নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুয়েল তাজিম

জুয়েল তাজিম

অলস হবেন, তো হতাশা পাবেন। শুরু করুন,শেষ হবেই। সামনে এগোতে থাকুন, পথ কমবেই।

জুয়েল তাজিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আশুরার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৫৭


মহররম হিজরি বর্ষের প্রথম মাস। আর আশুরা হলো এ মাসেরই দশম দিবস। এ কথা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, বিশ্ব সৃষ্টির ইতিহাসসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার অবতারণাই ১০ মহররম তথা আশুরা দিবসে। সঙ্গত কারণেই আশুরার তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। আশুরার গুরুত্ব সকল নবীর যুগেই স্বীকৃত ছিল। আদি মানব হজরত আদম (আঃ) এর সৃষ্টি, বেহেশত, দোজখ, আকাশ, পৃথিবী, চাঁদ, সূর্য, বায়ু, আগুন, পানিসহ মৌলিক সবই সৃষ্টি হয়েছে এই আশুরা দিবসে। নমরুদের অগ্নিকুণ্ড- থেকে ইব্রাহিম (আঃ) -এর মুক্তিলাভ, ফেরাউনের কবল থেকে মুসা (আঃ) -এর নীল নদ পাড়ি দিয়ে মুক্তিলাভ, মাছের উদর থেকে ইউনুস(আঃ) -এর মুক্তিলাভ, মহাপ্লাবন থেকে নুহ (আঃ)-সহ ঈমানদার মুসলমানদের মুক্তিলাভ, ঈসা (আঃ) -এর আকাশে উত্তোলনসহ ইসলামের ঐতিহাসিক যা ঘটনা সবই ঘটেছে এই আশুরা দিবসে। অবশেষে এ দিবসেই ইসলামের সবচেয়ে বিয়োগান্তক ও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে নবী দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রাঃ) -এর শাহাদাতবরণের মাধ্যমে। সর্বশেষ কিয়ামতও এ দিবসেই সংঘটিত হবে হবে বিশ্বনবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন।

মানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সাঃ) -এর আদরের দুলাল এবং ইসলামের ইতিহাসের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রাঃ) ও নবীদুলালি ফাতেমাতুজ্জোহরা (রাঃ) -এর পুত্র ইমাম হোসাইন (রাঃ)। চতুর্থ হিজরির ৩ শাবান শনিবার মদিনায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন অসত্যের বিরুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সত্য পথযাত্রীদের প্রাণের সান্ত্বনা। স্বৈরশাসক ও জালিম শাহির পতন-আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল আপসহীন। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও তিনি প্রমাণ করে গেছেন যে, দুঃশাসনের জগদ্দল পাথর সরিয়ে জাতির কল্যাণে মানবতাবাদীদের সামনে এগিয়ে যেতে হয়। ৬১ হিজরির ১০ মহররম সপরিবারে তাকে নির্দয়ভাবে শহীদ করে দেয়া হয়। তার হত্যাকারী ছিল সিনান ইবনে আনাস মতান্তরে আমর ইবনে জিলসাওসান।

আশুরার ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতঃ ইমাম হোসাইন (রাঃ) -কে কেন শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করতে হয়? সে এক মর্মান্তিক কাহিনী। ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, পিতা আলী (রাঃ) -এর শাহাদাত লাভের পর ইমাম হোসাইন স্বীয় বড় ভাই হজরত হাসান (রাঃ) -এর হাতে বাইআত গ্রহণ করেন। ছয় মাস পর হজরত হাসান আমিরে মুয়াবিয়ার সঙ্গে পরিস্থিতির শিকার হয়ে তার হাতে খেলাফতের দায়িত্বভার তুলে দেন। এতে ইমাম হোসাইন (রাঃ) অসন্তুষ্ট হয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। কিন্তু পরে বড়ভাইয়ের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত সম্মতি প্রকাশ করেন। ৬০ হিজরিতে আমিরে মুয়াবিয়া ইন্তেকালের কিছুদিন আগে নিজ পুত্র ইয়াজিদকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করেন এবং তার হাতে সংঘবদ্ধভাবে উম্মতের বাইআত প্রদানের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সেই সময়ে যেহেতু ইয়াজিদের চেয়েও খেলাফতের উপযুক্ত সাহাবীগণ জীবিত ছিলেন, তাই নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা এ প্রস্তাবে আপত্তি তোলেন। এমনকি অধিকাংশ সাহাবি তাকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান।

এদিকে ইয়াজিদ শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সর্বপ্রথম যারা তার বাইআত গ্রহণ করেনি, তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। সঙ্গত কারণেই শুরু হয়ে যায় ইমাম হোসাইন (রাঃ) ও তার সমর্থিত নেতাকর্মীদের ওপর ইয়াজিদী নির্যাতন। এতে সত্যের পতাকাবাহী আপসহীন সংগ্রামী ইমাম হোসাইন (রাঃ) মদিনা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক সেই সময়ে ইরাকের কুফাবাসী বিভিন্ন চিঠিপত্র এবং প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে ইমাম হোসাইনকে রাষ্ট্রাধিনায়ক মেনে নেয়া এবং তাকে সার্বিক সহযোগিতার প্রস্তাব পাঠায়। তারা একই সঙ্গে ইয়াজিদী দুঃশাসনের যাঁতাকল থেকে জাতির মুক্তি-সংগ্রামের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার অঙ্গীকার জানায়। ইতোমধ্যেই ১৮ হাজার কুফাবাসী ইমাম হোসাইন রা.-এর নামে বাইআত গ্রহণ করে। তাই ইমাম হোসাইন রা. নিশ্চিন্তে কুফায় আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

এদিকে হাজার হাজার কুফাবাসীর ইমাম হোসাইনের নামে বাইআত গ্রহণের কথা ইয়াজিদের কানে পৌঁছে যায়। ইয়াজিদ কালবিলম্ব না করে তৎকালীন গভর্নর নোমান বিন বশিরকে বরখাস্ত করে উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদকে তদস্থলে গভর্নর মনোনীত করে। নবনিযুক্ত উবায়দুল্লাহ কুফায় এসেই কঠোর নীতি অবলম্বন করে। একইভাবে ইয়াজিদের কাছে নিজের বিশ্বস্ততা প্রমাণ করার জন্য ইমাম হোসাইন (রাঃ) -এর বিশ্বস্ত সহচর মুসলিম বিন আকিলকে গ্রেপ্তার করে হত্যা করে।

ইমাম হোসাইন (রাঃ) পথিমধ্যে এ নির্মম কাহিনী শুনতে পান এবং পরিস্থিতি আঁচ করতে সক্ষম হন। তারপরও দৃঢ়প্রত্যয়ী হোসাইন (রাঃ) দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে রাস্তা থেকে ফিরে আসাকে সঙ্গত মনে করলেন না। একপর্যায়ে মাঝপথে কারবালা নামক স্থানে উবায়দুল্লাহর সৈন্যবাহিনী তাকে অবরোধ করে দাঁড়ায়।

ইমাম হোসাইন (রাঃ) নির্ভয়ে দীপ্তভাবে ইয়াজিদের সৈন্যদের উদ্দেশ্যে আবেগ বিহ্বল কণ্ঠে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি বলেন: 'উপস্থিত বন্ধুরা! তোমরা নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করো। অথচ আমার একটি মাত্র অপরাধ যে, আমি ইয়াজিদের মতো একজন পথভ্রষ্ট ও অধার্মিক ব্যক্তিকে মুসলমানদের আমির স্বীকার করতে পারিনি। আর সে অপরাধেই তোমরা আমার রক্ত প্রবাহিত করতে দাঁড়িয়েছ?'
ইমাম হোসাইন (রাঃ)-এর এ আবেগময় বক্তব্য শোনার পর ইয়াজিদের একমাত্র সেনাপতি 'হোর' ইয়াজিদী দল ত্যাগ করে হোসাইন রা.-এর দলে এসে যোগ দেন। ফলে শুরু হয় যুদ্ধ। বীর বিক্রমে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ইমাম বাহিনীর সবাই। ঈমানি বলে বলীয়ান নির্ভীক সৈনিকরা একে একে সবাই শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। শহীদদের তাজা খুনে লাল হলো ফোরাতের তীর। এই হলো কারবালা ও ইমাম হোসাইনের শাহাদাতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।

দুঃশাসনবিরোধী আন্দোলনঃ মূলত ইমাম হোসাইন (রাঃ).-কে শহীদ হতে হয়েছিল জালেম শাসক ইয়াজিদ সরকারের বিচ্যুতির প্রতিকার চাইতে গিয়ে। তিনি চেয়েছিলেন শাসনব্যবস্থাকে তার সঠিক অবস্থানে নিয়ে আসতে। তিনি চেয়েছিলেন মজলুম মানবতার মুক্তি। হোসাইন (রাঃ).-এর সংগ্রাম কোনো কাফির শাসকের বিরুদ্ধে ছিল না। তার সংগ্রাম ছিল নামধারী মুসলিম শাসক ইয়াজিদের বিরুদ্ধে। ইসলামের লেবেল গায়ে জড়িয়ে যারা অনৈসলামিক কর্মকা-কে জায়েজ বানাতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে। অন্যভাবে ইমাম হোসাইন রা.-এর সংগ্রাম ছিল একটি মুক্তিযুদ্ধ। সেটি ছিল মানবতার মুক্তি, দুঃশাসন থেকে মুক্তি। এ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে যে কখনো আপস হতে পারে না, জোট হতে পারে না, ইমাম হোসাইন (রাঃ).-এর শাহাদাতের স্মৃতিবিজড়িত আশুরা ও মহররম তা-ই শিক্ষা দেয়। কখনো জাতির স্বাধীনতা হরণ করা হলে কিংবা স্বকীয়তা বজায় রাখার স্বার্থে যে গর্জে উঠতে হয় আশুরা ও মহররম তা-ই শেখায়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী নেটওয়ার্ক যে অত্যন্ত সুবিস্তৃত। এ জন্য সত্য পথযাত্রীদের টুঁটি চেপে হত্যার পরম্পরায়ই ইমাম হোসাইনকে শহীদ হতে হয়।

ইতিহাসের শিক্ষাঃ নিষ্ঠুর ইতিহাসের সংঘটক কেউই যে মহান আল্লাহর অলঙ্ঘনীয় বিধান হতে রেহাই পায় না, কারবালায় ইমাম হোসাইন (রাঃ).-এর শাহাদাতের পর তা-ই প্রমাণিত হয়েছে। হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ).-এর নির্মম মৃত্যুর সংবাদ শুনে মক্কা, মদিনা ও কুফায় বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। বিক্ষুব্ধ জনতা ক্ষোভে মুহ্যমান হয়ে দুরাত্মা ইয়াজিদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়। এ বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন বিপ্লবী নেতা মুখতার। তিনি কুফার ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে ইমাম হোসাইন রা.-এর হত্যাকা-ে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের তরবারির আঘাতে হত্যা করেন। এ সংঘর্ষে ইয়াজিদ সেনাপতি সীমারসহ ২৮৪ জন ঘাতক প্রাণ হারায়। একপর্যায়ে মুখতার সদলবলে কুফার গভর্নর আবদুল্লাহ বিন জিয়াদের সম্মুখীন হয়। টাইগ্রিস নদের শাখা জাবের তীরে উভয়ের যুদ্ধ চলাকালে কুখ্যাত জিয়াদ এক সাধারণ সৈনিকের বর্শাঘাতে বক্ষ বিদীর্ণ হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৩৪

কানিজ রিনা বলেছেন: অনেক সুন্দর লিখেছেন। ধন্যবাদ।

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৪৫

মূর্ক্ষের পিতা হস্তী মূর্ক্ষ বলেছেন: Good post. stay well. @ Sala black pig non Muslim chad gaghi kutta sala. He does not respect asura & haazrat imam hossin (Ra)

৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ ভোর ৫:১১

মলাসইলমুইনা বলেছেন: ব্লগে ইসলাম নিয়ে বেশি লিখতেই কেউ চায় না | আপনার লেখাটা তাই খুব ভালো লাগলো | কিন্তু একটা কথা বলি, ইসলামে আশুরা যেটা আমরা পালন করি (হাদিসের ভিতিত্তে রোজা রাখি) সেটা কিন্তু কারবালার কোনো ঘটনার জন্য নয় | এটা ফ্যারাউ-এর হজরত মুসার (সাঃ) বনি ইসরাইলিদের উদ্ধার করে নিয়ে আসার এক্সোডাসের ঘটনার সাথে যুক্ত | সেজন্যই জু-রা এদিন ফাস্ট করে | সেজন্যই রাসূল (সাঃ) বেঁচে থাকতেই এদিন রোজা রাখার কথা বলেছিলেন | কিন্তু কোনো কারণে এখন আমরা আশুরা বলতে কারবালার ঘটনাটাই বেশি মনে করি |

৪| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:১৭

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্য। আরও লিখতে থাকুন। শুভকামনা রইল।

৫| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৮

বারিধারা বলেছেন: মলাসইলমুইনার সাথে পুরোপুরি সহমত। কিন্তু সবাই কারবালার ঘটনাকেই বেশি ফোকাস করে এই কারণে যে তাতে কিছু সাহাবায়ে কেরামের চরিত্রে কলঙ্ক আরোপ করা যায়। মুসলিমরা কেন যেন ইহুদীদের ষড়যন্ত্রে ধরা খেতেই বেশি আনন্দ পায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.