নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুয়েল তাজিম

জুয়েল তাজিম

অলস হবেন, তো হতাশা পাবেন। শুরু করুন,শেষ হবেই। সামনে এগোতে থাকুন, পথ কমবেই।

জুয়েল তাজিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য ! কোরআন কি বলে !!

০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৪৬


পবিত্র কোরআনের প্রথম কথা ছিল "পড়" ! কিন্তু আমরা পড়ি না! আমরা ধর্মীয় বক্তার ওয়াজ শুনে বিশ্বাস করি কিন্তু নিজে যাচাই করি না। গত কয়েকদিনে পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য বিষয়ক আয়াত খুঁজতে গিয়ে কিছু পড়াশোনা হয়েছে। তা গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করি।

পবিত্র কোরআনে বাবা-মা সম্পর্কে তিন ধরনের আয়াত এসেছে -

১. শুধু বাবা মার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব সম্পর্কিত আয়াত (কি করতে হবে)

২. বাবা মার অধিকার ও অন্যান্যদের অধিকার (একসঙ্গে)সম্পর্কিত আয়াত

৩. বাবা-মার অধিকারের সীমা সম্পর্কিত আয়াত (কোন কোন ক্ষেত্রে বাবা মায়ের কোনো অধিকার নেই)

প্রথম ধরনের আয়াত গুলোর ( শুধু বাবা মার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব সম্পর্কিত) মধ্যে পড়ে সূরা বনী ইসরাঈলের ২৩ ও ২৪ নং আয়াত, সুরা লুকমানের ১৪ নং আয়াত ও সুরা আহ্কাফের ১৫ নং আয়াত।

” তোমার প্রতিপালক আদেশ করছেন, তোমরা তাকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করনা এবং তোমরা তোমাদের পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো ; তাদের একজন কিংবা উভয়ই যদি তোমাদের জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাহলে তাদের সাথে বিরক্তি সূচক কিছু (উফ ) বলো না এবং ধমক দিওনা, তাদের সাথে সম্মান সূচক নম্র কথা বলো।
অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো, এবং বলো, হে আমার মালিক তাদের প্রতি ঠিক সেভাবে দয়া করো যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন পালন করেছিলেন। ” [বনি ইসরাইল ২৩, ২৪]


“আমি মানুষকে তাদের পিতা মাতার ব্যাপারে সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি , তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুই বছর পর সেই সন্তান বুকের দুধ খাওয়া ছেড়েছে , সুতরাং আমার শোকর আদায় করো এবং পিতা মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় করো ; তোমাদেরকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে ।” [সুরা লুকমান ১৪]


আমি মানুষকে আদেশ দিয়েছি সে যেন নিজের পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করে ; কেন না তার মা তাকে অত্যন্ত কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে প্রসব করেছে এবং এভাবে গর্ভে ধারণ করতে ও স্তন্য পান করানোর সময় তিরিশটি মাস; অতঃপর সে তার পূর্ণ শক্তি প্রাপ্ত হয় এবং ৪০ বছরে উপনীত হয় ; তখন সে বলে , হে আমার মালিক , এবার তুমি আমাকে সমর্থ দাও ……” [আহকাফ: ১৫]


দ্বিতীয় ধরনের আয়াতে অন্যান্যদের অধিকারের সাথে সাথে পিতামাতার অধিকারের কথাও বলা হয়েছে -


“তুমি বল, আসো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যা নিষিদ্ধ করেছেন তা বলে দেই , তোমরা আল্লাহর সাথে কোনো শরীক করবেনা , পিতা মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে, দারিদ্রের আশংকায় কখনও তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না ……..”[সূরা আনআম: ১৫১]


” তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে ও কোনো কিছুকে তার সাথে শরীক করবে না এবং পিতা – মাতা , আত্মীয় স্বজন , ইয়াতিম , অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী সাথী , পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। ” [সূরা নিসা: ৩৬]


আর তৃতীয় ধরনের আয়াতে পিতা মাতার অধিকারের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে – বলা হয়েছে কোথায় কোথায় বাবা মায়ের অধিকার নেই।

প্রথমতঃ

পিতা মাতা আল্লাহর সাথে কোনো কিছু শরীক করতে বললে তাদের আনুগত্য করা যাবে না। সুরা লোকমানে আল্লাহ বাবা মায়ের প্রতি ‘সদ্ব্যবহার’ কি তা ব্যাখা করেছেন – “আমি মানুষকে তাদের পিতা মাতার ব্যাপারে সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি,তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুই বছর পর সেই সন্তান বুকের দুধ খাওয়া ছেড়েছে , সুতরাং আমার শোকর আদায় করো এবং পিতা মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় করো ; তোমাদেরকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে” এর পরপরই বলছেন “সদ্ব্যবহার” মানে “আনুগত্য” না। আল্লাহ বলছেন, ” তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে পীড়া পীড়ি করে যে তুমি আমার সাথে শিরক করবে, যে ব্যাপারে তোমাদের কোনো কোনো জ্ঞানই নেই , তাহলে তুমি তাদের কথা মানবে না,তবে দুনিয়ার জীবনে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে …..”

দ্বিতীয়তঃ

অন্যায় কাজে সন্তানের সমর্থন পাবার অধিকার পিতা মাতার নেই,সে অন্যায় যে কারো ক্ষেত্রেই হোক না কেন।

[হে ঈমানদারগন, তোমরা সর্বদাই ইনসাফের ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং আল্লাহর জন্য সত্যের সাক্ষী থেকো যদি তা তোমার নিজের, নিজ পিতামাতা ও নিকট আত্মীয়দের বিপরীতে যায় …তবুও।” – [সূরা নিসা: ১৩৫]

অর্থাৎ পিতা-মাতা অন্যায় করলে বা অন্যায় দাবী করলে আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন তার বিরোধিতা করার এবং ন্যায়ের পক্ষে থাকার ; তবে মনে রাখতে হবে তাদের সঙ্গে ব্যবহার ভালো করতে হবে এবং ধমক দেয়া যাবে না ।

কিন্তু আমরা পিতামাতার অধিকার সম্পর্কে খুবই খন্ডিত ধারণা নিয়েই বসবাস করি। যার ফলে এমন এক ধারণার তৈরী হয় যা ইসলামের সঠিক ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। এরূপ খন্ডিত ধারণার ফল আমাদের সমাজে ভালো হয়না , এটি খুলে যায় অনেক অবিচারের দরজা ।

কেন এমন খন্ডিত ধারণা সৃষ্টি হলো ? কারণ সম্ভবতঃ আমরা যেসব ইসলামিক আলোচনা বা ওয়াজ শুনি এবং যেসব ইসলামিক সাহিত্য পড়ি তাতে শুধুমাত্র প্রথম ধরনের আয়াত গুলোকেই তুলে ধরা হয় , অন্য ধরন দুটি ততটা গুরুত্ব পায়না। বিশেষ করে সুরা নিসার ১৩৫ নং আয়াতটি সম্পূর্ণ অনুচ্চারিতই থেকে যায় ,

“হে ঈমানদারগন, তোমরা সর্বদাই ইনসাফের ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং আল্লাহর জন্য সত্যের সাক্ষী থেকো যদি তা তোমার নিজের, নিজ পিতামাতা ও নিকট আত্মীয়দের বিপরীতে যায় তবুও “-

ফলে সন্তানরা তো বটেই বাবা মায়েরাও ভেবে বসেন তাদের অধিকার অসীম; এমনকি তারা সন্তানকে অন্যায় আদেশ করারও অধিকার রাখেন। আমাদের সামাজিক পারিপার্শ্বিকতা এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছেলে সন্তানদের পিতামাতাকে করে তোলে অনিয়ন্ত্রিত শক্তির ধারক। অথচ এই আয়াতটি যদি পিতা-মাতার অধিকারের সীমা হিসাবে উচ্চারিত হত তবে বাবা মায়েরাও সন্তানের কাছে কিছু দাবী করার আগে ভাবতেন তাদের এ দাবী করার অধিকার আসলেই আছে কি না , তারা এমন কিছু দাবী করছেন কিনা যা ন্যায় ও ইনসাফের বাইরে। এমনটা হলে অনেক পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা তৈরীই হত না ।

কোরআনের প্রথম দু’ধরনের আয়াত সমূহ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে পিতা মাতার প্রতি ‘সদ্ব্যবহার বা ভালো ব্যবহার’ এর কথা বার বার বলা হয়েছে এবং এখনে এটাও লক্ষনীয় যে একই ভালো ব্যবহারের কথা আরো অনেকের প্রতিও করতে বলা হয়েছে । এ আয়াত গুলোতে বাবা মায়ের জন্য বিশেষভাবে যা বলা হয়েছে তা হলো -

১. বিরক্তি সূচক কিছু (উফ ) বলো না এবং ধমক দিও না
২. সম্মান সূচক নম্র কথা বলো
৩.বিনয়াবনত থেকো
৪. দোয়া কর
৫. কৃতজ্ঞতা আদায় করো

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে অনেকে নিজে অহরহ নিজের বাবা -মার সাথে ধমকের সুরে কথা বলেন,রেগে গেলে রূঢ় আচরণ করি; কিন্তু স্ত্রীকে নির্যাতন করি এই অজুহাতে যে সে তার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর সঙ্গে যথেষ্ট ভালো আচরণ করছে না এবং আমাদের সমাজে এমন আচরণকে অনেক ক্ষেত্রেই ‘খোদা ভীরু ‘ আচরণ মনে করা হয়। কারণ মনে করা হয় তারা এটা করছেন নিজের বাবা মায়ের সাথে তার স্ত্রীর ভালো ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য। অনেকে শুধু স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেই ক্ষান্ত হন না বরং এই অজুহাতে নিজ শ্বশুড়-শাশুড়ীর সাথেও খারাপ আচরণ করেন। উপরে উল্লিখিত তিন ধরনের আয়াতের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি এই ব্যক্তিটি তিন ভাবে কোরআনের বিরুদ্ধ আচরণ করছেন -


১. কোরআন সবার আগে বলেছে নিজেকে বাবা মায়ের সঙ্গে নম্র ভাষা ব্যবহার করতে ও বিনয়াবনত থাকতে এবং তিনি তা করছেন না ।
২. স্ত্রীর উপর নির্যাতন করছেন।
৩. নিজ শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর সাথে সদ্ব্যবহার করছেন না (অথচ স্ত্রীর কাছে চাইছেন সে তার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর সাথে ভালো ব্যবহার করুক)

“এবং পিতা – মাতা , আত্মীয় স্বজন , ইয়াতিম , অভাব গ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী সাথী , পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে।”[সূরা নিসা:৩৬]


এখানে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্যণীয়- কোরআনে বাবা মায়ের প্রতি সদ্বাবহারের আয়াত গুলো শুধু “ছেলের বাবা মায়ের ” জন্য আসেনি। এ সবকটি আদেশই ছেলে সন্তান ও মেয়ে সন্তান উভয়ের জন্যই এসেছে । ছেলের বাবা-মায়েদের এসব অধিকার রয়েছে আর মেয়ের বাবা-মায়ের নেই এমনটা কোরআন বলেনি। কোরআন ছেলে সন্তান ও মেয়ে সন্তান উভয়ের মা বাবাকেই তাদের ত্যাগের স্বীকৃতি দিয়েছে,

“আমি মানুষকে তাদের পিতা মাতার ব্যাপারে সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি , তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং….”[সুরা লুকমান: ১৪]

“আমি মানুষকে আদেশ দিয়েছি সে যেন নিজের পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করে ; কেননা তার মা তাকে অত্যন্ত কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে প্রসব করেছে …”।[সূরা আহকাফ: ১৫]


বর্তমানে সমাজে পুত্র সন্তানের বাবা হওয়ায় যেন বিশাল কিছু অর্জন আর কন্যা বা মেয়ে সন্তানের বাবা হওয়ার ইচ্ছা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আমি আশা করব যারা ইসলামী সাহিত্য লিখছেন, ইসলামিক আলোচনা করছেন, বা গল্প -নাটক লিখছেন তারা যখনি পিতা-মাতার হক বিষয়টি আনবেন তখন অবশ্য অবশ্যই পরিপূর্ণ ছবিটি দিবেন যাতে করে মেয়ের বাবা-মায়েদের ত্যাগটি আড়ালে পড়ে না যায় আর কারো মনে মেয়ের মা-বাবা হবার প্রতি অনীহা তৈরী না হয়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:২৭

ভুয়া মফিজ বলেছেন: অত্যন্ত যুগোপযুগী পোষ্ট। আজকাল বৃদ্ধনিবাসের বা অন্যান্য যে সব ঘটনা শুনি তাতে দুঃখ পাই, তার চেয়েও বেশী আশ্চর্য হই, মানুষ কিভাবে পারে!

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪২

জুয়েল তাজিম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। বৃদ্ধাশ্রম বন্ধ হউক এই দেশে, এই পৃথিবীতে

২| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:০৪

ওমেরা বলেছেন: আমার মনে হয় আপনার শেষের কথাটুকু ঠিক না । আগের দিনের মানুষের ছেলে সন্তানের প্রতি আকর্ষন বেশী ছিল । এখনোও আছে তবে আগের মত নয় ।

তা ছাড়া লিখাটা ভাল লেগেছে ধন্যবাদ ।

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৫

জুয়েল তাজিম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে, আমি নিজেও একজান কন্যা সন্তানের বাবা। বলতে গেলে আমার মেয়েকে ঘিরেই আমার বর্তমান পৃথিবী। কিন্তু সত্যি কথা হল আমার স্ত্রীকে অনেকের কাছেই কন্যা সন্তানের মা বলে তিরস্কার হতে হয়েছে তাও আবার প্রতিবেশী বা আত্মীয় নারীদের কাছ থেকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.