নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক চারিত্রিক সনদপত্র প্রাপ্ত

হাবিব রহমানন

সকল প্রকার চলচ্চিত্র দেখতে ও চলচ্চিত্র নিয়ে লেখতে ভালোবাসি। তাছাড়া কবিতা পড়তে ভালো লাগে, মাঝেমাঝে নিজেও দু-এক লাইন লেখার চেষ্টা করি। fb/bd.r.habib

হাবিব রহমানন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাস্টার কিটন: নির্বাক চলচ্চিত্রের এক অনন্য কিংবদন্তি!

০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:১৬

“A comedian does funny things. A good comedian does things funny”- Buster Keaton


নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগের (১৮৯০-১৯২৭) সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন। সাইলেন্ট কমেডি ফিল্মের ইতিহাসে তিনি ছিলেন অনবদ্য। কিন্তু চার্লি চ্যাপলিনের পাশাপাশি আরেক কিংবদন্তী অভিনেতা-পরিচালক ছিলেন। যিনি সাইলেন্ট ফিল্ম, ফিজিক্যাল কমেডি ও দুর্ধর্ষী স্টান্টের জগতে রেখেছেন অসামান্য অবদান। শোবিজের জগতে কিছুটা ম্লান হয়ে যাওয়া সেই নক্ষত্রের নাম “বাস্টার কিটন”।

এই কিংবদন্তী অভিনেতা-পরিচালক বিখ্যাত সিনে-ম্যাগাজিন “Entertainment Weekly” তে সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচালকের তালিকায় সপ্তম, অ্যামেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট (AFI) এর হলিউডের গ্রেটেস্ট ক্লাসিক সিনেমা স্টারের তালিকায় ২১তম স্থান অর্জন করেছেন। তাছাড়া কমেডিতে অবদানের জন্য পেয়েছিলেন অস্কারে বিশেষ সম্মাননা পুরুস্কার এবং সিনেমা ও টেলিভিশনে বিশেষ অবদানের জন্য “ Hollywood Walk of Fame”-এ পেয়েছেন দুটো স্টার।


বাস্টার কিটন মূলত বিখ্যাত ছিলেন তার “স্টোন ফেইস” অভিব্যক্তি ও ঝুঁকিপূর্ণ স্টান্টের জন্য। স্টোন ফেইস বলার অন্যতম কারন ছিল পর্দায় দুঃখের অথবা মজাদার যেকোন ধরনের দৃশ্যই হোকনা কেন তার অভিব্যক্তি পরিবর্তন হতো না। তাঁর মতে, “পর্দায় এমন অঙ্গভঙ্গি করে যাওয়া আমার কাজ আর হাঁসার দায়িত্বটা আমি দর্শকদের উপরই ছেড়ে দেই”
আসলেই তাই, ব্যাক্তিগতভাবে বাস্টার কিটনের অনেক গুলো সিনেমা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে কিন্তু একটি সিনেমাতেও তাকে হাঁসতে দেখিনি, অথবা খুব আবেগের অভিব্যক্তিও দেখিনি। কিন্তু নিজে ঠিকই হু হু করে হেসেছি, আর এখানেই তার অভিনয়ের সার্থকতা।

তার চলচ্চিত্রে হাস্যরসাত্মক দৃশ্যগুলো অনেকটা আকস্মিকভাবেই আসতো, যার জন্য দর্শকরা দ্বিগুণ বিনোদিত হত। স্টান্টের জগতে অনেক পরিশ্রমী ও সাহসী পারফর্মার ছিলেন তিনি। নিজের স্টান্টের পাশাপাশি সহ-অভিনেতাদের স্টান্টও করে দিতেন। অনেকবার ঘোরতর আঘাতও পেয়েছেন কিন্তু থেমে যাননি। তৎকালীন সময়ে সিজিআই ও চকচকে ভিজুয়েল ইফেক্টও ছিলনা কিন্তু সিনেমা গুলোতে তার কাণ্ডকারখানা ছিলো অবাক করার মতন। এমনকি তার সিনেমার স্টান্ট থেকে অনুপ্রেরিত হয়েছিল জ্যাকি চেনের মতন তারকা।

চার্লি চ্যাপলিনের তুলনায় এই কিংবদন্তীকে নিয়ে কম আলোচনা ও কম চর্চা করা হলেও নির্বাক চলচ্চিত্র (সাইলেন্ট ফিল্ম) টার্মের সাথে ও সাইলেন্ট কমেডি উন্নয়নে অতপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে বাস্টার কিটনের নাম। এই তারকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন কিংবদন্তী পরিচালক-অভিনেতা অরসন ওয়েলস। বিখ্যাত সিনেমা সমালোচক রজার এবার্টের মতে, বাস্টার কিটন হলেন সিনেমা জগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা-পরিচালক।


১৯১৭ সালে বাস্টার কিটন তৎকালীন খ্যাতনামা সাইলেন্ট ফিল্ম স্টার “রস্কো ফ্যাটি আর্বাকাল” এর সাথে শর্ট ফিল্মে কাজ করা শুরু করেন। দুজনের কোলাবরেশন ও ১৯২০ সালে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা “The Saphead” এর মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয়তা পান বাস্টার কিটন। ১৯২১ সালে বিয়ে করেন নিজের অনেক সিনেমার প্রযোজক “Joseph Schenck“ এর শ্যালিকাকে।

একই বছরে নিজের প্রডাকশন হাউজ “Buster Keaton Productions” এর যাত্রা শুরু করেন এবং নিজে একাধারে অভিনয়, লেখা ও পরিচালনার কাজ শুরু করেন। পরিচালক, লেখক ও অভিনেতা হিসেবে Our Hospitality (1923), Sherlock Jr. (1924), The Navigator (1924), Seven Chances (1925), The General (1926), Steamboat Bill Jr. (1928) মতন অসাধারণ সিনেমাগুলো নির্মাণ করেন। যেখানে “দ্যা জেনারেল” সর্বকালের সেরা সাইলেন্ট কমেডি ফিল্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

অতঃপর বাস্টার কিটনের জীবনের খারাপ সময়ের শুরু। ১৯২৮ সালে ইন্ডিপেনডেন্ট প্রডিউসার “জোসেফ” এর সাথে কন্ট্রাক্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় এক প্রকার অনিচ্ছা সত্তেও প্রোডাকশন হাউজ “Metro-Goldwyn-Mayer (MGM)” এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। মেট্রো-মায়ারের সাথে প্রথম সিনেমা “The Cameraman (1928)”তে কিটন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলেও পরবর্তীতে এই স্টুডিও কিটনের ফিল্ম মেকিং ও অন্যান্য আর্টেস্টিক (শৈল্পিক) নিয়ন্ত্রন ও হস্তক্ষেপ করা শুরু করে।

অন্যদিকে কিটনের প্রথম স্ত্রী ডিভোর্সের কারনে তার বিরুদ্ধে মামলা করে এবং বাড়ি, সম্পত্তি অনেকাংশ হারানোসহ তাকে সন্তানদের দেখা থেকে বিরত রাখে। প্রফেশনাল ও ব্যাক্তিগত জীবনে অনেক কলহ নেমে আসে। অনিয়ম-কনফ্লিক্ট, ডিপ্রেশনে অত্তাধিক মদ্যপান, দুর্ব্যবহারের কারনে মেট্রো-মেয়ারের সাথেও সম্পর্ক খারাপ হতে লাগলো। এমনকি শেষমেশ বহিস্কার।


অতঃপর এক সময় জনপ্রিয়তাই তুঙ্গে থাকা বাস্টার কিটন নিজের যোগ্যতার চেয়ে ছোটখাটো কাজ করতে থাকেন। ১৯৩৩ সালে এক নার্স কে বিয়ে করেন যা প্রথম বিয়ের মতন ডিভোর্সে রূপান্তরিত হয় এবং আবারো আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে ১৯৩৭ সালে মেট্রো –মায়ার তাকে আবারো হায়ার করে তবে গ্যাগ(কমিক) রাইটার হিসেবে ও ১৯৩৯ সাল থেকে রাইটার ও এক্টর হিসেবে পুরোপুরি কাজ করতে থাকেন।

১৯৪০ সালে এলেনর নরিস কে বিয়ে করেন। যিনি ব্যাক্তিগত জীবনে তাকে অনেক সাহায্য করেন ও জীবনের শেষ মুহূর্তে তার পাশে ছিলেন। ধীরেধীরে নিজের ক্যারিয়ার আবারো উত্থান হতে থাকে। ১৯৫০ সালে নিজের শো “The Buster Keaton Show” শুরু করেন যা অনেক জনপ্রিয়তা পায় এবং পরবর্তীতে অনেক সিনেমাতে কাজ করেছেন। সর্বোপরি নিজের উজ্জ্বল ক্যারিয়ারে ১৫০টির মতন সিনেমায় কাজ করেছিলেন।

তবে নিজের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারনে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। যেমন- নিজের সিনেমার সত্ব মেট্রো-মায়ারের কাছে বিক্রি, মদ্যপান ইত্যাদি। তবে সুখকর বিষয় হচ্ছে, বাস্টার কিটনের জীবন অনেক নাটকীয়ভাবে কাটলেও জীবনের শেষ মুহূর্ত গুলোতে নিজের কাজের জন্য সর্ব মহলেই প্রশংসিত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, তার কাজের সম্মাননা সরূপ তার নামে ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিবলের আয়োজনও করা হয়েছিল। এমনকি অনেক সিনেমা সমালোচক ও ফ্যানরা তাকে ক্ষেত্রবিশেষ চার্লি চ্যাপলিনের চেয়েও এগিয়ে রাখেন।

অবশেষে ১৯৬৬ সালে ফুসফুসে ক্যান্সারে আংক্রান্ত হয়ে এই কিংবদন্তী মারা যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ক্যান্সার সম্পর্কে ডক্টর আর তার কাছের কিছু মানুষ ছাড়া কেও জানতো না। অনেকটা নীরবেই চলে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল হয়তো।

আরেকটি তথ্য হচ্ছে, তখনকার সময়ে চার্লি চ্যাপলিন ও বাস্টার কিটনের ফ্যানদের মধ্যে “কে সেরা?” এটা নিয়ে দ্বন্দ্বও চললেও দুজন দুজনার শুভাকাঙ্ক্ষীই ছিলেন। এমনকি মেট্রো-মায়ারের সাথে কন্ট্রাক্টের সময়েও চার্লি চ্যাপলিন তাকে নিষেধ করেছিল, সে শোনেনি। ইতিহাসে প্রথমবারের মতন ১৯৫৭ সালে “Limelight” সিনেমায় এই দুই কিংবদন্তীকে পর্দায় এক সাথে দেখা যায়। কথিত আছে, ফ্যানদের মধ্য থেকে “কে সেরা?” এই দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্যই চার্লি চ্যাপলিন তাকে অনুরোধ করেছিল এই সিনেমাতে কাজ করার জন্য। যদিও সিনেমায় ছোট রোল ছিল বাস্টার কিটনের।
ছবিঃ “লাইম-লাইট” সিনেমায় চার্লি চ্যাপলিনের সাথে বাস্টার কিটন

সর্বোপরি ক্লাসিক সিনেমা ও নির্বাক চলচ্চিত্রে চার্লি চ্যাপলিন, বাস্টার কিটন, হ্যারল্ড লয়েড এই নামগুলো সর্বদায় সম্মান ও গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:১৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: এমন একটা পোস্ট কমেন্টবিহীন! +++++

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:০৬

হাবিব রহমানন বলেছেন: যাক আপনি তো করলেন, সমস্যা কি! :D প্লাসের জন্য ধন্যবাদ।

২| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:৫৭

স্নিগ্ধ আকাশ বলেছেন: পোষ্টের জন্য এক বস্তা ধইন্না লন +++++

০১ লা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৩

হাবিব রহমানন বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.