![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুণীজনেরা বলেন, ব্লগ লেখা মানে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো। আমার অনেক মোষ তাড়ানোর ইচ্ছা আছে। সমাজের অসঙ্গতি দেখলে মনটা বিদ্রোহ করতে চায়। উপায় না দেখে তখন মোষ তাড়ানোর চেষ্টা করি। দেখা যাক কতদূর কি করা যায়। কারন , ব্যস্ততা আমাকে দেয়না অবসর। ব্যস্ততার ফাঁকে চেষ্টা থাকবে ব্লগে সচল থাকার।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় গির্জাটি অবস্থিত আইভরিকোস্টের রাজধানী ইয়ামোসুক্রু তে। এর নাম- ‘ BASILICA OF OUR LADY OF PEACE OF YAMOUSSOUKRO’ । কেউ আইভরিকোস্টে এসে এই গির্জাটি না দেখে গেলে পরে তাকে ভীষণ মর্মপীড়ায় ভুগতে হবে।
গির্জাটি দূর থেকে দেখতে যত সুন্দর, ভেতরের সৌন্দর্য বেশি তারচেয়ে কয়েকশ গুন। গির্জার ভেতরে প্রবেশ করলে এর ভেতরের শৈল্পিক কারুকার্য , অবকাঠামোগত নির্মাণশৈলী আর আয়তনের বিশালত্ব আপনাকে বিমোহিত করবেই।
দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স হুফে বাউনি ১৯৮৩ সালে তার নিজ জন্মভূমি ইয়ামোসুক্রুকে দেশের রাজধানী হিসাবে ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে বিশ্ববাসীর কাছে নিজেকে চিরস্বরনীয় করে রাখতে নিজ জন্ম স্থানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গির্জা নির্মাণের সাধ জাগে তার মনে। ফলশ্রুতিতে ১৯৮৫ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৮৯ সালে। ভ্যাটিকান সিটিতে অবস্থিত সেন্ট পিটার্স গির্জার আদলে তৈরি করা হলেও এটি পুরোপুরি সেন্ট পিটার্স এর রেপ্লিকা নয়।
এ গির্জা নির্মাণে ব্যয় করা হয় ৩০০ মিলিয়ন ডলার! ১৯৯০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে পোপ জন পল এর শুভ উদ্বোধন করেন। জনশ্রুতি আছে গির্জাটির সাথে একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েই পোপ জন পল কে গির্জা উদ্বোধনে রাজী করানো হয়। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি পরবর্তীতে আর আলোর মুখ দেখেনি।
৩০,০০০ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত গির্জাটির উচ্চতা ৫১৮ ফুট। এ থেকে অনুধাবন করা যায় এর বিশালত্ব। ফরাসী কোম্পানি ‘ Dumez’ কে গির্জা নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর ৩০ একর এলাকা মার্বেল পাথরে মোড়ানো যা আনা হয়েছিল ইটালি থেকে। আর দরজা জানালায় ব্যবহৃত চোখ ধাঁধানো ৭০০০ বর্গ মিটার রঙ্গিন কাঁচ আসে ফ্রান্স থেকে। এ বিশাল স্থাপনায় শতাধিক অবকাঠামোগত ছোট ছোট স্তম্ভ ছাড়াও আছে ১২ টি বড় স্তম্ভ। এ স্তম্ভ গুলোর ভেতরে লিফটের ব্যবস্থা আছে যা দিয়ে উপরে উঠা যায়। এছাড়া ছাদে জমা হওয়া বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কাজেও ব্যবহৃত হয় এ বড় স্তম্ভ গুলো।
প্রথমে আমি লিফটে চড়ে উপরে চলে গেলাম । উপরের ছাদ এবং আশে পাশের কারুকার্য দেখলাম মুগ্ধ নয়নে। এত বিশাল হল রুমের পুরো এরিয়া চক্কর দিতে অনেক সময় লেগে যাবে। তাই অর্ধেক চক্কর দিয়ে চলে আসলাম বাইরে।
বাইরে এসে দেখা গেল বিশাল বড় ছাদ- রীতিমত ফুটবল মাঠের চেয়েও বড়। গির্জার ছাদে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চারিদিকের সৌন্দর্য অবলোকন করলাম। উপরে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে। আর দূরে দেখা যাচ্ছে সবুজ শ্যামল অরণ্যে ঘেরা ছোট একটা গ্রাম।
ছাদে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় পৌঁছে গেলাম একটা ছোট রুমে। এখানে রয়েছে বেশ কিছু সুন্দর বাঁধাই করা গির্জার আলোকচিত্রের প্রদর্শনী। গির্জার একটা ছোট রেপ্লিকা ও দেখলাম সেখানে।
সময় খুব দ্রুত গড়িয়ে যাচ্ছে, এখনো গির্জার আসল অংশ অর্থাৎ নীচতলায় মূল হল রুম দেখা বাকি। লিফটে চড়ে আবার নেমে আসলাম নিচে। হল রুমটা আয়তনে বিশাল। এর ধারণ ক্ষমতা ১৮০০০; এর মধ্যে ৭০০০ লোক বসে এবং ১১০০০ লোক দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করতে পারে। হল রুমের ভেতর রঙ্গিন কাঁচে যিশু খ্রিস্টের প্রতিকৃতির পাশাপাশি ফেলিক্স হুফে বাউনির প্রতিকৃতি ও রাখা রয়েছে। হল রুমের ইন্টেরিয়র ডিজাইন সত্যি দেখার মত।
ব্যাসিলিকার মূল ভবন ছাড়াও আরও দুটি একই ধাঁচের ভবন আছে এই চত্বরে। এদেরকে একটাকে বলা হয় ‘ Rectory’ এবং অন্যটিকে ‘ Private papal Vila’। গির্জা উদ্বোধন করতে এসে পোপ জন পল এর যে কোন একটাতে অবস্থান করেছিলেন। এর পর ভবন দুটি আর কোন কাজে আসেনি।
৩০০ মিলিয়ন ডলারের এ গির্জা নির্মাণ করতে গিয়ে আইভরিকোস্টের জাতীয় ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। শুনেছি সেই ঋণ তারা এখনো শোধ করে চলেছে। প্রেসিডেন্টের শখ বলে কথা! তাই এর দাম কোটি কোটি ডলার তো হবেই। এমনি ভাবে সম্রাট শাহ জাহানও নিজ স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ নির্মাণ করেছিলেন আগ্রার তাজ মহল। বিখ্যাত ব্যক্তিদের অমরত্বের খায়েস জাগা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু জনগনের মাথায় ঋণের বিরাট বোঝা চাপিয়ে এরকম ব্যয় বহুল ব্যাসিলিকা গির্জা নির্মাণ কতটা যুক্তি সঙ্গত তা আজ অনেকের নিকট প্রশ্ন বিদ্ব। গির্জাটির সন্নিকটেই আছে দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত পর্ণ কুটির। সেখানে নেই ন্যূনতম স্যানিটেশন কিংবা খাবার পানির সুবিধা। আরেকটা মজার ব্যাপার হচ্ছে , গির্জার নিকটবর্তী শহরে যে ১,২০,০০০ লোকের বসবাস তাদের অধিকাংশই কিন্তু ক্যাথলিক খ্রিস্টান নয়। যে যাই বলুক , আইভরিকোস্ট বাসী এ গির্জা নিয়ে বেশ গর্ব করে থাকে। অবশ্য এ মনোলোভা স্থাপনার জন্য গর্ব করাটাই স্বাভাবিক। আর পর্যটক হিসাবে এ নিয়ে আমার কোন খেদ নেই। কারণ এটি এখানে নির্মিত না হলে সেন্ট পিটার্স গির্জা দেখতে আমাকে যে যেতে হত ভ্যাটিকান সিটিতে। তাই মনে মনে হুফে বাউনিকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বের হয়ে আসলাম ব্যাসিলিকা গির্জা থেকে।
এই শহরেই আছে এদেশের পার্লামেন্ট ভবন – হুফে বাউনি ফাউন্ডেশন অফ পিচ, প্রেসিডেন্ট’ স প্যালেস আর গলফ হোটেল।
আমি সব ঘুরে ঘুরে দেখলাম। প্রেসিডেন্ট’ স প্যালেসের চারিদিকে সুন্দর লেক দিয়ে ঘেরা। লেকে দেখলাম ভেসে বেড়াচ্ছে অসংখ্য কুমির।
এক বয়স্ক মত লোককে দেখলাম কুমিরের দেখাশোনা করতে। হাতে একটা লোহার ছোট করাতের মত বস্তু নিয়ে নির্ভয়ে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুমিরের আশে পাশে। লোকটার সাহস দেখে সত্যি অবাক হলাম। সে নাকি প্রায় ২০ বছর ধরে কুমির গুলোর দেখাশোনা করছে। তাই একটা সখ্যতা গড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে। মাঝে মধ্যে সে কুমিরের সাথে দুষ্টুমিতে মেতে উঠে দর্শনার্থীদের বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করছে।
কিন্তু কিছুদিন পর ঘটে এক মর্মান্তিক ঘটনা। লোকটার অসতর্কতা আর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের সুযোগে একটা কুমির হঠাৎ আক্রমণ করে বসে তাকে। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকটাকে টেনে নিয়ে যায় লেকের গভীর জলে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই লেকের জল হয়ে উঠে রক্তিম লাল। মানুষের মৃত্যু এত নির্মম হবে কেন?
একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম; এই দেশের বিমান বন্দর, পোর্ট, ব্রিজ থেকে শুরু করে সব কিছুই হুফে বাউনির নামে। তবে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রচলিত নাম করণের মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা এখানে চলেনা। দেশের প্রথম প্রেসিডেন্টকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সবাই। আমরা সত্যি এক আজব জাতি । স্বাধীনতার ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো জাতির জনক আর স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে চলছে অন্তহীন বিতর্ক। জানি না এর শেষ হবে কবে?
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২৮
এম ই জাভেদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।
২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:২৭
এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
আমি যেতে চাই আমি চার্চের ভিতরে কখনও যাই নি। এই মান্থেই এক জায়গায় যাব, সেখানে ক্যাথলিক চার্চ আছে। ভিতরে যাব।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৩২
এম ই জাভেদ বলেছেন: সাধারন চার্চে যাওয়ার দরকার নাই। মসজিদে যান , সওয়াব হবে। আমি গেছি এটা বিশ্ব বিখ্যাত বলে। নাস্তিক হইলে মাইন্ড খায়েন না আবার। তাইলে যাইবার পারেন।
৩| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:৩৫
ভীতু সিংহ বলেছেন: খুব ভালো লেগেছে। গির্জাটির কথা আগেও শুনেছিলাম। শেষ প্যারাটার সাথে একমত।
আপনি মনে হয় সরকারি লোক। আইভরি কোস্টে তো কেউ পড়তে বা চাকরি করতে যায় না।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৩
এম ই জাভেদ বলেছেন: মুই ব্যবসা করার লাইগা আইসি।
৪| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:৫৩
রিফাত হোসেন বলেছেন: ++
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৪
এম ই জাভেদ বলেছেন: ধন্যবাদ ++
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:১৭
১১স্টার বলেছেন: অসম্ভব ভালো লাগলো আর শেষ প্যারাটার সাথে ১০০% সহমত