নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক চারিত্রিক সনদপত্র প্রাপ্ত

হাবিব রহমানন

সকল প্রকার চলচ্চিত্র দেখতে ও চলচ্চিত্র নিয়ে লেখতে ভালোবাসি। তাছাড়া কবিতা পড়তে ভালো লাগে, মাঝেমাঝে নিজেও দু-এক লাইন লেখার চেষ্টা করি। fb/bd.r.habib

হাবিব রহমানন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভ জন্মদিন অপু ট্রিলজির স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়!

০২ রা মে, ২০১৭ রাত ৮:৩৫


“সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা না দেখা অনেকটা পৃথিবীতে বসবাস করে সূর্য ও চাঁদ না দেখার মতো”
_আকিরা কুরোসাওয়া (জাপানের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক)


শুভ জন্মদিন সিনেমার ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী ও আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত পরিচালক সত্যজিৎ রায়। বাঙ্গালিদের মনে ‘সত্যজিৎ রায়’ নামটি সর্বদায় বিশেষ স্থান দখল করে থাকবে। কারন তিনি শুধু আন্তর্জাতিক মানের নির্মাতা নন, তিনি ছিলেন বাংলা সিনেমাকে বিশ্বের দরবারে তোলে ধরা এক অনন্য নির্মাতা। আকিরা কুরোসাওয়া, ইংমার বার্গ্ম্যান বা ফেদরিকো ফেলিনির মতো কিংবদন্তি পরিচালকদের নামের সাথে সত্যজিৎ রায়ের নামও স্মরণ করা হয়। পেয়েছিলেন ইতিহাসের প্রথম বাঙ্গালী ও দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে একাডেমি এ্যাওয়ার্ড তথা অস্কার পুরুস্কার (বিশেষ সম্মাননা পুরুস্কার হিসেবে প্রথম ভারতীয়)

বিভিন্ন মানবিক দিক গুলো সিনেমার পর্দায় বাস্তবিকভাবে তুলে ধরা এই সাহিত্য অনুরাগী পরিচালকের জন্ম ১৯২০ সালের ২ মে এক সংস্কৃতিমনা বাঙালি পরিবারে। পৈত্রিক নিবাস ছিল বর্তমানে বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায়। বাবা সুকুমার রায় ছিলেন লেখক ও মা সুপ্রভা রায় সখের সঙ্গীতশিল্পী। পড়াশুনা করেছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ছবিঃ সত্যজিৎ রায়ের ছোটবেলা

ফ্রান্সের সিনেমা পরিচালক জিন রনোয়ারের সাথে সাক্ষাৎ ও লন্ডনে ভ্রমণকালে ভিত্তোরিও ডি সিকা নির্মিত “দ্য বাইসাইকেল থিফ (১৯৪৮)” দেখে তার সিনেমা নির্মাণের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়।
অনেক অর্থকষ্টের মদ্ধ দিয়ে ১৯৫৫ সালে নিজের প্রথম চলচ্চিত্র “পথের পাঁচালি” নির্মাণ করে এবং পরবর্তীতে উপহার দেয় অপরাজিত, পরশপাথর, অপুর সংসার, তিন কন্যা, মহানগর, চারুলতা, নায়ক, মহাপুরুষ, সোনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ, আগন্তুকসহ আরো অনেক অসাধারণ সিনেমা।

অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তিত্ব- নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার প্রশংসা করেছেন। তার মধ্যে ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিঁতেরা, নির্মাতা জন হাস্টন(The Maltese Falcon, The Treasure of the Sierra Madre), আকিরা কুরোসাওয়া(Rashomon, Seven Samurai, Yojimbo), মার্টিন স্কোরসেজি(Taxi Driver, Goodfellas , Shutter Island , The Wolf of Wall Street) সত্যজিৎ রায়ের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তার কাজ থেকে অনুপ্রেরিত হয়েছে অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ ও তারেক মাসুদের মতো পরিচালকেরা।

ছবিঃ আকিরা কুরোসাওয়ার সাথে সত্যজিৎ রায়।

ছবিঃ অস্কার হাতে সত্যজিৎ রায়

সত্যজিৎ রায়ের পুরুস্কারের সংখাও বিশাল। জীবদ্দশায় অস্কার, মস্কো-ভেনিস-বার্লিন-কান ফিল্ম ফেস্টিবল, পদ্মশ্রী, পদ্মভূষন, পদ্মবিভূষন, ভারতরত্ন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরুস্কারসহ অনেক সম্মানজনক পুরুস্কার পেয়েছেন।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে সম্মানজনক ডক্টরেট অর্জন (চার্লি চ্যাপলিনের পর দ্বিতীয় সিনেমা ব্যাক্তিত্ব এই সম্মান পান), তাছাড়া “Entertainment Weekly” ম্যাগাজিনের ‘গ্রেটেস্ট ফিফটিন ডিরেক্টরস’ এর তালিকায় ২৫তম হয়েছিল।
সত্যজিৎ রায় নির্মিত সর্বশেষ সিনেমা “আগান্তুক”। ১৯৯২ সালে তিনি হৃদরোগে অসুস্থ হয়ে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে ছিলেন, শেষমেশ একই সালের ২৩ শে এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

দেশ ও দেশের বাহিরে আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত অপু ট্রিলজি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ

⚫পথের পাঁচালি (১৯৫৫)

প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস করা এক সংগ্রামী পরিবারের জীবনযাপন নিয়ে সিনেমার গল্প গড়ে উঠেছে। পেশায় পুরোহিত, পরিবারের প্রধান কর্তা “হরিহর রায়” পৈতৃক ভিটেতে স্ত্রী ‘সর্বজয়া’, ছেলে ‘অপু’, মেয়ে ‘দুর্গা’ ও বৃদ্ধ পিশিকে নিয়ে বসবাস করছে। সদা দারিদ্রতায় কাটতে থাকে তাদের জীবন। অতঃপর আরো কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার মদ্ধ দিয়েই সিনেমার গল্প এগোতে থাকে।
সিনেমায় উপস্থাপন করা হয়েছে অভাব-অনটনে একটি পরিবারের টিকে থাকার লড়াই। কষ্টকর ও লাঞ্চনাকর পরিস্থিতির মধ্যেও একটি পরিবারের বেঁচে থাকা ও সুখে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা। তাছাড়া আছে ভাই-বোনের সম্পর্কের সৌন্দর্য। প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলার চিরচেনা বিষয়গুলো সিনেমার পর্দায় খুব দারুণভাবেই তোলে ধরা হয়েছে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে অপু ট্রিলজি ও সত্যজিৎ রায়ের প্রথম সিনেমা “পথের পাঁচালি”, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধবা স্ত্রীর কাছ থেকে সত্যজিৎ রায় উপন্যাসের অনুমতি নেন। অর্থসঙ্কটের কারনে এই সিনেমা নির্মাণে সময় লেগেছিল প্রায় পাঁচ বছর।
পথের পাঁচালি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরুস্কারসহ কান চলচ্চিত্র উৎসবে “বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্টারি” পুরুস্কার পেয়েছে। ২০০৫ সালের টাইমস ম্যাগাজিনে সর্বসেরা ১০০টি সিনেমায় ও বিখ্যাত চলচ্চিত্র সমালোচক রজার এবার্টের “গ্রেটেস্ট মুভিজ”’এ তালিকাভুক্ত হয়েছে।


⚫অপরাজিত (১৯৫৭)

অপুর পরিবার নতুন শহরে স্থানান্তর হয়ে নতুনভাবে জীবনযাপন শুরু করে। প্রথম দিকে ভালভাবে কাটতে থাকলেও আবারো সেই বাস্তবতা ও জীবন যুদ্ধের মুখমুখি। সিনেমায় মূলত অপুর শৈশব থেকে কিশোর বয়সের নানাবিধ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। শিশু অপুর কিশোর হওয়ার গল্প, সাথে অপুর পরিবার ছেড়ে কলকাতায় পড়াশুনা করতে যাওয়া ইত্যাদি।
সিনেমার সবচেয়ে ইতিবাচক দিক মা-ছেলের সম্পর্কের উপস্থাপন। কিশোর অপু কলকাতা যাওয়া নিয়ে মায়ের অভিব্যাক্তি আজকের দিনের মায়েদের টিপিক্যাল অভিব্যাক্তিকে মনে করিয়ে দেবে। গ্রাম ছেড়ে শহরে পড়তে আসা প্রতিটি ছেলে-মেয়ের কাছে এই দৃশ্য অনেক পরিচিত। মায়েরা এমনি হয়, নিজের মমতাবোধ দিয়ে নিজের কাছে আগলে রাখতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা তা সায় দেয়না। বাহিরের পৃথিবীর অভিজ্ঞতা নেয়া ও বাস্তবতার পিছুটানে নিজের পরিবার ছেড়ে দূরে থাকতে হয়।
সিনেমাতে নতুন পরিবেশে অপুর নিজেকে মানিয়ে নেয়া, নতুন অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি, সবকিছু মিলিয়ে একটি বাস্তব ধর্মী ও হৃদয় স্পর্শী সিনেমা। এই সিনেমাতে সত্যজিৎ রায়ের নিজের কিশোরবেলা থেকে কিছুটা অনুপ্রেরিত ছিল। সিনেমাটি মোট এগারোটি আন্তর্জাতিক পুরুস্কার পায়, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের পুরুস্কার।


⚫অপুর সংসার (১৯৫৯)

অপু ট্রিলজির শেষ কিস্তি ‘অপুর সংসার’এ কেন্দ্রবিন্দু ছিল যুবক অপুর জীবনযাপন। সদ্য পাশ কথা অপু শহরের ভাড়া করা বাসায় একা বসবাস করছে। লেখালেখির স্বপ্ন নিয়ে টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি চলছে চাকরী খোঁজা। একদিন পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যায় ও বন্ধুর অনুরোধে গ্রামের এক বিয়েতে যায়। সেই বিয়ে বাড়ির এক ঘটনা থেকেই তার জীবন বদলাতে থাকে।
বেকার জীবনের সংগ্রাম, দাম্পত জীবনের মধুর ও টানপোড়ণের দিকসহ শেষমেশ এক বিয়োগান্তক সমাপ্তির মিল্বন্ধনে এই সিনেমার গল্প গড়ে উঠেছে। সিনেমাটিতে উপস্থাপন করা হয়েছে আনন্দ ও বেদনার অনন্য এক মিশ্রণ। বিশেষ করে সিনেমার শেষ দৃশ্যটি অনেক আবেগপূর্ণ ও হৃদয়স্পর্শী ছিল।
অপুর চরিত্রে ছিলেন বর্তমানের কলকাতা ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম শক্তিমান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং ভারতের শক্তিমান অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। দুজনেরই প্রথম সিনেমা ছিল ‘অপুর সংসার” , অথচ সিনেমায় দুজনের অভিনয়ে কোন অপরিপক্কতা চোখে পরেনি। পর্দায় দুজনের রসায়ন বেশ মানানসই ও উপভোগ্য ছিল।
এক কথায় অপু ট্রিলজির শেষ কিস্তি হিসেবে সন্তুষ্টিমূলক সমাপ্তি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মে, ২০১৭ রাত ৯:০১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: সত্যজিৎ রায় বহুমুখী প্রতিভাধর একজন মহান চলচ্চিত্রকার ছিলেন। তাঁর 'সিকিম' ছাড়া অন্য সবগুলো ছবি আমি দেখেছি। তাঁর জন্মদিনে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

০২ রা মে, ২০১৭ রাত ৯:১১

হাবিব রহমানন বলেছেন: সম্পূর্ণ একমত। একজন মানুষের এমন বহুমুখী প্রতিভা সত্যি অবাক করার মতো। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

২| ০৭ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১:৫৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: কী এক মানুষ ছিলেন যে তিনি! বিস্মিত হতে হয়।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৯

হাবিব রহমানন বলেছেন: ট্রু লেজেন্ড !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.