![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বৃষ্টি পড়ছে গুড়িগুড়ি। ফুটপাতের মানুষগুলো পলিথিনের আশ্রয়ে মাথা গুজে আছে। সেই পলিথিনেও রয়েছে অজশ্র ফুটো। গরীবের জন্যই যত সমস্যা। একে তো থাকার জায়গা নেই বলে ফুটপাতে থাকে , তার উপর আবার এই অসহ্যকর বৃষ্টি , সেই বৃষ্টি থেকে বাচার জন্য বহুত খোজাখুজির পর ময়লার স্তুপ থেকে একটা পলিথিন জোগার হয়েছে, সেটাতেও এক গাদা ফুটো। পলিথিন আর এই গরীবের কপাল এক রকম ,কত গুলো ফুটো আছে গুনে শেষ করা যাবে না।
.
আচ্ছা আমরা তো একই বায়ুমণ্ডলে বাস করি , একই পৃথিবীর বুকে আমাদের বিচরণ, একই রক্ত সবার মাঝে, তাহলে একদল ফুটপাতে আর আরেকদল অট্টালিকায় কেনো?? তারা কি পারে না একসাথে টিনের ঘরে মিলেমিশে থাকতে? ভেদাভেদহীন জীবনযাপন করতে? একদল উপরে উঠেই চলেছে আর একদল নিচে নামতে নামতে অবশেষে ফুটপাতে এসে ঠেকেছে। সেখানেও তাদের থাকতে দেওয়া হয় না। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী লাঠির আঘাতে উচ্ছেদ করে তাদের।
.
সবাই নিজের পকেট ভরতে ব্যাস্ত। যারা যত পকেট ভরবে তাদের পকেট তত খালি হবে। এটাই জগতের নিয়ম। তাই এই পকেট গোছানো সম্প্রদায়ের কপালেও শান্তি নাই। প্রতিদিন পকেট গোছানোয় ধান্দায় দিন কাটে তাদের।
ফুটপাতে ৬ মাস ধরে বসবাস করছে এমন এক পরিবারের প্রধান মানুষটার সাথে কথা বলেছিলাম একবার, বাদশা ভাই , দীন মজুর, তার স্ত্রী এবং এক মেয়ে নিয়ে ফুটপাতে কাঠ এবং পলিথিনের সমন্বয়ে বানানো ঘরে থাকেন তিনি। প্রতি মাসে ৯০০ টাকা ভাড়া দেন স্থানীয় পুলিশকে।
.
আমাদের এলাকায় মাটি কাটতে এসেছিলেন। সেদিন এক কথা দুই কথায় তার জীবনযাপনের ব্যাপারে জানলাম। মানুষ হিসেবে তিনি কতটা ব্যাতিক্রম সেটা কথা থেকেই প্রকাশ পায়। স্ত্রী আগে মানুষের বাসায় কাজ করতো , এখন করে না, ভয়ে , বাদশা ভাইয়ের কথা অনুযায়ী বড়লোকরা হলো হিংস্র কুকুরের মত , সুযোগ পেলে কাজের বুয়াকেও তারা গিলে খায়। আড়াই বছরের মেয়ে আছে তার। কাচা মরিচ ডলে নিজে ভাত খায়। আমি যদিও কথাটা শুনে কিছুটা অবাক হয়েছিলাম , কারন ঐ বয়সের শিশুদের সাধারণত হরলিকস , সেরেলাক খাওয়ানো হয় বলেই আমার ধারনা ছিলো। মাটির চুলোয় রান্না করেন পরী ভাবি। বাদশা ভাই তার স্ত্রীকে পরী বলেই ডাকেন। ৩ সদস্যের সুখী পরিবার। বৃষ্টি আর শীতের দিনেই একটু কষ্ট হয় , এছাড়া দিন অনায়াসেই কেটে যাচ্ছে তাদের, বাদশা ভাই যা আয় করেন তা দিয়ে কোনো বস্তিতে ভালোভাবেই থাকতে পারেন। কিন্তু টাকার একটা অংশ গ্রামে তার বৃদ্ধা মা কে পাঠান তিনি। তাই বস্তিতেও আর ওঠা হয় না। খুব ইচ্ছা ছিলো তাদের ছোট্ট সংসারটাকে একবার দেখবো। কিন্তু সেই সুযোগ আর এলো না।
©somewhere in net ltd.