নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুয়েল তাজিম

জুয়েল তাজিম

অলস হবেন, তো হতাশা পাবেন। শুরু করুন,শেষ হবেই। সামনে এগোতে থাকুন, পথ কমবেই।

জুয়েল তাজিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বই রিভিউ: আমারে দেব না ভুলিতে

১৩ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ৯:১৮

বই রিভিউ: আমারে দেব না ভুলিতে
লেখক: আশীফ এন্তাজ রবি
ধরন: কাল্পনিক জীবনী (Fictional Biography)
প্রকাশনী: আদর্শ
মূল্য: ৬০০ টাকা
রিভিউ দাতা: জুয়েল তাজিম

আশীফ এন্তাজ রবি'র লেখার সাথে আমার প্রথম পরিচয় Facebook মাধ্যমে। জুলাই বিপ্লবের পর তাঁর লেখা ট্রেন টু ঢাকা কিনতে গিয়ে রকমারি থেকে রবি'র লেখা বেশ কিছু বই কিনি। কারণ তাঁর গদ্য লেখা আমার খুব পছন্দের। একটানা পাঠযোগ্য। আশীফ এন্তাজ রবির লেখা ট্রেন টু ঢাকা প্রথম পাঠ করা বই যা গত ২৪ জুলাই আমার কন্যা ইশাল তার জন্মদিন উপলক্ষে তার প্রিয় ক্লাস টিচারকে উপহার দিয়েছে। যাই হউক আজকের আলাপ অন্য কিছু। তিনদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত, আফিস কামাই, ঘরে শুয়ে বসে আমার দিন কাটে না, বেজায় বিরক্তিকর। বিছানায় শুয়ে শুয়ে বুক শেল্ফে চোখ আটকে গেলে একটা বইয়ে। "আমারে দেব না ভুলিতে" - ৩০০+ পৃষ্ঠার বই, ধৈর্য্য নিয়ে পাঠ করতে হবে। শুরু করলাম - বলতে গেলে আশীফ এন্তাজ রবির লেখার সাথে আমার চমৎকার ভাবে পরিচয় এই বইটির মাধ্যমেই।
তাঁর লেখার হাত বেশ পাকা—সাবলীল তথ্যবহুল। তিনি লিখতে গিয়ে কখনই তথ্যের সততা জাহির করতে গিয়ে রেফারেন্সের ভারে বইটাকে শুষ্ক ইতিহাসে পরিণত করেননি। বরং, উপভোগ্য ও চমৎকার এক উপন্যাস উপহার দিয়েছেন পাঠকদের।
তবে, নজরুলের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের সুযোগ তিনি রেখেছেন বইয়ের শেষে, গ্রন্থতালিকা সংযোজনের মাধ্যমে।গ্রন্থতালিকায় দেখা যায় প্রায় ৩৯ টি গ্রন্থ তিনি সাবাড় করেছেন আমাদেরকে এই কাল্পনিক জীবনী (Fictional Biography) উপহার দিতে।এতে আগ্রহী পাঠকরা সহজেই মূল উৎস খুঁজে নিতে পারবেন।
লেখার ভঙ্গিতে তাঁর নতুনত্ব আমাকে মুগ্ধ করেছে। কোনো চরিত্রের গভীর অনুভূতি তিনি এমন নিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলেন যে পাঠক তা সহজেই আত্মস্থ করতে পারে। আবার, হঠাৎ করেই তিনি বাক্যের মোড় ঘুরিয়ে পাঠকের আবেগকে অন্য দিকে নিয়ে যান। বইয়ের অনেক জায়গায় এমন হয়েছে—চোখে জল এসে গেছে, মনে হচ্ছে গাল বেয়ে পড়বে, ঠিক তখনই তিনি এমন মজাদার বা অপ্রত্যাশিত কোনো বাক্য যোগ করেন যে হাসি চেপে রাখা যায় না! আবার উল্টো ঘটনাও ঘটেছে: হাসির মাঝে হঠাৎ করেই গভীর বেদনা জেগে উঠেছে। এক-দুইবার নয়, বহুবার। এই লেখনীর কারুকাজ আমাকে সত্যিই অভিভূত করেছে।

"আমারে দেব না ভুলিতে" শুধু নজরুলের জীবনী বা কাল্পনিক উপন্যাস নয়—এটি এক অনন্য সাহিত্যকর্ম, যেখানে নজরুলের জীবনকে কেন্দ্র করে ফুটে উঠেছে এক যুগের ইতিহাস। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, জীবনানন্দদের মতো মহীরুহদের উপস্থিতি এটিকে সমষ্টিগত সাংস্কৃতিক আখ্যানে রূপ দিয়েছে। নজরুলের বিদ্রোহ, প্রেম ও মানবতার আলোয় এখানে উদ্ভাসিত হয়েছে colonial শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সমাজের জাগরণ। তাঁর জীবনগাথা নাটকীয়তায় ভরা, তবুও এটি ইতিহাসের সত্যকে ধারণ করে। আজও তাঁর লেখা ও আদর্শ আমাদের আলোকিত করছে, কিন্তু তাঁর জীবনকথা রয়ে গেছে অনেকাংশে অবহেলিত। এই গ্রন্থ সেই শূন্যতা পূরণের এক সাহসী প্রয়াস।

অজপাড়াগাঁয়ের এক মসজিদের ইমাম ফকির আহমদ, প্রচণ্ড দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রথম স্ত্রীর গর্ভে সন্তান না আসায় তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু বিধির পরিহাস—দ্বিতীয় বিয়ের পরপরই প্রথম স্ত্রীর কোল জুড়ে আসে পুত্রসন্তান সাহেবজান। অন্যদিকে, দ্বিতীয় স্ত্রী জাহেদার চার সন্তানই জন্মের পরপরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পঞ্চমবার গর্ভবতী হলে ইমাম সাহেব মানত করেন: যদি এই সন্তান বাঁচে, তবে তার নাম রাখবেন রামপুরহাটের শ্রদ্ধেয় সন্ন্যাসী বামাক্ষ্যাপার নামানুসারে—"তারাক্ষ্যাপা"।
স্রষ্টা এবার তার প্রার্থনা শুনলেন। শিশুটি বেঁচে থাকল, কিন্তু মা জাহেদা স্বামীর মানতকে উপেক্ষা করে ছেলের নাম রাখলেন "নজর আলী"। রূপবান, বলিষ্ঠ গড়নের এই শিশুটি সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। দুধে-আলতা রঙের তার বর্ণ, চোখে-মুখে এক অদ্ভুত জ্যোতি। কিন্তু এই নামকরণই যেন তার জীবনের প্রথম বিদ্রোহ—এক অনামী অস্থিরতার ইঙ্গিত।
ছোটবেলা থেকেই নজর আলীর কণ্ঠে ছিল মায়াবী দরদ। চাচার সঙ্গে যাত্রাপালায় গেলে তার গান সবাইকে মুগ্ধ করে। মক্তবে পড়াশোনায়ও সে সবার চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু তার ভাগ্যে যেন লেখা ছিল অন্যখাতা। বাবা ফকির আহমদের মৃত্যুর আগেই বড় ভাই সাহেবজান তাকে আদর করে ডাকতে শুরু করে "দুখু মিয়া"—এমন এক নাম, যা যেন তার ভবিষ্যতের দুঃখ-জয়ের ইতিহাসকে আগাম জানান দিচ্ছিল।
দুখু মিয়া শৈশবেই সংসারের হাল ধরল, কিন্তু তার মন ছুটে বেড়াত অজানা কোন স্বপ্নের পথে। দারিদ্র্য, অনটন, সমাজের অবহেলা—সবকিছুকে পাথেয় করে সে একদিন হয়ে উঠল "নজরুল এসলাম", তারপর "কাজী নজরুল ইসলাম"। যে নাম বাংলার ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে চিরকাল।
কিন্তু কীভাবে এই পরিবর্তন? কীভাবে এক দরিদ্র গাঁয়ের ছেলে হয়ে উঠল বাংলার বিদ্রোহী কবি, সাম্যের কবি? কীভাবে তার কলমে জন্ম নিল "চল্ চল্ চল্", "বিদ্রোহী", "দারিদ্র্য"—যেগুলো লক্ষ মানুষের হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে?
"আমারে দেব না ভুলিতে" সেই গতিময়, শ্বাসরুদ্ধকর যাত্রার কাহিনী—একজন নজর আলী কীভাবে দুখু মিয়ার পরিচয় ভেঙে বিশ্বজুড়ে নজরুল হয়ে উঠল, তারই অবিশ্বাস্য আখ্যান।
গল্পের বর্ণনায় লেখকের সুনিপুণভাব
গল্পের বর্ণনায় লেখকের পরিমিতবোধ স্পষ্ট। তিনি সহজ-সরলভাবে সবকিছু উপস্থাপন করেছেন, কোনো বাড়াবাড়ি বা কৃত্রিম আড়ম্বর নেই। ফলে পড়ার সময় বর্ণনায় বিরক্তি আসেনি। গল্পের প্লট অনেক আগেকার সময়ের উপর দাঁড় করানো হয়েছে, কিন্তু পারিপার্শ্বিক বর্ণনায় লেখক খুব সচেতন। পড়া শুরু করতেই চোখের সামনে অখণ্ড ভারতবর্ষের একটি অস্পষ্ট ছবি ভেসে ওঠে, যা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে।
প্রাঞ্জল ভাষার বর্ণনা গল্পটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। লেখক সাবলীল ভাষায় দ্রুত গতিতে গল্প এগিয়ে নিয়েছেন, কিন্তু কোথাও খেই হারাননি। আবার তিনি টানা গল্প বলে যাননি, বরং সাহিত্যিক রঙও যোগ করেছেন দক্ষতার সাথে। গল্পের আগ্রহ ধরে রাখতে তিনি প্রতিটি অংশকে ধারাবাহিকভাবে অধ্যায়ের পর অধ্যায়ে গতানুগতিকভাবে শেষ করেননি। বরং একই ঘটনাকে ভাগ করে নিয়ে বিভিন্ন অধ্যায়ে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
উদাহরণস্বরূপ, নজরুলের বাড়ি থেকে পালানোর ঘটনাকে একটি অংশে রেখে কয়েকটি অধ্যায় লিখেছেন, তারপর অন্য ঘটনা চালু করেছেন। সেটি কিছুদূর এগিয়ে আবার নজরুলের পালানোর প্রসঙ্গে ফিরে গেছেন। এই কৌশল গল্পের প্রতি আগ্রহ বজায় রাখতে সাহায্য করেছে। পরবর্তী অংশ জানার জন্য একটি তীব্র কৌতূহল তৈরি হয়েছে, আগ্রহে ভাটা পড়েনি। গল্প বলার এই শৈলী বেশ উপভোগ্য ছিল। এখানে লেখক খুব সতর্ক ছিলেন—কোনো ঘটনায় ফাঁকফোকর রাখেননি, সবকিছু সুসংবদ্ধভাবে উপস্থাপন করেছেন।

এই বইয়ের বেশিরভাগ চরিত্রই বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া, তাই তাদের মানসিকতা ও আচরণ বোঝা লেখকের জন্য কঠিন হয়নি। তবুও তিনি প্রতিটি চরিত্রকে যথেষ্ট সময় ও গভীরতা দিয়েছেন, কোনো ফাঁকি দেননি। বইটির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো নজরুল ও তাঁর সমসাময়িক বিখ্যাত সাহিত্যিক ও শিল্পীদের অনন্য অভ্যাস, কথাবার্তার ধরন এবং তাদের কালজয়ী সৃষ্টির পেছনের অজানা গল্পগুলো ফুটিয়ে তোলা। এসব বিষয় সাধারণ মানুষের অজানা, তাই বইটি আরও সমৃদ্ধ ও জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
কবি নজরুলের চরিত্রায়ন এতটাই প্রাণবন্ত যে, তাঁকে নিজের কাছের মানুষ বলে মনে হয়েছে। লেখক নজরুলের একরোখা ও জেদী স্বভাবকে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। চরম অর্থকষ্টেও তাঁর খামখেয়ালিপনা কমেনি, আবার মায়াময় ও নমনীয় দিকটিও উপস্থাপন করা হয়েছে। নজরুলের জীবনদর্শন ছিল রোমাঞ্চপ্রিয়—স্থির জীবন তাঁর জন্য নয়। সংসার জীবন শুরুর আগে তিনি কখনোই এক জায়গায় বেশিদিন থাকেননি। দুঃখে নয়, সুখেই তিনি বাড়ি ছেড়েছেন, রোমাঞ্চকর জীবনের সন্ধানে। তবে এই খামখেয়ালিপনার জন্য তাঁকে অনেক কষ্টও ভোগ করতে হয়েছে।
বইয়ের শুরুর দিকে পুঁটিরানী এবং শেষের দিকে চায়ের দোকানদার চুনিলালের চরিত্র দুটি প্রথমে কাল্পনিক বলে মনে হয়েছিল। ধারণা হয়েছিল, লেখক নজরুলের সময়কাল ও পরিবেশ বোঝাতেই এদের সংযোজন করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এদের চমৎকার পরিণতি আমার প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে।
পার্শ্বচরিত্র হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ও জসীমউদ্দীনের সঙ্গে নজরুলের সম্পর্কের গভীরতা মুগ্ধ করার মতো। বিশেষ করে, নজরুলের কঠিন সময়ে জসীমউদ্দীনের অবিস্মরণীয় সমর্থন অনেকেরই অজানা। এছাড়া, নজরুলের স্ত্রী প্রমীলা দেবী ও শাশুড়ি গিরিবালা দেবীর অসাধারণ ধৈর্য্য ও সহনশীলতা পাঠককে বিস্মিত করে। বারবার আর্থিক সংকটেও তারা অটল ছিলেন।
কবির কমিউনিস্ট বন্ধু মুজফ্ফর আহমেদও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি নজরুলের স্বতঃস্ফূর্ততায় হস্তক্ষেপ না করেই নিঃস্বার্থ পরামর্শ দিতেন, কখনো নিজের মতাদর্শ জোর করে চাপিয়ে দেননি।
চরিত্রগুলোর এমন সূক্ষ্ম ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লেখক কীভাবে এত নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তা ভাবতে অবাক লাগে। এগুলো যদি কাল্পনিক হতো, তবুও গ্রহণযোগ্য হতো, কারণ সেক্ষেত্রে লেখকের স্বাধীনতা বেশি। কিন্তু এরা সবাই বাস্তবের মানুষ ছিলেন—এদের রক্তমাংসের জীবনকে লেখক যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা পাঠককে মুগ্ধ করবেই।

অদেখা নজরুল জীবন
কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন নিয়ে আমরা অনেক কিছু জানি, কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত অভ্যাস, অনন্য মুহূর্ত ও অপ্রকাশিত গল্পগুলো ইতিহাসের আড়ালে রয়ে গেছে। লেখক এই বইতে নজরুলের জীবনের এমন কিছু চমকপ্রদ ও কম আলোচিত দিক তুলে এনেছেন, যা পাঠককে কবির এক নতুন রূপের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।

চায়ের নেশায় মাতোয়ারা নজরুল

নজরুল চা পানে ছিলেন ভয়ানক রকম আসক্ত। দিনে প্রায় পঞ্চাশ কাপ চা পান করতেন তিনি! এই অভ্যাস তাঁর সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। চায়ের কাপ নিয়ে বসেই যেন তিনি কবিতার পর কবিতা লিখে ফেলতেন।

কারাগারে অনশন ও রবীন্দ্রনাথের সমর্থন

ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী সুর তুলতে গিয়ে নজরুলকে কারাবরণ করতে হয়। জেলে বসে তিনি অনশন শুরু করেন এবং অবিশ্বাস্যভাবে টানা চল্লিশ দিন না খেয়ে থাকেন। ব্রিটিশ সরকার হতভম্ব হয়ে যায় তাঁর এই দৃঢ়তায়। শেষে নাটকীয়ভাবে তাঁর অনশন ভাঙানো হয়।
এ সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নজরুলের মুক্তির দাবিতে সরব হন। তিনি তাঁর 'বসন্ত' নাটক নজরুলকে উৎসর্গ করেন, যা ইংরেজ সরকারকে চাপে ফেলে। নজরুলের কিছু ভক্ত রবীন্দ্রনাথের সমালোচনা করলে, তিনি তাদের সতর্ক করে নজরুলের পক্ষে দাঁড়ান।

জসীমউদ্দীনের কবিতা ও নজরুলের প্রশংসা

কিশোর জসীমউদ্দীন কবি হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন, কিন্তু বারবার তাঁর কবিতা প্রত্যাখ্যাত হচ্ছিল। শেষে তিনি সিদ্ধান্ত নেন—নজরুল যদি তাঁর কবিতা না পছন্দ করেন, তবে তিনি লেখালেখি ছেড়ে দেবেন। নজরুলের কাছে গেলে তিনি জসীমউদ্দীনের 'কবর' কবিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এই উৎসাহই জসীমউদ্দীনকে পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি করে তোলে।

বিদ্রোহী কবিতার পেছনের গল্প

নজরুলের কালজয়ী 'বিদ্রোহী' কবিতার অনুপ্রেরণা এসেছিল বিপ্লবী বারীন ঘোষের সঙ্গে এক রাতের আড্ডা থেকে। কবিতাটি 'বিজলী' পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর এক সপ্তাহে ২৯,০০০ কপি বিক্রি হয়—যেখানে সাধারণত পত্রিকাটি ১৫০-২০০ কপি বিক্রি হতো!

কাঠবিড়ালীর সঙ্গে কথোপকথন

নজরুল একবার কুমিল্লায় তাঁর প্রকাশক বন্ধু আকবর খাঁর আরেক বন্ধু বীরেনের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে বীরেনের ছোটবোন অঞ্জলী (ডাকনাম জটা) উঠানে বসে পেয়ারা খেতে খেতে একটি কাঠবিড়ালীর সঙ্গে কথা বলছিল। এই মিষ্টি দৃশ্য নজরুলকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে তিনি 'কাঠবিড়ালী' কবিতাটি লিখে ফেলেন।

লিচু চোরের পেছনের কুকুরের দৌড়

নজরুল ছিলেন আড্ডার রাজা। যেকোনো আসরকে মুহূর্তে প্রাণবন্ত করে তুলতে পারতেন। এক রাতে আড্ডা শেষে বাড়ি ফেরার পথে একদল কুকুর তাঁকে তাড়া করে। এই ঘটনা থেকেই জন্ম নেয় তাঁর বিখ্যাত কবিতা 'লিচু চোর'।

জসীমউদ্দীনের অকৃত্রিম সাহায্য

নজরুলের শেষ জীবনে যখন তিনি অসুস্থ ও বিপন্ন, তখন কবি জসীমউদ্দীন তাঁকে অকল্পনীয়ভাবে সাহায্য করেন। অন্য কোনো সাহিত্যিক নজরুলের পাশে এভাবে দাঁড়াননি। জসীমউদ্দীনের এই ভালোবাসা ও সমর্থন নজরুলের জীবনের এক গভীর অধ্যায়।

শরৎচন্দ্রের 'দেবদাস' ও নজরুলের স্মৃতি

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মাদকাসক্ত ছিলেন। একবার নেশার ঘোরে তিনি 'দেবদাস' উপন্যাসটি লিখে ফেলেন। লজ্জায় তিনি সাত বছর সেই পাণ্ডুলিপি লুকিয়ে রাখেন। পরে এটি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য রত্ন হয়ে ওঠে। নজরুলের সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতায় এই গল্পের উল্লেখ পাওয়া যায়।

মূল কথা



এই বই নজরুলের জীবনের অদেখা, অথচ রোমাঞ্চকর ও আবেগঘন মুহূর্তগুলোকে সামনে আনে। কবির ব্যক্তিগত অভ্যাস, সংগ্রাম, বন্ধুত্ব ও সৃষ্টিশীলতার নানা দিক পাঠককে এক নতুন নজরুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়—যিনি শুধু বিদ্রোহী নন, বরং জীবনানন্দের এক অনন্য চরিত্র।
বইয়ের শেষটা করুণ,ভীষণ রকম করুণ। একটু তাড়াহুড়ো হয়েছে মনে হয়েছে আমার। এই বইয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ এর মৃত্যুর ক্ষন ও আলোচিত হয়েছে। এক পর্যায়ে লেখন নিজের পিতৃ বিয়োগের কথাও তুলে ধরেছেন।
কবি নজরুলের মৃত্যুর কারণ পাঠককে থমকে দেবে—একটি ক্ষণে সবকিছু যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। আমার মনে হয়েছে জোর করে কবিকে পিজি'তে না নেওয়া হলে কবি হায়াত আরো দীর্ঘ হতে পারত হয়ত। বইয়ের শেষের দিকে হৃদয় ভারী হয়ে ওঠে, চোখে জমে অশ্রুর ভার। কিন্তু এই শোকই আবার মনে করিয়ে দেয়, তিনি কত বড় এক মহীরুহ ছিলেন, যার ছায়ায় আজও আমরা দাঁড়িয়ে।
প্রিয় কবি, আমরা আপনাকে ভুলিনি। ভুলতে পারি না। সে স্পর্ধা কিংবা যোগ্যতা—কোনোটাই আমাদের নেই। আপনি আছেন অসংখ্য পাঠকের ভালোবাসার কেন্দ্রে, বহু কবির অনুপ্রেরণায়, শব্দে ও সুরে। আছেন বিশ্বের প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায়—একটি নাম, একটি অগ্নিশিখা, একটি চিরন্তন প্রেরণা।
আপনাকে আমরা ভুলিনি। ভুলবো না। ভুলতে পারি না।
কারণ, আপনি শুধু কবি নন—আপনি আমাদের অস্তিত্বের জয়গান।

রেটিং: ৫/৫
কারণ:
গবেষণাধর্মী তথ্য, কিন্তু গল্পের মতো সুখপাঠ্য।
চরিত্রগুলোর গভীরতা এবং বাস্তবতা।
শেষ পর্যন্ত আগ্রহ ধরে রাখার ক্ষমতা।
সিদ্ধান্ত: "আমারে দেব না ভুলিতে" নজরুলকে নিয়ে লেখা অন্যতম সেরা গ্রন্থ, যা পাঠককে কবির হৃদয়ের কাছাকাছি নিয়ে যায়। প্রত্যেক বইপ্রেমী এবং নজরুলভক্তের সংগ্রহে থাকা উচিত।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ৯:৫০

কামাল১৮ বলেছেন: এর কোন লেখাই পড়া হয় নাই।

২| ১৩ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:৪৫

লিংকন বাবু০০৭ বলেছেন: আমার অন্যতম একজন পছন্দের একজন লেখক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.