ছা রইল
০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৩
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: এ বিষয়ে সরকারের শিক্ষা সংস্লিষ্ট দপ্তরও আন্তরিক নয়। পৃথিবীর বহু দেশে উন্নত মূল্যায়ন পদ্দ্বতি প্রচলিত রয়েছে। আমাদের দপ্তর সে সব না শিখে কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠায় খিচুড়ি রান্না শেখার জন্য।
৯| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:১১
রানার ব্লগ বলেছেন: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাকসেস মানে পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট আর বিসিএস করে সরকারি কর্মকর্তা হওয়া আর যারা হতে চাচ্ছেন না তারা ব্যাংক বা কোন কর্পরেটের কর্মকর্তা হওয়াটাকেই মনে করে তার সাকসেস । স্কুলে কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাই শেখানো হয় । সেখানে বাচ্চাদের বা তাদের অভিভাবকদের দোষ দেয়াটা অন্যায়।
একটা শিশু স্কুলে ভর্তি হবার পরেই তার টার্গেট ফিক্স করে দেয়া হয় রোল নম্বর ১ । সে চাক্ষুস দেখছে রোল এক এর প্রতি স্কুলের সবার আগ্রহ ভালোবাসা । স্বাভাবিক ভাবে বাচ্চটা প্রথমে চেষ্টা করবে তারপরে বিফল হলে সে হয় উগ্র হয়ে যাবে নতুবা মানুষিকভাবে নড়বড়ে হয়ে যাবে ।
শুধু মাত্র আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা না আমাদের চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন আনা জরুরী । আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় তেলো মাথায় তেল ঢালার যে প্রবনতা আছে তা আগে বন্ধো করা জরুরী ।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৫
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: শুধু জিপিএ ৫ নয়,ছাত্রদের শিক্ষা দিতে হবে- অন্যের জন্য কিছু করার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা। নিজের কাজগুলো ঠিকঠাকভাবে করতে পারার মধ্যেই আনন্দ। একটি মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারা, কোনো অবস্থাতেই অনৈতিক না হওয়া, সততার প্রশ্নে আপোষহীন হওয়া, মৃত্যুর পরেও মানুষ যেন তোমাকে মনে রাখে, মিস করে- এমন জীবন গঠন করার জন্যই তোমাকে জীবন দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়ার জন্য নয়!
১০| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৩০
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: সুন্দর লেখা তবে ওদের একেবারে ছেড়ে দিলেও চলবেনা।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৮
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: সারা বছর ছাত্র সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে কিনা সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করলে রেজাল্ট যাই হোক সেটা অবিভাবকদের মেনে নিতে হবে।
১১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: বাবা মা সন্তানের দিকে নজর দিলেই সন্তান ভালো রেজাল্ট করবে।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩১
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: মা বাবাদের বুঝতে হবে সাতশ কোটি মানুষের চেহারা যেমন আলাদা, তাদের মেধাও আলাদা। মা বাবা সন্তানের দিকে যতই নজর দিক সন্তান তার মেধাকে টপকাতে পারবেনা।
১২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৬:৪১
সোহানী বলেছেন: আমি এ বিষয়ে আগেও লিখেছিলাম, আবারো লিখবো। আপনাকে ধন্যবাদ গুড়ত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখার জন্য।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৭
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আমার খেয়াল আছে,প্রথম বারও আপনার মন্তব্য পোস্টকে সমৃদ্ধ করেছিল। অনেক ধন্যবাদ জানবেন সোহানী।
১৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩২
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: কুমিল্লা বোর্ডের সুইসাইড করা ১ জন ছাত্রের সুইসাইড নোটঃ
আগামি বছর আবার পরীক্ষা দিবো। মা, বাবাকে বুঝাইছি।
সবাই স্বাভাবিক ছিলো, আমিও। কিন্তু একের পর এক প্রতিবেশী সহপাঠীরা মিষ্টি আর কথার খোঁচা নিয়ে হাজির হতে লাগলো। আমার মায়ের মাথা খারাপ হয়ে গেলো।
বাবাও আমাকে গালিগালাজ করলো। যে মা বাবা গতকাল আমার মাথায় হাত রেখে বলছিলো চিন্তা করিস না, বুড়ো হয়ে যাস নাই। সামনের বার আবার পরীক্ষা দিস, বছর যাইতে কয়দিন। অথচ, প্রতিবেশীদের মিষ্টি পেয়ে সেই বাবা মা আমাকে জুতা দিয়ে পিঠলো, শুধু তাই নয়, আমার উপর রাগ করে বাবাপাতের ভাত লাথি মেরে ফেলে দিলো।
অনেক চেষ্টা করেছি লুকিয়ে থাকার, পারলাম না।
প্রতিবেশীরা এক হাত জিহ্ববা বের করে অনুশোচনা করলো, শুধু অনুশোচনা নয়, আমার জন্য নাকি আমার মা দায়ী। মায়ের আস্কারা পেয়ে আমি নষ্ট হয়ে গেছি।
• তাদের কৈফিয়ত পেয়ে আমার বাবা মাকে উঠানে প্রচুর মেরেছে। মা এখনো বেহুঁশ। মার জ্ঞান ফিরার আগেই পৃথিবীকে বিদায় জানালাম...!
ভালো থাকবেন প্রতিবেশীরা...!
ভালো থেকো সহপার্ঠী বন্ধুরা...!
পিতামাতাদের উপদেশ আমাদের মানায় না...!
তবু ও বলছি সমাজ কি বললো...!
প্রতিবেশী কি বললো সেটা শুনে,
নিজের ছেলে মেয়েকে অপমান করে,
মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবেন না...!
মনে রাখবেন ছেলেমেয়েটা আপনার তাদের না...!
সূত্র : Educational News of Bangladesh
collected
১৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৮:২৫
খায়রুল আহসান বলেছেন: ১৩ নম্বর মন্তব্যটা পড়ে বুকটা হু হু করে উঠলো। মা বাবা ছেলের প্রতি অবিচার করেছেন। ছেলে তার জীবন দিয়ে নীরবে তার প্রতিবাদ করে চলে গেল!
একটি সুখী পরিবারের সবচেয়ে বড় নির্দেশক, পরিবারের কে কাকে কতটা বুঝতে পারে এবং বুঝাতে পারে। যে পরিবারে এই সংবেদনশীলতা নেই, সেই পরিবার সুখী হতে পারে না।
প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত কেবল একবারই আমার রোল নং ১ হয়েছিল, অষ্টম থেকে নবম শ্রেণীতে ওঠার সময়। সেটাই প্রথম, সেটাই শেষ। তবে আমি সে সাফল্য ধরে রাখতে পারিনি। এর কারণ, আমার পিতামাতা, গুরুজন, শিক্ষকগণ কিংবা আমি নিজেও আমার মেধার মূল্যায়ন করতে পারিনি। তখন না বুঝলেও এখন বুঝি, সবাইকে খুশি করতে গিয়ে আমার বিজ্ঞান বিভাগে পড়া উচিত হয়নি। মানবিক বিভাগে পড়লে আমি অনেক ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারতাম। আমার বড় ছেলের ব্যাপারে আমার সে কথাটা মাথায় ছিল। সেও আমার মতই ছাত্রজীবনে অংক এবং বিজ্ঞান, উভয় বিষয়েই ভালো নম্বর পেতো। কিন্তু সেই অষ্টম থেকে নবম শ্রেণীতে ওঠার সময় সে একটি দুর্ঘটনার শিকার হওয়াতে মাত্র এক নম্বরের জন্য অংকে লেটার মার্ক মিস করে। নিয়ম অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ এর জন্য তাকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার অনুমতি দিতে পারবে না বলে আমাকে চিঠি দিয়ে জানায়। ওরা ভেবেছিল, অন্যান্য অভিভাবকদের মত আমি তাদের হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করা শুরু করবো যেন কর্তৃপক্ষ অনুকম্পা প্রদর্শন করে তাকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার অনুমতি দেন। কিন্তু আমি বলেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ, আমি তাতেই রাজী। ছেলেকেও বুঝিয়েছিলাম, ভালোভাবে পড়াশুনা করলে সে যে বিভাগেই পড়ুক, ভালো ফল অর্জন করতে পারবে এবং সম্মানিত হবে। মা শা আল্লাহ, আমার ছেলে সে বছর মানবিক বিভাগে ঢাকা বোর্ডের মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করে সে নিজেও সম্মানিত হয়েছিল, তার মা বাবাকেও সম্মানিত করেছিল।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:০১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: লিটন ভাই, অনুপ্রেরণার জন্য লেখাটা খুবই সুন্দর। কিছু কথা যোগ করি। যারা ফেল করেছে, বা যাদের রেজাল্ট আশানুরূপ হয় নি, তারা এ সময়টাতে মুষড়ে পড়বে। ওদের উঠে দাঁড়ানোর জন্য এ রকম কিছু অনুপ্রেরণামূলক কথা বলতে হবে এখন। কিন্তু সবসময় না। সারাবছরের জন্য একজন পিতা বা শিক্ষক হিসাবে তাদের জন্য গঠনমূলক মোটিভেশন থাকতে হবে।
পৃথিবীতে সফল মানুষের ইতিহাস এক কথায় ফেল্লাদের ইতিহাস - এটা কখনো ছাত্রদের বলতে নেই, সন্তানদেরও না। কথাটা ঠিকও না। কিছু ব্যতিক্রম থাকতে পারে। যদি ফেল্লাদের ইতিহাস বলেন, ছাত্ররা স্বভাব চরিত্রমতো পড়ালেখা বাদ দিয়া মোবাইলে ঝাঁপিয়ে পড়বে জ্ঞানার্জনের জন্য ছাত্রদের পড়ালেখা করতে হবে। আপনি উৎসাহিত করবেন পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্যান্য বইও পড়ার জন্য। আর উৎসাহিত করতে হবে পড়ালেখা ছাড়াও খেলাধুলা, সংস্কৃতি, ইত্যাদির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির জন্য, মানবিক গুণাবলি বিকাশের পথগুলো বাতলে দিতে হবে, মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে পরিবার ও প্রতিষ্ঠান দু জায়গা থেকেই।
ছাত্ররা রেজাল্ট অর্জন করবে তাদের নিজ নিজ মেধা ও প্রচেষ্টা অনুযায়ী। কেউ অল্প পড়ে ভালো রেজাল্ট করবে, কেউ অনেক পড়ে ওইরকম রেজাল্ট করবে, আবার কেউ পড়বেও না, ভালো রেজাল্টও করবে না। যে পড়ালেখা করবে না, সে একজন বড়ো বিজ্ঞানী বা বড়ো ব্যবসায়ী হয়ে যাবে, এটা অসম্ভব ব্যাপার। পৃথিবীতে বা আমাদের দেশে কিছু উদাহরণ থাকবে ব্যতিক্রম হিসাবে। কিন্তু সবাই পড়ালেখা ছেড়ে দিলে পৃথিবীর সভ্যতাও এগোবে না, একটা দেশও এগোবে না। এটা তো ঠিক, জ্ঞানার্জনের জন্য পড়ালেখা করতে হবে। স্কুলে একটা নির্দিষ্ট সিলেবাস থাকে সবাইকে একই প্লাটফর্মে আনার জন্য। একই স্ট্যান্ডার্ড অর্জনের জন্য সবাইকে পড়তে হবে। এই স্ট্যান্ডার্ড অতিক্রম করার জন্য অতিরিক্ত কিছু করতে হবে, যা উপরের প্যারায় বলেছি। একটা ছাত্র যেমন শুধু পাঠ্যবই নিয়েই মগ্ন থাকবে না, আবার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বাদ দিয়ে সমগ্র পৃথিবী নিয়ে মগ্ন থাকবে, সেটাও ঠিক না। প্রথম সূত্র - তার পড়ালেখার পথ ঠিক রাখতে হবে। এটার সাথে সঙ্গতি রেখে বাকিগুলো করতে হবে।
একজন পিতা বা মাতার সবার আগে জানা দরকার তার সন্তানের ক্যাপাবিলিটি কতখানি আছে। আমরা ভুল করি - ছেলে পারবে কী পারবে না, ছেলেকে টার্গেট দিয়ে দিই তোমাকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। সন্তানের উপর প্রেশার বেড়ে যায় ওখান থেকে। আমি জানি, আমার ছেলে জিপিএ-৫ পাবে না, পাবে বড়োজোর জিপিএ-৩। আমরা তাকে জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য প্রাণান্ত হয়ে পড়ি। ঐ ছেলে তখন রোবট হয়ে যায়। ঐ রোবট যখন জিপিএ-৫ না পায়, তখন দুঃখের সীমা থাকে না।
যার রোল নাম্বার ১, ২, ৩ - সে রোবট হবে কেন? আমার স্কুলে রোল নাম্বার-১ ওয়ালা ছাত্রগুলোকে দেখেছি অলরাউন্ডার হিসাবে। ক্লাসে আমারও রোল নাম্বার ১ ছিল খেলাধুলা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, বিতর্ক, বক্তৃতা, স্কুলের অনুষ্ঠান আয়োজন - সব জায়গায় আমার নেতৃত্ব এবং নিয়ন্ত্রণ। সংসারেও আমার অবদান ছিল একটা আদর্শ সন্তানের মতোই। আমরা যে পরিবেশে বেড়ে উঠেছি, সেখানে রোল নাম্বার ১, ২, ৩ ওয়ালারা কেউ রোবট ছিল না। আমি আমার ব্যক্তি-জীবন বা প্রফেশনাল লাইফে কোথাও ফেইলিউর হই নাই। এত বছর পরও এলাকার লোকজন আমাকে ভালো ছাত্র ও ভালো মানুষ বলে জানেন। আমার প্রফেশনাল সার্কেলে আমার সুনামের অন্ত নাই। ক্লাসে আমার রোল নাম্বার ছিল ১, সাফল্যের দিক দিয়ে আমার ধারেকাছে কেউ নেই। আমার আগে-পরের ছাত্রগুলোও নিজ নিজ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল। প্রশ্ন আসতে পারে, যারা রেজাল্টের দিক দিয়ে প্রচলিত অর্থে 'ভাল' ছাত্র ছিল না, তাদের অবস্থা কী? তারা কেউ কেউ খুব ভালো করেছে, কিন্তু বাকিদের অবস্থা ভালো না। তাদের 'ভালো' করার রাস্তা, আর আমার ভালো করার রাস্তায় অবশ্য পার্থক্য আছে।
ছাত্রজীবন হলো মানুষ হিসাবে ভিত্তি প্রতিষ্ঠার সময়। পড়ালেখার প্রয়োজন আছে বলেই পড়ালেখার সিস্টেমটা চালু হয়েছিল, নইলে পড়ালেখার সিস্টেমটাই থাকতো না। এ জীবনে যে ভালো রেজাল্ট করবে, তার বাকি জীবনে ভালো করার সম্ভাবনা বাকিদের চাইতে বেশি। তবে, এই ভিত্তি প্রতিষ্ঠার সময় ছাত্ররা রোবটে পরিণত হোক, বাবা হিসাবে আমি কখনো চাইব না। আমি চাই, ওরা আমার সাথে গান করুক, খেলাধুলা করুক। সংসারের বিষয়ে অংশগ্রহণ করুক। সত্যবাদিতা ও নিয়মনিষ্ঠা শিখুক।
শুভেচ্ছা রইল লিটন ভাই।