নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এম ই জাভেদ

প্রত্যেক মানুষই প্রতিভা নিয়ে জন্মায়, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা ধরে রাখতে পারেনা

এম ই জাভেদ

গুণীজনেরা বলেন, ব্লগ লেখা মানে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো। আমার অনেক মোষ তাড়ানোর ইচ্ছা আছে। সমাজের অসঙ্গতি দেখলে মনটা বিদ্রোহ করতে চায়। উপায় না দেখে তখন মোষ তাড়ানোর চেষ্টা করি। দেখা যাক কতদূর কি করা যায়। কারন , ব্যস্ততা আমাকে দেয়না অবসর। ব্যস্ততার ফাঁকে চেষ্টা থাকবে ব্লগে সচল থাকার।

এম ই জাভেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভোরের স্বপ্ন ( একটি গল্প লেখার অপচেষ্টাঃ পর্ব -১ )

২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৪







রহমান সাহেব বন বিভাগের একজন পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা। সৎ এবং নিষ্ঠাবান অফিসার হিসাবে অফিসে বেশ সুনাম রয়েছে তার। বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বনের রাজার বাস ভবনে টাকার খনি উদ্বার হওয়ার প্রেক্ষিতে ডিপার্টমেনটের ভাবমূর্তি তলানিতে গিয়ে ঠেকলেও তার আঁচ রহমান সাহেব কে স্পর্শ করেনি এতোটুকুও। সুধীমহলে রয়েছে তার ব্যাপক গ্রণযোগ্যতা। সম মর্যাদার কর্মকর্তারা যেখানে নামিদামী গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়ান, সেখানে রহমান সাহেব অফিসে যাতায়াত করেন পাবলিক বাসে। গাড়ি কেনার সামর্থ্য তার নেই। এ নিয়ে নিজের মধ্যে অবশ্য কোন দুঃখ বোধ নেই তার। জীবনটা একরকম পার করে দিয়েছেন। এখন সন্তান মানুষ করতে পারলেই বিধাতার কাছে তার আর ব্যাক্তিগত কোন চাওয়া পাওয়া নেই।



এক ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে সুখী সংসার রহমান সাহেবের। একমাত্র ছেলেটি সম্প্রতি ঢাকা ভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে। মেয়েটি ও অনার্স পড়ছে ইডেন কলেজে। মিসেস রহমান একজন নির্ভেজাল গৃহিণী। সংসারের প্রতি তার রয়েছে অগাধ মায়া। পরিবারের সকল সদস্যের ভালোমন্দের দিকটা তিনি বেশ আন্তরিকতার সাথে তদারকি করেন।ছেলে মেয়ের সকল আব্দার মিটানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেন তিনি। প্রকৃত অর্থেই রায়হান সাহেব বর্তমানে নির্ঝঞ্ঝাট , ছিমছাম , সত্যিকারের সুখী জীবন অতিবাহিত করছেন। কিন্তু দেশ নিয়ে তার ভাবনা অনেক। সমাজ তথা দেশের সীমাহীন অনিয়ম আর দুর্নীতি তাকে ভীষণভাবে পীড়া দেয়। তিনি মনে মনে প্রায়ই ভাবেন, দেশের চেহারাটা যদি কোনভাবে একটু পাল্টে দেয়া যেত। কিন্তু ভেবে তেমন কূল কিনারা না পেয়ে জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি প্রায়ই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।





রহমান সাহেব থাকেন মিরপুরের পল্লবীতে। সকাল বেলায় পল্লবীর রাস্তাঘাটের চিত্র থাকে ঢাকা শহরের অন্য সব রাস্তা ঘাটের মতই তথৈবচ। ভয়াবহ যানজট , জনজট, গাড়ির হর্ন, গাড়িতে উঠতে ধাক্কা ধাক্কি, ঠোকাঠুকি ইত্যাদি মোকাবিলা করে ঘণ্টা দেড়েক সময় লেগে যায় তার মহাখালীর অফিসে পৌঁছাতে। এ কারনে হাতে একটু সময় নিয়েই বের হন তিনি। অবশ্য খুব ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠা তার অনেক দিনের অভ্যাস। প্রাতঃ কর্ম সেরে মর্নিং ওয়াকে বের হন প্রতিদিন। দুয়ারী পাড়া ইস্টার্ন হাউজিং পেরিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনের গেট দিয়ে তিনি ঢুকে পড়েন গার্ডেনের ভেতরে। এ গেট দিয়ে সর্ব সাধারনের চলাচল নিসিদ্ব হলেও বন কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে গার্ডেনের ভেতরে ঢুকতে অসুবিধা হয়না তার। দূষিত এই ঢাকা শহরে একটু প্রান ভরে অক্সিজেন নেওয়ার আর অতো সুযোগ কোথায় ? বোটানিক্যাল গার্ডেনে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি , ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে তিনি চলে আসেন বাসায়। ততোক্ষণে করিৎকর্মা গিন্নী তৈরি করে ফেলেন সকালের ব্রেক ফাস্ট। ব্রেক ফাস্ট সারতেই সারতেই পত্রিকায় একটু চোখ বুলিয়ে দেশের সর্বশেষ খবর জেনে বেরিয়ে পড়েন তিনি অফিসের উদ্দেশ্যে।





আজ শুক্র বার, সরকারী ছুটির দিন।রহমান সাহেবের অফিসে যাওয়ার তাড়া নেই।তাই বেশ আয়েশ করে কম্বল মুড়ি দিয়ে কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমোচ্ছেন তিনি। মাঘ মাসের মাঝামাঝি বিধায় শীতটা ও বেশ জাঁকিয়ে পড়ছে ঢাকা শহরে । আবহাওয়া অফিস বলেছে দেশে মৃদু শৈত্য প্রবাহ চলছে এখন। ভোরের দিকে রহমান সাহেব ঘুমের ঘোরে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেন। তিনি প্রাতঃ ভ্রমণে বের হয়েছেন বোটানিক্যাল গার্ডেনে।কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতের সকাল বিধায় চারিদিকে তখন শুনশান নিরবতা। একা একা তিনি পৌঁছে গেলেন বোটানিক্যাল গার্ডেন। কিন্তু গার্ডেনের গেটে আজ দারোয়ানেকে দেখা গেলনা। প্রচণ্ড শীতের কারনে ব্যাটা বোধ হয় ডিউটি ফাঁকি দিয়েছে। রহমান সাহেব দ্রুত ঢুকে পড়লেন গার্ডেনের ভেতর। সামনে এগুতেই একটা প্রাচীন বৃক্ষের নিচে আবছা ভাবে দেখতে পেলেন কেউ একজন হাঁটু গেঁড়ে মাটিতে বসে আছে। মনে সাহস সঞ্চয় করে নিকটে এসে দেখেন একজন শ্বেত শ্মশ্রু মণ্ডিত সন্ন্যাসী গভীর ধ্যানে মগ্ন।রহমান সাহেবের উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ মেললেন তিনি। কথা বলা শুরু করলেন রহমান সাহেবকে দেখে।

“ আমি একজন দেবদূত। মহান প্রভুর আদেশে এখানে এসেছি। সারা জীবন সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে বনের অনেক পশু পাখি , গাছপালার জীবন রক্ষা করেছো তুমি। তাই ওদের সুপারিশেই মহান প্রভু আমাকে পাঠিয়েছেন তোমার কাছে। বল তোমার কি আর্জি মহান প্রভুর কাছে ?”

রহমান সাহেব একটু বিব্রত হলেন।

“ হে দেবদূত , আমি আহামরি কিছুই করিনি । নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সততার সাথে পালনের চেষ্টা করেছি মাত্র” ।

“ সে যাই হোক ,তোমার সততার পুরষ্কার পাবে আজ । বল কি চাই তোমার ?”।

“ যদি তাই হয় তবে মহান প্রভুর নিকট আমার আরজ তিনি যেন এই দেশকে, দেশের মানুষকে একটু বদলে দেন। আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই” ।

“ ঠিক আছে, মহান প্রভুর ইচ্ছায় তাই হবে” ।



এর পর দেবদূত অদৃশ্য হয়ে গেলেন । রহমান সাহেব দ্রুত হেঁটে বাসার পথ ধরলেন । ততোক্ষণে কুয়াশা ভেদ করে একটু একটু করে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। লোকজনের কোলাহলও বেড়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। ঢাকা শহর ফিরে যাচ্ছে তার চিরচেনা রূপে।

বাসায় ফিরে রহমান সাহেব মনস্থির করলেন, ঘটনাটি এখনই কাউকে বলা যাবেনা । আগে দেখা যাক দেবদূতের কথা ফলে কিনা।



গোসল সেরে বাথরুম থেকে বের হয়ে রহমান সাহেব দেখেন স্ত্রী টেবিলে ব্রেকফাস্ট রেডি করে ওয়েট করছে তার জন্য। অন্যান্য দিন মিসেস রহমান টেবিলে সব সাজিয়ে রেখে আরেকটু আয়েশ করে ঘুমিয়ে নেন । স্ত্রীকে বসে থাকতে দেখে তাই একটু অবাক হলেন তিনি।

কি ব্যাপার, বসে আছো কেন তুমি ? ঘুমোতে যাওনি ?

নাহ , আজ তোমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবো আমি।সংসারের জন্য কতো কষ্ট করো তুমি।না হয় একটু কম ঘুমোলাম আজ।রহমান সাহেব অবাক বিস্ময়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন স্ত্রীর দিকে। অনেক দিন পর স্ত্রীর এই আহ্লাদিপনা ভালোই লাগছে তার। বুঝতে পারলেন, দেবদূতের কথা বোধ হয় ফলতে শুরু করেছে।তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট সেরে তিনি বের হয়ে পড়লেন অফিসের উদ্দেশ্যে। বাসার সামনের গলিতে একটা খালি রিকশা দেখা গেল।



এই রিকশা , যাবা সাড়ে এগারো বাস স্ট্যান্ড?

হ জামু।

কত নিবা ভাড়া ?

যা ভাড়া তাই দিবেন।

দশ টাকা দিবো।

চলেন।

রহমান সাহেব একটু চমকিত হলেন। অন্যান্য দিন রিকশাওয়ালারা ডাবল ভাড়া দাবি করে সকাল বেলার ফুরফুরে মেজাজটাই বিগড়ে দেয়। ভাড়া মনঃ পুত না হলে যেতে চায়না কোথাও। পায়ের উপর পা তুলেবসে থাকে নবাব সিরাজ – উদ্দৌলার বংশধরের মত।কিন্তু আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই রহমান সাহেব মনের সুখে গুন গুন করে গান ধরলেন – “ আজ কিছু হতে চলেছে…. ” ।



সাড়ে এগারো বাস স্ট্যান্ডে এসে রহমান সাহেব অপেক্ষা করেন মহাখালী গামী বাস ধরার জন্য। একটু পরে আসলো কাঙ্ক্ষিত বাস।আজ কিন্তু বাসে উঠার জন্য কোন যাত্রী হুড়োহুড়ি করলনা। সবাই ধীরে ধীরে সারিবদ্বভাবে একে একে বাসে উঠল । বাস ভর্তি হয়ে গেলে যারা উঠতে ব্যর্থ হয়েছে তারা পরের বাসের জন্য লাইন ধরে অপেক্ষা করলো। বাসে উঠে রহমান সাহেব খেয়াল করলেন সংরক্ষিত আসন গুলি ফাঁকা দেখেও কোন পুরুষ যাত্রী তাতে বসে পড়েনি। সামনে নিশ্চয়ই মহিলা যাত্রী উঠবেন । অন্যদিন হলে সংরক্ষিত আসনে বসা নিয়ে পুরুষ যাত্রী বনাম হেল্পারের বচসা শুনতে শুনতেই কান ঝালা পালা হয়ে যেত।গণতন্ত্রে সকলের সমান অধিকার এমন বানী ও শোনা যেত কারো কারো মুখে। ভাড়া আদায়ের সময় হেল্পার ও আজ কোন ঝামেলা পাকায়নি। রহমান সাহেব মনে প্রশান্তির একটা হিম শীতল পরশ অনুভব করলেন। নাহ , দিন বদলের পালা সত্যিই তাহলে শুরু হয়েছে।



রাস্তা ঘাটে আজ কোন জ্যাম দেখা গেলনা। সব যানবাহন লেন অনুযায়ী ট্র্যাফিক সিগন্যাল মেনে শৃঙ্খলার সাথে চলাচল করছে। রেড সিগন্যাল পড়লেই রাস্তার দুই পাশ হতে পারাপারে অপেক্ষমাণ জনস্রোতের দেখা মেলেনি আজ। অধিকংশই ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহার করে রাস্তা পার হচ্ছিলো। তাছাড়া ফুটপাত ও দেখা গেলো অবৈধ দখল মুক্ত। জনগণ নির্বিঘ্নে ফুতপাতে চলাচল করছে। চল্লিশ মিনিটের মধ্যেই মহাখালী পৌঁছে গেলেন রহমান সাহেব! অফিস শুরু হতে তখনো ঘণ্টা খানেক বাকি।



অফিসে বসে রহমান সাহেব সিদ্বান্ত নিলেন, দেশের এ বদলে যাওয়ার চিত্র তিনি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবেন আজ। এজন্য বসের নিকট এক দিনের ছুটি চেয়ে নিতে হবে। কিন্তু উনার তো আবার অফিসে আসার মতি গতি ঠিক নেই। কখন যে তিনি আসেন ? কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে বস আজ অফিস শুরুর দশ মিনিট আগেই এসে হাজির। বসের কাছে ছুটির এপ্রোচ করতেই তিনি নির্দ্বিধায় রাজি হয়ে গেলেন। এরকম ঘটনা এই অফিসে সচরাচর ঘটেনা।



রহমান সাহেব , আপনি তো এ বছর ছুটি তেমন কাটান নি । একদিন কেন , এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে নিন না।

না স্যার , শুধু আজকের দিনটা ছুটি দিলেই চলবে।

ঠিক আছে , আপনি চলে যেতে পারেন।





বসকে ধন্যবাদ দিয়ে অফিস হতে বের হয়ে পড়লেন রহমান সাহেব । খানিক চিন্তা করলেন কোথায় কোথায় যাওয়া যায়। মনে মনে একটা তালিকা তৈরি করে নিলেন তিনিঃ

• সচিবালয়

• নয়া পল্টন – বিরোধী দলের কার্যালয়

• আদালত পাড়া

• প্রেস ক্লাব

• মতিঝিল – শেয়ার বাজার

• মতিঝিল থানা

• গণভবন

• মিরপুর কাঁচা বাজার



একটা ট্যাক্সি ক্যাব ডেকে সারা দিনের জন্য চুক্তি করে রহমান সাহেব রওনা দিলেন সচিবালয়ের উদ্দেশ্যে।( চলবে)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৬

মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌ বলেছেন: পরের পর্বে যাচ্ছি :)

২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪১

এম ই জাভেদ বলেছেন: ধন্যবাদ, শেষ পর্বে না গিয়ে থামবেন না কিন্তু ।

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:১৫

মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: ভাই ভাল লাগল, একটানে পড়ে ফেললাম। তবে লেখাটা দুবার আসল। একটা কেটে দেন

২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:২৯

এম ই জাভেদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ওহ সরি, এখনি ঠিক করে দিচ্ছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.