![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘‘আত্মত্যাগ সব সময় ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও বটে...’’
যে সমাজ মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাহর ওপর প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয় সেই সমাজকেই কেবল প্রকৃত ইসলামী সমাজ বলা যেতে পারে। অর্থাৎ সমজের মানুষের চিন্তাচেতনা, শিল্প-সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান, আইন-কানুন তথা সব কাজের মধ্য দিয়েই যারা প্রমাণ করে যে, তারা একমাত্র আল্লাহরই গোলামি করে যাচ্ছে-এমন সমাজই ইসলামী সমাজ বলে বিবেচিত। আর কালেমা শাহাদাত এ ধরনের আল্লাহর দাসত্বমূলক জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করে নেয়ার মৌখিক স্বীকৃতি দেয় এবং বাস্তবজীবনে তা পালনের পদ্ধতি নির্ধারণ করে। আল কুরআনে সূরা আন নাহলের ৫১-৫২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বললেন, ‘তোমরা দুই উপাস্য গ্রহন কোনো না, উপাস্য তো মাত্র একজনই। অতএব আমাকেই ভয় করো। যা কিছু নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে আছে, তা সবই তাঁর জন্য নিবেদিত। এরপরও তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করবে?
ঠিক তেমনিভাবে কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর শক্তি-ক্ষমতা ছাড়া অন্য কারো শক্তি-ক্ষমতা, রাজনৈতিক প্রতিপত্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে কিংবা কোনো ধরনের জাহেলি আদর্শের সাথে আপস করে, তাহলে সে নিরঙ্কশভাবে আল্লাহর গোলামি স্বীকার করে নেয়নি। কেননা, আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তুমি বলো : আমার নামাজ, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। তাঁর কোনো অংশীদার নাই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল’ (সূরা আনআম : ১৬২-১৬৩)।
এরপর যদি কোনো ব্যক্তি তার জীবনের কিছু অংশ মানুষের বানানো আইনানুসারে পরিচালনা করে, তাহলে সেও আল্লাহর দাসত্ব থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়ে। যেমন, বর্তমান সমাজের মানুষের নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত, বিয়ে-তালাকের ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন-কানুনের কিছু মানলেও তাদের সমাজনীতি, রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন, কোর্ট-কাচারি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতিসহ অন্যান্য সব ক্ষেত্রেই নির্বাচিত কিছু লোকের রচিত আইন-কানুন মেনে চলছে, যা প্রচ্ছন্ন শিরক। তারা এসব নির্বাচিত ব্যক্তিদের আইন রচনার ক্ষমতায় সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর শরিক সাব্যস্ত করেছে। এদের লক্ষ করে আল্লাহ তায়ালা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন, ‘তাদের কি এমন শরিক আছে, যারা এদের জন্য এমন কোনো জীবনবিধান প্রণয়ন করে দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ তায়ালা দেননি?’ (সূরা শূরা : ২১)।
‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা’-(সূরা হাশর : ৭)। এই মূলনীতি থেকে ইসলামী সমাজের সদস্যরা জীবনচলার নীতি নির্ধারণ করবে এবং সামগ্রিক জীবনে আল্লাহর দাসত্বের প্রতিফলন ঘটাবে। আকিদা-বিশ্বাস, আইন-কানুন, রীতিনীতি, শিল্প-সংস্কৃতির কোনো একটি অধ্যায়ও যদি আল্লাহর দাসত্বের অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে ওই সমাজের ইসলাম থেকে বিচ্যুতি ঘটে। কারণ, এর প্রত্যেকটি অধ্যায়ের সাথে কালেমা শাহাদাতের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। এ সম্পর্কের মাঝে সামান্য কোনো ফাটল সৃষ্টি হলেও তা চরম পরিণতি বয়ে আনে। সমাজের সর্বস্তরে এ কালেমার শর্তহীন ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়ন ছঠাড়া ইসলামী সমাজ গঠন করা সম্ভব নয়। তাই এসব সমাজরে গতানুগতিক সদস্য হয়ে এবং মুখে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলে মানুষকে বোকা বানানো যেতে পারে; কিন্তু যিনি সব দেখেন, সব শোনেন, তাঁর কাছে এগুলো কোনো মূল্য বহন করে না।
যারা নিজেদের মন ও জীবনকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো শক্তির আনুগত্য থেকে পুরোপুরি মুক্ত ও পবিত্র করেছে, তাদেরকে নিয়ে একটি উম্মাহ গড়ে তুলতে হবে এবং তারাই ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় সদস্য হওয়ার যোগ্য। তাদের সমাজই কেবল ইসলামী সমাজ হতে পারে, যাদের জীবন হবে কালেমার বাস্তব চিত্র, তারাই হবে এই সংগ্রামী কাফেলার অগ্রনায়ক। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নের্তৃত্বেই প্রথম ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভবিষ্যতেও উল্লিখিত প্রক্রিয়াতেই মুসলিম কমিউনিটিতে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী সমাজব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার এটাই শাশ্বত পদ্ধতি। এই পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে ইসলামী সমাজ গঠন হতে পারে না। তাই সামষ্টিকভাবে সমাজের মানুষেরা সব অপশক্তির আনুগত্য থেকে মুক্ত হতে পারলেই ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। চলমান সমাজে সর্বপ্রকার অন্যায় অপরাধ ভ্যবিচার জূলুম নির্যাতন ও প্রাকৃতিক আজাব-গজব থেকে পরিবার, সমাজ তথা দেশকে মুক্ত রাখতে চাইলে মহান আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর দেখানো পথের আনুগত্য করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।
ইসলামে জুলুম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জুলুম বা অত্যাচার হলো কারো প্রতি অন্যায় আচরণ করা। এটা ব্যক্তির সম্পদ আত্মসাৎ, শারীরিক আক্রমণ বা সম্মানহানির মাধ্যমেও হতে পারে। মানুষের ওপর অন্যায়, অবিচার ও নির্যাতন ইসলামের মানবাধিকার বিধানে গ্রহণযোগ্য নয়। পবিত্র কোরআনে সূরা ইবরাহিমে আল্লাহ জাল্লেহ শানহু বলেন, জালেমদের কর্মকান্ডে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনো উদাসীন মনে করো না। তবে তিনি তাদের শুধু একটি নির্দিষট দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন চক্ষুগুলো বিস্ফোরিত হবে, তারা মাথা উর্ধ্বমূখী করে উঠিপড়ি করে দৌড়াতে থাকবে, তাদের চোখ তাদের নিজেদের দিকে ফিরবে না এবং তাদের হৃদয়গুলো দিশেহারা হয়ে যাবে। মানুষকে আজাব সমাগত হওয়ার দিন সম্পর্কে সাবধান করে দাও, যেদিন তাদের কাছে আজাব আসবে, সেদিন জুলুমবাজেরা বলবে-হে আমাদের প্রভু! অল্প সময়ের জন্য আমাদের অবকাশ দিন, তাহলে আমরা আপনার ডাকে সাড়া দেবো (অন্যর ওপর জুলুম করব না) এবং রাসূলদের অনুসরণ করব। তোমরা কি এর আগে কসম খেয়ে বলতে না যে তোমাদের পতন নেই! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানেই বাস করছ এবং সেসব জালেমমের সাথে আমি কেমন আচরণ করেছি, তা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হযে গেছে। উপরন্তু আমি তোমাদের জন্য বহু উদাহরণ দিয়েছি’- (আল-কোরআন)।
রাসূল (সা.) আরো বলেন, ‘কেউ যদি তার কোনো ভাইয়ের সম্মানহানি কিংবা কোনো জিনিসের ক্ষতি করে থাকে, তবে আজই (দুনিয়াতেই) তার কাছ থেকে তা বৈধ করে নেয়া উচিত (অর্থাৎ ক্ষমা চেয়ে নেয়া ও ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত) এবং সেই ভয়াবহ দিন আসার আগেই এটা করা উচিত, যেদিন টাকাকড়ি দিয়ে কোনো প্রতিকার পাওয়া যাবে না; বরং তার কাছে কোনো নেক আমল থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ হিসেবে মজলুমকে ওই নেক আমল দিয়ে দেয়া হবে এবং তার কোনো অসৎ কাজ না থাকলেও ওই মজলুমের অসৎ কাজ তার ওপর বর্তানো হবে’ (সহিহ আল বুখারি ও জামে তিরমিজি)। একটি হাদিস কুদসিতে রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেছেন; হে আমর বান্দারা! আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও তা হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পরের ওপর জুলুম করো না’-(সহিহ মুসলিম, জামে তিরমিজি)।
ইসলামে জুলুম বড় অন্যায় বলে বিবেচিত। ইসলাম সব সময় জুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ইসলাম বলেছে, আল্লাহর হক আদায় না করলে আল্লাহ ক্ষমা করে দিলেও বান্দার হক বিনষ্টকারীকে আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না, যতক্ষণ না যার ওপর জুলুম করা হয়েছে সে ক্ষমা করে দেয়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে জুলুম-নির্যাতন এতো তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে, যার প্রতিকার এখনিই করা উচিত। এ জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের একসাথে রুখে দাঁড়াতে হবে।
©somewhere in net ltd.