![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময় :২ জুলাই, ২০১৫।
বিকাল ৪.০০।
জানি, এই মুহুর্তে ফেসবুক থেকে দূরে সরে গেলে হয়ত ভার্চুয়াল জগত থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়ব। কিন্তু এই ফেসবুক ই হয়ত ক্রিকেটার নাসিরের মত একদিন আমাকেও হতাশ করে তুলবে। আমিও হয়ত একদিন আমার বোনের ছবি আপলোড করে লাঞ্ছিত হব, ভার্চুয়াল ধর্ষণের শিকার হবে আমার বোন। আর আমাকে হয়ত নাসিরের মত চুপচাপ হতাশার দেয়ালে মাথা খুটে মরতে হবে।
আমি নাসিরের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে চাই। সাথে আমার নিজের জীবনের ভুলগুলো তো আছেই।
একসময় ফেসবুক এমন ছিল যখন শুধু শিক্ষিত মানুষ গুলোই এটার ব্যবহার জানত। আর এখন মূর্খ বস্তির গাঁজাখোর দের ও একটা ফেসবুক আইডি আছে। আরো যে কত নিচু মানুষিকতার মানুষ আছে বলা মুশকিল। ইন্টারনেট সর্বজনীন করতে গিয়ে এখন হয়ে গেছে সর্বজনীন ফেসবুক আর পর্ণ ওয়েবসাইট।
পড়ালেখা জানা মানুষ গুলো ওপর ও এর প্রভাব লক্ষ্যণীয়। সম্মান আর অসম্মান এর জায়গা গুলো ও ভুলে গেছে মানুষ। কি বিচিত্র অমানুষিকতা!
একজন বড় ভাই বলেছিলেন যে পৃথিবীর সব জায়গায় ই কিছু চিরন্তন তেলাপোকা থাকবে। এদের অস্তিত্ব কখনো বিলুপ্ত হবার নয়। এদের এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। আমার জনৈক উকিল বন্ধু বলেছিলেন যে, যেখানে তেলাপোকা র পরিমাণ বেশি সেখানে না যাওয়াই ভালো। উনাদের কথার প্রতি আমার যথেষ্ট সম্মান আছে। ফেসবুক টাও এখন তেলাপোকা দিয়ে ভরে গেছে। তাই মাশরাফি, নাসিরের মত ভালো মানুষ গুলো নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে। পৃথিবীতে যেখানেই আজ পর্যন্ত এই তেলাপোকা রা গিয়েছে সেখান থেকে নিজেকে সরানের মত সুযোগ পেলে ভালো মানুষ গুলো নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। আমিও নিচ্ছি। আমি ভালো মানুষ না হলেও অন্তত তেলাপোকা নই।
এখন হয়ত অনেকে বলবেন যে, ফেসবুক ছাড়া থাকবেন কিভাবে? সেলিব্রেটি হবেন কিভাবে?
উত্তর : যতদিন ফেসবুক ছিল না তখন যেভাবে মানুষ ছিল সেভাবে। আর ফেসবুকের দুই-চারশত লাইক নিশ্চয়ই আপনাকে সেলিব্রেটি বানায় নাহ। এ পর্যন্ত যারাই সেলিব্রেটি হয়েছেন, ফেসবুক তাদের এ পর্যন্ত এনেছেন বলে মনে হয় নাহ। তারা সেলিব্রেটি হওয়ার পর ই ফেসবুক তাদের নিয়ে সেলিব্রেটি পেইজ খুলেছে। সুতরাং সেলিব্রেটি হওয়ার জন্য ফেসবুক চালানোর প্রয়োজন নেই। সেলিব্রেটি হলে ফেসবুক ই আপনাকে খুজে নিবে।
আজকাল ফেসবুক আমাদের এতটাই ভার্চুয়াল আর কৃত্রিম করে তুলেছে যে এখন আমরা প্রিয়জন, বন্ধুদের সাথে সরাসরি কথা না বলে ফেসবুকে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দেই চ্যাট করে। এতে করে একজন আরেকজন কে মন থেকে বুঝার সুযোগ ও চলে গেছে। আপনার ফেসবুকের ইমো নিশ্চয় ই আপনার প্রিয়জনের অনুভূতি র পূর্ণাংগ প্রকাশ করতে পারে না যতটা তার কন্ঠ অথবা চেহারা পারে। এই জন্য ই আমরা এখন ইমোশনলেস হয়ে যাচ্ছি। কারণ সত্যিকারের ইমোশন দেখার সৌভাগ্য এখন আমাদের হয় নাহ। তাই কারো মৃত্যু সংবাদ পেলে ও আমরা লাইকে ভরিয়ে দেই। ফেসবুক আমাদের এতটা ভার্চুয়াল করে তুলেছে।
এখন নিশ্চয় ই আপনার মাথায় প্রশ্ন জাগছে যে থাকবেন কিভাবে ফেসবুক ছাড়া? সবার সাথে যোগাযোগ রাখবেন কিভাবে? কিভাবে সামলাবেন নিজেকে প্রচারের কাজ?
উত্তর : ফেসবুকে যাকে একবার নক দিতেন পারলে তাকে একটা ফোন দিন। এখন প্রশ্ন হল সবার সাথে ফেসবুকে কানেক্টেড থাকা যায় কিন্তু সবাই কে ফোন নাম্বার দেয়া যায় নাহ, সবাইকেই নিজের লাইফে আনা যায় নাহ। তাহলে বলব, লাভ টা কি এই শুধুমাত্র ভার্চুয়াল রিলেশন রেখে? যাকে ফোন নাম্বার দিতে চান না তার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাট করে নিজের জীবনের সময়ের অপচয় করলেন! এই সময় টুকু কি কাছের মানুষ গুলো কে দেয়া যেত নাহ?
সত্যি ই অবাক লাগে আমাদের ভার্চুয়াল মানুষিকতা টা কে!
আর
নিজেকে প্রচার করতে ফেসবুক ই লাগবে কেন?
এই পর্যন্ত যারা নিজেকে প্রচার করেছেন। নিজের সাফল্য প্রচার করেছেন তারা নিশ্চয়ই ফেসবুক দিয়ে করেননি। সর্বশেষ সেলিব্রেটি ক্রিকেটার মুস্তাফিজের কথাই যদি ধরি, তবে দেখুন। তার প্রচারণা করেছি আমরা তার স্লোয়ার লেগ কাটারের জন্য। সে কিন্তু ফেসবুক খুলে তার স্লোয়ার লেগ কাটারের কথা এসে আপনাকে বলেনি। সে মাঠে খেলেছে। আপনারা দেখেছেন আর তার জয়ধ্বনি গ্যালারি, ফেসবুক, টুইটারে পারলে গলা ফাটিয়ে জানিয়েছেন। এখানে ফেসবুকের হাত টা কোথায়?
যদি বলেন আপনি লেখক, মডেল, রাজনীতিবিদ, ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার, উকিল আরো কত কি!
তবে বলব আপনি আপনার গোত্রের এমন একজন দেখান যার সাফল্যের মূলতত্ত্ব তার মেধা-অধ্যবসায় নয়, ফেসবুক। যদি দেখাতে না পারেন তবে বলব নিজের চোখ খুলুন, ভার্চুয়াল জগত থেকে বেরিয়ে এসে সত্যিকার জগতটা কে নিজের মত করে দেখুন। এতে হয়ত, আপনার মন, সম্মান দুই ই স্বস্তি পাবে।
©somewhere in net ltd.