নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুয়েল তাজিম

জুয়েল তাজিম

অলস হবেন, তো হতাশা পাবেন। শুরু করুন,শেষ হবেই। সামনে এগোতে থাকুন, পথ কমবেই।

জুয়েল তাজিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

''দুধে হরলিক্স মিশাও দুধের শক্তি বাড়াও......" এত্ত ঝামেলার দরকার কি??? সরাসরি গাভিকেই হরলিক্স খাওলেই তো হয় !

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৭

''দুধে হরলিক্স মিশাও

দুধের শক্তি বাড়াও......" এত্ত ঝামেলার দরকার কি??? সরাসরি গাভিকেই হরলিক্স খাওলেই তো হয় !

আমাদের পরিবার যেহেতু কৃষি নির্ভর ছিল তাই আমাদের বাড়িতে বড় বড় গরু (বৃষ) ছিল হাল চাষের জন্য ! চাষাবাদের রেওয়াজ দাদার আমল থেকেই চালু ছিল ! আমার বাবা যখন জওয়ান ছিলেন তখন রীতিমত অনেক বড় বড় গরু (বৃষ) রাখতেন এবং প্রতিবছর কোরবানির সময় বিক্রি করে দিতেন ! কোরবানির আগে বিক্রির উপযোগী করার জন্য আমাদের বাড়ির বৃষ গরুকে বিশেষ প্রকারের খাবার দেওয়া হত মোটা তাজা হওয়ার জন্য | অনেক ধরনের উপকরণের মাঝে একটা ছিল খৈল ! খৈল দু ভাবে গরুর খাবারের সাথে মিশানো হত ! একটা হলো পানিতে ভিজিয়ে রেখে নরম করে গরুর খাবারের সাথে মেশানো হত বা খৈলকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় গুড়া করে গরুর খাবারের সাথে মিশানো হত ! আমাদের বাড়ির বৃষ গরু গুলা দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটি বেশি পছন্দ করত | গুড়া করা খৈল দেখতে বেশ সুন্দর দেখাত ! তখনো কিন্তু বাজারে হরলিক্স বা এই ধরনের কেন পার্শ খাবার বাজারে আসেনি ! কিন্তু এখন এই হরলিক্স এর বাহারি বিজ্ঞাপন দেখে পরিবারের জন্য অনেক সময় হরলিক্স কেনা হয়েছে ! ইদানিং কালের হরলিক্স এর বিজ্ঞাপন "''দুধে হরলিক্স মিশাও,দুধের শক্তি বাড়াও......" প্রতিদিন দেখতে দেখতে কেন যেন আমার খৈলের কথা মনে পড়ল ! যা কোরবানির সময় বৃষ গরুকে মোটা তাজা করার জন্য খাওয়ানো হত |

কালক্রমে আমার বাবা জওয়ান থেকে বৃদ্ধের দিকে উপনীত হতে লাগলেন এবং বৃষ গরু রাখার সামর্থ বা শক্তি হারালেন (বৃষ গরু অনেক দুষ্ঠ প্রকৃতির হয়), এবং বৃষ গরুর পরিবর্তে হাল চাষের জন্য বলদ গরু রাখলেন এবং প্রতি কোরবানির সময় একই প্রক্রিয়ায় মোটা তাজা করে বিক্রি করা হত এতে করে পরিবারে একটা বাড়তি আয় হত এবং বাবাও বেশ খুশি হতেন ! এখনে উল্যেখ্য যে বৃষ বা বলদ গরু যাই হউকনা কেন সাথে একটা দুগ্ধবতী গাভী থাকত যাতে করে পরিবারের সবাই দুধ খেতে পারে ! এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে বৃষ বা বলদ গরুকে মোটা তাজা করার জন্য খৈল খাওয়ানো হলেও গাভীকে কখনো খৈল খাওয়ানো হতনা | গাভীকে সবসময় কচি ঘাস , খড় খেতে দেওয়া হত বা উম্মুক্ত মাঠে ছেড়ে দেওয়া হত যাতে করে নিজের পছন্দ মত খেতে পারে ! খুব ভালো দুধ পাওয়া যেত , পরিবারের চাহিদা মিঠিয়ে প্রতিবেশীদেরকেও দেওয়া হত এবং অনেক সময় বিক্রিও করা হত ! আমরা সেই দুধ খেয়েছি , আমার বন্ধুরাও খেয়েছে ঠিক একই ভাবে তাদের পরিবারের গভীর দুধ !

এখন আর সেই বৃষ গরু বা হাল চাষের বলদ কিংবা দুগ্ধবতী গাভী আর নেই ! বাবা আস্থে আস্থে বয়সের কাছে হার মানলেন বৃদ্ধ হলেন ! কন্যা দায়গ্রস্থ পিতা মানে আমার বড় বোনদের বিয়ে দেওয়ার সময় অন্যান্য সহায় সম্বলের সাথে হাল-চাষের বলদ গুলাও বিক্রি করতে হলো ! ধীরে ধীরে বাবা আরো বৃদ্ধ হলেন বিভিন্ন রোগে শোকে আক্রান্ত হলেন এবং একসময় স্ট্রোক করলেন | চিকিত্সার খরচ যোগাতে অন্যান্য সহায় সম্বলের সাথে সেই দুগ্ধবতী গাভী গুলাও বিক্রি করা হলো | সেই থেকে আমাদের বাড়িতে আর কোনো প্রকার গরু বা গাভী ছিলনা ! বাবাও একসময় আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন আর আমিও নিজের কর্ম ব্যস্ততায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম ! তবে মাঝে মাঝে ভাবি একটা দুগ্ধবতী গাভী পুষবো যাতে করে পরিবারের প্রয়োজনীয় দুধের চাহিদা মেঠানো যায় ! কিন্তু সম্বব হয়ে উঠেনা ! যাই হউক যা বলতে চেয়েছিলাম ঘরের গভীর দুধ খেয়ে আমরা কেউ রোগা ছিলামনা !আমি তেমন কিছু না হলেও আমার বন্দুরা অনেকেই ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার, বিচারক বা সরকারী কর্মকর্তা হয়েছেন | আমার কথা হচ্ছে আমরা যখন দুধ খেতাম তখন দুধের শক্তি ছিল এবং দুধের শক্তি বাড়ানোর জন্য দুধের সাথে বাড়তি কিছু বা হরলিক্স মেশানোর প্রয়োজন ছিলনা !আর এখন টেলিভিশনের সামনে গেলেই দেখেতে হয় "''দুধে হরলিক্স মিশাও,দুধের শক্তি বাড়াও......" , দেখতে দেখতে বিরক্ত !

আমার কথা হলো এত্ত ঝামেলার দরকার কি??? এখনকার গাভীর দুধে যদি শক্তি না থাকে তবে সরাসরি গাভিকেই হরলিক্স খাওলেই তো হয় ! যা আমি আগেই বলেছি গুড়া করা খৈল দেখতে বর্তমান হরলিক্স এর মত ! তাই গাভীকে যদি সরাসরি হলিক্স খাওয়ানো হয় তবে আলাদা ভাবে দুধের সাথে হরলিক্স মেশানোর প্রয়োজন পড়বেনা!

বাংলাদেশের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হতে হতে তাদের অনুভুতি আর কাজ করেনা ! তাই এই সমস্থ প্রতারণার বিজ্ঞাপন দেখে দেখে প্রতারিত হতে একটুও পিছপা হয়না বরং উত্সাহ উদ্দীপনা নিয়েই প্রতারিত হচ্ছে ! বাংলাদেশে অনেক আইন হতে দেখা যায় , সংবাদ পত্র বন্ধ করে দেওয়া হয় , টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হয় কিন্তু কখনো এই মিথ্যা বিজ্ঞাপন গুলির বিরদ্ধে কোনো প্রদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তেমনটা দেখা যায়নি !

আমার পরামর্শ হলো প্রতারণার বিজ্ঞাপনে প্রলোভিত নাহয়ে বেশি টাকা খরচ করে বিদেশি কোম্পানিগুলোর এইসব কৃত্রিম খাবার বাচ্চাদের না খেতে দিয়ে শাক-সবজি, রঙিন ফলমূল, ছোট মাছ, সামদ্রিক মাছ, বিভিন্ন রকম ডাল, ছোলা, বাদাম, বিন, মাংস, ডিম, খিচুড়ি, রাফেজ বা আঁশযুক্ত খারার খেতে দেওয়ায় হচ্ছে আদর্শ মা -বাবার উত্তম দায়িত্য ! হরলিক্স বা এই ধরনের কোনো খারাব বাচ্চাদের Taller, stronger, sharper বানায় না। এই সব গাঁজাখুরি বিজ্ঞাপনগুলো দিয়ে সাধারণ মানুষের ব্রেইনওয়াশ করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষদের বোকা বানানো হচ্ছে ! এইভাবে বিদেশি কোম্পানিগুলো সাধারণ মানুষের মগজ ধোলাই করে কোটি কোটি টাকা নিজেদের পকেটে ভরে নিচ্ছে |যাহোক, দুধে প্রায় সব ধরনের পুষ্টিগুণ থাকে, সুতরাং শুধু শুধু টাকা নষ্ট করে দুধে হরলিক্স মিশিয়ে দুধের পুষ্টিগুণ বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই বা দুধে হরলিক্স মিশালে যে দুধের পুস্ঠি গুন বাড়ে এই কথার আদৌ কোনো ভিত্তি নাই

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.