নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগের পর্ব-
Click This Link
ঢাকা নাকি Dhaka ?
ঢাকায় বাসা থেকে বের হলে মনে হবে আমরা ঢাকা নয় Dhaka শহরে বাস করছি। রাস্তার দুই পাশে তাকালে দেখা যায় সব দোকানপাট বাড়িঘরের নাম বাংলার বদলে ইংরেজিতে লেখা। কোনোখানে ইংরেজির সাথে অতি অবহেলায় এক কোনে চোখে পড়ে বাংলা লেখাটুকুর সলাজ উপস্থিতি। আরেকটা বেদনাময় কান্ড করি মাঝে মাঝে। দয়া করে নামটি বাংলা বর্ণে লেখা হলেও নামটি ইংরেজি ভাষায়। বাসের নাম ইংরেজিতে লেখা। টেলিভিশন চ্যানেলের নাম ইংরেজীতে। দু’একটা নাম বাংলায় থাকলেও সেটা ইংরেজি বর্ণেও লেখা হয়। কার জন্য এই ইংরেজি নাম ? সব অনুষ্ঠানতো বাংলা ভাষায়।
অথচ বাংলা ভাষার জন্য আমরা প্রাণ দিলাম, বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদের নামে আমরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করলাম। দুই বার রক্ত দিয়ে আমরা বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা থেকে রাষ্ট্রভায়ায় উন্নীত করলাম।
২৪ বছরের পরাধীনতার বিষয়ে আমরা ভালোভাবেই সচেতন থাকি। এটা খুব স্বাভাবিক এবং বাঞ্ছিত। কিন্তু ইংরেজের কাছে আমরা তার ৮ গুণ বেশি সময় পরাধীন ছিলাম। সেটা নিয়ে কমপক্ষে ৮ গুণ সচেতন থাকার কথা ছিলো। অথচ এত দীর্ঘ পরাধীনতার কথা আমরা ভূলে থাকি !
কেন থাকি ?
এর পেছনে আছে সাম্রাজ্যবাদের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র। পরাধীনতা ভুলিয়ে রাখার জন্য জন্য প্রতারণাময় প্রচারণা দিয়ে আমাদের সহজেই বিভ্রান্ত করে। আমাদের মনের মধ্যে খুব সূক্ষ্মভাবে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে, জীবনে উন্নতি করতে হলে তথাকথিত আন্তর্জাতিক (?!) ভাষা ইংরেজিতে খুব ওস্তাদ হতে হবে। প্রথম কথা হলো, আন্তর্জাতিক ভাষা নামে কোন ভাষা নাই। যেটা আদতে আছে সেটা হলো জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা। যাকে বলা হয় UN Language। জাতিসংঘের ভাষা হচ্ছে ৬টি- আরবি, চীনা,ইংরেজি(বৃটিশ বানানে),ফরাসি,রুশ এবং স্প্যানিশ। জাতিসংঘের ওয়েবসাইট খুললেই দেখা যায় ওয়েব সাইটের ওপরের দিকে ৬টি ভাষাই লেখা আছে। জাতিসংঘের সব কাজে এর সব ক’টি ভাষাই ব্যবহৃত হয়। (Click This Link )।
আমাদের সামনে ইংরেজিকে যতো বিশাল আকারে তুলে ধরা হয় ইংরেজির দুনিয়া কি আসলেই এতো বড়ো ? মোটেও না। ইংরেজির দাপটের কারণ বৃটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি। বৃটিশ সাম্রজ্যের পতনের পর সাবেক বৃটিশ উপনিবেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক আর সামরিক প্রভাবের জন্যই ইংরেজিকে শক্তিশালী বলে ভ্রম হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দাপ্তরিক ভাষার তালিকায় চোখ রাখুন (Click This Link) খোদ যুক্তরাজ্যের দিকেই তাকান। সেখানেও দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে শুধু ইংরেজির নাম নেই। তালিকায় বাংলার কথা উল্লেখ না থাকলেও বাস্তবে লন্ডন শহরের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী বাংলায় কথা বলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোন স্বীকৃত দাপ্তরিক ভাষাই নেই। সরকারি দপ্তরে ইংরেজি ব্যবহৃত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে। লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্য ফরাসী ভাষাভাষী। যুক্তরাষ্ট্রে শতাধিক বছর ধরে ইংরেজিকে একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা ঘোষণার জন্য আন্দোলন চলছে। (Click This Link)
যুক্তরাজ্য আর যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বৃটিশ ডমিনিয়ন কানাডা (ইংরেজির সাথে ফরাসিসহ আরো ১০টি দাপ্তরিক ভাষা), অস্ট্রেলিয়া (ইংরেজি ব্যবহৃত হলেও তার দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি নেই) আর নিউজিল্যান্ড (ইংরেজির সাথে আরো ৫টি ভাষা) ইংরেজির প্রভাব আছে। আর যে সব দেশে ইংরেজি আছে সেগুলো দেশ হিসাবে খুব পরিচিত নয়, প্রভাবশালীও নয়।
প্রকৃতঅর্থে সব চেয়ে বেশি দেশে ব্যবহৃত হয় আরবি ভাষা। এরপর সংখ্যার দিক থেকে বেশি ব্যবহৃত হয় স্প্যানিশ ভাষা। স্পেন, পুরো দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ (ব্রাজিল ছাড়া) এবং আফ্রিকার অনেক দেশে স্প্যানিশ ব্যবহৃত হয়। তালিকায় এরপর আছে ফরাসি ভাষা। জনসংখ্যার বিচারে চীনা ভাষায় সবচেয়ে বেশি মানুষ কথা বলে। চীনে দাপ্তরিক ভাষার তালিকায় দেখা যায় স্টান্ডার্ড চীনা ভাষার সাথে আছে আরো ৫১টি ভাষা।
ভাষার তালিকায় এতো ভাষার প্রাচূর্যের কারণ মাতৃভাষার প্রতি পৃথিবীর মানুষের তীব্র, অন্ধ ভালোবাসা। মানুষ মাতৃভাষাই ব্যবহার করছে। বিশ্বায়নকে স্বীকার করলেও বিশ্বায়নের নামে কেউ নিজের ভাষা ছাড়তে রাজী নন। এটা জানার জন্য বিমান ভাড়া খরচ করে দুনিয়া ঘোরার দরকার নেই। এ বছর ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত দুনিয়া কাঁপানো ফুটবল বিশ্বকাপ হয়ে গেছে। গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ছাড়া আর কোন অনুষ্ঠানেরই এরকম বৈশ্বিক প্রভাব নেই। সেখানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, নেদারল্যান্ডস, জার্মানীর মতো দেশের কোন কোচ বা খেলোয়াড় টিভি ক্যামেরার সামনে বা সাংবাদিক সম্মেলনে ইংরেজিতে কথা বলেননি। মাতৃভাষায় কথা বলেছেন। বিবিসি,সিএনএন বা আলজাজিরায় সংবাদ দেখলেই দেখবেন মানুষ যখন সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন তখন মাতৃভাষাতেই দিচ্ছেন। সাংবাদিক সেটার ইংরেজি তরজমা শুনিয়ে দেন। বেশির ভাগ লোক ইংরেজি বলার চেষ্টাই করেন না।
অল্প কিছু দেশ ভ্রমনের সুযোগে দেখেছি সবাই মাতৃভাষায়ই কথা বলেন। বিদেশী হিসাবে ইংরেজি দিয়ে ভাব প্রকাশের চেষ্টা করি। তারা কোনমতে আমাদের সাথে ভাঙাচোরা ইংরেজিতে কথা সেরে নেয়। সৌদি আরবে যখনই কারো সাথে ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করেছি তখনই দেখেছি তারা আরবিতে জবাব দিতে আরম্ভ করেছেন। জেদ্দা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে শুনেছি, যখনই লোকজন লাইন ভেঙে এগুতে গেছে পুলিশ অফিসার জোরে জোরে আরবিতে বলছেন-ওয়াহিদুন ! ওয়াহিদুন ! তার মানে এক জন করে আসুন। জেদ্দা, মক্কা বা মদিনায় বরং বাংলাতেই কাজ সেরেছি। কারণ ওখানকার পথেঘাটে, দোকানে, হোটেলে বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ। তাঁরাই আমার হয়ে আরবিতে কথা বলে কাজ উদ্ধার করে দিয়েছেন।
তাই আমাদেরও উচিৎ মাতৃভাষার প্রতি বিশ্বস্ত থাকা। আমরা যদি মাতৃভাষা বাংলায় কথা না বলি, সব কাজে বাংলা ব্যবহার না করি তাহলে সেটা হবে অস্বাভাবিক। কারণ বিশ্ব চলে মাতৃভাষায়। অন্যদিকে সেটা শুধু ভাষা শহীদদের প্রতি অবমাননা নয়, মুক্তিযুদ্ধের প্রতিও অবমাননা। কারণ বাংলা ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের আলোকেই আমরা স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছি।
পাদটীকা:
ইংরেজি জানার সাথে আর্থিক উন্নতির আসলেই কোন সম্পর্ক নেই। ইউরোপে ইংল্যান্ড ছাড়া আর কোথাও ইংরেজি নেই। জার্মানী, ফ্রান্স, ইতালিসহ পুরো ইউরোপই বিশ্বের মধ্যে অর্থ বিত্ত আর জ্ঞান বিজ্ঞানে সব চেয়ে উন্নত। ইংরেজি ব্যবহার না করার কারণে কারো উন্নতিই আটকে থাকেনি। বরং বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশ ইংরেজদের চেয়ে বহু আগেই উন্নতি করেছে।
ইংরেজি শিখলেই যদি উন্নতি করা যেতো তাহলে আফ্রিকাই হবার কথা সব চেয়ে উন্নত মহাদেশ। কারণ তারা মাতৃভাষার চেয়ে সাবেক প্রভুদের ভাষা ইংরেজি, ফরাসি বা স্প্যানিশ বেশি ব্যবহার করছে। তাদের ইংরেজ প্রভুরাই তাদেরকে ভালোবেসে (!) নাম দিয়েছে অন্ধকার মহাদেশ।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০০
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আসলে ইংরেজির প্রতি আমাদের যে অন্ধভক্তি তৈরি করা হয়েছে এই কুসংস্কার ভাংতে বহু সময় লাগবে। তবে এ কুসংস্কার দূর না হলে আমাদের প্রকৃত উন্নতি সম্ভব হবে না।
২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৯
আদম_ বলেছেন: ভালো পোস্ট। সেই সাথে অন্ধবিন্দুর সাথে সহমত। আমরা সামুতে ওয়ান টাইম বিনোদন খুজি........
আমিও এ বিষয়ে কিছু একটা লিখবো বলে বহুদিন ধরে ভাবছি।
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২২
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনিও লিখুন আপনার ভাবনার কথা। কারণ এ নিয়ে প্রচুর আলোচনা দরকার। দীর্ঘ ঘুম ভাঙাবার জন্য জোর প্রয়াস দরকার।
ভালো থাকবেন।
৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২৬
লাবনী আক্তার বলেছেন: তাই আমাদেরও উচিৎ মাতৃভাষার প্রতি বিশ্বস্ত থাকা। আমরা যদি মাতৃভাষা বাংলায় কথা না বলি, সব কাজে বাংলা ব্যবহার না করি তাহলে সেটা হবে অস্বাভাবিক।
সহমত। খুব সুন্দর একটা পোস্ট।
এত ভালো পোস্ট অথচ কমেন্ট কেন কম? খুব দুঃখজনক ব্যাপার।
আপনি সবসময়ই ভালো লিখেন ভালো লাগে অনেক। অনেক কিছু শিখতে পারি, জানতে পারি। ভাইয়া অনেক অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।
১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪৪
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৭
অন্ধবিন্দু বলেছেন:
কামাল,
মূল্যবান ভাবনা তবে যথারীতি পাঠকের আগ্রহ নাই। পরাধীন/ভিখারি আমরা হবো,না-হবে টা কে ?