![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখাটি তথ্য নির্ভর নয়। অনেকটা বাস্তবতার নিরিখেই লিখা।
মানুষের দেশ ত্যাগ নির্ভর করে তার মানসিকতার উপর। কিছু আছে দেশের প্রতি প্রচন্ড ভালবাসা কিন্তু বাস্তবতার কারনে থাকা হয়না। আমি এখানে দেশ বলতে স্বাধীন রাষ্ট্র, গ্রমিীন জনপদ, শহর সব কিছুকেই বুঝানোর চেষ্টা করেছি। গ্রাম থেকে থানা শহর, থানা শহর থেকে জেলা শহর, জেলা শহর থেকে বিভাগীয় শহর, বিভাগীয় শহর থেকে রাজধানী এবং রাজধানী শহর থেকে ভিন দেশে। সবই মুলত দেশ ত্যাগ বা শিকর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া।
দেশ ত্যাগ বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে । বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে সুযোগ সুবিধার অভাব থেকে, কিছু আছে উন্নত ভাগ্যান্বেষন, কিছু আছে বিভ্রান্তি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাক্তি নিজেই বাধ্য হয় তার অপকর্মের কারনে, আবার কিছু মানুষ যায় পেট বাঁচানোর তাগিদে, কিছু মানুষ আবার উন্নত জীবন যাপনের জন্যও দেশ ত্যাগ করে। আবার জাতি ধর্ম বর্ন গোত্র নির্বিশেষে দেশ ত্যাগ করে থাকে। এর বাইরেও কিছু মানুষ আছে যারা সংসার ধর্ম ত্যাগ করে বৈরাগ্য গ্রহন করে, ধর্ম প্রচারেও মানুষ দেশ ত্যাগ করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি চিন্তা করি তবে চিত্রটা আরও পরিষ্কার হবে। ৪৭ বা তারও আগে দেশ ত্যাগের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। পড়া লেখা, ব্যবসা বানিজ্য, সুন্দর জীবন যাপন ছিল মূখ্য উদ্দেশ্য। যার প্রকৃতি ছিল অনেকটাই ভিন্ন। সবটাই ছিল নিজ ভূমি, শাষক ছিল এক এবং অভিন্ন। তখন ঢাকাকে কোন শহর মনে করা হতো না। এখানে শিক্ষা স্বাস্থ্য সেবা উন্নত জীবন কিছুই ছিল না। তখন উন্নত জীবন ছিল বিলেত খ্যাত বর্তমান ইউকে আর কলিকাতা ও দিল্লি শহর। বাবু বা সাহেবরা শহর বলতে লন্ডন, কলিকাতা এবং দিল্লিকেই বুঝত। তাই দেশ ত্যাগের ঝোকটা ঐদিক গুলোতেই ছিল। যারা প্রতিষ্ঠা পেয়ে যেত তারা শিকরের সন্ধানে আর ফেরত আসার চিন্তা করত না। সেটাই ছিল স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিছু মানুষ যাদের মধ্যে নিয়ম ভাঙ্গার প্রবনতা থাকত তারা আবার শিকরের টানে ফেরত চলে আসত । সেই সব অগ্রসরমান ব্যাক্তিরাই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে দেশ এবং দশের উপকারে এসেছে। মানুষকে নিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জিবীত করেছে বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে এবং তারাই অমর হয়েছে। শিকর ছিড়ে যারা বের হয়ে গেছে তারা তাদের নামের পাশে অমরত্ত্ব লেখাতে পারেনি।
তারই ধারাবাহিকতায় ৪৭ দ্বিজাতী তত্ত্বের ভাগাভাগির পর যারা দিল্লি বা কলকাতায় এই অঞ্চলের মানুষ প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল তারা আর ফেরত আসেনি। অনেক রথি মহারথি রাজা জমিদার যাদের স্থায়ী নিবাস ছিল বর্তমান রাজধানী শহর ঢাকার মতই দিল্লি বা কলকাতায়। অনেকে আবার শিকর ছেড়ে ঢাকাতে বা এই অঞ্চলে বসতি গড়েছে। সেই থেকে চলছে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ। দৌড়ানোর অভিযোগ বিতারিত করার অভিযোগ। শান্তিপূর্ন স্বহাবস্থানে বিশ্বাসী হলে এরকম অভিযোগের কোন ভিত্তি খুজে পাওয়া যাবে না। দেশ ত্যাগ যার যার নিজস্ব ব্যাপার। দেশ্য ত্যাগের কারন এবং দেশ ত্যাগ সবটাই ব্যাক্তির নিজস্ব। কিছু ব্যতিক্রম সব কিছুতেই থাকে যা নিয়মের মধ্যে পড়ে না।
কথিত আছে এই ভুখন্ডে সনাতম ধর্মালম্বীদের প্রাধন্য ছিল। কিন্তু ঐতিহাসিক নিদর্শন মতে বা ইতিহাসবিদরা হয়তো বলবেন এ অঞ্চলের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের আদি নিবাস। তাদের নিদর্শন বা সৃষ্টিকে ধ্বংস করতে কোন না কোন অপশক্তি বা শক্তি কাজ করেছে। সেটা হতে পারে পাল বংশ বা সেন বংস। এই বিতর্কে জড়ানো আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার কথা স্পষ্ট, ব্যাক্তি নিজেই তার দেশ ত্যাগের নিয়ামক শক্তি। তার কৃতকর্ম উচ্চাভিলাশ হীনমন্নতা নিরাপত্বার শংকায় ভোগা এ সবই মুল কারন।
শিকরের মায়া ছিন্ন করতে এক ধরনের বিকার বা অপরাধবোধ কাজ করে। বিকারগ্রস্থতাই কোন ব্যক্তিকে শিকর ছিড়ে সীমানার বাইরে নিয়ে যায়। যা এখনও চলমান। ধর্মের দোহাই দিয়ে এবং সাম্প্দায়িকতার অজুহাতে যারা দেশ ত্যাগি হয় তাদের সাথে অন্য দেম ত্যাগিদের খুব একটা পার্থক্য নেই। অজুহাত একই রকম হবে। যেমন ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ ত্যাগ দেখেছি, ৭৫ এর মুজিব হত্যার পর দেশ ত্যাগ দেখেছি আবার ২০০৮ সালে জোট সরকারের পতনের পর দেশ ত্যাগের নমুনা আমরা দেখেছি। অজুহাত নিরাপত্তা অপরাজনীতি দলীয়করন চক্রান্ত ইত্যাদি ইত্যাদি। ধর্মের কারনে যারা দেম ত্যাগ করে তারাও একই ধরনের অজুহাত দাড় করায়।
উচ্চশিক্ষা, উন্নত জীবনযাপন, পোষ্যদের ভবিষ্যত এসমস্ত কারনে যারা দেশ ত্যাগ করে তাদেরও অজুহাত পরিবেশ নাই, নিরাপত্তা নাই, সন্মান নাই, জীবন ঝুকিপূর্ন ইত্যাদি ইত্যাদি। আর যারা ধর্মান্ধতা বা ধর্মসংস্কার এর নামে দেশ ত্যাগ করে তাদের অভিযোগ বাক স্বাধীনতা নাই, ধর্মের শাসন নাই, মুক্তমনাদের বাসযোগ্য দেশ নয় ইত্যাদি অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ। আবার যারা দুর্নীতি গ্রস্থ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, অপশক্তি লালন বা তোষন করে তাদের ভিসা অন লাইনে স্বল্প সময়ে দেশ ত্যাগের। এটাই রুঢ় বাস্বতা।
দেশ ত্যাগে অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করলে দেখা যাবে যারা শিকর থেকে ছিটকে পড়েন তাদের দেশ ত্যাগে দেশ বা রাষ্ট্র অর্থনৈতিক ভাবে উপকৃত হয় খুবই কম। কারন যারা স্থায়ি ভাবে দেশ ত্যাগ করে তারা দেশ থেকে নিয়েই যায় দেশকে কিছুই দেয় না। এদের মধ্যে উচ্চ আয় সম্পন্ন শিক্ষিত ব্যবসায়িরাই বেশী। আর নিম্ন মধ্যবিত্ত বা গরীব শ্রেনীর মানুষ যারা পেট বাাঁচাতে দেশ ত্যাগ করে আবার শিকরের টানে ফিরে আসে তারাই মুলত দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখে।
এগুলোই দেশ ত্যাগের মাহাত্ত্ব এবং বাস্তবতা।
©somewhere in net ltd.