নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাহনাজ রহমতুল্লাহর সংগীত সন্ধ্যা

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪০



ছবি-দৈনিক সমকাল

কিশোর বয়স থেকে যাঁর মাদকতাময় কণ্ঠের গান আমাকে মোহিত করে রেখেছে তাঁর নাম শাহনাজ রহমতুল্লাহ। ছোট বেলায় পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে রেডিওতে নাম বলা হতো শাহনাজ বেগম। ছাত্রজীবনে একবার তাঁকে কোন একটা শপিং মলে দেখেছি এক পলকের জন্য। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রেডিসন হোটেলে সরাসরি তাঁর গান শুনবার সৌভাগ্য হলো।



সিটি ব্যাংক এনএ তাঁকে সম্মাননা দিলো। সিটি ব্যাংকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ তাঁকে সম্মাননা দেবার জন্য এবং তাঁর গান সামনে থেকে শুনবার সুযোগ করে দেবার জন্য।



কিছুদিন আগে প্রথম আলোর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন আর গান করবেন না। শুনে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। শুক্রবারও বললেন, আর নতুন গান করবেন না। অসম্ভব অভিমানী আর মুডি এ শিল্পীকে গান গাইতে রাজী করাবার জন্য সিটি ব্যাংককে অবশ্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। বহুবার ধর্ণা দিতে হয়েছে তাঁর কাছে।



অবাক হলাম তাঁকে দেখে ৬০ বছর বয়সে (জন্ম ১৯৫৩ সালে) এখনো বেশ সুন্দর রয়েছেন। কণ্ঠ শুনে চমকে গেলাম। এত স্পষ্ট আর জোরালো ! ভাবাই যায় না !



প্রথমে আমার আরেক প্রিয় শিল্পী মাহমুদুন্নবীর মেয়ে সামিনা চৌধুরী উঠলেন শাহনাজের গান গাইতে। সামিনা শুরুতেই বললেন, শাহনাজ চাচীর সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর গাইতে ভয় পাচ্ছেন। সামিনাও অনেক বড়ো শিল্পী। তাঁর ক্লাসিক্যাল বেজ বেশ শক্ত। সামিনা ফাহমিদা বাপের যোগ্য কন্যা। সামিনা প্রথমে গাইলেন, 'তোমার আগুনে পোড়ানো এ দুটি চোখে একি তৃষ্ণা, একি ক্লান্তি, শুধু তুমি নাই বলে', । গান শুনে বোঝা গেলো সামিনা নার্ভাস ছিলেন। এরপর অবশ্য সেটা কমে গেছে। খুব সুন্দর করে একে একে গাইলেন- 'সাগরের সৈকতে কে যেন দূর হতে আমারে ডেকে নিয়ে যায় আয়! আয়!! আয়!!!',/ 'খোলা জানালায় চেয়ে দেখি তুমি আসছো, জানাতে সুপ্রভাত',/ 'মানি সে তো মানিক নয়', /'কিছু কিছু মন আছে প্রতিদান চায় না', /'আরো কিছু দাও না দুঃখ আমায়',/ 'পারি না ভুলে যেতে, স্মৃতিরা মালা গেঁথে হারানো সেই পৃথিবীতে ডেকে নিয়ে যায়'/ সাগরের তীর থেকে মিস্টি কিছু হাওয়া এনে তোমার কপালে ছোঁয়াবো গো ভাবি মনে মনে ইত্যাদি।



জনপ্রিয় বহু গানের গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার স্মুতি চারন করলেন চঞ্চলা কিশোরী শাহনাজ বেগমের। শাহনাজের বড়ো ভাই সুরকার আনোয়ার পারভেজ ছিলেন গাজীর বন্ধু। (শাহনাজের আরেক ভাই জাফর ইকবাল ছিলেন জনপ্রিয় নায়ক ও গায়ক) সে সুবাদে শাহনাজদের বাসায় যেতেন। ফলে শাহনাজের অনেক গান গাজীর লেখা আর আনোয়ার পারভেজের সুরে।



মাত্র ১১ বছর বয়সে রেডিও এবং চলচ্চিত্রের গানে তাঁর যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। ১৯৬৪ সালে টিভিতে প্রথম গান করেন। সে হিসাবে সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে তাঁর পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হলো এবছর।



প্রতিটি গান গাইবার আগে গীতিকার সুরকারের নাম বলছিলেন তাঁরা। আনোয়ার পারভেজ ছাড়াও আলাউদ্দিন আলী, খান আতা প্রমুখের সুরে গান গেয়েছেন শাহনাজ। পাকিস্তানে থাকার সুবাদে করাচী টিভিসহ উর্দু ছবিতেও গান করেছেন। গান শিখেছেন গজল সম্রাট মেহেদী হাসানের কাছে।তাঁর একটি গানের সুরকারের নাম শুনে চমকে গেছি। সাগরের তীর থেকে গানটি জেবুন্নেসা জামালের লেখা (শিল্পী আঞ্জুমান আরা বেগেমের বড়ো বোন, শিল্পী জিনাত রেহানার মা)। এর সুরকার যে করীম শাহাবুদ্দিন এটা জানতাম না। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতগুনী ওস্তাদ করীম শাহাবুদ্দিন যে সুর করতেন এটা্ জানতাম না ! কি অসাধারন সে সুর !



সামিনার পর গাইতে উঠলেন শাহনাজ। পুরো হল তুমুল হাততালিতে মুখরিত। প্রথমে গাইলেন- একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়। বিবিসি জরীপে সেরা বিশটি গানের তিনটির একক শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ (http://www.sachalayatan.com/shohailmc/7066)। এটি তার একটি। এছাড়া আরেকটি গানের অন্যতম শিল্পীও তিনি। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা আনোয়ার পাভেজের সুরে জয় বাংলা বাংলার জয়। এটা ধরলে তিনি২০টির মধ্যে ৪টি গানের সাথে যুক্ত।



এরপর গাইলেন যে ছিলো দৃষ্টির সীমানায় যে ছিলো হৃদয়ের আঙ্গিনায়। গাইবার আগে বললেন, গানটি তিনি গাইতে চান না। শুনে অনেকে কান্নাকাটি করেন।



সব শেষে গাইলেন, এক তারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল। আমাকে তুই বাউল করে সঙ্গে নিয়ে চল।



শুনে অবাক হলাম ষাট বছর বয়সেও সে মাদকতাময় কণ্ঠ এখনো অমলিন। সেই অসাধারণ শক্তি। যে রকম জোর তাঁর মেয়ের বয়সী সামিনার গলায়ও পেলাম না !



শাহনাজরা বাংলা গানের সেই অনন্য সাধারন শিল্পীদের একজন যাদের গায়কীর স্বাতন্ত্র্য আর গানের আবেগের সাথে মিশে যাওয়া, শব্দ বুঝে উচ্চারণ কিংবদন্তীতে পরিণত। সামিনা বলছিলেন, সাগরের তীর থেকে গানে ‘’তীর’’ শব্দটি তিনি শাহনাজের মতো করে উচ্চারন করতে পারেন না বহু চেষ্টা পরও।



এ অনন্যা দীর্ঘজীবী হবেন এ কামনা করছি।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৭

শ্রীঘর বলেছেন: আমার শরীর কাটা দিচ্ছে। বেশ ভাল লাগল পড়ে। তাছাড়া এই দুজনকে আমি লালমাটিয়ায় দেখেছি আমার ছোটবেলায়।

২| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫০

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আমারও একই অনুভূতি হয়েছিলো।

৩| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৩

সুলতানা শিরীন সাজি বলেছেন:
কামাল ভাই

অনেক ছবি দেখলাম ফেইস বুকে।
শাহনাজ রহমতুল্লাহ আমার খুব প্রিয়।
আর সামিনা তো খুব কাছের বন্ধু আর প্রিয় শিল্পী।

ওদের দুজনের জন্য শুভকামনা।
বুঝতেই পারছি দারুণ একটা সন্ধ্যা কেটেছে গানে গানে।

ভালো থাকবেন।
শুভকামনা আপনাদের জন্য।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৮

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আসলেই দারুন একটা সন্ধ্যা কেটেছে। সাথে তিথিও ছিলো।

৪| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: দেশাত্নবোধক গানে তিনি আনপ্যারালাল।গত গভীর মমতা দিয়ে তার গান গুলো গেয়ে ওঠেন।আর তার কন্ঠে দারুণ শক্তি ওটা সহজেই উপলব্ধি করা যায়।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩৬

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৫| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৯

গানচিল বলেছেন: কামাল ভাই, কেমন আছেন?
ব্যস্ততার জন্য ব্লগে আজকাল তেমন একটা আসা হয়না,আর আপনার রুবাই ও পড়া হয়না।শাহনাজের লাইভ প্রোগ্রাম দেখেছেন শুনে আপনার প্রতি ঈর্ষা হচ্ছে।চোখের সামনে যেন দেখতে পাচ্ছি শাহনাজ গেয়ে চলেছেন "ফুলের কানে ভ্রমর এসে, স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর কিছু নেই, তোমার আগুনে পোড়ানো এ দুটি চোখে, এক নদী রক্ত পেরিয়ে, পারিনা ভূলে যেতে, আষাঢ় শ্রাবন এলে, বন্ধুরে তোর মন পাইলাম না, এই জীবনের মঞ্চে, আমি তো আমার গল্প বলেছি-------এরকম একের পর এক গান।আর আমি তন্ময় হয়ে এসব গান শুনছি।
শাহনাজের গান দিয়ে পোস্ট দেয়ার কথা আপনি অনেক আগে বলেছিলেন।আমি ভুলি নাই। আমার শাহনাজের পূরাতন গানের ভালই কালেকশন আছে। সেগুলো নিয়ে হাজির হতে একটু সময় চাইছি।
যাক,পোস্টে সামান্য একটু ভূল আছে। শাহনাজের ভাইয়ের নাম কিন্তু মাসুদ পারভেজ নয়।(মাসুদ পারভেজ অভিনেতা সোহেল রানার আসল নাম।) ওটা হবে আনোয়ার পারভেজ।অসামান্য একজন সুরকার।যিনি বছর কয়েক আগে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন। "তুমি সাত সাগরের ওপার হতে' এই মন তোমাকে দিলাম, আমি তো বন্ধু মাতাল নই, সে যে কেন এলোনা, আমি তো আজ ভূলে গেছি সবই, চঞ্চল হাওয়ারে (আয়রে মেঘ আয়রে) ইশারায় শীষ দিয়ে, গান নয় জীবন কাহিনী, হয় যদি বদনাম হোক আরও-----এরকম অসংখ্য কালজয়ী গানের সুরস্রষ্টা আনোয়ার পারভেজ।জীবদ্দশায় লোকটার কোন মূল্যায়ন তো হয়নি, মৃত্যুর আগে উনার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দানে কেউ এগিয়েও আসেনি। না সহকর্মী, না সরকার।অথচ একই লোকই কিনা " জয় বাংলা বাংলার জয়" গানটার সুরসৃষ্টি করেছিলেন, যা আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হবার কথা ছিল।মৃ্ত্যুকালে এজন্যই বুঝি রাগে ক্ষোভে, অভিমানে সবাইকে নিষেধ করে গিয়েছিলেন, সরকার যদি তাঁকে মরনোত্তর কোন পুরস্কার প্রদান করে তা যেন প্রত্যাখ্যান করা হয়।

সাগরের তীর থেকে" গানটার সুরকার সম্বন্ধেও একটু কনফিউজ আছি। আমি জানতাম গানটা সূর করেছিলেন এ,এইচ এম রফিক।শাহনাজ ছাড়াও জীনাত রেহানাও গানটা গেয়েছেন। নব্বই এর মাঝামাঝি মায়ের লেখা কিছু গানের সংকলন নিয়ে জীনাতের একটা ক্যাসেট বেরিয়েছিল। সেখানেও এ,এইচ এম রফিকের নাম উল্লেখ করা।কিন্তু করিম শাহাব উদ্দীনের নাম শুনে একটু ভাবনায় পড়ে গেলাম, আসল সুরকার তাহলে কে !

৬| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৪৬

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: নামটা ঠিক করে দিয়েছি। অনেক ধন্যবাদ। করীম শাহাবুদ্দিনের বিষয়টা যাচাই করা দরকার। আমি জিনাতের কণ্ঠেও গানটি শুনেছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.