নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের বিবেকের চেয়ে বড় কোন আদালত নাই।

জেনান আহমেদ

জেনান আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নবীজি (সা) এর বিষ্ময়কর স্বপ্ন

২০ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:১১

হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর রীতি ছিল,প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর সাহাবীদের দিকে মুখ করে বসতেন এবং কোন কোন স্বপ্ন দেখেছে কিনা বা কারো কিছু জিজ্ঞাসা আছে কিনা জানতে চাইতেন। কেউ কিছু জানতে চাইলে তিনি তাকে যথাযথ পরামর্শ দিতেন। একদিন এরূপ জিজ্ঞাসা করার পর কেউ কিছু বলছেনা দেখে তিনি নিজেই বলতে আরম্ভ করলেনঃ
আজ আমি অতি সুন্দর ও আশ্চর্য স্বপ্ন দেখেছি। দেখলাম, দুই ব্যক্তি আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে আমাকে এক পবিত্র স্থানের দিকে নিয়ে চললো। কিছুদুর গিয়ে দেখলাম, এক ব্যক্তি বসে আছে, আর অপর একটি ব্যক্তি তার কাছে দাড়িয়ে আছে। দাড়ানো ব্যক্তিটির নিকট একখানা করাতের মত অস্ত্র রয়েছে। সেই করাত দিয়ে সে বসা লোকটির মাথা চিরে ফেলছে। একবার মুখের দিক দিয়ে করাত ঢুকিয়ে দিয়ে মাথার দিকে কেটে ফেলছে। আবার বিপরীত দিক দিয়েও তদ্রুপ করছে। একদিক দিয়ে কাটার পর যখন অপর দিক দিয়ে কাটতে যায়, তখন আগের দিক জোড়া লেগে স্বাভাবিক হয়ে যায়। এ অবস্থা দেখে আমি আমার সঙ্গীদ্বয়কে জিজ্ঞাসা করলাম, একি ব্যাপার? তারা বললো সামনে চলুন।
কিছুদুর গিয়ে দেখলাম, একজন লোক শুয়ে আছে। অপর একজন একখানা ভাড়ী পাথর নিয়ে তার কাছে দাড়িয়ে আছে। দাড়ানো লোকটি ঐ পাথরের আঘাতে শোয়া লোকটির মাথা চুর্ণবিচূর্ণ করে দিচ্ছে। পাথরটি সে এত জোরে মারে যে, মাথা চুর্ণবিচূর্ণ করে তা অনেক দুরে গিয়ে ছিটকে পড়ে। অতঃপর লোকটি যেই পাথর কুড়িয়ে আনতে যায়, এমনি ভাঙ্গা মাথা জোড়া লেগে ভাল হয়ে যায়। সে ঐ পাথর কুড়িয়ে এনে পুনরায় মাথায় আঘাত করে এবং মাথা আবার চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। এভাবে ক্রমাগত ভাংগা ও জোড়া লাগার কাজ চলছে। এই লোমহর্ষক দৃশ্য দেখে আমি আতিংকিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, سبحان الله ماهذان؟ তারা কোন জবাব না দিয়ে পুনরায় বললেন, انطلق انطلق আগে চলুন। কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে দেখি একটি প্রকান্ড গর্ত। গর্তটির মুখ সরু কিন্তু অভ্যন্তর ভাগ অত্যন্ত গভীর ও প্রশস্ত। এ যেন একটি জ্বলন্ত চুলো- যার ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আর ভিতরে বহু সংখ্যক নরনারী দগ্ধীভূত হচ্ছে। আগুনের তেজ এত বেশী যেন তাতে ঢেউ খেলছে। ঢেউয়ের সাথে যখন আগুন উচু হয়ে উঠে,তখন ঐ লোকগুলো উথলে গর্তের মুখের কাছ চলে আসে। আবার সেই আগুন নীচে নেমে যায়, এমনি ভাবে তারাও সাথে সাথে নীচে নেমে যায়। আমি আতংকিত হয়ে সংগীদ্বয়কে বললাম। বন্ধুগণ! এবার আমাকে বলুন ব্যাপারটা কি? কিন্তু এবারও তারা কোন জবাব না দিয়ে বললেন, আগে চলুন।
আমরা সামনে এগুতে লাগলাম। কিছুদূর গিয়ে দেখলাম, একটি রক্তের নদী বয়ে
চলছে। তীরে একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে। আর তার কাছে রয়েছে পাথরের স্তুপ। নদীর মধ্যে একটি লোক হাবুডুুবু খেয়ে অতি কষ্টে কিনারায় দিকে আসার চেষ্টা করছে। কিনারার কাছি কাছি আসা মাত্রই তীরবর্তী লোকটি তার মুখে এত জোরে পাথর ছুড়ে মারছে যে,সে পাথরের আঘাতে আবার নদীর মাঝখানে চলে যাচ্ছে। এভাবে ক্রমাগত তার হাবুডাবু খেতে খেতে কুলে আসা এবং কুল থেকে পাথর মেরে তাকে মাঝ নদীতে হটিয়ে দেয়ার কার্যক্রম চলছে। এমন নির্মম আচরণ দেখে আমি স্তম্ভিত হয়ে আমার সংগীদ্বয়কে আবারও বললামঃ কি ব্যাপার? কিন্তু এবারও তারা কোন জবাব না দিয়ে বললেন,সামনে চলুন।
আমরা আবার এগুতে লাগলাম। কিছুদূর গিয়ে দেখলাম একটি সুন্দর সবুজ উদ্যান। উদ্যানের মাঝখানে একটি উচুঁ গাছ। তার নীচে একজন বৃদ্ধ লোক বসে আছে। বৃদ্ধকে বেষ্টন করে বসে আছে বহুসংখ্যক বালক বালিকা। গাছের অপর পারে আরো এক ব্যক্তি বসে রয়েছে। তার সামনে আগুন জ্বলছে। ঐ লোকটি আগুনের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সংগীদ্বয় আমাকে গাছে উঠালেন। গাছের মাঝখানে গিয়ে দেখলাম, একটি মনোরম প্রাসাদ। এত সুন্দর ভবন আমি আর কখনো দেখিনি। ঐ ভবনে বালক বালিকা, স্ত্রী পুরুষ,সকল শ্রেণীর মানুষ বিদ্যমান। সংগীদ্বয় আমাকে আরো উপরে নিয়ে গেলেন। সেখানে আরো একটি মনোরম গৃহ দেখতে পেলাম। তার ভিতরে দেখলাম কিছু সংখ্যক যুবক ও বৃদ্ধ রয়েছে। আমি সংগীদ্বয়কে বললাম,আপনারা আমাকে নানা জায়গা ঘুরিয়ে অনেক কিছু দেখালেন। এবার এ সবের রহস্য আমাকে খুলে বলুন।
সংগীদ্বয় বলতে লাগলেনঃ এবার শুনুন সমস্ত মানুষের বিস্তারীত কাহিনী- প্রথম যে লোকটির মাথা করাত দিয়ে চেরাই করতে দেখলেন, তার কারণ হলো,فانه الرجل يغدومن بيته فيكذب الكذبة تبلغ الافاق অর্থাৎ সে ব্যক্তি মিথ্যা বলার অভ্যাস ছিল। সে যে সব মিথ্যা রটাতো, তা সমগ্র সমাজে প্রসিদ্ধ হয়ে যেতো। কিয়ামত পর্যন্ত তার এরূপ শাস্তি হতে থাকবে। তারপর যার মাথা পাথরের আঘাতে চুর্ণ-বিচুর্ণ হতে দেখলেন,فانه الرجل يأخذالقران فيرفضه وينام عن الصلوة المكتوبة অর্থাৎ সে ছিল একজন মস্ত বড় আলেম। নিজে কুরআন হাদীস শিখেছিল,কিন্তু তা অন্যকে শিখায়নি এবং নিজেও তদনুসারে আমল করেনি। এবং ফরজ নামাজ ছেরে ঘুমিয়ে থাকত। কিয়ামত পর্যন্ত তার এ রকম শাস্তি হতে থাকবে। তারপর যাদেরকে আগুণেব বদ্ধ চুলোয় জ্বলতে দেখলেন তারা হলো الزناة والزواني অর্থাৎ ব্যভিচারী নারী ও পুরুষ। কিয়ামত পর্যন্ত তাদের এই আজাব চলতে থাকবে। রক্তের নদীতে হাবুডাবু খাওয়া লোকটি فانه اكل الربيদুনিয়ায় সুদ খেতো। গাছের নীচে যে বৃদ্ধকে বালক বালিকা বেষ্টিত দেখছেন,فانه ابراهيم عليه وسلم উনি হযরত ইবরাহীম এবং বালক বালিকারা হচ্ছে فكل مولود مات علي الفطرة নাবালক অবস্থায় মৃত ছেলেমেয়ে। আর যাকে আগুন জ্বালাতে দেখলেন,فانه مالك خازن جهنم তিনি দোজখের দারোগা মালেক ফেরেশতা। গাছের উপর প্রথম যে ভবনটি দেখছেন, সেটা সাধারণ ঈমানদারদের বেহেশতের বাড়ীঘর। আর দ্বিতীয় যে প্রাসাদটি দেখছেন, তা হচ্ছে ইসলামের জন্য আত্মাদানকারী শহীদগণের বাসস্থান। আর আমি জিবরীল এবং আমার সংগী মিকাইল। অতঃপর জীবরীল আমাকে বললেন, উপরের দিকে তাকান। আমি উপরের দিকে তাকিয়ে একখন্ড সাদা মেঘের মত দেখলাম। জিবরীল বললেন, সেটা আপনার বাসস্থান। আমি বললাম, আমাকে ঐ বাড়ীতে যেতে দিন। জিবরীল বললেন, এখনও সময় হয়টি। পৃথিবীতে এখনো আপনার আয়ুকাল বাকী রয়েছে। দুনিয়ার জীবন শেষ হলে আপনি এখানে যাবেন।
শিক্ষা : এ হাদীসের ঘটনাটিতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে স্বপ্নের মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধের পরকালীন শাস্তির নমুনা দেখানোর বিবরণ রয়েছে। নবীদের স্বপ্ন ওহীর অন্তর্ভূক্ত এবং অকাট্য সত্য। সুতরাং এ শাস্তির ব্যাপারে আমাদের সুদৃঢ় ঈমান রাখা এবং এগুলিকে স্বরণে রেখে এসব অপরাধ থেকে নিবৃত্ত থাকা উচিত। বিশেষতঃ এমন কয়েকটি অপরাধের উপর এখানে আলোকপাত করা হয়েছে, যা সামাজিক অপরাধের পর্যাভূক্ত,অর্থাৎ যা গোটা সমাজকে অন্যায় অনাচারের কবলে নিক্ষেপ করে। যেমনঃ মিথ্যাচার, সুদ, ঘুষ, পরের অর্থ আত্মসাৎ করা এবং ইসলামের প্রত্যক্ষ জ্ঞান থাকা সত্তেও তা প্রচারে বিমুখ হওয়া ও সে অনুসারে আমল না করা। একজন মিথ্যাবাদী যেমন মিথ্যা গুজব, অপবাদ ও কুৎসা রটিয়ে জনমতকে বিভ্রান্ত, বিপদগামী ও গোটা অন্যায় সিদ্ধন্ত গ্রহণে প্ররোচিত করে থাকে। একজন আলেম তেমনি তার নিস্ক্রয়তা ও বদ আমলী দ্বারা অন্য যে কোন খারাপ লোকের চেয়ে সমাজকে অধিকতর অপকর্মে প্ররোচিত করে থাকে। আর অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারী এবং সুদখোর ও ঘুষখোর যে গোটা সমাজকে কিভাবে জুলুম, নিপীড়ন ও শোষণ করে তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখেনা।
তথ্যসূত্র: বোখারি শরিফ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:২৪

কসমিক রোহান বলেছেন: আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সকল গুনাহ থেকে বেচে থাকার তাওফিক দান করুন , আমীন।

২০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:০২

জেনান আহমেদ বলেছেন: আমীন।।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.