নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।

জিপসি রুদ্র

লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।

জিপসি রুদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন প্রগতিশীল মেয়ের গল্প।

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৫০

মেয়েটির ফেইসবুকে প্রগতিশীল এক্টিভিটিস দেখে ছেলেটি মেয়েটির প্রতি আকৃষ্ট হয়। তারপর আস্তে আস্তে ঘনিষ্ঠ হয়। এইখানে ওইখানে আড্ডা দিতে দিতে চা বিড়ির ফাঁকে খুব সুন্দর চমৎকার প্রেমও হয় একসময়। প্রেমের পর এই ফ্ল্যাট ঐ ফ্ল্যাট ঘুরে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।

বিয়ে করার পর পর ছেলেটিকে অপরিচিত মনে হয় মেয়েটির। মেয়েটি বুঝতে পারে ছেলেটি প্রেমিক থাকা অবস্থায় তার যে বিষয় গুলোকে পছন্দ করতো বিয়ের পর সেই একই বিষয়ের উপর ছেলেটি প্রচন্ড বিরক্ত। মেয়েটির ইনবক্স, ফোন সবকিছুতেই ছেলেটি নজরদারি করতে শুরু করে। নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে মেয়েটির স্বাভাবিক জীবন যাপন।

মেয়েটি ছেলেটির কাছে জানতে চায়, আমার প্রগতিশীল এক্টিভিটিস দেখেই কিন্তু তুমি আমাকে পছন্দ করেছিলে। আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলে। আমার যাপিত জীবনকে ভালোবেসেই আমার প্রেমে পরেছিলে। বন্ধু বান্ধবদের সাথে টং-এ চা বিড়ি খাওয়া, আড্ডা দেওয়া এমনকি দলবেঁধে ঘুরতে যাওয়াতে তোমার কোন সমস্যা ছিলোনা। আমার ফোনে কার ফোন আসে, কে আমাকে ইনবক্স করছে, আমি কাকে ইনবক্স করছি, কাকে আমি রিপ্লাই দিচ্ছি, কে আমার স্ট্যাটাসে লাইক, কমেন্ট কিংবা লাভ রিয়েক্ট দিচ্ছে, কাকে আমি লাইক কমেন্ট কিংবা রিয়েক্ট দিচ্ছি- সেইসবে তোমার কোন আগ্রহ ছিলোনা। কিন্তু বিয়ের পরে আমার এইসব বিষয়ে তোমার এতো সমস্যা হচ্ছে কেনো?

ছেলেটি উত্তরে বলে, তুমি এখন আমার বউ। আমার বংশের ইজ্জত। তুমি আগে যা ইচ্ছা তুমি তাই করতে পেরেছিলে। কিন্তু তুমি এখন যা ইচ্ছা তা করতে পারোনা। তোমার যাপিত জীবনের সাথে এখন আমার বংশের মান সম্মান জড়িত। তুমি বিয়ের পরে ইচ্ছা করলেই তোমার বন্ধু বান্ধবের সাথে টং- এ বসে আড্ডা ফাড্ডা দিতে দিতে চা বিড়ি খেতে পারোনা। চাইলেই এখন বন্ধু বান্ধবের সাথে দলবেঁধে এখানে সেখানে ঘুরতে পারোনা! এখন তোমার মন যা চাচ্ছে তা পাবলিক্যালি বলতে পারোনা, লিখতে পারোনা! তোমার ফোনে এখন যেকেউ চাইলেই কল করতে পারেনা আর তুমিও এখন চাইলেই যে কাউকে কল করতে পারোনা! ইনবক্স তোমার এখন যে কারো জন্য আগের মতন উন্মুক্ত থাকতে পারেনা!- কারণ এখন তুমি একজনের বউ কারণ তুমি এখন একটি বংশের মান সম্মান ইজ্জত। তোমার উপর মানে তোমার যাপিত জীবনের উপর এখন অনেক অনেক কিছুই নির্ভর করে।- তাই আমার এতো নজরদারি। তাই আমার এতো সমস্যা।

মেয়েটি বুঝতে পারে, যে ছেলেটিকে প্রথাবিরোধী বা সমাজ সংস্কারক হিশেবে বন্ধু, প্রেমিক পরে জামাই বানিয়েছিলো সেই ছেলেটি আদতে প্রথাবিরোধীতো নয়ই সমাজ সংস্কারকতো বহুত দূরের বিষয়! এতোদিন যাকে চিনেছিলো মেয়েটি সেই ছেলেটি আদতে উদার মন-মানষিকতাকে ঢাল হিশেবে ব্যবহার করে স্রেফ বিবাহপূর্ব যৌনতাকেই উপভোগ করতে চাইতো! কিন্তু আদতে ছেলেটি যা কিছু যেভাবে চলছে তা'কিছু তেমনই চলুক- টাইপ চিন্তা নিয়ে জীবন যাপন করতে চায়। যার মধ্যে সংযোজন বিয়োজনের কোন চিন্তা নাই। অন্যের আরোপিত জীবন তরিকায়-ই তার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ। নিজের বা নিজস্ব কিছু যে থাকতে পারে-তা তার মাথার বহুত উপরের বিষয়। বুঝাইলেও ছেলেটি বুঝবেনা। বরঞ্চ পরিস্থিতি আরো বেশি ঘোলাটে হবে।

মেয়েটি চিন্তা করে, এখন কী করবে? তার কাছে দুইটা পথ। এক। ছেলেটির সবকিছু মাইনা নিয়া ছেলেটির মতন কইরা বাদবাকি জিন্দেগী কাটাই দেওয়া। দুই। সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে মেয়েটির একক লাইফে ফেরত যাওয়া। যে জীবন সম্পূর্ণ তার একার ছিলো। যে জীবনে সে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারতো।

মেয়েটি বুঝতে পারে, প্রথম বিষয়টা গ্রহন করলে মেয়েটির নিজের বলে আর কিচ্ছুই থাকবেনা। অন্যের যা কিছু- তাকেই তার গ্রহন করে নিতে হবে। হারিয়ে যাবে মেয়েটির জীবন, চিন্তা এবং মতাদর্শ। দ্বিতীয় বিষয়টা যদি গ্রহণ করে তাইলে মেয়েটির জীবন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে যাবে। কারণ সিঙ্গেল লাইফ লিভিং নট ইজি। ইটস আ ভেরি ডিফিকাল্ট ফর আ উইমেন। তার অনেক বান্ধবীকে সে জানে যারা ডিভোর্সের পর অনেক কষ্টের এবং মানবেতর জীবন যাপন করছে! তাদের অনেকের বাচ্চা আছে! যদিওবা তার এখনো বাচ্চা নাই কিন্তু সিঙ্গেল লাইফের কষ্টটা কী?- সে তা খুব ভালো ভাবেই জানে! টাকার সমস্যা, খাওয়ার সমস্যা, থাকার সমস্যা, চলার সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত সিঙ্গেল উইমেনের জীবন!

সবচাইতে বড় প্রশ্ন, এখন যাকে দীর্ঘদিন চেনার পর বিয়ে করেছে তাকে এখন অপরিচিত মনে হচ্ছে। একে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করলে কিংবা লিভ ইন করলে যে সম্পর্ক টিকে যাবে- তার কী গ্যারেন্টি? সেই ছেলেটিও যে একটা সময় গিয়ে এই ছেলের মতন আচরণ করবেনা, এই ছেলেটির মতন করে চিন্তা করবেনা !- তার কী নিশ্চয়তা? তখনতো তাকেও ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে! সেক্ষেত্রেতো মেয়েটির সম্পর্কের সংখ্যায় কেবল বাড়বে। কিন্তু তার সম্পর্কতো আর টিকবেনা। বা সে যে আরামদায়ক, উপভোগ্য, সম্পূর্ণ নিজের মতন করে অন্যকে নিয়ে বাঁচতে চাওয়ার যে স্বপ্ন তার মনের গহীন ভিতর- সেটিতো আর বাস্তবায়ন হবেনা! আর মেয়েটি বিশ্বাস করে, সম্পর্ক ভাঙলে কেউই জিতেনা দুইজনই হারে! তাই সম্পর্ক ভাইঙা দেওয়ার চাইতে সম্পর্ক টিকাই রাখারেই সে বেশি যৌক্তিক মনে করে!

মেয়েটি অংক মিলাইতে পারেনা! মেয়েটি সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা! কিন্তু মেয়েটি বুঝতে পারে, সে এখন যেভাবে জীবন যাপন করছে সেটি তার জীবন নয়। মেয়েটি এখন বুঝতে পারে, মেয়েদের নিজস্ব কোন জীবন নেই। মেয়েদের নিজস্ব কোন চিন্তা নেই। মেয়েদের নিজস্ব কোন ঘর নেই। যে ঘরে সে থাকে তা হয়ত তার বাপের নয়তো তার জামাইয়ের। মেয়েটি এখন বুঝতে পারছে, মেয়ে হয়ে জন্মটাই একটা অপরাধ! যে অপরাধের মাশুল মরার আগের দিত পর্যন্ত দিয়ে যেতে হয়!

মেয়েটির এখন একটাই চাওয়া, তার যেনো একটা ছেলে বাচ্চা হয়! তাইলেই যে জীবন মেয়ে হয়ে সে যাপন করছে সেই জীবনের অবসান হবে। মেয়ে জন্ম দিলে সেও হয়তো তার মতন ধর্ম, সমাজ এবং রাষ্ট্রের নিয়মনীতির কাছে পরাজিত হয়ে সারাজীবন নিরবে নিভৃতে কেঁদে কেঁদে কিংবা আপসোস করতে করতে জিন্দেগী শেষ করবে...!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:০৫

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: কেন এই মেয়েটি তার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খুশি নয় ?শুধুমাত্র কি নারী স্বাধীনতার জন্য ?
যদি সে টং দোকানে বয়ফ্রেন্ডের সাথে চা খায় বা অন্যের সাথে যখন যেভাবে খুশি যৌনমিলনে সক্ষম,সে জা চায় তার স্বামী তাকে সেভাবে ছেড়ে দেয় তবেই কি তার স্বাধীনতা ?
এই টাি ভদ্রতা বা তথাকথিত স্বাধীনতা ? এই জাতীয় জীবন কি গ্রহণযোগ্য ?
তিনি তাসলিমা নাসরিনের মতো হতে পারেন ।সে সেক্স করতে পারে, উপভোগ করতে পারে এবং অনেক পুরুষের সাথে তার জীবন কাটাতে পারে ।কে তাকে এই কাজ করতে নিষেধ করে ?
অবশেষে তিনি তার প্রত্যাশা মতো একটি স্বাধীন জীবন যাপন করতে পারেন যদি সে এই সমাজ, পরিবার ত্যাগ করে এবং এড়িয়ে চলে ।

২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০২

নীল আকাশ বলেছেন: এই লেখাটা একপেশে। বেশি বেশি করে নারীবাদী লেখা পড়ার ফলাফল এটা।
তবূও লাইক দিয়েছি কারণ কয়জনই বা এইসব লিখতে পারে?
ব্যক্তি স্বাধীনতা মানেই যথেচ্ছা করে বেড়ানো নয়!
ব্যক্তি স্বাধীনতা মানেই যাকে তাকে শরীর দিয়ে বেড়ানো নয়।
ব্যক্তি স্বাধীনতা মানেই সমাজের প্রচলিত নিয়ম কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন নয়।
একসাথে থাকতে হলে সবাইকেই কম্প্রোমাইজ করে চলতে হয়।
কিন্তু সেটা কোন দিনও নিজেকে বিকিয়ে দেয়া বলে না।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা রইল।

৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: একটি বাস্তব গল্প।

৪| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:১৮

জগতারন বলেছেন:
জিপসি রুদ্র আমার প্রিয় লেখকদের একজন।
আজকের এই পোষ্টটি প্রবন্ধ নাকি গল্প !
কিন্তু দুর্দান্ত এক লিখা পোষ্ট।
ইহা পড়িয়া প্রথমই আমার মনে অভিশপ্ত তসলিমা নাসরিনের কথা আসিয়াছিল।
যাহা ব্লগার মোহামমদ কামরুজজামানইতঃপূর্বে উল্লেখ করিয়াছেন।
উপরে তিন জন ব্লগার যাহ মন্তব্য করিয়াছেন তা তাতপর্যপূর্ন;
তবে ব্লগার নীল আকাশ -এর মন্তব্য খুউবই যুক্তিপূর্ন।

৫| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩৪

জগতারন বলেছেন:
একটি পাখী যদি একটি গাছের ডালে বসিয়া গাছকে বলেঃ
'গাছ তোতার স্বাধীনতা নাই আমার মতো'
তখন গাছ বলিয়া থাকে;
"পাখী' রাখো তোমার মুর্খ স্বাধীনতা,
আমি স্বাধীন ও খুউব শান্তিতেই আছি, আমি ছাড়া তোমার স্বাধীনতার কোনই মূল্য নাই"
এই যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতেই আমাদের সংসারে সংসার ধর্ম রক্ষা করিয়া আমাদের সমাজে মেয়েরা খুউবই শান্তিতেই আছে।
সংসার ধর্মের বাহিরে গিয়া যদি তসলিমা নাসরিনের মতো জীবন পছন্দ করে তবে তারা অভিশপ্ত ও পতিত।

তাই গুনি জনে কহেনঃ
সংসারে নারী;
মা মাথার মুকুট.... মায়াময় স্বরণীয়৷
স্ত্রী হৃদয়ের রানী... বসন্ত বরণীয়৷
কন্যা কলিজার টুকরা.... চির আদুরী৷
আর বোন চির-শুভাকাংখী... মমত্ব আর মায়ার মাধুরী৷
পুরুষের উচিত প্রত্যেক সম্পর্কের প্রতি শক্ত হাতে সঠিক দায়িত্ব পালন করা৷

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.