![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, চেয়ারম্যান, ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সন্তোষ, টাঙ্গাইল-১৯০২।
প্রতিদিনকার অভ্যাসমত ফেসবুক চালাতে গিয়ে কয়েক দিন অাগে হঠাৎ করে একটি সংবাদসমেত স্ট্যাটাস দেখে খুব আশ্চর্য হয়েছি। কেন খুব আশ্চর্য হয়েছি তা যদি বলি, তবে বলব, বর্তমান সময়ের প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধের বিপরীতে স্ট্যাটাসটিকে অনেকটাই ইউনিক বা ব্যতিক্রম। ‘অ্যাভিউজের শিকার হয়েছি আমি’ শিরোনামে একটি সংবাদ নিয়ে আলোচিত স্ট্যাটাসটি। স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন বর্তমান সময়ে খুব সরব একজন নারীবাদী আন্দোলনের কর্মী, উইমেন চ্যাপ্টার নামে একটি জনপ্রিয় নারীবাদী পত্রিকার সম্পাদক সুপ্রীতি ধর। স্ট্যাটাসে তিনি একটি স্লোগান ব্যবহার করেছেন। স্লোগানটি বেশ আশ্চর্য রকমের কিন্তু অসম্ভবরকমভাবে স্পষ্ট । স্লোগানটি সংক্ষিপ্তভাবে ‘আমিও (Metoo) ’ । এই আন্দোলন কবে থেকে শুরু হয়েছে তাও আমার সূনির্দিষ্টভাবে জানা নেই। তবে তা হলিউডের একজন প্রযোজক কতৃক যৌণ নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতেই শুরু হয়েছে বলেই মনে করি।
‘আমিও’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে দুটি স্ট্যাটাসের পর নতুন একটি লেখায় তিনি লিখেছেন, “আমি জানি, আমার এই স্বীকারোক্তির কোন মূল্য কারও কাছে নেই। সবাই বলবে, কী দরকার এসব বলার! সত্যিই তো, কোনো দরকার নেই। ছোটবেলা থেকে বলার চেষ্টা করেছিলাম বলে ‘খারাপ মেয়ে’ তকমা জুটেছিল। ‘খারাপ মেয়ে’দের সাথেই এসব ঘটে। ‘ভালো মেয়ে’ হওয়ার অনেক চেষ্টা করে গেছি জীবনে, হতে পারিনি। চোখের সামনে যেসব মেয়েকে অ্যাবিউজ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হতে দেখেছি, শুধুমাত্র মুখ বন্ধ রেখেছে বলে, নিজেদের স্বজনদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারিনি।...তারপরও ঋজু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আজও তো আমি বলতে পারি, ‘আমি অন্যায়ের সাথে আপোস করিনি’।” তিনি স্পষ্ট ভাষায় ছোটবেলায় পারিবারিক গন্ডির মধ্যে একান্তই পরিবারের মানুষজন দ্বারা, পূজা দিতে গিয়ে অপরিচিত মানুষজন দ্বারা, চলতি পথে রাস্তাঘাটে অচেনা মানুষ দ্বারা, চাকুরীকালীন সময়ে সহকর্মীদের দ্বারা যৌন নির্যাতন হয়েছে তার অনুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন । এখনও কিভাবে বিভিন্ন বিরোধী মতাদর্শের মানুষজন অথবা যাদেরকে এক সময়ের আন্দোলনের সহকর্মী, সারথী মনে করেছেন তাদের দ্বারা মৌখিকভাবে অশ্লীল, অশ্রাব্য ভাষায় কিভাবে মনস্তাত্ত্বিকভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বা এখনো হচ্ছেন তার বিশদ বিবরণ তুলে ধরেছেন। একইসাথে নির্যাতন নিপীড়ন থেকে বাঁচতে কিভাবে ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় আচার কিংবা প্রার্থনায় অংশগ্রহন করতেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। মন্তব্য করেছেন, সে সব করে কোন লাভ হয়নি। নারী হিসেবে এসব সমস্যা প্রতিনিয়ত সহ্য করতে হচ্ছে।
আমার কাছে, একদম সরল স্বীকারোক্তি মনে হয়েছে লেখাটি। অনেক কিছু আমাদের কাছে তুলে ধরে প্রবন্ধটি। একটা সমাজের নারীর যাপিত জীবনে ক্রমাগত সংকট ও বাস্তবতাকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরেছেন পাঠকের কাছে। একইসাথে তিনি ‘আমিও’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে নারীদেরকে আহবান জানিয়েছেন মেয়েদেরকে সরল স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য, যার মাধ্যমে বুঝা যাবে আমাদের সমাজে কত শতাংশ মেয়ে এসব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। লেখাটিতে অনেক ভিউ, শেয়ার এবং লাইক পড়েছে। বোঝা যায়, লেখাটি অনেক মানুষকে ভিতর থেকে টাচ করেছে। এই ‘আমিও’ হ্যাশট্যাগ দেয়ার অব্যবহিত পর হতেই অনেকে নিজের যাপিত জীবনে বিভিন্ন সময়ে কিভাবে যৌন নির্যাতন কিংবা ভাষাগত অ্যাভিউজের শিকার সে সম্পর্কে বলেছে। এর মধ্যে বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক, সংবাদকর্মী, প্রথিতযশা নারীবাদী থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মজীবী কিংবা উৎসুক নারীরা পর্যন্তও আছেন। অনেকের কথায় কিংবা লেখায় নির্যাতন কিংবা নিপীড়নের শিকার হওয়ার বয়ান শুধু নেই বরং কোন কোন সময় প্রতিরোধের বাস্তব উদাহরন পর্যন্ত আছে। উচ্চশিক্ষারত একজন বিশ^বিদ্যালয়ের নারী শিক্ষক সরাসরি পাঁচটি ঘটনার উল্লেখপূর্বক দুয়েকটি ক্ষেত্রে প্রতিরোধের কথাও লিখেছেন। নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষও হ্যাশট্যাগে ‘আমিও’ ব্যবহার করে তাদের আন্দোলনে সহমত জানিয়েছেন।
স্পষ্টভাবে কিছু নারী, নারীবাদী আন্দোলনের কর্মী কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যে উন্মুক্তভাবে পাবলিক পরিসরে এভাবে বলছেন এটা আমার কাছে অত্যন্ত ইতিবাচক মনে হয়েছে। অনেকদিন পরে বাংলাদেশের নারীরা মুঢ়তার বিপরীতে ভাষা পেয়েছে বলে মনে হয়েছে। যুগ যুগ ধরে যগদ্দল পাথরের মতো বসে থাকা নিপীড়নের ঘটনাগুলোর সরল স্বাীকারোক্তি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনাটিকে বাংলাদেশের নারীবাদী আন্দোলনের একটা প্যারাডাইম শিফট বলে আমার মনে হয়েছে। অনেকেই বলতে পারেন, এ ব্যাপারে এত তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত টানা কিংবা সাধারণীকরণ করা যৌক্তিক হবে কিনা? আমি মনে করি বাংলাদেশে নারীবাদী আন্দোলন কিংবা নারীর অধিকার বিষয়ে লেখালেখির বিভিন্ন পর্যায়ে পুরুষতন্ত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়ে একমাত্র তসলিমা নাসরিন এই বিষয়ে তাঁর বইপত্রে সরাসরি ও বিস্তারিত লিখেছেন। তসলিমা নাসরিন বিস্তারিতভাবে তাঁর আমার মেয়েবেলা, ‘ক’ কিংবা উতল হাওয়াতে যৌন নির্যাতন, নারী নির্যাতন, পারিবারিক ও সামাজিক নিপীড়ন সম্পর্কে বলেছেন কিংবা ইঙ্গিত করেছেন। তসলিমা নাসরিন নির্বাসিত হওয়ার পর থেকে দুয়েকজন অতি সংক্ষিপ্তভাবে কিংবা গোপনে তাদের মতামত শেয়ার করার করলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মত পাবলিক পরিসরে এই ভলিউমে কেউ বলেনি, বলতে চায়নি। যদিও দুয়েকবছর যাবৎ উইমেন চ্যাপ্টার, জাগরনীয়া এর মতো পত্রিকাগুলো নারীর কথা বলার কিংবা ভাষা প্রকাশের ক্ষেত্রে একটা নির্ভরযোগ্য স্পেস হয়ে উঠেছে বলে আমার বিশ্বাস। হয়তো বা তার প্রভাবেই কিংবা প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনেই ‘আমিও’ বলে নারীরা কথা বলার সাহস পাচ্ছে। এইজন্যই আমি এটাকে প্যারাডাইম শিফট বলতে চাই। এই যে, বলবার মতো ভাষা, প্রকাশ করার সাহস এটাই আমাদের মতো পশ্চাৎপদ দেশে একটা ইউনিক কার্যক্রম।
পাশ্চাত্যে নারীবাদী আন্দোলনের কর্মীরা অনেক আগে থেকেই বক্তৃতা, বিবৃতি, তাঁদের প্রকাশিত আত্মজীবনী কিংবা একাডেমিক বই, প্রবন্ধ, নিবন্ধের মধ্যে তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্নমূখী নেতিবাচক আচরণের বিবরণ তুলে ধরেছেন। ব্রেটি ফ্রাইডানের ‘ফেমিনিন মিষ্টিক’, কেইট মিলেটের ‘সেক্সুয়াল পলিটিকস’, সিমোন দ্য বুভোঁয়া ‘দ্য সেকেন্ড সেক্স’, নিরা ইউভাল ডেভিস এর মতো নারীবাদীদের লেখায় অনেক কিছু উঠে এসেছে। যদিও ব্ল্যাক নারীবাদ ও বর্ণবাদবিরোধী নারীবাদী আন্দোলনের তাত্ত্বিকদের লেখায় বিশেষ করে সরাসরি শারিরীক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, অত্যাচার, মনস্তাত্ত্বিক অ্যাভিউজের ঘটনাগুলো বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে। এমনকি আমাদের পাশ^বর্তী দেশ ভারতের নারীবাদী কমলা বাসিনের লেখায়ও অনেক কিছু উঠে এসেছে।
আমেরিকা ও ইউরোপে সিভিল লিবার্টিজ মুভমেন্ট থেকে নারীর অধিকার নিয়ে আন্দোলনের প্রবল যে ঢেউ সেই সময় থেকে নারীবাদী তাত্ত্বিকগণ তাঁদের লেখায় খোলাখোলিভাবে অনেক কিছু তুলে নিয়ে এসেছেন। বলেছেন তাঁদের না বলা কথাগুলো। সাধারণ পাঠকদের অনেকে মনে করতে পারেন, পাশ্চাত্যের সমাজব্যবস্থায় যেহেতু বেশিরভাগ মানুষ শিক্ষিত সেহেতু ওখানে মনে হয় নারীর অধিকার বিষয়ে আন্দোলনের প্রতিরোধ বা বিরোধীতা কম। আসলে তা নয়। ওখানে পুরুষতান্ত্রিক রাজনীতি, মূল্যবোধ আমাদের দেশের চেয়ে হয়তো কোন অংশেই কম নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রাচীনকালের দার্শনিক চিন্তা বিশেষ করে প্লেটো, এরিষ্টটল থেকে শুরু করে নীট্শে, ফ্রয়েড পর্যন্ত অনেক তাত্ত্বিকই প্রবলভাবে পুরুষতান্ত্রিক মতাদর্শের পক্ষে। এমনকি আধুনিকতাবাদের তাত্ত্বিকরা পর্যন্ত যেসব গ্রান্ড ন্যারেটিভ থিওরী দিয়েছেন বেশিরভাগই পুরুষতান্ত্রিক মতবাদের দার্শনিক চিন্তার উপর ভিত্তি করে ।
বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলে কথিত যেসব তত্ত্ব আছে সেখানেও এমনকি নারীকে অবজ্ঞা কিংবা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হয়েছে। আমরা যারা অপরাধবিজ্ঞানের ছাত্র ও শিক্ষক তারা জানি যে, যেসব নারীরা অপরাধের সাথে যুক্ত হয় তাদের অপরাধের সাথে যুক্ত হওয়ার মূল কারন কি? সামাজিক অনেক কার্যকারণ এখন অপরাধবিজ্ঞানীরা সামনে নিয়ে আসলেও একটা সময় তাত্ত্বিকভাবে এটা বিশ্বাস করা হত যে, যেসব নারীরা অপরাধের সাথে যুক্ত তারা বিবর্তনগতভাবে পুরুষের চেয়ে কম বিকশিত। বিবর্তনের আদি পর্যায়ে যেহেতু তারা আছে, অতএব তারা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হবেন এটাই স্বাভাবিক। এমনকি উত্তর-আধুনিক ও উত্তর-উপনিবেশিক তত্ত্বগুলোতেই অনেক সময়ে আলাদাভাবে নারীর অধিকার কিংবা মুক্তি নিয়ে খুব বেশি কথা বলা হয়নি। আমরা দেখেছি, ধর্মীয় বিশ্বাস, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এমনকি মানবমুক্তির তত্ত্ব বলে পরিচিত অনেক তত্ত্বই প্রকৃত অর্থে নারীমুক্তির প্রশ্নটিকে যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারেনি।
আমি মনে করি, ‘আমিও’ নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন করে বাংলাদেশে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে এই আন্দোলনের তাৎপর্য অনেক। প্রথমত, এই আন্দোলনটি নারীকে স্পষ্টভাবে, সাহসিকতারসহিত কথা বলার শক্তি দিয়েছে। তাদের নিজের জীবনের যে ক্লেদাক্ত অভিজ্ঞতা কিংবা বলতে পারি মানসিক যন্ত্রনা তাকে ঝড়ের মতো প্রকাশের অনুপ্রেরণা যোগায় ‘আমিও’ নামে প্রত্যয়টি। দ্বিতীয়ত, নারীর জীবনের এইসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক বাস্তবতার দূয়া তুলে নারীর জীবনের নিপীড়নের কাহিনী লুক্কায়িত করার যে বিদ্যমান সংস্কৃতি ছিল তার মুখোশকেও আমাদের চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে এর মাধ্যমেই। তৃতীয়ত, নারীর জীবনের নিপীড়ন কিংবা নির্যাতনের বিপরীতে যে প্রতিরোধের প্রবল সংস্কৃতি কিংবা প্রচেষ্টা সেই শক্তিশালি দিককেও উন্মোচিত করে এই বর্গটি। নিম্নবর্গের সামাজিক বিনির্মাণ বা কনস্ট্রাকশনের মতো নারীর যে আলাদা ভাষা আছে তার সম্ভাবনাকেও আমাদের সামনে তুলে আনে। চতুর্থত, নারীর মুক্তির প্রশ্ন, নারীর ভাষ্য নির্মান কিংবা নারীর অধিকারের প্রশ্নটি সামনে আসলে আরও একটি বিষয় আমাদের সামনে আসে তা হলো মুক্তির পথ কি? আমি মনে করি এই আন্দোলন এই বিষয়টিকেও নির্দেশনা দিতে পারে। সুপ্রীতি ধর তাঁর লেখায় বলেছেন তিনি মন্দির কিংবা পূঁজোয় শারিরীক যৌন নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য অনেক টাকা কিংবা পয়সা বিলিয়েছেন । কাজ হয়নি তাই আবার ফিরিয়েও নিয়েছেন। এই বিবৃতি এটাই নির্দেশ করে শুধুমাত্র বিশ্বাস কিংবা অতিপ্রাকৃত শক্তিই নারীকে নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি দিতে পারেনি। ফলে তিনি ভিন্ন কিছুকে ইঙ্গিত করেছেন।
মুক্তির পথের এই আন্দোলন পাশ্চাত্যেও একইরকমভাবে হয়নি। নারীবাদী আন্দোলন একদিনে গড়ে উঠেনি। হাজার হাজার বছর ধরে নারীদের শোষণ-অত্যাচার-নিপীড়নের বিপরীতে একটু একটু করে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। প্রথমে যেখানে উদারনৈতিক নারীবাদে আইনগত সুবিধা বাড়ানো, আইনের সংস্কার ভোটাধিকারের কথা বলে হয়েছিল সেখানে মার্কসীয় নারীবাদে নারীমু্িক্তর সাথে শ্রেণিমুক্তির সম্পর্ক নিয়ে কথা বলা হয়েছিল। অন্যদিকে, সমাজতান্ত্রিক নারীবাদে যেখানে পুঁজিবাদ ও পিতৃতান্ত্রিকতাকে নারীমু্িক্তর বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে র্যাডিক্যাল নারীবাদে প্রচলিত সব চিন্তা ব্রেক করে সন্তান উৎপাদন থেকে নারীর মুক্তি থেকে শুরু করে নারীর লৈঙ্গিক ভূমিকা ও নারীর চরম স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছিল।
বিভিন্ন নারীবাদী আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণভাবে নারীমু্িক্তর বিভিন্ন ডিসকোর্স মানুষের সামনে নিয়ে আসলেও কখনো কখনো নারীবাদী আন্দোলনে বিকৃতিও এসেছিল পাশ্চাত্যে। এসেছিল সংকীর্ণতা। প্রকৃত মুক্তির চিন্তা, আদর্শগত সংগ্রাম ও পদ্ধতিগত আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে নারীমুক্তির আন্দোলন সংকীর্ণভাবে নগ্নতার স্বাধীনতা কিংবা ব্রা-পেন্টি পোড়ানোর আন্দোলনে রুপান্তরিত হয়েছে বলেও অনেক সমাজতাত্ত্বিকগণ বিভিন্ন সময়ে মতামত দিয়েছেন। যদিও আমি মনে করি পুরুষের শরীরের উপর তার যেমন চরম স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ আছে ঠিক তেমনি নারীর শরীরের উপরও তার চরম স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকার থাকা উচিত। সে কি করবে তাঁর স্বাধীনতা তাঁর কাছেই থাকা উচিত। নারী তাঁর শরীরকে কিভাবে রিপ্রেজেন্ট করবে সেটা তার একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। তবে আমি মনে করি ‘আমিও’ আন্দোলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর কথা বলার যে স্বাধীনতা দিয়েছে সেটাকে কাঠামোবদ্ধ উপায়ে, ধারাবাহিকভাবে নারীমুক্তির আন্দোলনে রুপান্তর না করতে পারলে তা ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। নারীর এই কথা বলার নতুন যে ডিসকোর্স চালু হল তা সময়কাল ও ব্যপ্তি বিবেচনায় এখনও ব্রুনাবস্থায়। আমি মনে করি এই আন্দোলন ‘হোক কলরব’ এর মতো যেন কোন চকিত আন্দোলন হয়ে দাঁড়ায় । অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আন্দোলনের প্রথাগত ঘেরাটোপে যাতে সীমাবদ্ধ না হয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের গতিপথ নারীর প্রকৃত মুক্তির আন্দোলনের প্রশ্নের সাথে এক বিন্দুতে মিলিত হবে এটাই প্রত্যাশিত।
২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪০
মিথী_মারজান বলেছেন: হ্যাশ ট্যাগ আর আমিও - ব্যাপারটা আমার(স্বল্প জ্ঞানে) কাছে শুধুই বর্তমান একটা ক্রেজ আর গল্প ভান্ডার ছাড়া কিছু মনে হয় না।
কিছু মনে করবেন না প্লিজ, নারী বা পুরুষ আমরা সবাই এসব হয়রানী সম্পর্কে কমবেশি জানি।
সেলিব্রিটি দের অজানা গল্প হিসাবে এখন এটা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে আর যারা গল্পগুলো বলছে তারাও নিজেদের সাহসী ভেবে অন্যদের মুখ খুলতে উৎসাহিত করছে।
এই পর্যন্ত কতজন অন্যায়কারীকে শাস্তির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে এরা?
একই সমস্যার বিভিন্নমুখী গল্প সমাজে না ছড়িয়ে বরং সবাইকে সচেতন এবং প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে সাহসী করে তোলা দরকার।
ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে প্রয়োজন সুস্হ্য মানসিকতার।
নিপীড়ন এর এসব ক্ষেত্রে (সরাসরি থাপ্পর) আর সঠিক আইন প্রয়োগের বিকল্প নাই।
আর নারীমুক্তির একমাত্র উপায় নারীদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে আত্মনির্ভরশীল হতে সহায়তা করা আর সেই সাথে যারা নারী অবমাননা করে তাদেরকেও সুশিক্ষিত করে মানসিক গঠন বিকাশে সাহায্য করা।
খুব ফালতু কিছু বলে থাকলে দু:খিত।
( আশাকরি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
৩| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫১
জিহাদ মুহাম্মদ বলেছেন: মিথী-মারজান @ অাপনার মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ। অাপনি যা বলেছেন তা অামার লেখায় ইঙ্গিত অাছে । অামি বলেছি যে যদি এই আন্দোলন বৃহত্তর নারীবাদী আন্দোলনের সাথে যুক্ত না হয় তবে তা ব্যর্থ হবে। হোক কলরব মুভমেন্ট এর মতো হারিয়ে যাবে। আপনি যে কথা বলেছেন যে নারী নির্যাতনের এসব বিষয় আমরা সবাই বুঝি। এটা ঠিক যে আমরা অনেকেই লজ্জা কিংবা ভয় ভীতির কারনে প্রকাশ করতে চাইনা। এখানে মানুষের মধ্যে একটা আইসের মতো শক্ত চিন্তা আছে। যারা আমি আন্দোলনের মাধ্যমে এসব যৌণ নির্যাতনের কাহিনী প্রকাশ করছেন তা প্রথমত আইস ব্রেকিংয়ের কাজ করছে। এটাই ইতিবাচক। কোন ভাবেই শুধু ঘটনাগুলো প্রকাশ করলেই সমাধান হবেনা আমি তা বলিওনি। আমি যেটা বলতে চেয়েছি তা প্রতিবাদের কথা। প্রতিবাদ ছাড়া কোন সমাধান নয়। আপনি যা বলেছেন তার অনেক কিছুই সত্য আছে তা আমিও স্বীকার কর। আপনাকে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
তিনভাগের একভাগ পড়েছি, আগামী ২দিনে শেষ করে পোষ্টে ফাইনাল মন্তব্য করবো; আগামীকালও একটা আংশিক মন্তব্য করবো; আমি ভুলে গেলে মনে করিয়ে দেবেন।