![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুণীজনেরা বলেন, ব্লগ লেখা মানে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো। আমার অনেক মোষ তাড়ানোর ইচ্ছা আছে। সমাজের অসঙ্গতি দেখলে মনটা বিদ্রোহ করতে চায়। উপায় না দেখে তখন মোষ তাড়ানোর চেষ্টা করি। দেখা যাক কতদূর কি করা যায়। কারন , ব্যস্ততা আমাকে দেয়না অবসর। ব্যস্ততার ফাঁকে চেষ্টা থাকবে ব্লগে সচল থাকার।
সচিবালয়ের গেট আজ বেশ ফাঁকা। তদবিরবাজদের নেই কোন জটলা। গেটের প্রহরী উদাস মনে তাকিয়ে আছে ব্যাস্ত মহাসড়কের দিকে।কাজের চাপ নেই বিধায় রাস্তা দিয়ে প্রতি মিনিটে কয়টা গাড়ি যাচ্ছে তা বসে বসে গুনছে বোধ হয় সে। গেটে পরিচয় দিয়ে রহমান সাহেব ঢুকে পড়লেন সচিবালয়ের ভেতর। ততোক্ষণে সচিবালয়ে শুরু হয়ে গেছে বিরাট কর্মযজ্ঞ। ফাইল গুলি সব দ্রুত চলে যাচ্ছে এ টেবিল থেকে অন্য টেবিলে। যেন মজার এক পিলো পাসিং খেলা শুরু হয়েছে মন্ত্রনালয় গুলিতে। কোন টেবিলেই আটকে যাচ্ছেনা কোন ফাইল! জন গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্বান্ত এক নিমিষেই মন্ত্রী মহোদয় অনুমোদন করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন প্রধান মন্ত্রীর চূড়ান্ত সম্মতির জন্য। এভাবে কাজ চলতে থাকলে দেশের উন্নতি কোথায় গিয়ে ঠেকে, চোখ বন্ধ করে এক পলক তাই ভাবলেন রহমান সাহেব। অনাগত সুখ স্বপ্নে বিভোর হয়ে সচিবালয় হতে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসলেন তিনি। এখনো অনেক কিছু দেখা বাকি তার। এরপর তিনি রওনা দিলেন পল্টনের বিরোধী দলীয় কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে।
নয়া পল্টন বিরোধী দলের কার্যালয়। বিরোধী দলীয় নেত্রী শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে জরুরী বৈঠকে বসেছেন। দলীয় অফিসে অনেক নেতা ও কর্মী - সমর্থকের ভিড় দেখা গেল। ভিড় ঠেলে রহমান সাহেব পৌঁছে গেলেন একেবারে বিরোধী দলীয় নেত্রীর কাছাকাছি। নেত্রী সকলের উদ্দেশ্যে তার মূল্যবান দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন ঃ
“ আপনারা সবাই নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে জনসংযোগ শুরু করুন। গণতন্ত্রে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। ক্ষমতায় যেতে হলে জনগণের হৃদয় জয় করাটা ভীষণ জরুরী। যদি আমাদের কাজে কর্মে প্রমান করা যায় যে সরকারি দলের চেয়ে আমরাই শ্রেয়তর, তবে আগামী নির্বাচনে আমাদের জয় হবেই হবে ইনশাল্লাহ। আমার দলে দুর্নীতিবাজদের কোন ঠাই নেই। আজ থেকে দলের বিভিন্ন পদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মেধা এবং যোগ্যতাই হবে একমাত্র মাপকাঠি। কেউ গ্রুপিং, লবিং এর অপচেষ্টা করলে সেটা অযোগ্যতা হিসাবে বিবেচিত হবে। আমার কাছে ব্যাক্তির চেয়ে দল, দলের চেয়ে দেশ অনেক বেশী বড়। আমি শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে আমাদের দাবীসমূহ আদায়ের চেষ্টা করব। দেশে কোন হরতাল - ভাংচুর হবেনা, এতে দেশ মাতৃকারই ক্ষতি হয় বেশি। দাবী পূরণে সরকার নিমরাজি হলে দেশের স্বার্থে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করব। এতে জনপ্রিয়তার পাল্লা আমাদেরই ভারী হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, পরবর্তী নির্বাচনে আমরাই যোগ্যতর দল হিসাবে বিজয়ী হব। সে লক্ষ্যে আপনারা আজ থেকে কাজে নেমে পড়ুন। আমাদের দলের একটাই মূলমন্ত্র, সেটা হল উন্নয়নের রাজনীতি”।
রহমান সাহেব মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিলেন বিরোধী দলীয় নেত্রীর বক্তব্য। এতটুকু শুনেই তিনি বেশ আবেগ প্রবণ হয়ে পড়লেন। এরকম অহিংস বানী এর আগে মহাত্মা গান্ধী আর আন্না হাজারের মুখেই শুনেছে লোকজন। পকেট থেকে রুমাল বের করে সবার অলক্ষ্যে চোখ মুছে সভাকক্ষ থেকে বের হয়ে আসলেন তিনি। তার পরবর্তী গন্তব্য আদালত পাড়া।
পাঁচ মিনিটের মধ্যেই রহমান সাহেব আদালত পাড়ায় এসে পৌঁছালেন। পুরো আদালত চত্বর জুড়ে আইনজীবীদের বড্ড ভিড় পরিলক্ষিত হল। কালো আলখেল্লা পরা আইন জীবীদের পাশাপাশি বিচারকদেরও ব্যস্ততার শেষ নেই আজ। আদালতের সকল বেঞ্চে একের পর এক মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে। বিচারপতিরা ঠিক করেছেন, পেন্ডিং সব মামলার চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কেউ এবার শীতকালীন অবকাশে যাবেন না। এক অদ্ভুত ভালো লাগায় মনটা ভরে উঠলো রহমান সাহেবের। কাল ক্ষেপণ না করে আদালত পাড়া হতে বের হয়ে আসলেন তিনি।
আদালত চত্বর থেকে ফেরার পথে প্রেসক্লাবের সামনে ব্যাপক জনসমাবেশ নজরে আসলো রহমান সাহেবের। জাঁদরেল সব ব্যবসায়ীদের দেখতে পেয়ে বেশ কৌতূহল হল তার। তাই ঢুকে পড়লেন তিনি প্রেসক্লাবে। এখানে আজ দেশের সব বাঘা বাঘা শিল্প পতিরা জমায়েত হয়েছেন। তারা আজ জনসম্মুখে শপথ নিবেন – ঋণ খেলাপি হয়ে কালো টাকার পাহাড় গড়া থেকে তারা নিজেকে বিরত রাখবেন, অদ্যাবধি অর্জিত সব কালো টাকা সরকারী কোষাগারে অবিলম্বে তারা জমা দেবেন। সকল ব্যবসায়ী আরও ওয়াদা করলেন, সিণ্ডিকেট করে কেউ আর দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলবেন না। কেউ খাবারে ভেজাল মেশাবেন না। ভেজাল উৎপাদনকারী সব ফ্যাক্টরি সবাই নিজ দায়িত্বে ধ্বংস করবেন। রহমান সাহেবের আনন্দ বুঝি আজ আর ধরেনা। তার স্বপ্নের বাংলাদেশ আজ সত্যি হতে চলেছে! আবেগে আপ্লুত হয়ে আরেকবার রুমাল দিয়ে চোখ মুছলেন তিনি।
এবার ট্যাক্সিওয়ালাকে মতিঝিলের দিকে যেতে বললেন রহমান সাহেব। উদ্দেশ্য শেয়ার বাজারটা একটু পর্যবেক্ষণ করে যাওয়া। অবসরে যাওয়ার পর এই মার্কেটে বিনিয়োগের ইচ্ছা আছে তার। কিন্তু ইদানিং কালের বাজার ধ্বস তাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। তাই পরিবর্তনের হাওয়া শেয়ার বাজারে কেমন লেগেছে সেটা দেখার লোভ আজ সামলাতে পারলেন না তিনি।
স্টক মার্কেটের সামনে গিয়ে তো রহমান সাহেবের চক্ষু চড়ক গাছ। পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য। তিল ধারণের কোন জায়গা নেই আজ স্টক মার্কেট এলাকায়। প্রেসক্লাবে ব্যবসায়ী মোঘলদের ঘোষণা চাউর হতে বেশী সময় লাগেনি বোধ হয়। এ কারনেই শেয়ারের দাম বাড়ছে হু হু করে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা কে কত বেশী শেয়ার কিনতে পারে। রহমান সাহেব অনেক কসরত করে ভিড় ঠেলে একটা ব্রোকার হাউসে প্রবেশ করলেন। তাৎক্ষণিক ভাবে একটা বি ও একাউন্টও খুলে ফেললেন তিনি। কিন্তু একাউন্ট সচল হতে আরও দুইদিন সময় লাগবে শুনে হতাশ হয়ে গেলেন।আজ শেয়ার কিনতে পারলে বড় একটা দাঁও মারা যেত। ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ থেকে লাভের অংকের হিসাব কষতে কষতে বেরিয়ে আসলেন তিনি ব্রোকার হাউস থেকে। তার পরবর্তী গন্তব্য মতিঝিল থানা। (চলবে)
২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:২৬
এম ই জাভেদ বলেছেন: যেতে থাকুন। ধন্যবাদ পেইন নেওয়ার জন্য।
২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:২০
মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: ইস রহমান সাহেবের স্বপ্নটা যদি সত্য হত.....
২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:২৭
এম ই জাভেদ বলেছেন: রহমান সাহেবের স্বপ্ন সত্যি হলে আমরা এখন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারতাম।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৩
মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্ বলেছেন: পরের পর্বে যাচ্ছি