নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জিফান

আমি কারো সাতেও নেই পাঁচেও নেই

জিফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হায়রে বাঙালী !!!

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩৪

সেদিন এলাকার এক চায়ের দোকানে বসে যখন চা খাচ্ছিলাম এক বড়ভাই শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে কথা বলছিলেন।উনি মনে হয় একটু পরেই শাহবাগের দিকে যাবেন।উপস্থিত CUSTOMER দের সাথে বসে আমিও চা গিলছিলাম আর ওনার কথা শুনছিলাম।

তো আমার লেখার শিরোনাম টা দেখে মনে হবে আমি কেমন লোক !!? মনে হ্য় বাঙালী না।আসলেই আমি বাঙালী না।আমি শুধু নামে বাঙালী কিন্তু কাজে বাঙালী না।আর হতেও চাই না কারন কাজে বাঙালী হতে গেলে আমাকে এমনি নীচে নামতে হবে যেটা আমার হয়তো পক্ষে হয়তো সম্ভব না।দেশের ভাল বলতে গিয়ে বহুবারই 'তুই রাজাকার' জাতীয় কিছু শুনেছি।এমনও অনেকে বলেছেন ''তুই এ দেশের কেউই না .....তুই দেশ ছেড়ে চলে যাহ।'' ভাবখানা এরকম যেন দেশটা তার বাপ-দাদার সম্পত্তি।আমরা দেশের নাগরিক না।প্রকৃতপক্ষে এটা সবারই মনে রাখা উচিত যে একটা রাজাকার কেও এ জাতীয় কথা বলার অধিকারটুকু কারো নেই আর জোরপূর্বক এ অধিকারও কেউ আদায় করতে পারেন না। কারন জন্মসূত্রে কেহ এদেশের নাগরিক হলে তাকে অন্তত এটা বলা যায় না যে ''তুই কেডা? তোর দেশ নিয়ে ভাবতে হবে না দেশ আমরা স্বাধীন করছি আমরা দেশ নিয়ে ভাবব তুই দেশ ছেড়ে বের হয়ে যাহ.......।'' মনে রাখতে হবে কোন দেশই কারো বাপের বাড়ির জমি না,কারো একার ভাগের বস্তু না।কোন লোক দেশবিরোধী হলেও তাকে এরকম বলা যাবে না।বলাটা উচিতও না।বাক স্বাধীণতা থাকলেই সেটা অপব্যহার করা ঠিক না।যাই হোক একটু বেশী কথা বলছি।আসল ঘটনায় আসি।



চায়ের দোকানে ঐ বড়ভাই যখন শাহবাগ আন্দোলনের কথা বলছিলেন ঠিক তখনি তার বাবার বয়সী একজন লোক বলে উঠলেন যে..... "তোমরা বাবা মুক্তিযুদ্ধ তো দেখ নি। ইতিহাস তো জান না।রাজাকারদের ফাসি চাও এটা খুব ভাল কথা কিন্তু আজকে তোমরা শুধু জামায়াত শিবিরের রাজাকারদের ফাসি চাইতেছ কিন্তু এটা কি জান অন্য দলগুলোতেও রাজাকার আছে।ঐ রাজাকারগুলোর কি বিচার হবে?কে বিচার চাইবে?"



কথাশুনে ঐ বড়ভাই দাঁত কামড়াতে লাগল।ভাবখানা এমন যেন তার নিজের বাপকে কেউ রাজাকার বলেছেন।

তারপর আবার লোকটি বলল "তোমরা জামায়াতীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতেছ বলে এখন ঐ শাহবাগ এ বসে থাকতে পারতেছ কিন্তু এই আন্দোলন যদি এই সরকারের কোন রাজাকারের বিরুদ্ধে হত তাহলে কি হত জান?এখন তো পুলিশ দিয়ে তোমাদের নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে আর তখন পুলিশ ই তোমাদের লাঠি নিয়া দৌড়ায়া ছুটত।"



এবার ঐ বড়ভাই বললেন..."চাচা দেখেন এই আন্দোলন কিন্তু কারো বাপের সাধ্য নাই যে আটকাইবো।"



চাচার কথা.."ঠিক আছে বাবা তোমরা চালায়ে যাও।তবে দেইখ তোমরা না যেন আবার রাজনীতিকদের দ্বারা ব্যবহৃত না হও।বিচার চাও কিন্তু শুধু জামায়াতী রাজাকারদের না,,সবদলের রাজাকারদের বিচার চাও।"



বড়ভাই: "চাচা আপনি মনে হইতেছে জামায়াতীদের পক্ষ নিতেছেন?" বারবার খালি জামায়াতীদের কথা কন ক্যান?

চাচা বললেন : " দেখ জামায়াতীদের যদি নিষিদ্ধও করার কথা বল তবে আমার কোন আপত্তি নাই...তবে শুধু জামায়াতের রাজাকারদের বিচার হবে আর অন্য দলের রাজাকারগুলা বিচারের বাহিরে থেকে তালি বাজাবে তা তো বাবা আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মানতে পারি না।এ ব্যাপারে আমার চরম আপত্তি আছে।"



বড়ভাই বললেন...." না চাচা,আপনি যাই কন আপনেরে আমার সন্দেহ হইতেছে।আপনি SURE জামায়াতের লোক।"



এবার চাচা বললেন.."তুমি যা মনে চায় ভাবতে পার।চিন্তার স্বাধীনতা সবারই আছে।তবে আমার কথা একটাই...বিচার শুধু রাজাকার না সব আপরাধীরই বিচার চাইতে হবে।১৯৭১ এ যে রাজাকারগুলো আমাদের ক্ষতি করেছে তারা যেমন অপরাধী ঠিক তেমনি স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৪০ বছরে যারা লুটপাট করে দেশের ১২ টা বাজায়ে দিচ্ছে তারাও সমান অপরাধী।"



বড়ভাই: "চাচা যুদ্ধাপরাধীদের চাইতে বড় অপরাধী আর নাই।" এদের বিচার আগে।"



চাচা বললেন: " আচ্ছা মনে কর; কয়েকটা মাস্তান একটা মেয়েকে ধাওয়া করতেছে,,তুমি গিয়ে ছুটায়ে আনলা....ছুটায়ে আনার পর মেয়েকে তোমার বাড়ি নিয়ে গিয়ে উল্টা তুমি নিজেই তাকে RAPE করে ছেড়ে দিলা।তাহলে ঐ মাস্তানগুলোর চেয়ে তুমি কোন দিক থেকে কম অপরাধী? এখানে কারো বিচার কি আগে পরে চাওয়ার আছে?



বড়ভাই বললেন: "আপনি বুড়া হইছেন....আপনার কথাবার্তা ঠিক কইরা কন।ভাষা ঠিক করেন।আপনি কি বুঝাইতে চান?"



এদিকে চায়ের দোকানে মানুষের ভিড় লেগে গেছে।সবাই খুব মনযোগ দিয়ে তর্কবিতর্ক শুনছেন। মানুষের মাঝে দুটা ভাগ হয়েছে।একপক্ষ ঐ বড়ভাই এর কথায় সম্মতির সুরে মাথা নাড়ছেন আর আরেকপক্ষ চাচার কথায় সম্মতির সুরে একি কাজ করছেন।আবার অনেকে ঘটনাস্থল থেকে "ধুর..কোথা থেকে যে এসব আসে,,,,খালি রাজনৈতিক আলাপ" এ টাইপের একটা ভাব নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।আমিও বেরিয়ে যেতাম।তবে বের হলাম না অন্য একটি কারনে।একটা বিশেষ ব্যাপার অবজার্‌ভ করছিলাম।যাই হোক এত মানুষের ভিড় স্বত্তেও দোকানদারের এ নিয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই।উনি তর্ক-বিতর্ক বন্ধের কথা বলছেন না।কেনই বা বলবেন? ওনার বেচা তো ভালই হচ্ছে।এবার টকশো তে ফেরা যাক।



চাচা বললেন: "আগেও একবার বলছি যে ১৯৭১ এর রাজাকার গুলা যেমন অপরাধী..তেমনি দেশ স্বাধীন করে হাতে ক্ষমতা পেয়ে যেসব রাজনীতিক দলগুলো বিগত ৪০ বছর ধরে দেশের মানুষের কথা না ভেবে দেশটাকে চুষে খাচ্ছে তারাও সমান অপরাধী।"



বড়ভাই বললেন: "শুনেন চাচা...আগের কাজ আগে পরের কাজ পরে।"



চাচা বললেন: "এখানে আগে পরের কিছুই নাই।তোমরা দেশপ্রেম যদি সত্যিই বুঝে থাক তাহলে সব অপরাধীরই বিচার চাও।"



বড়ভাই: "দেখেন চাচা...আপনি যদি ইংরেজী পরীক্ষার আগে বাংলা পরীক্ষা দিতে চান তাহলে হবে?হবে না। ঠিক তেমনি আগে রাজাকারদের বিচার তারপর অন্য কিছু।"



চাচা: তোমার পরীক্ষার PREPARATION এ যদি গলদ থাকে, তুমি ইংরেজী পরীক্ষা আগে দাও বা বাংলা পরীক্ষা আগে দাও তোমার রেজাল্ট তো আর ভাল হবে না। ঠিক তেমনি দেশের ভেতর পর্দার আড়ালে ক্ষমতার আড়ালে যেসব রাজাকার ঘাপটি মেরে বসে আছে ওদেরকে আগে সমূলে দমন করতে হবে না হলে শুধু একটা নির্দিষ্ট দলের রাজাকার নিধন করে তো লাভ নাই,, বাকী যেগুলান রয়ে যাবে ওই গুলা দেখবে ডিম ফুটায়ে বাচ্চা দিয়ে দিতেছে। তখন তোমার ওই ইংরেজী পরীক্ষা আগে না বাংলা পরীক্ষা আগে ছুটাবেনে। আর পরীক্ষার সাথে এইগুলান মিশাইও না। এগুলা খুব সেনসিটিভ জিনিস।তাছাড়া তোমাকে তো বললামই দেশ স্বাধীন করে ক্ষমতা পেয়ে যারা দেশটাকে এখন পর্যন্ত RAPE করতেছে তারাও ঐ রাজাকারদের মতই।বিচার একসাথে চওয়া যায়।সরকার চাইলেই সব করতে পারে।এতদিন তোমরা এসব নিয়া কথা বলনি আর এখন সরকার এর সাহায্য পেয়ে আন্দোলন করতেছ। ইংরেজী পরীক্ষার আগে বাংলা পরীক্ষা দিলে কিছু আসে যায় না।এখন যদি শিক্ষাবোর্ড ই ঠিক করে যে ইংরেজী পরীক্ষা আগে দিতে হবে তাহলে তো ছাত্র-ছাত্রীদের কিছু করার নাই।"



বড়ভাই: "তার মানে?" হোয়াট ডু ইউ মিন?"



চাচা: মানে আর কি ? ঐ সরষের মাঝেই তো ভূত.......... সরকারই যদি তোমাদের সাহায্য করে তাহলে তো এসব করতে পারবা।কিন্তু যদি এই সরকারের মধ্যে যেসব রাজাকার আছে ওদের বিচার চাইতে যাও তাইলে এতক্ষন জেলে ঢুকে বসে থাকতা।বুঝ না তাদের দলেও তো যুদ্ধাপরাধী আছে।"



বড়ভাই: এখন আপনি কি বলতে চান যে জামায়াতের রাজাকারদের বিচার পরে চামু ? নাকি ওদের আর বিচারেরই দরকার নাই?"



চাচা: এইতো উল্টা বুঝলা....আচ্ছা তোমরা বলে ইয়ং জেনারেশন তোমরা কি কিছু বুঝ না? পড়ালেখা করনা? এতক্ষণ কি তোমারে ইংরেজী না বাংলায় বলছি? বাংলা টাও কি ঠিকমত বুঝ না নাকি? শোন ৭১ এর সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার তোমাদের কে চাইতে হবে।সেটা যে দলেরই হোক।শুধু জামায়াতের না।সব দলের।আর জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছ তাতে আমার কোন আপত্তি নেই থাকারও কথা না,কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শুধু জামায়াত না সব দলের রাজাকারদের বিচার আমি চাই।জামায়াতের রাজাকারদের বিচার হবে আর অন্য দলের রাজাকারগুলা আরামসে ঘুরে বেড়াবে এটা দেখার জন্য তো আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এত কষ্ট করে যুদ্ধ করি নি,দেশ স্বাধীন করি নি।তাছাড়া , এই যে রাজনৈতিক দলগুলা যেমন বি.এন.পি.,আওয়ামীলীগ,জাতীয় পার্টী--এরা ক্ষমতায় গিয়ে কম লুটপাট করছে? এদের কে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসান হইছে কি এসব করতে?এদের বিচার কে করবে?এরা কোন দিক থেকে রাজাকারদের চাইতে কম ?"



এটা শুনে পাশে থেকে আরেক বড়ভাই উঠে দাঁড়ালেন যিনি আওয়ামীলীগের একজন কর্মী।মাঝে মাঝে মিছিল টিছিলেও যান।বলাবাহূল্য তিনি মহিলা স্কুল-কলেজের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটা নতুন চাকরি হিসেবে বেছে নিয়েছেন ( চাকরি বলছি একারনেই যে তিনি সপ্তাহের ৬ দিনই সম্ভবত মহিলা স্কুল-কলেজের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন,আর একদিন হয়তো বিশ্রাম নেন )।জানিনা তার সোর্স অব ইনকাম কি? বিশেষ সময়ে বিশেষ জায়গায় আমি তাকে ইভটিজিং ও করতে দেখেছি।তো চাচা জান আওয়ামীলীগের নাম যোগ করায় উনি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে গেলেন।তিনি বললেন: " আপনি জামায়াতি!!? আপনি মুক্তিযুদ্ধ করছেন কোন সেক্টরে? চাপাবাজি করেন না? আপনি তো মুক্তিযোদ্ধা না মনে হয়,আপনি রাজাকার।"



সবার সামনে এভাবে অপমান করায় চাচা একটু বিব্রত বোধ করলেন।তখন তিনি বললেন: " দুনিয়ায় তো তোমাদের আগে আমরা এসেছি,সুতরাং দুনিয়ার অনেক কিছুই তোমাদের দেখার বাকী।১৯৭১ এ কি হইছে বা তার আগে কি হইছিল ওসব তো আর নিজের চক্ষে দেখনি।তোমাদের বাপ-দাদা যারা তখন ছিলেন ওনাদের জিগাস করো। দেশ স্বাধীন করার পর এ দেশের রাজনীতিকগণ যা খেল দেখিয়েছেন আর এখন পর্যন্ত যা দেখাচ্ছেন তা দেখে শুধুই মনে হয় দেশ স্বাধীন করলাম কিসের জন্য? দেশটা কি আদৌ স্বাধীন হল? নাকি দেশ স্বাধীন হবার নামে আরেকদল রাজাকারের হাতেই শুধু হস্তান্তর হল?"দেশের জনগণের কথা কোন সরকার চিন্তা করে?"



এবার লীগকর্মী আর বড়েভাই দুজনে একসাথে বলা শুরু করলেন: " এইটা কি কন চাচা? আপনি তো LEGAL কইলেন না চাচা।অনেকক্ষণ ধইরা লেকচার মারটাছেন কিছু কইতেছি না।"



চাচা বলেন: " কিছু বললেই সেটাকে লেকচার বলে উড়িয়ে দেওয়া কোথা থেকে শিখছ? লেকচার দেয়াটা তো খারাপ না তবে লেকচার শুনে সেটা না মানাটা খারাপ।লেকচার বুঝতে হয় যদিও এই যোগ্যতা কিছু লোকের হয় না।"



বড়ভাই বললেন: "চাচা আপনি আর কথা বইলেন না।"



চাচা বললেন: দেখ বাবা সরকার তোমাদের USE করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করবে,জনগণের মনযোগ অন্যদিকে নিয়ে যাবে আর নিজেরা নিজেদের দোষ ঢাকবে তা তো হয় না। এই ৪ বছরে এরা যা করছে জনগণ কি এসব ভুলে যাবে? ১৯৫২ তে পাকিস্তান সরকার কেন আমাদের হাতে ক্ষমতা দেয়নি এইবার বুঝতেছি।কারন তারা জানত দেশ চালানোর যোগ্যতা আমাদের নাই।

এবার লীগকর্মী একটু এগিয়ে গিয়ে : "ছি ছি ছি ছি ছি ছি ছি ছি.....চাচা আপনি এই কথা বলতে পারলেন?আপনি বলে মুক্তিযোদ্ধা আসিলেন? বঙ্গবন্ধু স্বাধীণতার ঘোষক ভুইলা গেসেন?"



চাচা বললেন: "বঙ্গবন্ধু স্বাধীণতার ঘোষক নন--এটা কি একবারও আমি মুখ দিয়ে বের করেছি?আমি বুঝাতে চাচ্ছি-- যে স্বাধীণতা অর্জন করে সেটা যদি রক্ষাই করতে না পারলাম তো আমার যোগ্যতা টা কি?"



লীগকর্মী: "এখানে স্বাধীণতা রক্ষার কি আছে? আর আপনি কি বলতে চান বঙ্গবন্ধুর কোন যোগ্যতা নাই?"



চাচা: "শেখ মুজিবের যোগ্যতা থাকবে না কেন? না থাকলে সে দেশ স্বাধীণ করে কি করে? যোগ্যতা তার দলের লোকজনের নেই,যদি থাকতই তাহলে গত ৪০ বছরে ধরে এসব দেখা লাগত না।স্বাধীণতার পর থেকে তো এরাই সবার আগে লুটপাট শুরু করছিল।আর এখনো তো দেখতেছি এরা কি করতেছে।"



লীগকর্মী: "কেন বি.এন.পি. লুটপাট করে নাই?"

চাচা: "হ্যাঁ।অবশ্যই করেছে।যখন যে এসেছে সেই করেছে। এজন্যই তো বললাম শুধু রাজাকারদের কথা বলে লাভ কি? আমরা বাঙালীরাও কম নাকি? রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীণ করলাম আর এখন দেখতেছি এরা ক্ষমতা নিয়ে খেউখেউ করতেছে।কুকুর যেমন হাড্ডি নিয়ে মারামারি করে ঠিক তেমনি এরা ক্ষমতা নিয়ে তার চেয়েও জঘন্য কিছু করে।এদের কোন আদর্শ আছে?"



চাচার এ কথা শুনে আমার মনে পড়ে গেল আমরা আগে যে বাসায় ছিলাম ওই জায়গায় আগে ৩ টা কুকুর ছিল।তো সেগুলো স্বাধারণত একসাথেই থাকত,কিন্তু যখনই এদের কে খাবার দেয়া হত বা এরা একটা হাড্ডি পেত সেটা নিয়ে তারা খেউয়া খেউয়ি শুরু করে দিত।আসলেই চাচার কথা সত্য মনে হল....আমাদের দেশর রাজনীতিবিদরা সামান্য ক্ষমতার জন্য যা করে মনে হয় এরা আসলেই "কুত্তার জাত"।আর সাথে এটাও মনে হল বারবার এই লোকগুলোকে ভোট দিয়ে আমরাও নিজেদেরকে এই বিশষ জাতটির সাথে মিলিয়ে ফেলি।

রবীন্দ্রনাথের এক কবিতার দুটা লাইন মনে পড়ে গেল......

"৭ কোটি সন্তানেরে,হে মুগ্ধ জননী,

রেখেছ বাঙালী করে......... মানুষ করনি।"



কথাটা তিনি কেন বলেছিলেন তা শুধু উনিই বলতে পারবেন তা নয়।আমরা বাঙালীরও আন্দাজ করতে পারি কেন এ কথা.....? আর স্বাধীণতার আগে যে দেশের জনসংখ্যা ৭ কোটি ছিল সেখানে স্বাধীণতার ৪০ বছর পরেও কি করে তার জনসংখ্যা ১৫ কোটি হয় আজও বুঝি না! শিক্ষার মূল্য যে কত (!!!) এটাই তার প্রমান বস্‌! সে যাইহোক চাচা তারপর বলছিলেন ..." আজকে তোমরা আন্দোলন করছ,এরপর সফল হলে ঠিকি নিজেরা ঝামেলা করবে।একদল বলবে আমরা আগে আন্দোলন শুরু করেছি আরেকদল বলবে "না আমরা আগে"। এবার এটা নিয়ে মারামারি খুনাখুনি। বাঙালীর বংশের একটা ধারা আছে না? আর শাহবাগ গিয়ে তোমরা কি কর তার খবর রাখিনা ভাবছ।ঐখানে গিয়ে তো মহিলাদের দিকে কানায় কানায় তাকাও,সাথে যে আরও কত কিছু কর তা আর না বলি। তোমাদের দিয়ে কি রাজাকারের বিচারের আন্দোলন মানায়? বাঙালী একটা কিছু পেলেই হয়, না বুঝে দৌড় লাগায়। ঐ জায়গায় এমনভাবে সব ছুটে যাইতেছে মনে হয় যেন কোন উৎসব হইতেছে।বাঙালীর এত্ত হুজুগ যে কোত্থেকে আসে "?!!



এ কথাশুনে লীগকর্মী আর ঐ বড়ভাই দুজনেই মোটামুটি উত্তেজনার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন.." ওই মিয়া আপনি কি বাঙালী না? আপনি তো রাজাকার। আপনার চৌদ্দ গুষ্টি রাজাকার।আপনি ক্যান বাঙালী নিয়ে খারাপ কথা কইলেন?আপনি মুক্তিযোদ্ধা আছিলেন না আপনি রাজাকার ছিলেন।এখন ভান ধরতেছেন।"

আশেপাশের যারা এই দুজনের পক্ষে তাদের মধ্যে কেউ কেউ "তুই রাজাকার....তুই রাজাকার" বলে স্লোগান তুলতে লাগলেন ( শাহবাগে যেভাবে আন্দোলনকারীরা "তুই রাজাকার....তুই রাজাকার" বলে স্লোগান দেন )। বাঙালীর আসল পরিচয় দিচ্ছেন সবাই।



চাচজানের জন্য একটু খারাপ লাগছিল।খারাপ লাগছিল এ কারনে যে...ধরে নিলাম উনি পুরোপুরি ভুল,কিন্তু তাই বলে বাবার বয়সী একটা লোককে সকলের সামনে এভাবে অপমান করতে হবে?আমার অবাক লাগছিল এটা দেখে যে দুজন ওনার সাথে এমন করছেন তাদের ও তো বাবা আছেন।তরুণ সমাজ যতই শিক্ষিত হচ্ছে ততই অসভ্য হচ্ছে ,ততই নীচে নামছে।বাপের বয়সী একজন লোকের সাথে যারা এরকম আচরণ করেন তারা আবার প্রজন্ম চত্বরে গিয়ে রাজাকারদের বিচার চাইছেন ব্যপারটা এখন বেমানান থেকে হাস্যকর লাগছে।এসব লোকদের কারণেই অনেকে এই আন্দোলন নিয়ে বাজে কথাও বলছেন ( যেমন অনেকে শাহবাগ কে এখন মদ-গাঁজাখোরদের আসরও বলে থাকেন )।



ঐ দুইজন চাচাকে বলে যাচ্ছেন....... " আমরা YOUNG GENERATION আন্দোলন করছি বলে আপনাদের হিংসা হইতেছে না? শালা বুইরা....।" গালি বের হওয়া শুরু। খেল তো মাত্র শুরু করল।



চাচা না রেগে বললেন: " আমরা যে আন্দোলন করেছি সেটা তোমরা পারবে না।আমরা পাকিস্তানী সনকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি।তোমরা করতেছ একটা নির্দষ্ট দলের বিরুদ্ধে।আমাদের আন্দোলনে পুলিশ অন্তত এভাবে নিরাপত্তা দেয়নি।তোমাদের আন্দোলনে পুলিশ পাহারা দেয় এমনভাবে যেন এখানে প্রধানমন্ত্রী এসেছেন।"



এবার ঐ দুজন এ কথা শুনে উত্তেজনার পারদ আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে বললেন....." চাচা আপনি কি একটু বেশী বকতেছেন না?"



চাচামিয়া অনেকক্ষণ সহ্য করলেন মনে হয় আর পারলেন না।একটু রেগে গিয়ে বললেন...."বকতেছি মানে?আমি কি ভুল বলছি?"

চাচামিয়ারে ক্ষেপতে দেখে ঐ দুজনও একটু গরম হলেন।ওনাদের ভাবখানা এরকম যেন কোন একটা শিবিরকর্মী হাতে পেয়েছেন এখন লগি বৈঠা নিয়ে পিটিয়ে মারবেন যেমনটা করেছিলেন ৯১১ এ এক শিবিরকর্মীকে।চাচামিয়াকে আমি দিব্যি দেখছিলাম ( মনে মনে ) শাহবাগের বানানো ফাসির মনচে ঝুলছেন।

আমার বাবার বয়সী একটা লোককে এভাবে নাস্তানাবুদ হতে দেখে আর চুপ থাকলাম না। ভাই দুজনকে অতি ভদ্র ভাবে বললাম যে "ভাইজান চাচাজান না হয় একটু ভুল করছে।উনি তো আপনার বাপের বয়সী।থাক না ,ঝামেলা না করেন,খারাপ কিছু তো বলে নি,,আপনাদের কে তো সমর্থন দিছেই.......

পুরোটা বলতে পারি নি তার আগেই লীগকর্মী ঘেউঘেউ করে উঠলেন --"ঐ মিয়া আপনি আবার বাঁ হাত ঢুকান ক্যা? আমাগো আন্দোলন পছন্দ না হইলে ...........মারেন গিয়া।যান পাকিস্তান যান গিয়া।

আমি থতমত খেয়ে গেলাম।বললাম কি আর বুঝল কি? আর উনি যেভাবে তেড়ে আসলেন তাতে নিজেকে একবার শাহবাগের ফাসির মনচে মনে মনে দেখলাম আর ভয় পেয়ে গেলাম।

চাচামিয়াকে বাচাতে গিয়ে কি বিপদেই না পড়লাম!!আমি তাকে বললাম..."ভাইজান দয়াকরে উত্তেজিত হবেন না। মাথা ঠান্ডা রাখুন। আমি তো আর আপনাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছি না।আমিও তো রাজাকারদের বিচার চাই। শুধু রাজাকার না যেকোন অপকর্মের অপরাধীর বিচার চাই।"

খুব সম্ভবত ওনারা দুজনই চাচা জানের সাথে তর্ক করে বেশী উত্তেজিত হয়ে পড়েন ফলে তারা আমাকে পেয়ে আমার উপরেই রাগ ঝাড়তে চাইলেন।এবার তারা একসাথে আমাকে মারবার জন্য এগিয়ে এলেন।লীগকর্মীর কাছে থেকে একটা ফ্লাইং কিক খাবার আশা করছিলাম।কিন্তু না।আশেপাশের মানুষজন থাকায় এ যাত্রায় বেচে গেলাম।আমি আর সেখানে থাকতে পারলাম না।তবে যখন ঘটনাস্থল ত্যাগ করছিলাম তখন লীগকর্মী আমাকে একটা গালি দিলেন , '" যাহ _ _ _ _ পোলা। তোর মা রে _ _ _।"



বাসায় ফিরছিলাম আর ভাবছিলাম যে বিশেষ ব্যক্তি আরেকজনের মা কে নিয়ে এরকম গালি দিতে পারেন ওনাকে দিয়েই তো রাজাকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে।জানিনা এদেরও মা বোন আছে কিনা।আর থাকলেও এসব লোকজন যে ঘর থেকে আসেন ওসব ঘরের মা বোন কেমন হবেন এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।আর এসব লোকজনকে যিনি পেটে ধরেছেন তার কোয়ালিটি যে ওরকম লেভেলের হবে সেটাই স্বাভাবিক। এরাই তো আমাদের ফিউচার।



পথিমধ্যে আমার এক সহপাঠীর সাথে দেখা।সেও যাচ্ছে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে।আমাকে দেখে বলল..."কিরে যাবি শাহবাগে?"

এই ছেলেকে আমি স্কুল লাইফ থেকেই চিনি।আমাদের স্কুলে ছেলেমেয়ে একসাথে ক্লাস হত। সে যখন আমাদের সাথে ক্লাস করত তখন সবসময়ই মেয়েদের দিকে একটু অন্যভাবে তাকিয়ে থাকত।আর তার মুখে আমি কোনদিন মেয়েদের ব্যাপারে RESPECTFUL কোন শব্দ শুনি নি।তার আলোচনার তালিকা থেকে স্কুলের ম্যাডাম হতে শুরু করে ওমুকের মা-বোন ও বাদ যায় নাই।সবারই তো মা বোন আছে ।এরা হয়তো ভুলে যায় তাদেরও আছে।মনে পড়ে এই ছেলে একবার এক মেয়েকে প্রেম নিবেদন করে রিফিউসড হওয়ায় মেয়েটিকে সে তার নিজের প্যান্ট খুলে পশ্চাদ্দেশ দেখিয়ে দেয়। হায়রে!! এতটুকু লজ্জাবোধ বুঝি তার হল না? ওর নিজের বোনকে যদি কেউ এভাবে পু _ _ দেখিয়ে দিত তবে বুঝত সে কি জঘন্য কাজটাই না করেছে। অদ্ভুত লাগছিল এটা ভেবে যে এরাও বুঝি রাজাকারদের বিচার চাইতে যায়। এদেরকে কি এ কাজে মানায়? রাজাকারদের চেয়ে এরও বা কম কিসে? ১৯৭১ এ রাজাকাররা সুযোগ পেয়েছিল ক্ষমতা পেয়েছিল বলেই অনেক মা বোনের ইজ্জত নিয়েছিল।আর এরা ? এরা সুযোগ না পেয়ে যা করে সুযোগ আর ক্ষমতা পেলে না জানি কি করত? হুম.....রাজাকাররা এ দেশে তাদের কিছু বীজ বুনে দিয়ে গেছে । দুঃখ করেই বলতে হয় "হায় রে বাঙালী"..........।

শাহবাগে আমিও একবার গিয়েছিলাম আন্দোলনকারীদের সাথে যোগ দিতে।যাবার আগে একজনের কাছে শুনেছিলাম যে ওখানে নাকি অধিকাংশই দুনিয়ার যত তৃতীয় শ্রেণীর লোকজন আর বেকারগণ উপস্থিত হয়েছেন।আমি নিজে গিয়ে তার অনেকখানি সত্যতা পেলাম আর এখন এই ছেলেকে ওখানে যেতে দেখে এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম।একটা ভালো আন্দোলন যেটাকে শুভ বিপ্লব ভেবেছিলাম আজ তাকে ক্রমশই পাতানো খেলা মনে হচ্ছে আর মনে হচ্ছে এদেশের বুঝি কিছুই হবে না!!? স্বাধীণতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করাটাই বড় কঠিন। যাই হোক এই ছেলের প্রস্তাব সবিনয়ে "না" করে দিলাম।আমার ঘরে কাজ আছে।সে চলে গেল, আমিও চলে গেলাম।



"রাজাকারসহ সকল অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই , সে যে দলেরই হোক না কেন..............আর তারা যে বীজগুলো বুনে দিয়ে গেছে তাদেরকেও আর দেখতে চাই না এই বাংলার মাটিতে।"

























মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.