![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পূর্বকথন
বাংলা সনেটের জগতে আল মাহমুদের ’সোনালী কাবিন’ র্শীষক ১৪টি সনেট সোনালী শস্যরূপে সুধীজনের কাছে বিবেচিত হয়ে আসছে। প্রায় ১৬ বছর আগে অধুনালুপ্ত পাক্ষিক শৈলী পত্রিকায় ৫টি র্দুদান্ত সনেট প্রকাশ করেছিলেন আল মাহমুদ। এগুলো তাঁর কোনো বইতে অন্তর্ভুক্কত করেছেন কিনা তা আমার জানা নেই। পুরনো পত্রপত্রিকা ঘাটতে গিয়ে সনেটগুলো আবার চোখে পড়লো। দুর্দান্ত সনেটগুলো আমাকে সোনালী কাবিনের আবহে নিয়ে যায়। সেগুলো আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
খনার বর্ণনা : সনেট পঞ্চক
আল মাহমুদ
১.
ঋতুর রহস্য গাই, এ দোষে কি কেটে নেবে জিব ?
তাহলে হে পুরুষেরা কাটো শত কবির রসনা,
নিয়মের মন্ত্র লিখি । লাক্ষণিক নক্ষত্রের দীপ
নারীর প্রেরণা হয়, তোমরা শোনো খনার বর্ণনা।
যে মাঘে বুকের মাংস গুটি বেঁধে হয়েছে স্তনন
তখন থেকেই জেনো নারী শেখে নিসর্গের ভাষা
আগাম ইশারা হয়ে ঝরে যায় খনার বচন
চাষার ঘামে ও কামে তড়পায় শস্যের পিপাসা।
নাক কান কেটে যদি কবিত্বকে খনা করে কেউ
প্রকৃতির প্রতিশোধ বজ্র হয়ে নামে শালিধানে;
অভাবের বাঘ আসে, ফেউ হাসে, বিড়ালীর মেউ
রাজার ভাঁড়ারে বসে প্রজাদের দুর্ভাগ্য বাখানে ।
যে দেশে কবির ঠোঁটে ছুঁচ দ্যায় রাজার সেপাই
সে মাটিতে মেঘবৃষ্টি প্রকৃতির ষড়ঋতু নাই।
২৯.৪.৯৭
২.
প্রকৃতির ছায়া আমি হে রাজন, আমিই সৃজন
মনুষ্যের শুক্র ধরি। বুঝি উষ্ণ বীর্যের বেদনা,
ধানে ও কাউনে বাঁচি রক্ষা করি চাষীর গোধন,
বরাহের পুত্রবধু মিহিরের ঠোঁটকাটা খনা।
মাঘের শেষের মেঘে আকাশের কাটোরা গড়ায়
তবু কেন বৃষ্টি নেই, নদী শুষ্ক, বলো কার পাপ ?
খনার গণনা বলে দেশ জ্বলবে দারুন খরায়,
ইঁদুরেরা তাজা হবে। রাজ্যে হবে চরের প্রতাপ।
ইঁদুর নিধনযজ্ঞে অঘ্রানের আগে মহারাজ
প্রতিটি শস্যের গর্তে ছ্যাঁকা দিতে পাঠাও মুনীষ,
তবেই পৌষের রাতে প্যাঁচাদের মসৃণ আওয়াজ
শোনা যাবে শালিখেতে শাখে শাখে দোয়েলের শিস্ ।
ভিটির উত্তরে গিয়ে কদলীর কান্ড রুয়ো রাজা
দক্ষিণে মূলার খেত, খোলা থাক ভাগ্যের দরোজা।
১.৫.৯৭
৩.
নারীর দেহের চেয়ে নম্য কিছু নেই পৃথিবীতে
সব শাস্ত্র ঘেঁটে শেষে হে জ্যোতিষী নারীতে আরাম;
রোহিনী তারার ওম একমাত্র নারী পারে দিতে
মাতাবধুকন্যা কহ, নারী এক রহস্যের নাম।
মেদিনীর সাথে শুধু স্ত্রীদেহের তুলনা সরস
সর্বংসহা তনুদেহা মানুষের তপস্যার ফল;
কৃষির আরম্ভে নারী, পশুরাও নারীতে বিবশ
নারী শক্তি, নারী স্বাহা, জ্ঞানীদের পিপাসার জল।
এহেন ধনের বাড়া রাজসভা কি দেবে পণ্ডিত ?
জ্যোতিষের ছকে ফেলে গুনে দ্যাখো কোন ধন সেরা,
স্ত্রীধনের অমঙ্গল ডেকে আনে খনার অহিত,
চারুবাকী রসনার চারিভিতে কাঞ্চনের বেড়া ?
তার চেয়ে মাঠে যাও, পড়ে গেছে বোশেখের বাও
আদার শিকড় রুয়ে বাঁশ বনে হলুদ লাগাও।
২.৫.৯৭
৪.
পান খাও হে পণ্ডিত কথা কও রসভরা ঠারে
না জানো ভেষজবিদ্যা সার কর শাস্ত্রের বচন;
পানের মহিমা বলি শোন স্বামী, খনার বিচারে
শাওন পানের মাস। এই লতা রাবনের ধন।
এই পান মুখে দিয়ে চার্বাকেরা বেদের বিরোধী
গুয়ার সোয়াদ চেখে পঞ্চমুখে ভজে ইহকাল;
তির্যক যুক্তিতে কাটে চতুর্বেদ, ব্রাক্ষ্মণের বোধি
বলে এ জগৎ সত্য আর সবই শূন্যের মাকাল।
খনা তো অনার্য কন্যা প্রকৃতির ঠোঁটর কাটা কবি
জমিনের গন্ধ শুঁকে ফলনের ভবিষ্য বাখানে;
পানের মর্তবা বলি, পানপাতা হৃদয়ের ছবি
দানবের শস্য পান। খনা জানে পানের কি মানে।
পান খান পণ্ডিতেরা কথা কন রসভরা ঠারে
না জেনে পানের মর্ম পান সেবে সব অবতারে।
৩.৫.৯৭
৫.
নারীর কামিনী দেহ যামিনীর তৃতীয় প্রহরে
আতর-চন্দনে লেপে যে পুরুষ একবার ছোঁয়,
নিখিলের নগ্নতাকে জেনো সে-ই আলিঙ্গনে ধরে
সৃজনের পঞ্চভূত তার সাথে একখাটে শোয়;
নিসর্গের নীতি মেনে এসো পতি, মেঘ বৃষ্টি গনি
জগতের উপকার জ্যোতিষের শাস্ত্রে লেখা নাই;
ঋতুর বৈচিত্র্যে কাঁপে লীলাবতী খনার ধমনী
মাটির মাহাত্ম্য গেয়ে এসো দোঁহে লাঙলে দাঁড়াই।
কিষাণের সোনা জেনো কার্তিকের কর্ষণের কাদা
কোদালে-কুড়ুলে মেঘে যদি ঢাকে আকাশের রং
রবি খন্দ ভরভর্তি, কি করবে রাজার পেয়াদা ?
এ জেনো কবির প্রজ্ঞা, নয় কোন শাস্ত্রের ভড়ং।
কার্তিকে কুয়াশা হলে জানো নাকি আমের মুকুল
ঝরে মরে পড়ে যায়। দুনো ফলে তাল ও তেঁতুল।
৭.৫.৯৭
কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
পাক্ষিক শৈলী, বর্ষ ৩ সংখ্যা ৯, ১৬ জুন ১৯৯৭, ২ আষাঢ় ১৪০৪
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১০
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আপনার মন্তব্যের সাথে একমত। অনেক ধন্যবাদ।
২| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৭
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: একজন অসামান্য প্রতিভা!
ভালো পোস্ট দিয়েছেন। প্রিয়তে নিয়ে গেলাম।
শুভেচ্ছা।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৭
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: প্রিয়তে নেবার জন্য ধন্যবাদ। আসলেই তিনি অসাধারণ প্রতিভাবান।
৩| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৩
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
আল মাহমুদ খুব কম পড়েছি,
আর এই কবিতাগুলো আজই পড়া হলো।
দারুন।
উনার কবিতায় উপমায় মুগ্ধ হবার কথা জেনেছি।
দৃশ্যপট দারুন ফুটিয়ে তুলেন তিনি।
ধন্যবাদ, ভাই।
এরকম শেয়ার আরো চাই।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৭
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। আল মাহমুদের অনেকগুলো কবিতা আমার প্রিয়। মাঝে মাঝে শেয়ার করার চেষ্টা করবো।
৪| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৭
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: পাক্ষিক শৈলী'র অনেকগুলো সংখ্যা আমার সংগ্রহে আছে। কি ভালো একটা পত্রিকা ছিলো। এখনকার যারা সাহিত্য পাতা বের করেন তারা এই পত্রিকার কথা জানেন কিনা জানিনা, তবে এর চেয়ে ভালো সাহিত্য পত্রিকা আমার চোখে পরেনি।
অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ মোস্তফা কামাল ভাই।
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩০
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আমার কাছেও অনেকগুলো সংখ্যা আছে। খুব ভালো কাগজ ছিলো। দেশ পত্রিকার সাথে পাল্লা দেবার চেষ্টা করতো।
৫| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪২
মাহমুদ০০৭ বলেছেন: কামাল ভাই , আপনি প্রিয় কবির সনেট শেয়ার করে একদম কামাল করে
দিলেন ! সোজা প্রিয়তে ।
এখনকার কালি ও কলম এবং বাংলা একাডেমীর উত্তরাধিকার এগুলা র মান কেমন মনে হয় আপনার কাছে ?
ভাল থাকুন কামাল ভাই , শুভকামনা নিরন্তর ।
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৬
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: প্রিয়তে নেবার জন্য ধন্যবাদ। কালি ও কলম আর উত্তরাধিকার নি:সন্দেহে ভালো সাহিত্য পত্রিকা।
৬| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪৫
এহসান সাবির বলেছেন: দুর্দান্ত সনেট..... ধন্যবাদ শেয়ার করবার জন্য।
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৭
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
৭| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২২
সুবিদ্ বলেছেন: যে দেশে কবির ঠোঁটে ছুঁচ দ্যায় রাজার সেপাই
সে মাটিতে মেঘবৃষ্টি প্রকৃতির ষড়ঋতু নাই।
দুর্দান্ত... ধন্যবাদ শেয়ারের জন্য
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৯
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৬
আমিনুর রহমান বলেছেন:
আল মাহমুদ এর কবিতায় ভিন্নতার ছোয়া থাকে সবসময়।
কামাল ভাই পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।