নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুয়েল তাজিম

জুয়েল তাজিম

অলস হবেন, তো হতাশা পাবেন। শুরু করুন,শেষ হবেই। সামনে এগোতে থাকুন, পথ কমবেই।

জুয়েল তাজিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাঁদেরকে কি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে ?

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৪৩

বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম গুলা যতদিন বাস্তব এবং সত্যি ঘটনা প্রচার করবেনা ততদিন বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দূর হবে না । সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে তা দিবালোকের মত সত্যি ঘটনা , কিন্তু যতটুকু হামলা হচ্ছে , যতটুকু মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে তা হুবহু সংবাদ মাধ্যমে আসছেনা ! কোথাও কমিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে আবার কোথাও অতি রঞ্জিত করে প্রচার করা হচ্ছে । স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে কখনই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছিলনা । স্বাধীন বাংলাদেশ সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে গোটা বিশ্বে একটা মডেল হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছিল । স্বাধীনতার পর ১ দশকের বেশি সময় সামরিক শাসকের অধীনে থাকলেও বেশ ভালো ভাবেই গণতন্ত্র চর্চা হচ্ছিল । বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত মুসলিম প্রধান দেশ , এই মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হয়েও বাংলাদেশ প্রমান করতে যাচ্ছিল যে মুসলিমরা শুধু তালেবানদের জন্ম দেয়না , মুসলিমদের ঘরে শুধু ওসমা বিন লাদেনদের জন্ম হয় না বরংচ মুসলিমরা একটা স্বাধীন দেশে সব ধর্মের লোকদের নিয়ে শান্তি পূর্ণ ভাবে মিলে মিশে বসবাস করতে পারে ! একটা মুসলিম প্রধান দেশে হিন্দুদের দূর্গা পূজা আর মুসলিমদের রমজান ঈদ এক সাথে উদযাপন হয় কোনো প্রকার সহিংসতা ছাড়া ।

ঈদ কোরবান আর দূর্গা পূজা যদি এক সাথে হয় পাশা পাশি বাড়িতে কোনো সহিংসতা ছাড়া , সেই দেশে কিভাবে ভোটের সময় সেই হিন্দুদের উপর আক্রমন হয় হিন্দু পরিচয়ের কারণে ?? এই প্রচার আমার কাছে মোটেও গ্রহণ যোগ্য নয় ! কিন্তু হিন্দুদের উপর আক্রমন হচ্ছে তা কিন্তু সত্য তবে কেন এবং করা এই আক্রমন করছে এবং কি উদ্যেশ্যে এই বর্বরতা চালাচ্ছে এই দেশে ?? সাধারণ মানুষ সত্যের কাচা- কাছিও ঘেষতে পারছেনা রাজনৈতিক বর্বরতা এবং বিশ্রী সংবাদ প্রচারের কারণে !



এটা আসলে অত্যন্ত সু পরিকল্পিত ভাবে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে নষ্ঠ করার জন্য বিশেষ পায়্তরা। স্বাধীনতার পরথেকে বাংলাদেশের অনেকই কিছু অর্জন থাকলেও রাজনৈতিক ভাবে আমাদের অর্জন তেমন কিছুই নয় । রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাবে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল গুলা ধর্মকে যেকোনো সময় যেন তেন ভাবে ব্যবহার করার দৃষ্টতা দেখিয়েছে ! রাজনৈতিক দলের নামের সাথে সম্প্রদায়িক এবং অসম্প্রদায়িক ট্যাগ লাগিয়ে নিজেদের সুবিধা মত ব্যবহার করছে । ঠিক একই ভাবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , আদালত , আইনজীবী, সরকারী প্রতিষ্ঠান , সরকারী কর্মকর্তা এবং সর্বশেষ টেলিভিশন মিডিয়া এবং সংবাদ পত্র সবাই সুশীল , সম্প্রদায়িক এবং অসম্প্রদায়িক ট্যাগ নিয়ে বিভিন্ন ভাবে বিভক্ত ।

এর ফলে বাংলাদেশে যে কোনো ঘটনা ঘটুক তা বিভিন্ন ভাবে প্রচার প্রসার লাভ করে । এক পক্ষ সুশীলদের চোখ দিয়ে বিশ্লেষণ করে , আরেক পক্ষ সাম্প্রদায়িক চোখ দিয়ে বিশ্লেষণ করে অন্য পক্ষ অসাম্প্রদায়িক চোখ দিয়ে বিশ্লেষণ করে এবং অন্য পক্ষ মাঝা মাঝি একটা বিশ্লেষণ দাঁড় করে যাতে সব কুল রক্ষা পায় । ফলে আসল ঘটনা অন্তরালেই থেকে যায় !!

এখন ৫ জানুয়ারী ২০১৪ তে নির্বাচন হলো , এতে অনেকই অংশ গ্রহণ করেছে অনেকেই অংশ গ্রহণ করেনি ! এই ঘটনা কিন্তু বাংলাদেশে এই প্রথম নয়! এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে যেমন গ্রহণ যোগ্য হয়নি ঠিক তেমনি আমার মত সাধারণ মানুষের কাছেও ভালো ঠেকেনি !

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ১৯৭৩,১৯৭৯,১৯৮৬,১৯৮৮,১৯৯১,১৯৯৬ (ফেব্রু),১৯৯৬(জুন) ২০০১,২০০৮ এবং ২০১৪ সালে সাধারণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ।

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩, বাংলাদেশে ৭ই মার্চ ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন লাভ করে যেখানে এগারো জাতীয় সংসদ সদস্য অবাধে ভোটবিহীনভাবে জয় লাভ করে। মোট ভোট সংগৃহীত হয়েছিল ৫৪.৯%।

এই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ,জাতীয় আওয়ামী পার্টি (মুজাফ্ফর),জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল,জাতীয় আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি অংশ গ্রহণ করে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৯৩ আসনে জয় লাভ করে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করে ! এই সরকারের আমলেই ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী উত্থাপন করেন। এই সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে প্রচলিত সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা বাতিল করে বাকশাল ব্যবস্থা চালু করা হয়। সংসদে উত্থাপনের মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে এই বিল সংসদে পাশ হয়। বাকশাল ব্যবস্থা ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা।বাকশাল ব্যবস্থার অধীনে কোন অদলীয় শ্রেণী ও পেশাভিত্তিক সংগঠন এবং গণসংঠন করার কোন অধিকার নেই। ট্রেড ইউনিয়ন মাত্রই তাকে বাকশালের অঙ্গদল শ্রমিক লীগের অন্তরর্ভুক্ত হতে হবে। এই ব্যবস্থায় জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয় কৃষক লীগ, জাতীয় মহিলা লীগ, জাতীয় যুবলীগ এবং জাতীয় ছাত্রলীগ বাদে কোন শ্রমিক, কৃষক, মহিলা, যুব ও ছাত্র সংগঠন থাকতে পারবে না। আর উপরোক্ত সংগঠনগুলি হচ্ছে বাকশালেরই অঙ্গ সংগঠন ! মূলত বাংলাদেশে বাকশালের সদস্য ছাড়া বাঁকি সবাই বাংলাদেশের নাগরিক অধিকার হারিয়েছিল বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে ! এই সরকারের আমলেই ৬ জুন, ১৯৭৫ বাকশাল ব্যবস্থায় দেশে চারটি দৈনিক ছাড়া আর সকল সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়। ঐ চারটির তিনটি ছিল দৈনিক ছিল ইত্তেফাক, বাংলাদেশ টাইমস্, দৈনিক বাংলা।

বাকশাল নামক অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার করনে বাংলাদেশে দেশ ব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সেনাবাহিনীর বিপদগামী কিয়দংশ ষড়যন্ত্রে সংঘটিত অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন এবং এর মাধ্যমে বাকশাল কায়েমের পরিসমাপ্তি ঘটে ।

১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর “সিপাহি বিপ্লব” নামের আন্দোলনের পর তৎকালীন সেনা প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে সংশ্লিস্ট হন। ১৯শে নভেম্বর ১৯৭৬ সালে তাঁকে সেনাবাহিনীর চীফ অফ আর্মী স্টাফ পদে দায়িত্বে প্রত্যাবর্তন করা হয়। তিনি এসময়ে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত সায়েমের পরে ২১শে এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের ৩রা জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়াউর রহমান জয়লাভ করেন। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ নামের রাজনৈতিক মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রপতি জিয়া এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক এ. কিউ. এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন জিয়া দেশে আবার গণতন্ত্রায়ণের উদ্যোগ নেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র চালুর সিদ্ধান্ত নেন ।নির্বাচন ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং অবাধ রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান যত দ্রুত সম্ভব রাজনীতির গণতন্ত্রায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) আমলে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এইভাবে, তিনি সংবাদপত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন, সংবাদপত্রের মাধ্যমে তথ্যের অবাধ প্রবাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান করেন।জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জয় লাভ করে; তারা জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২০৭টি আসন লাভ করে। মোট ভোট সংগৃহীত হয়েছিল ৫১.৩%। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ,বাংলাদেশ মুসলিম লীগ,জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (মিজান),জাতীয় আওয়ামী পার্টি (মুজাফ্ফর),বাংলাদেশ গণ ফ্রন্ট,বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (ম্যাক্সিস্ট-লিনিয়েস্ট),বাংলাদেশ জাতীয় লীগ,জাতীয় একতা পার্টি,বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সহ প্রমুখ দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে এবং ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে তিনি ৭৬.৬৭% ভোট পেয়ে বিজয়ী হন এবং রাষ্ট্রপতির পদে নিয়োজিত থাকেন।

বিএনপি প্রতিষ্ঠার পরপরই জিয়াউর রহমান দলের কর্মীদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ নেন, যার মাধ্যমে দলের কর্মীদের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, দলের আদর্শ, সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হত।

১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে এরকম একটি কর্মশালা উদ্বোধনকালে তিনি দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন,

“ কোন রাজনৈতিক আদর্শ ধর্মকে ভিত্তি করে হতে পারে না। একটা অবদান থাকতে পারে। কিন্তু ধর্মকে কেন্দ্র করে কখনওই রাজনীতি করা যেতে পারে না। অতীতে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে ধর্মকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান সময়ে যখনই রাজনীতি করা হয়েছিল সেটা বিফল হয়েছে। কারণ ধর্ম ধর্মই। আমাদের অনেকে আছে যারা আমাদের দেশে যে বিভিন্ন ধর্ম রয়েছে, সেগুলোকে কেন্দ্র করে রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেন। রাজনীতির রূপরেখা বানাতে চেষ্টা করেন, আমরা বারবার দেখেছি তারা বিফল হয়েছে। ধর্মের অবদান থাকতে পারে রাজনীতিতে, কিন্তু রাজনৈতিক দল ধর্মকে কেন্দ্র করে হতে পারে না। এটা মনে রাখবেন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন জিয়াউর রহমান অভ্যন্তরীণ এবং আনর্জাতিক ভাবে ব্যাপক সাফল্য এবং জনপ্রিয়তা লাভ করেন !জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে — তিনি সেনাবাহিনীতে তার বিরোধিতাকারীদের নিপীড়ন করতেন। তবে জিয়া অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন। অনেক উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। বিপদের সমূহ সম্ভবনা জেনেও জিয়া চট্টগ্রামের স্থানীয় সেনাকর্মকর্তাদের মধ্যে ঘঠিত কলহ থামানোর জন্য ১৯৮১ সালের ২৯শে মে চট্টগ্রামে আসেন এবং সেখানে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে থাকেন। তারপর ৩০শে মে গভীর রাতে সার্কিট হাউসে মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের নেতৃত্বে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত হন। জিয়াউর রহমানকে ঢাকার শেরে বাংলা নগরে দাফন করা হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়ার জানাজায় বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ জনসমাগম ঘটে যেখানে প্রায় ২০ লক্ষ্যাধিক মানুষ সমবেত হয়!

৩০ মে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হবার পর, হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের রাজনৈতিক অভিলাষ প্রকাশ হয়ে পড়ে। ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সাল নাগাদ তিনি প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেন। ঐ দিন তিনি দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ.এফ.এম আহসানুদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে নিজের অধিকারে নেন। এরশাদ দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন এবং ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৮৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জামায়াত এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে যদিও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এই নির্বাচন বয়কট করে।

এই তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৮৬, বাংলাদেশে ৭ই মে ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোট ১,৫২৭ জন প্রার্থী অংশগ্রহন করে। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসন নিয়ে জয় লাভ করে। মোট ভোটারের ৬১.১% ভোট সংগৃহীত হয়েছিল এই নির্বাচনে। পরবর্তী বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ ৭ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে এই সংসদ বাতিল করেন এবং চতুর্থ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন ! চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৮৮ বাংলাদেশে ৩রা মার্চ ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নির্বাচনটি বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রধান দলই বর্জন করেছিল; যেমন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ, জাতীয় আওয়ামী পার্টি (মুজাফ্ফর) এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জয় লাভ করে, তারা ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৫১টি আসন লাভ করে।

মূলত এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই এরশাদের স্বৈরশাসক রূপ বাংলাদেশের সব স্থরের জনগনের কাছে প্রকাশ পায় এবং বাংলাদেশের জনগণ জেগে উঠতে থাকে ! এরশাদ সরকার দেশের রাজনীতি থেকে সংস্কৃতি পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে গণবিরোধী ধারা প্রবর্তন করে। রাজনৈতিক নেতারাও ছাত্র আন্দোলনে ব্যাপক নিপীড়নের শিকার হন।

এরশাদের প্রায় নয় বছরের শাসনামলেই দেশে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়। একপর্যায়ে সারা দেশে এরশাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। এরশাদবিরোধী যুগপৎ এই আন্দোলনে শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়া একসাথে আন্দোলন করেন সাথে যোগ দেন বাংলাদেশের সর্বস্থরের শান্তি প্রিয় মানুষ !এভাবে ঘটনাক্রমিক আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এরশাদ ১৯৯০ সালের ৫ ডিসেম্বর পদত্যাগের ঘোষণা করে। দীর্ঘ ৯ বছরের শাসনের অবসান ঘটে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর।

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯১, বাংলাদেশে ২৭শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিল শেখ হাসিনা; বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বে ছিল খালেদা জিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ৪২৪জন সতন্ত্র প্রার্থীসহ ৭৫টি দল থেকে মোট ২৭৮৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি জয় লাভ করে। তারা ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৪০টি আসন লাভ করে। মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল ৫৫.৪%

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল। মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১%। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনে জয় লাভ করে এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৭৮টি আসন লাভ করে।

১৫ ই ফেব্রুয়ারীর এক তরফা নির্বাচন এবং পরবর্তী সংসদ বেশিদিন স্থায়ী ছিলনা এবং তা মাত্র ১২ দিন স্থায়ী ছিল !২৪, ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিরোধী দলের আহ্বানে দেশব্যাপী অসহযোগ পালিত হয়৷ ৩ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণে খালেদা জিয়া ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনার ঘোষণা দেন৷নির্বাচিত সরকারের প্রথম সংসদ অধিবেশন শুরু হয়েছিল ১৯শে মার্চ ১৯৯৬ সালে এবং অধিবেশন স্থায়ী ছিল চার কার্যদিবস ২৫শে মার্চ ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। ৩০শে মার্চ ১৯৯৬ সালে সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন জুন, ১৯৯৬, জুন ১২, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিল শেখ হাসিনা; বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বে ছিল খালেদা জিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ২৮১জন সতন্ত্র প্রার্থীসহ ৮১টি দল থেকে মোট ২৫৭৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয়লাভ করে। উক্ত নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থীরা ০.৬৭% এবং দলীয় প্রার্থীরা ৭৪.৮২% ভোট লাভ করে।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০১ আক্টোবর ১, ২০০১ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিল শেখ হাসিনা; বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বে ছিল খালেদা জিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ৪৮৪জন সতন্ত্র প্রার্থীসহ ৫৪টি দল থেকে মোট ১৯৩৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। এটি হলো ১৯৯৬ সালে চালু হওয়া তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বিতীয় নির্বাচন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন লতিফুর রহমান।এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৯৩ টি আসনে জয় লাভ করে !

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারিতে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। তার নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্য উপদেষ্টারাও পদত্যাগ করেন। ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়। দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ওয়ান ইলাভেন নিয়ে নানা বলাবলি আছে। সেদিনের ঘটনার যতদূর জানা যায়, ১১ই জানুয়ারি দুপুর হয়ে বিকাল হতে চলেছে। প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আইন শৃঙ্খলা সম্পর্কিত এক জাতীয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন। বৈঠকের মূল এজেন্ডা ২২শে জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন যেকোন মূল্যে করতে হবে। বৈঠক চলছে, এমন সময় প্রেসিডেন্টের কাছে বার্তা এলো স্যার আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন তিন মেহমান। দশ মিনিটের মাথায় তার সামরিক সচিব ঢুকে বললেন, স্যার মিটিং শর্ট করতে বলা হয়েছে। মেহমানরা পৌঁছে গেছেন। আপনার রুমে অপেক্ষা করছেন। মিটিং শেষে রুমে ঢুকে দেখেন মেহমানরা তার জন্য তিনটি কাগজ হাতে অপেক্ষা করছেন। প্রথমটি তার পদত্যাগপত্র। দ্বিতীয়টি জরুরি অবস্থা জারির প্রজ্ঞাপণ।আর এভাবেই রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা সৃষ্ট বিশৃঙ্খল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারী তত্কালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষনা করেন। একই সাথে সেনা সমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় যার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ফখরুদ্দীন আহমেদকে নিয়োগ করা হয়।ফখরুদ্দিন আহমেদ ক্ষমতা গ্রহনের মধ্য দিয়ে ইতোপূর্বে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হয়। ফখরুদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব গ্রহনের পর তত্কালীন জাতীয় জীবনে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখার জন্য বেশ প্রশংসিত হন। সে সময় বিশ্বের সর্বাধিক দূর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে, ফখরুদ্দীন আহমেদ দূর্নীতিবিরোধী নানান কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সে সময় দেশের প্রায় ১৬০ জন রাজ্নীতিক, সরকারী কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মকর্তার নামে অর্থ আত্মসাত্ ও অন্যান্য দূর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা করা হয়। এসময় দেশের ভূতপূর্ব দুই প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নেরও চেষ্টা হয়।

এত অর্জন এবং সুনামের পরেও ফখরুদ্দিন সরকার একসময় জরুরি অবস্থা তুলে দিয়ে নির্বাচন দিতে বাধ্য হন এবং এই ফখরুদ্দিন সরকারের অধীনেই বাংলাদেশের নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । বাংলাদেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৯শে ডিসেম্বর ২০০৮ সালে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠা ফখরুদ্দীন আহমদ-এর নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকারের অধীনে। সামরিক সরকার ২০০৭ সালের শুরুর দিকে জরুড়ি অবস্থা জাড়ি করে যা ২০০৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর তুলে নেওয়া হয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দুটি প্রধান দল, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিল শেখ হাসিনা; বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বে ছিল খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগে এরশাদের জাতীয় পার্টির সহ চৌদ্দদলীয় মহাজোট গঠন করে, অন্যদিকে বিএনপি জামায়াতে ইসলামী দল সহ চারদলীয় জোট গঠন করে।এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের বিপরীতে ২৩০ আসনে জয় লাভ করে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করে ।এই সরকারের অধীনেই ৩০শে জুন ২০১১ সালে তত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাশ হয়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার শরিক জোটগুলো এর পর থেকেই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা পুনরায় চালু করার জন্য সরকারের বিরোদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ঘোষণা দেন এবং তখনই বিরোধী দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে ঘোষণা দেন।

নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা , নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা পুনরায় চালু করার জন্য সরকারের বিরোদ্ধে আন্দোলন এবং আনর্জাতিক চাপ কোনো কিছুই এই সরকারকে থামাতে পারেনি ! সরকার বিভিন্ন সময় বিরোধী দলের সাথে আলোচনা বা সংলাপে বসার অভিনয় করলেও ২৫ নভেম্বর ১০১৩ সালে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন ! তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকেই শুরু হয় নতুন করে সহিংসতা ! ঘোষণার পর থেকে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত ৪১ দিনে মারা গেছেন ১২৩ জন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ২০১৪ বাংলাদেশে ৫ই জানুয়ারি ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও সতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এছাড়াও নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।৫ই জানুয়ারি রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাকী ১৪৭টি আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার ফলে এবারের নির্বাচনে সাড়া দেশের মোট ৯,১৯,৬৫,৯৭৭ ভোটারের মধ্যে ভোট দেওয়ার সুযোগ পান ৪,৩৯,৩৮,৯৩৮ জন।

প্রথমে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তারপর খালেদা জিয়া। এবার শেখ হাসিনা। গত ৫ তারিখের তৃতীয়বারের মতো একতরফা নির্বাচন দেখল বাংলাদেশ।

সব একতরফা নির্বাচনের যা চরিত্র, ৫ তারিখের নির্বাচনটিও তার ব্যতিক্রম ছিল না। একতরফা নির্বাচনের কলঙ্কিত সব অনুষঙ্গই ছিল গতকালের ভোটে। ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। ফাঁকা কেন্দ্রে জাল ভোট দিয়েছেন সরকারি দলের কর্মীরা। ছিল কেন্দ্র দখল করে সিল মারার মতো গর্হিত ঘটনা।

নির্বাচন প্রতিরোধকারী বিএনপি-জামায়াতের দিক থেকে ছিল সহিংসতা, কেন্দ্র পোড়ানো, কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিনতাই, ভাঙচুর, নির্বাচনী কর্মকর্তা হত্যা, মারধর এবং পুলিশের ওপর হামলার মতো ঘটনা এবং নির্বাচনের আগের দিন রাতে এবং নির্বাচনের দিন মিলে প্রায় সাড়ে পাঁচ শত স্কুল পুড়িয়ে দেওয়ার মত ঘটনা ও এই দশম নির্বাচনে ঘটেছে ।

বাংলাদেশের এই নির্বাচন ফিরিস্থী সবারই জানা , তারপরেও সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরার করণ হলো বাংলাদেশের নির্বাচন কখনই সুখের ছিলনা ! সংগ্রামের মাধ্যমেই , ত্যাগের মাধ্যমেই গণতন্ত্র চর্চা করতে হয় বাংলাদেশীদের।

এই সংগ্রাম এবং ত্যাগের মাঝে সবসময় বেশি ত্যাগ করতে হয় বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে । কেউ জিতলেও তাঁদের মার খেতে হয় ভোট দেওয়ার অপরাধে আবার কেউ হারলেও মার খেতে হয় ভোট না দেওয়ার অপরাধে! তাঁদের এই মার খাওয়া নিয়েও চলে আবার রাজনীতি, বাংলাদেশে অনেকেই সম্প্রদায় এবং অসম্প্রদায়িক ট্যাগ লাগিয়ে রাজনীতি করে ! ইতিহাস দেখলে জানা যায় ধর্মীয় দল গুলু ছাড়া বাকি সব দলই অসম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী ! আর মূলত যারা গনতন্তের জন্য রাজনীতি করে সবাই অসম্প্রদায়িক তা আমি মনে করি । এখন মার খাচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায় কাঁদা মারা মারি দিচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ বলে তারা অসম্প্রদায়িক রাজনীতি করে , আর বি এন পি ও একই কথা । আর কেউ বলে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর জামাতিরা আক্রমন করেছে , তারা যেহেতু যুদ্ধাপরাধীর ট্যাগ নিয়ে আছে এই অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে খুবই যুতসই !

এই হিন্দুদের উপর আক্রমন কিন্তু এই প্রথম নয় । প্রতিবার দেশে নির্বাচন নিয়ে তামাসা শুরু হয়, আর তামাসার পর শুরু হয় গণহারে কচুকাটা। এভাবেই চলছে। ১৯৪৭ এ একবার, ’৬৫তে পাক-ভারত যুদ্ধের পরে আরো একবার ’৭১ এ তো প্রতিদিনই , এরশাদের আমলে দুবার, ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে দাঙ্গায় নাজেহাল হয়ে বহু হিন্দু হিন্দু পার্শ্ববর্তী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল এদেশের চৌদ্দ পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে। পূর্ণিমা রাণীর মত বহু হতভাগ্য নারীকে হতে হয়েছিল গণধর্ষণের শিকার। এই তো সেদিন – সাঈদীর বিচারের পরেও অসংখ্য হিন্দু বাড়ি জালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। স্বাধীন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পেতে হলে যদি বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ হতে হয়, ভাইকে পুড়ে মরতে হয়, বোনকে দেখতে হয় ধর্ষিতা, তাহলে এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা চেয়ে কি ফায়দা কে জানে। বরং বিচার ফিচার না হলেই মনে হয় এই অভাগারা একটু নিরাপদে থাকে। সাইদীর ফাঁসি হইলেই বা কি আর আওয়ামীলীগ নির্বাচনে জিতলেই বা কি লাভ। কচুকাটা তো চলছেই।

একটা ছোট পরিসংখ্যান দেই। বাংলাদেশে ১৯৪১ সালে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল শতকরা ২৮ ভাগ। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরে তা শতকরা ২২ ভাগে এসে দাঁড়ায়। এরপর থেকেই সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমাগত অত্যাচার এবং নিপীড়নের ধারাবাহিকতায় দেশটিতে ক্রমশ হিন্দুদের সংখ্যা কমতে থাকে। ১৯৬১ সালে ১৮.৫%, ১৯৭৪ সালে কমে দাঁড়ায় ১৩.৫%, ১৯৮১ সালে ১২.১%, এবং ১৯৯১ সালে ১০% এ এসে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে হিন্দুদের শতকরা হার কমে ৮ ভগের নিচে নেমে এসেছে বলে অনুমিত হয়। সরকার চাইলেই তো এঁদের বিলুপ্ত ঘোষণা করতে পারে !

সরকারের সামনে, প্রশাসনের সামনে স্বাধীন দেশের নিরীহ নিরস্ত্র মানুষ মার খাবে আর সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবেনা বরং এর ওর গাঁয়ে কাঁদা মাখিয়ে নিজের দায় এড়াতে চেষ্ঠা করবে ।

এবার তাঁরা বুজতে সক্ষম হয়েছে যে অসম্প্রদায়িক ট্যাগ লাগানো দলই তাঁদের উপর বার বার এই নারকীয় হামলা করে বিশেষ সুবিধা নিচ্ছে ! কারণ এই হামলা শুধুমাত্র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেন হবে ? এই দেশে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিম বসবাস করলেও রমজান মাসে দূর্গা পুঁজা করতে কোনো অসুবিধা হয়না , কোরবানের ঈদ আর দূর্গা পুঁজা করতে কোনো প্রকার হামলার শিকার হতে হয় না । শুধু নির্বাচন আসলেই কেন এই বর্বরোচিত হামলা !

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.