![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুণীজনেরা বলেন, ব্লগ লেখা মানে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো। আমার অনেক মোষ তাড়ানোর ইচ্ছা আছে। সমাজের অসঙ্গতি দেখলে মনটা বিদ্রোহ করতে চায়। উপায় না দেখে তখন মোষ তাড়ানোর চেষ্টা করি। দেখা যাক কতদূর কি করা যায়। কারন , ব্যস্ততা আমাকে দেয়না অবসর। ব্যস্ততার ফাঁকে চেষ্টা থাকবে ব্লগে সচল থাকার।
এক সময় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিত ছিল বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসাবে। দেশের গরীব খেটে খাওয়া মানুষ গুলির অক্লান্ত শ্রম আর সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ যখন এ অপবাদ ঘুচিয়ে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে; ঠিক সে মুহূর্তে গার্মেন্টস সেক্টরে ঘটে যাওয়া একের পর এক দুর্ঘটনা বিশ্ব পরিমণ্ডলে দেশের ভাব মূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে ভীষণ ভাবে।
তাজরিন ফ্যাশনের অগ্নিকান্ডে ভস্মীভূত শবদেহের পোড়া গন্ধ বাতাসে মিলিয়ে যেতে না যেতেই এবার ঘটল সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি। রানা প্লাজার ভবন ধসে হতাহতের পরিসংখ্যান অতিতের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। কে নেবে এ মৃত্যুর দায়ভার? এ নিয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুঁড়ি হয়েছে অনেক যা মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্বের ন্যায় ‘ নড়া চড়া’ তত্বের সাথে ইতিমধ্যে দেশবাসীর পরিচিতি ঘটেছে। এমনিতেই রাজনৈতিক অস্থিরতার ডামাডোলে দেশের পোশাক শিল্প নাজুক অবস্থায় গিয়ে পৌঁচেছে। তার উপর ২৪ এপ্রিল ২০১৩ এর রানা প্লাজা ধসে পড়ার ঘটনা ঘটল মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসাবেই। এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পোশাক শিল্পকে রক্ষায় শ্রমিকদের কল্যাণে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে জাতিকে আরও চড়া মূল্য দিতে হতে পারে।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পেছনে দায়ী সকল ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীকে আইনের আওতায় যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদান পূর্বক ক্ষতিগ্রস্ত সকলের জন্য সর্বোচ্চ ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ লক্ষে মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন- ১৮৫৫ অনুযায়ী মামলা দায়ের করতে হবে। এ আইন অনুযায়ী নিহত ব্যক্তির যতদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল( গড় আয়ু), এবং তিনি ওই সময়ে যা আয় করতেন তা হিসাব কষে এর দ্বিগুণ পরিমাণ ক্ষতি পূরণ আদায় যোগ্য। এ হিসাবে প্রত্যেক নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৪৫-৫০ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ দিতে হবে।
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খেটে খাওয়া পোশাক শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য সরকারকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পোশাক শিল্পে বিচারহীনতার সংস্কৃতির যে অচলায়তন চলছে যুগ যুগ ধরে তা রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি থেকেই ভাঙতে হবে। কেউই আইনের উর্ধে নয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে এ খাতটি ধীরে ধীরে ধ্বংসের মুখে নিপতিত হওয়ার সমূহ আশংকা রয়েছে। বহির্বিশ্বের অনেক নামি দামি ব্র্যান্ডের পোশাক বাংলাদেশের সস্তা শ্রম বাজার থেকে তৈরি হয় বিধায় রানা প্লাজার এ বিপর্যয়ের ঘটনা আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম গুলিতে বেশ গুরুত্বে সাথে প্রচারিত হয়েছে। তাই এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বহির্বিশ্বে তৈরি পোশাক শিল্পের দখলকৃত বাজার হারাতে পারে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে চাপের মুখে কানাডিয়ান কোম্পানি জয়ী ফ্রেশ এবং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার নিমিত্তে আই এল ও এর প্রতিনিধি দল শিঘ্রই ঢাকা আসছে বলে শোনা যাচ্ছে।
অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশের ৯০% ভবন নির্মাণে যথাযথ কারিগরি নির্দেশনা অনুসৃত হয় না। নির্মাণ খরচ বাঁচাতে অনেকেই অসাধুতার আশ্রয় নিয়ে অতি নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করেন। ভবনের ডিজাইন এবং কাঠামো পরিকল্পনায় যোগ্য প্রকৌশলীর দ্বারস্থ না হয়ে অনেক ক্ষেত্রেই রাজমিস্ত্রির উপর নির্ভর করা হয়। তাই ভবিষ্যতে রানা প্লাজার মত বা এর চেয়ে ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনা ঘটবে না এ কথা হলফ করে কেউ বলতে পারবে না। বিশেষ করে দেশে যে ভাবে হু হু করে আবাসন শিল্প প্রসার লাভ করেছে তাতে এ শিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড সহ অন্যান্য কারিগরি বিধিমালা সততার সাথে মান্য করছেন কিনা তার কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। এ প্রেক্ষিতে রাজউক, সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভার সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় আনা অতীব জরুরী।
রানা প্লাজার বিধ্বস্ত ভবন থেকে হতাহত উদ্ধার তৎপরতায় এক শ্রেণীর নিবেদিত প্রান স্বেচ্ছা সেবক নিরলস ভাবে অংশ গ্রহণ করেছেন বিধায় ফায়ার সার্ভিস সহ অন্যান্য সরকারি বাহিনী সমূহকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প বা কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে এক সাথে একাধিক ভবন ধসে পড়লে সে ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলিকে বিরাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। তাই এখন থেকেই নিয়ে রাখতে হবে ভবিষ্যতের দুর্যোগ মোকাবিলার সর্বাত্মক প্রস্তুতি। রানা প্লাজার বিপর্যয় আমাদের এ শিক্ষাই দিয়েছে বলে মনে করি।
রানা প্লাজার ভবন ধসের কারনে যে মানবিক বিপর্যয় আর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কিছুতেই পূরণ হবার নয়। কিন্তু এ দুর্ঘটনা থেকে আমাদের একটা অমূল্য প্রাপ্তিও রয়েছে; তা হল এক দল অপ্রশিক্ষিত দক্ষ উদ্ধারকর্মীর খোঁজ পাওয়া। এরা মানবতার দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন তা এক কথায় অভূতপূর্ব, অবিস্মরণীয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ উদ্ধার কর্মীকেও ছাড়িয়ে গেছেন। রানা প্লাজার ধ্বংস স্তুপ থেকে এখন পর্যন্ত যে বিপুল সংখ্যক মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তার সিংহ ভাগ কৃতিত্বের দাবিদার এ সকল স্বেচ্ছা সেবকগণ। কিছু নারী স্বেচ্ছা সেবককেও দেখা গেছে পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সারা রাত নির্ঘুম থেকে উদ্ধার কাজে অংশ নিতে। এ সকল নিঃস্বার্থ , নিবেদিত প্রান স্বেচ্ছা সেবককে জানাই স্যালুট । সরকারি পৃষ্ঠ পোষকতায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের আরও দক্ষ করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া হলে ভবিষ্যতের দুর্যোগ মোকাবেলায় তারা ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারবে নিঃসন্দেহে। এ সব উদ্ধারকর্মীদের নাম , ঠিকানা, ফোন নম্বর সংগ্রহ করে একটি ডাটাবেজ তৈরি করা যেতে পারে। পরবর্তীতে এদের মধ্য থেকে আগ্রহী স্বেচ্ছা সেবকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে এক বিরাট উদ্ধারকারী কর্মী বাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব হলে তা হবে দুর্যোগ মোকাবেলায় সত্যিকারের একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির মূল হোতা রানাসহ অর্থলোভী সকল গার্মেন্টস মালিক আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক সাজা পাক। ক্ষয় ক্ষতির শিকার প্রতিটি পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা সরকার নিজ উদ্যোগে নিক; গারমেন্টস শিল্পের সকল অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার মূলোৎপাটিত হয়ে এ সেক্টরে স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক- এ আশাবাদ আমাদের সকলের।
রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সমবেদনা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। এহেন বীভৎস মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। পরিশেষে, সকল আহত ব্যক্তিবর্গ শিঘ্রই আরোগ্য লাভ করে স্বভাবিক সুস্থ জীবনে ফিরে আসুক – এ প্রার্থনাই করছি মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে।
০১ লা মে, ২০১৩ রাত ১০:০৫
এম ই জাভেদ বলেছেন: আমিন .।.।.।.।.।.।.।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৫
ইয়ার শরীফ বলেছেন: নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। পরিশেষে, সকল আহত ব্যক্তিবর্গ শিঘ্রই আরোগ্য লাভ করে স্বভাবিক সুস্থ জীবনে ফিরে আসুক – এ প্রার্থনাই করছি মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে।