![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভূ অভ্যন্তরে শিলায় পীরনের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূ পৃষ্ঠ ক্ষনিকের জন্য কেপে ওঠে এবং ভূ ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয় । এই রূপ আকস্মিক ও ক্ষনস্থায়ী কম্পনকে বিজ্ঞানের ভাষায় ভূমিকম্পণ বা ভূমিকম্প বলে । কম্পন তরঙ্গ থেকে যে শক্তির সৃষ্টি হয় তা ভূমিকম্পের মধ্যমে প্রকাশ পায় । এই তরঙ্গ ভূ গর্ভের কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে উৎপন্ন হয় এবং তা উৎসস্থল থেকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পরে । ভূমিকম্প সাধারনত কয়েক সেকেণ্ড থেকে এক বা দু-মিনিট স্থায়ী হয় । মাঝে মাঝে কম্পন এত দূর্বল হয় তা অনুভব করা যায় না । কিন্তু শক্তিশালি এবং বিধ্বংসী ভূমিকম্পের কারনে ঘর বাড়ি ও ধন সম্পত্তির ব্যপক ভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অসংখ্য প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে ।
পৃথিবীর অভ্যন্তরে যেখান থেকে ভূকম্প তরঙ্গ উৎপন্ন হয় তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলা হয় । এই কেন্দ্র থেকে কম্পন ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গের মাধ্যমে সব দিকে ছরিয়ে পড়ে । আর যখন শিলার পীড়ন ক্ষমতা সহ্যসীমার বাহিরে চলে যায় তখন শিলায় ফাটল ধরে এবং শক্তির মুক্তি ঘটে । তাই প্রায়শই ভূমিকম্পের কেন্দ্র চ্যুতিরেখা অংশে অবস্থান করে । সাধারনত ভাবে ভূ পৃষ্ঠ থেকে ১৬ কি.মি.র দূরত্বের মধ্যে এই কেন্দ্র অবস্থান করে থাকে । তবে ৭০০ কি.মি. গভীরে গুরুমণ্ডল Mantle থেকেও ভূ কম্পন উত্থিত হতে পারে ।
ভূমিকম্পের কারণ কি ?
সাধারণত ভাবে গভেষকরা বলেছেন তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে।
১। ভূপৃষ্ঠজনিত কারনে ।
২। আগ্নেয়গিরিজনিত কারনে ।
২। শিলাচ্যুতিজনিত কারনে ।
গভেষকরা আরো বলেছেন কখনো কখনো আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ এবং গলিত লাভা উৎক্ষিপ্ত হওয়ার কারণেও ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে ।
বাংলাদেশের ভূমিকম্প
বাংলাদেশের ভূমিকম্প বলতে আসলে বাংলাদেশ এবং তৎসংলগ্ন এলাকার ভূমিকম্পকে বোঝায় । বাংলাদেশ আসলে ভারত ও মায়ানমারের ভূঅভ্যন্তরের দুটি ভূচ্যুতির faultline প্রভাবে আন্দোলিত হয় । এর কারন হিসেবে বলা হয়েছে বাংলাদেশ, ভারতীয়, ইউরেশীয় ও বার্মার মায়ানমারের টেকটনিক প্লেটের মধ্যে অবস্থান করছে । ভারতীয় এবং ইউরেশীয় প্লেট দুটি ১৯৩৪ সালের পর থেকে দীর্ঘদিন যাবর্ত হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে আছে তাই অপেক্ষা করছে বড় ধরণের কোন নড়াচড়া দেওয়ার ।
তার মানে কি দাড়ালো ? তার মানে বড় ধরনের কোন নড়াচড়া মানেই কিন্তু বড় ধরণের ভূ কম্পনের আশঙ্কআ তাই আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন সব সময় । বাংলাদেশে ৮টি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায় আছে ।এলাকা গুলো হলো
বগুড়া চ্যুতি এলাকা, রাজশাহীর তানোর চ্যুতি এলাকা, ত্রিপুরা চ্যুতি এলাকা, সীতাকুন্ড টেকনাফ চ্যুতি এলাকা, হালুয়াঘাট চ্যুতির ডাওকী চ্যুতি এলাকা, ডুবরি চ্যুতি এলাকা, চট্টগ্রাম চ্যুতি এলাকা, সিলেটের শাহজীবাজার চ্যুতি এলাকা, আংশিক ডাওকি চ্যুতি এবং রাঙামাটির বরকলে রাঙামাটি চ্যুতি এলাকা ।
পূর্বে বিভিন্ন দেশে যে মাত্রায় ভূ কম্পন ছিল ।
১৮৮৫ সালে ১৪ জুলাই বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ ৭+ মাত্রা ভূ কম্পন হয় ।
১৯১৮ সালে ৮ই জুলাই বাংলাদেশ শ্রীমঙ্গল ৭.৬ মাত্রা ভূ কম্পন হয় ।
১৯৩০ সালে ২রা জুলাই ভারত,আসাম, ধুবড়ি, ৭.১ মাত্রা ভূ কম্পন হয় ।
১৯৩৪ সালে ১৫ জানুয়ারি ভারত,বিহার, ৮.৩ মাত্রা ভূ কম্পন হয় ।
১৯৩৪ সালে ৩ জুলাই ভারত,আসাম ৭.১ মাত্রা ভূ কম্পন হয় ।
১৯৫০ সালে ১৫ই আগস্ট ভারত, আসাম ৮.৭ মাত্রা ভূ কম্পন হয় ।
১৯৯৭ সালে ২২ নভেম্বর বাংলাদেশর চট্টগ্রাম ৬.০ মাত্রা ভূ কম্পন হয় ।
১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের মহেশখালি দ্বীপে ৫.২ মাত্রা ভূ কম্পন হয় ।
২০০২ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ৪০ বার ভূ কম্পন হয় ।
২০০৩ সালে ২৭শে জুলাই বাংলাদেশের বরকল উপজেলা রাঙামাটিতে ৫.১ মাত্রা ভূ কম্পন হয় ।
বাংলাদেশ এবং তারসংলগ্ন এলাকার গত কয়েক বছরের ভূমিকম্পের সংক্ষিপ্ত রেকর্ড ।
প্রাকৃতিকভাবেই কার্বন চক্রের প্রভাবে ভূমিকম্প হয়ে থাকে । বাংলাদেশেও তার বাহিরে না । বাংলাদেশের ভিতরে ও পার্শ্ববর্তি এলাকার বিগত প্রায় ২৫০ বছরের ভূমিকম্পের নথিভুক্ত তালিকা পাওয়া যায় । এ তালিকা থেকে প্রতীয়মান হয় যে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে ১০০ এরও বেশি ভূমিকম্প । তারমধ্যে ৬৫টিরও বেশি ঘটেছে ১৯৬০ সালের পরে । এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে বিগত ৩০ বছরে পরিপ্রেক্ষিত ২০০৪ ভূমিকম্প সংঘটনের মাত্রা বেড়েছে ।
১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয় এবং ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে হয় ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্প হয় । এমনকি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের BUET মানমন্দিরে ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের মে পর্যন্ত ৪ বছরে রিখটার স্কেলে ৪ মাত্রার ৮৬টি ভূ কম্পন নথিভুক্ত করা হয় । এই সময়ের মধ্যে ৫ মাত্রার চারটি ভূ কম্পনও ধরা পড়ে । বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের মানমন্দিরে ২০০৭ সালের মে থেকে ২০০৮ জুলাই পর্যন্ত কমপক্ষে ৯০টি ভূ কম্পন নথিভুক্ত করা হয় । তারমধ্যে ৯টিরই রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিলো ৫ এরও উপরে এবং সেগুলোর ৯৫% এরই উৎপত্তিস্থল ছিলো ঢাকা শহরের ৬০০ কিলোমিটারের মধ্যে ।
অতীতের এসব রেকর্ড থেকে দেখা যায় ভূমিকম্পের মাত্রা না বাড়লেও ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ভূমিকম্প সংঘটনের হার বেড়েছে অর্থাৎ ঘন ঘন স্বল্প মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে । মতবিরোধ থাকলেও অনেক গভেষক ধারনা করেন ভূতাত্ত্বিক ছোট ছোট ভূমিকম্প সংঘটন মানে বড় ধরণের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে উল্লেখ করেন । অতীতের এসব রেকর্ডকে প্রাধান্য দিয়ে গবেষকরা আর জানিয়েছেন যেকোনো সময় বাংলাদেশে রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে ।
তথ্যসূত্র:GSB
©somewhere in net ltd.