নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জিহাদ মুহাম্মদ

"Prithibite manobik manuser boro proyojon...Ami somaj socheton o manuvik manuser joyogyan dekhte chi"

জিহাদ মুহাম্মদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, স্বজাত্ববোধ, কদর্য কাঁদাকাঁদা ছোড়াছুঁড়ি এবং বিষয় চয়েস নিয়ে (অপ)ষড়যন্ত্র!!!

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৫২

প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষা আসলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে নতুন ছাত্র-ছাত্রীরা কোন বিভাগে ভর্তি হবেন অনেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিক নির্দেশনা দেন। বিষয়টি বাহ্যিকভাবে দেখলে ভালোই লাগে! কারণ এখানে হয়তো নতুনভাবে ভর্তি হবেন যারা, তাদেরকে পরামর্শ দিলে স্বাভাবিকভাবে কাজে লাগবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বেনামে বিভিন্ন গ্রুপে বা ওয়ালে যারা লিখেন তাদের অনেকের মধ্যে নিজের বিষয়কে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য একটা কদর্য প্রতিযোগিতা আছে। কেউ কেউ নিজের বিষয়কে ১০০% ভালো প্রমাণ করতে চান কিংবা ঐ বিশেষ সাবজেক্টে পড়লে পাশ করার আগেই চাকুরী হয়ে যাবে তেমন বুঝাতে চান! এই বিষয়টিকে আমরা স্বজাত্ববোধ বা আত্মম্ভরীতা (ethnocentrism) বলি। মানুষ যখন অন্যের সংস্কৃতি থেকে নিজের সংস্কৃতিকে শুদ্ধ, পবিত্র, উৎকৃষ্ট ও গ্রহণযোগ্য মনে করেন তখন এ ধরণের মতো মনে হয়। ফলে স্ট্যাটাসদাতা ও পাঠকের মধ্যে এক ধরনের উশৃঙ্খল, অসুস্থ ও অযৌক্তিক কাঁদাকাঁদা ছোড়াছুড়ি লক্ষ্য করি।

প্রত্যেকেই এখানে নিজের বিষয়কে শ্রেষ্ঠ প্রমান করতে চায় । দেখা গেল যে, কোন একজন ছাত্র হয়তো জানতে চাইলো ‘ভাইয়া আমি কোন সাবজেক্ট নিব?’ তখন হয়তো কেউ তার ব্যাকগ্রাউন্ড, পছন্দ বিবেচনা না করেই হুট করেই বলে দিলেন ‘ঐ সাবজেক্ট নিলে ১০০% চাকুরী নিশ্চিত।’ যে সাবজেক্টের কেউ পাশই করেননি সেই সাবজেক্টেও নাকি ১০০% চাকুরী সে বিষয়ে নিশ্চিত এমন অযৌক্তিক মতামত দেন। আমি এমনও দেখেছি সিপিএস বিভাগ নিয়ে অনেককে এমন মতামত দিতে যা আদৌ সঠিক নয়। যেমন, কয়েকদিন আগে দেখলাম এক জায়গায় লিখেছে, ‘চয়েসের ক্ষেত্রে সিপিএস বিভাগের অবস্থান ৭ নম্বর কিংবা ৮ নম্বর’। পাঠক লক্ষ্য করুন লাইফ সায়েন্স অনুষদের সবমিলিয়ে বিষয় যেখানে সিপিএস ৬টি সেখানে সিপিএস এর অবস্থান নাকি ৮!! স্ট্যাটাস দেখে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ি!! পরক্ষনেই আবার দেখি কি পরিকল্পিত মিথ্যাচার করছেন স্ট্যাটাসদাতারা!! না হলে ৬টি সাবজেক্ট এর মধ্যে সিপিএস এর অবস্থান ৮ হয় কিভাবে???

শুধু কি ফেসবুক? প্রতি বছর ভর্তির দিন অনেক ছেলেমেয়েকে দলবদ্ধ অবস্থায় নিজের বিষয়কে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য ও অন্যে বিষয়কে ছোট কিংবা কটাক্ষ করার কাজ করতে দেখি! বুঝিনা এদের পিছনে কারা কাজ করেন? অথবা তাদের এই দলবদ্ধ নেতিবাচক অবস্থানের পিছনে কোন কন্সপিরেসি কাজ করে কিনা? এটা শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যে এমন হয় তা নয়! আমরা যারা প্রত্যেকটি বিষয়ে নিজেকে রিপ্রেজেন্টাশন করি শিক্ষক হিসেবে তারাও হয়তো বুঝে না বুঝে অথবা নিজের ভালো বলতে গিয়ে অজান্তে কিংবা সচেতনভাবেই অন্যকে ছোট করছেন! একটি ঘটনা বললে অাপনাদের কাছে বিষয়টি ক্লিয়ার হবে। আমাদের এক কলিগ সাবজেক্ট চয়েসের দিন ভাইভা নিচ্ছিলেন সেই সময় কোন এক ছাত্র তার প্রথম চয়েস ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স এর কথা বললে অন্য বিভাগের এক শিক্ষক তাকে জেরা করছিলেন!! তিনি ঐ ছাত্রকে বলছিলেন, সে ঠিক সিপিএস সম্পর্কে ঠিকমত জানেন কিনা? ঐ ছাত্রকে সিপিএস প্রথম চয়েস দেয়ার কারনে বলা হয়েছিল ‘তুমি বাইরে গিয়ে ভালো করে চিন্তা করে আস!!’ এই ঘটনাটি শুনার পর নিজের মধ্যে অত্যন্ত অপমান কাজ করেছিল! মানুষের খন্ডিত মানষিকতা দেখে খুব কষ্টে হয়েছিল! শুধু কি এই একটি বিষয়? হাজারোবার এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি!! ভাইভা বোর্ডে কেউ সিপিএস বললেই কেমন যেন অন্যরা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসেন!

আমার কাছেও আমাদের অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা আসেন এসব অভিযোগ নিয়ে আসেন। কথা বলেন। তাদেরকে নাকি অপমান করা হয়। বলা হয় তারা চাকুরী পাবেন না, কিংবা সিপিএস বিভাগের ক্লাস হয়না কিংবা সিপিএস এর ছাত্র-ছাত্রীরা নাকি ক্রিমিন্যাল! কোন বিভাগে ক্লাস বেশি হয় তা আমাদের অভিজ্ঞতাই বলে দেয় কিংবা স্ব স্ব বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরাই তা সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করতে পারে। আমাদের বিভাগে অন্যে অনেক বিভাগের শিক্ষকরা ক্লাস নেন! এমনও হয়েছে, মাত্র ৩টি ক্লাস নিয়ে ৩ ক্রেডিটের কোর্সের ক্লাস শেষ করে ৪২টি ক্লাসের বিল সাবমিট করতে দেখেছি!! আর কি বলব বলেন? তাই আমি তাদেরকে বলি, তোমরা শুধু তোমাদের কাজটা কর...কাজ দিয়েই প্রমাণ করতে হবে তোমরা কি! তাদের বলি, বিভাগের কাজ হচ্ছে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা । সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ক্লাস ও গবেষণার কাজে ছাত্রদের ব্যস্ত রাখার এই কাজটি বিভাগ করতে পারছে কিনা তা দেখবে! পড়াশুনার পাশাপাশি সৃজনশীল, মননশীলতা চর্চার উদারনৈতিক পরিবেশ ছাত্র-ছাত্রীরা পায় কিনা তা দেখতে হবে। তোমাদের অন্য বিভাগ নিয়ে নেতিবাচক ভাবনার দরকার নেই। চ্যাপলিনের একটি কথা শুধু আমি মনে রাখি। ‘ভালোবাসা দিয়েই সবকিছুই পাওয়া যায়, শুধু ক্ষমতার জন্য লোভ, ঘৃনা ও মিথ্যাচারের প্রয়োজন হয়!’ তোমরাই বিভাগের ভ্যানগার্ড। বিভাগের পরিচয়। তোমাদের পরিচয়েই সিপিএস, মাভাবিপ্রবি, বাংলাদেশ পরিচিত হবে। আমি মনে করি প্রত্যেক বিভাগে ছাত্রছাত্রীরাই তাদের স্ব স্ব বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় এর ভ্যানগা্র্ড। তোমরা শুধু তোমাদের কাজ করে যাও! সময় হলেই তার ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে।

শুধু ভর্তির সময় এমন হয় তাও নয়! পরিকল্পিতভাবে অনেকসময়ই কেউ কেউ অপমান করতে চান। ধরুন আমি বা আমার কলিগ একজন শিক্ষক বাসে উঠলেন, কেউ হয়তো বলে উঠলেন ক্রিমিনাল ডিপার্টেমেন্টর চেয়ারম্যান কি বলেন? অথবা বলে উঠেন, ক্রিমিনাল কি কয়? আমি আশ্চর্য হই!! হাসতে হাসতে কি নির্লজ্জ অপমান করে বসলেন! ভাবি অন্যকে কি করে ছোট করে নিজেরা কিভাবে বড় হয়ে উঠেন তাঁরা!! এই মানষিকতা আমার কাছে অবশ্যই প্রশ্নবোধক!! এসব করে অনেকেই নিজেদেরকে বড় করতে গিয়ে আদতে ছোট হয়ে ‍উঠেন বলে মনে করি!! আরে ভাই কেউ পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয় পড়ালে কি তাকে ‘পরিবেশ’ ডাকতে হবে? কিংবা সিএসই পড়ায় বলে তাকে ‘কম্পিউটার’ কিংবা বায়োটেকনোলজী পড়ায় বলে তাকে ‘পোকামাকড় বা ডিএনএ’ ডাকবো?
আবার ধরুন, কেউ জলবায়ু, কাকড়া ও রেপ নিয়ে গবেষণা করলে তাকে জলবায়ু, কাকড়া কিংবা রেপিষ্ট ডাকতে হবে? তবে তো পৃথিবীতে অনেক বিষয়ে জ্ঞান চর্চা অচ্ছুৎ বিষয় হয়ে পড়বে!! আমার কাছে এটা আদতেই মানুষের প্রতি বিদ্বেষ কিংবা মিথ্যাচার ছড়ানোর ব্যাপার বলেই মনে হয়! বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিদ্বায়তনিক পরিবেশে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও গবেষকগণ একে অপরের মতো শ্রদ্ধাশীল হবেন বলেই মনে করি। আমি মনে বিশ্ববিদ্যালয় হলো একটি পবিত্র বাগান। এখানে আমরা প্রত্যেকটি বিভাগ হলো ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি!! আমাদের প্রত্যেকের কাজ দায়িত্ব ও ফাংশন আলাদা কেউ কেউ কারো প্রতিযোগী নয় বরং একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল ও সহযোগী। রাষ্ট্র ও পরিবারের অনেক অরগানের মতো অামরা! আমাদের শিক্ষা ও গবেষণা ধরণ ভিন্ন কিন্তু আমরা একে অপরের পরিপূরক!!

দুঃখজনক মনে হয় তখন যখন কেউ হাসতে হাসতে বলেন যে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইকোনেমিকস, বিবিত্র, সিপিএস ও বেসিক বিজ্ঞান (গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নসমূহ) বিষয়গুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত! কি মিথ্যাচার! আমার তখন গোয়েবসলীয় মিথ্যাচারের কথা বার বার মনে হতে থাকে! সত্য জেনেও যখন এমন কথা কেউ বলতে থাকেন তখন এই নেতিবাচক চিন্তা অন্যকে প্রভাবিত করতেই পারে। আরে ভাই চাকুরীর বাজার ভালো নয় বলে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, বাংলা সাহিত্য, ইতিহাস বন্ধ করে দিতে হবে। মানবসমাজের জ্ঞানের সূত্রপাত যেসব বিষয়ের মধ্যে দিয়ে হয়েছে তাকে বন্ধ করে দিতে হবে। আর মানুষকি শুধু কি চাকুরীর জন্যই পড়াশুনা করবেন? মানুষের মৌলিক জ্ঞান চর্চার জন্য এসব না পড়লে মানবসমাজ কি আজকের এ পর্যায়ে আসতো? কেউ ভালো গণিত, ফিজিক্স না জেনে কি ভালো সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কিংবা কম্পিউটার বিজ্ঞানী হতে পারবে? মৌলিক রসায়নের জ্ঞান না থাকলে কি কারো কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সম্ভব? একটা বিষয়ের সাথে আরেকটার ওতপ্রোত সম্পর্ক বিদ্যমান।

আর চাকুরীর বাজারের কথা যদি বিবেচনা করি করে তা কি স্থির? আমার কাছে চাকুরীর বাজার সবসময় পরিবর্তনশীল। আজ খেকে তিন-চার বছরের আগেও যে সাবজেক্ট প্রথমেই শেষ হয়ে যেত তা এখন ওয়েটিং থেকে টানতে হয়!!! তবে কি আর বলব! নিজের সাবজেক্ট নিয়ে স্বজাত্ববোধ কিংবা আত্মম্ভরীতা তাই ঠিক নয়!

যদিও আমি মনে করি প্রত্যেক ব্যক্তিই স্বাধীন তার মতামত প্রকাশ করার জন্য। সবাই নিজের মতামত প্রকাশ করার মতো চরম স্বাধীনতা রাখেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেহেতু মানুষের মত প্রকাশের পাশাপাশি আনন্দ বিনোদনেরও মাধ্যম সেহেতু অন্যের ব্যাপারটাকেও আমি মাথায় রাখতে বলি! সত্যি আমি মনে করি কোন বিষয়ে মতপ্রকাশ ও মন্তব্য প্রকাশের আগে আরো সচেতন ও সংবেদনশীল হওয়া উচিত!!!

{লেখাটি আমার অনেক দিনের কষ্ট ও দুঃখবোধের খানিকটা প্রতিবাদ, কাউকে আঘাত করা কিংবা কষ্ট দেয়া আমার উদ্দেশ্যে নয়!!!}

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.