নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে...

C:\Users\asusmobile\Desktop\FF.jpg

কেএসরথি

ভালো আছি, ভালো থেকো...আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো!

কেএসরথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার বিদেশ ভ্রমন - ৪ - কুয়েত

২৪ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৫৭

আমার বিদেশ ভ্রমন - ৩ - উড্ডয়ন ও অবতরন



..সে প্রায় ১৬-১৭ বছর আগেকার কথা। লেখি লেখি করেও আর লেখা হয়নি। তো আজ ভাবলাম - লেখা শুরু করি, দেখি কতদূর যাওয়া যায়...



কুয়েতে এয়ারপোর্টে প্লেন ল্যান্ড করল দুপুরের একটু পরে। হাতে একগাদা চটের বস্তা টাইপ ব্যাগ। কুয়েতে আসছিলাম ১ মাসের জন্য। এই অল্প কদিনের জন্য এত কেজি কেজি জিনিসপত্তর আনার মানে কি? নিজেদের জিনিসতো আছেই, মানুষের জন্যও আনা হয়েছে। যেই শুনেছে যাচ্ছি, কিছু না কিছু গছিয়ে দিয়ে গেছে - "আমার ভাই থাকে ওর জন্য সামান্য কিছু জামা কাপড় দিব, আর কিছু না" - প্লেন ওঠার আগের রাত্রে এসে কাঠাল সাইজের এক পোটলা নিয়ে হাজির, কম করে হলেও পাচ কেজি হবে। তখন তো আর এসব লাগেজে ঢোকানা যাচ্ছেনা। ফলাফল সব হাতে বহন করতে হলো আমাকে।







যাই হোক দুই হাতে দুই পাটের ব্যাগ নিয়ে এদিক ওদিক চাইতে চাইতে এগিয়ে যাচ্ছি। আমার মা মহা বিরক্ত, তার মতে বিদেশ আসার মতো জঘন্য কাজ আর নেই। আমার ছোট ভাই দুইহাত কচলাতে কচলাতে আগাচ্ছে, যেন ভাবছে "এইবার আইসা পড়ছি - সব চকলেট খেয়ে শেষ করে ফেলব"।



খুব একটা বড় বিমানবন্দর না, তাও খুব হিমশিম খাচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত একটা জায়গায় এসে দাড়ালাম (আমাদের যেমন ইমিগ্রেশন গেট আছে) - কাচ দিয়ে ঢাকা, ওপাশে অনেক মানুষ হাটাহাটি করছে। হঠাৎ দেখি ভিড়ের মাঝে আব্বু হাত নাড়ল। আমি শান্তি পেলাম, যাক ঠিক জায়গা মতো এসে দাড়িয়েছি।



এরপর ইমিগ্রেশন লাইনে দাড়ালাম। একে একে আম্মুর, আমার ভাইয়ের পাসপোর্ট চেক করে সিল মারল। আমার পাসপোর্ট দেখল, ভালো করে দেখল, তারপর বলে "ইউ ওয়েত"। আমি ভাবি 'একি'! ওদের ছেড়ে দিয়ে, আমাকে আটকায় কেন! আর আমারও কপাল সবজায়গায় খাই ধরা :P ইমিগ্রেশন অফিসার একবার পাসপোর্ট দেখে, একবার কম্পিউটার স্ক্রিন। একবার ভিসা চেক করে, একবার আমার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকায় যেন আমি কোন ক্রিমীনাল। তারপর আমাকে দাড় করিয়ে রেখে সে আমার পাসপোর্ট নিয়ে ভিতরের একটি রুমে চলে গেলেন। আমার বাবা কাচের দেয়ালের ওপাশ থেকে আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন। এদিকে আমার মা জননী দেখি ঠায় হয়ে দাড়িয়ে আছেন, যেন আমি কুয়েতে না ঢুকতে পারলে, পরের বাসে করে আমার সাথে উনিও ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন।



একটু পর দেখি সেই অফিসার বের হয়ে এল, এসে আরাম মতো বসে আমার ভিসার ওপর একটা নম্বর লেখল। আর তার কিছুক্ষন পর আমাকে পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে চিৎকার করে বলল "নেক্সট"!



পরিবারের সবার সাথে এয়্যারপোর্ট হতে বের হয়ে আসলাম। সব চক চক করছে, যেন প্রতি ক্ষনে ক্ষনে কেউ এসে ন্যাকড়া দিয়ে মুছে দিয়ে যায়। আপনারা যখন যাবেন, তখন দেখবেন এই ব্যাপারটা সবার আগে চোখে পড়বে। হয়ত আমরা চারদিকে ময়লা-আবর্জনা দেখতে দেখতে এতটাই অভ্যস্থ আর তাই পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা আমাদের চোখে ধরা পড়ে সবার আগে।



যাই হোক বের হয়ে দেখি চমৎকার একটা লাল জীপ। আমার ভাই তো খুশিতে বলে উঠল "এটা আমাদের গাড়ী?"। কুয়েত সরকারের গাড়ী এত খুশী হয়ে লাভ নাই :P এমন গাড়ীতে আগে কখনও ওঠা হয়নি যদিও। গাড়ীতে ওঠে ফুল স্পীডে এসি ছেড়ে দিয়ে রওনা হলাম।







আর গাড়ীর গতি দেখি বাড়ছে তো বাড়ছেই আর মাথার ওপর দিয়ে ব্রীজ-ওভারব্রীজ সব সাই সাই করে পেছনে ছুটে যাচ্ছিল, কোনদিক কি হচ্ছিল কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি, শুধু এতটুকু বুঝেছিলাম চারদিকে শুধু পাথর আর ধুলার রাজ্য। এর মাঝে কার্পেটের মতো বিছানো রাস্তা।







কিছুদুর পরপরই চোখে পরছিল ব্যাঙের ছাতার মতো কিছু ইমারত - পানির ট্যাংকি! এই জিনিসগুলো কিছুক্ষন পরপরই দেখতে পাচ্ছিলাম। আমাদের পানি নিয়ে এত সমস্যা তারপরও আমরা পানি নিয়ে এত পাগলামি করি না, ওরা যতটুকু করে। কারন হতে পারে, আমরা পানিকে অধিকার মনে করি, আর ওরা মনে করে প্রাচুর্য্য।







রাস্তার মাঝে খেজুুরের গাছ। প্রতিটা গাছের গোড়াতেই পাইপ দেখা যাচ্ছে। মনে হলো "ব্যাটারা পাগল নাকি? তাদের দেশের প্রতিটা গাছের নিচেই কি পাইপ দিয়ে পানি দেয়া সম্ভব?"। পরে জেনেছি সেটাই তারা করেছে। ওদের ওখানে গাছের খামার আছে। যেখানে একটি গাছকে পরিচর্যা করে বড় করে তোলা হয়, তারপর সেটাকে তুলো এনে শহরের বিভিন্ন স্থানে রোপন করা হয়। যেহেতু গাছগুলোকে একবার মাটি থেকে তোলা হয়েছে, খুবই নিবিড় পরিচর্যা ছাড়া এইগাছগুলো বেচে থাকবেনা। তাই বলতে গেলে সব গাছের আশেপাশেই পাইপ দিয়ে পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।







সব রাস্তা দেখতে একই রকম। সব গাছপালা, সব বাড়ী ঘর দেখতে একই রকম। হঠাৎ দেখলে মনে হয় কোন ধাধার মাঝে পড়ে গেছি। রাস্তাতো আর কিছু চিনি না তখন, এদিক ওদিক করে শেষ পর্যন্ত গাড়ী এসে দাড়াল একটা এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর সামনে। দোতলা তে ছিল আমাদের বাসা। বাসায় ঢুকে দেখি খাবার টেবিলে কম করে হলেও ৫০ টা স্নিকারস আর কিটক্যাট পড়ে আছে। আমি আর আমার ভাই পারলে তখনই গাপগাপ করে সব গিলে ফেলি :P নাহ গিলি নাই, ভদ্র ছেলে তো।







একটু ফ্রেশ হয়ে টিভি ছাড়লাম দেখি সব "আওলা হাওলা ইয়া গাওলা" চলতেছে, আর ফুটবল। কয়েক চ্যানেল পরপরই ফুটবল। বিভিন্ন দেশের, ওদের নিজেদের ক্লাব ফুটবল, আর ধারা ভাষ্যকার দের চিরচেনা চিৎকার "গোওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওললল"। যারা শুনছেন তারাই বুঝবেন আমি কোন চিৎকারটার কথা বলতেছি ;)



রাতে ছিল আব্বু এক কলিগের বাসায় দাওয়াত। শুরু হইসে, কুয়েতে আমি যে ৩০ দিন ছিলাম, তার মাঝে বাসায় খাওয়া হয়েছিল মনে হয় ৭ দিন। আর বাকী সব দিনই ছিল কারো না কারো বাসায় অথবা রেস্তোরাতে খাওয়া-দাওয়া। দাওয়াতের উদ্দেশ্যে বের হয়েছি তো শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। আসলেই শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল - তাপমাত্রা নেমে গেছে। একি কান্ড কয়েক ঘন্টা আগেও তো উনুনের তাপ ছিল, আর এখন ফ্রিজের বাতাস বইছে। কি আর করা গাড়ীতে চেপে রাতের কুয়েত দেখতে দেখতে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।





ছবি: গুগুল

(চলবে)




******************************************

আমার বিদেশ ভ্রমন - ১ - পূর্বকথা

আমার বিদেশ ভ্রমন - ২ - আকাশে উড়াউড়ি

আমার বিদেশ ভ্রমন - ৩ - উড্ডয়ন ও অবতরন

******************************************

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:২৩

এম এম কামাল ৭৭ বলেছেন: দারুন। ভ্রমন কথা সব সময়ই আমার প্রিয়।

২| ২৪ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:২৬

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: "গোওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওললল"। যারা শুনছেন তারাই বুঝবেন আমি কোন চিৎকারটার কথা বলতেছি

আমি শুনছি.... ;) চরম বিনোদনের জিনিস এই শব্দ।

ভ্রমন কাহিনী ভালো লাগছে। সাথেই আছি।

৩| ২৪ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৫১

আরিফুর রহমান বাবুল বলেছেন: পড়ে ভাল লাগলো, তবে আমার কিছু প্রশ্ন, তা হলো, যে লাল গাড়ির ছবি দিয়েছেন আর যেই রাস্তায় গাড়ির ছবিটা তুলা, এই রাস্তাটাও কি কুয়েতের?? যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে জানাবেন কি এই রাস্তাটা কোথায়? আর হলো, আমার জানামতে, যেই পানির ট্যাংকি গোলির ছবি আপনি দিয়েছেন, আসলে তা পানিের ট্যাংকি না। আপনি পারলে আরো একটু ভাল করে জানবেন। ধন্যবাদ সুন্দর করে লেখার জন্য।

২৪ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:০৪

কেএসরথি বলেছেন: নাহ ওটা গুগল থেকে গাড়ীটার মডেলটা দিয়েছি।
১৯৯৬ জীপ চেরকী।

আর আমি তো পানির ট্যাংকি বলেই জানতাম ওগুলোকে।

৪| ২৪ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৫২

আরিফুর রহমান বাবুল বলেছেন: পড়ে ভাল লাগলো, তবে আমার কিছু প্রশ্ন, তা হলো, যে লাল গাড়ির ছবি দিয়েছেন আর যেই রাস্তায় গাড়ির ছবিটা তুলা, এই রাস্তাটাও কি কুয়েতের?? যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে জানাবেন কি এই রাস্তাটা কোথায়? আর হলো, আমার জানামতে, যেই পানির ট্যাংকি গোলির ছবি আপনি দিয়েছেন, আসলে তা পানিের ট্যাংকি না। আপনি পারলে আরো একটু ভাল করে জানবেন। ধন্যবাদ সুন্দর করে লেখার জন্য।

২৪ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:০৬

কেএসরথি বলেছেন: খুজে দেখলাম ওগুলো পানির ট্যাংকী।

এগুলো কে বলা হয় "mushroom towers" অর্থাৎ ব্যাঙের ছাতা টাওয়ার।

৫| ২৫ শে জুন, ২০১৪ ভোর ৬:১৪

কামরুল ফারুকি বলেছেন: khub valo laglo jene...valo thakun ai kamona.

২৮ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৫৪

কেএসরথি বলেছেন: সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৬| ২৭ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:০৮

আরিফুর রহমান বাবুল বলেছেন: জ্বী ভাই, কুয়েতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পানি ট্যাংকী দিয়ে পানি দিয়ে আসে। তাই পানির ট্যাংকির কোন প্র্য়ুযন হয়না। আমি কুয়েতে ১২ বছর ছিলাম। আমি গিয়েছিলাম ১৯৯৭ সনে।

২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:০০

কেএসরথি বলেছেন: ভাই আমি বেড়াতে গিয়েছিলাম ৯৬ তে। এগুলোর এক একটি ৩০০০ কিউবিক মিটার পানি ধারন করে। এইরকম ৩০টির উপর পানির টাওয়ার আছে - সব মিলিয়ে ১লক্ষ কিউবিক মিটারের উপর পানি ধারন করছে।

আপনি "কুয়েতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পানি ট্যাংকী দিয়ে পানি দিয়ে আসে" বলে কি বুঝাতে চাইলেন বুঝলাম না।

এই পানি গুলো কোথা থেকে আসে?

৭| ২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৫

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: ব্লগে ছিলাম না বেশ কদিন, তাই দেরীতে দেখা....

চমৎকার বর্ণনায় এবং সুন্দর উপস্থাপনায় মুগ্ধপাঠ্য ...
ভালোলাগা(৩য়+) জানিয়ে গেলাম...
শুভকামনা নিরন্তর ...

২৮ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:১৮

কেএসরথি বলেছেন: সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ মুনতাসির।

৮| ১৬ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৯

কালীদাস বলেছেন: ভালই।
চলুক :)

২০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:০২

কেএসরথি বলেছেন: ধন্যবাদ কালীদাস। :)

৯| ১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৫৪

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আমি ভাই এদেশেই আছি ২২বছর ধরে।।
আগের রাত্রে এসে কাঠাল সাইজের এক পোটলা নিয়ে হাজির,আপনার ভাগ্য ভাল তাই কাঠাল আর আনতে হয় নি। যা আমাকেও আপনার মত বিপদে পরে আনতে হয়েছিল।
এয়ারপোর্ট রোড,ফরওয়ানীয়ার রোড,আর পানির ট্যাংকি গুলি যেন ছবিতে ভেসে উঠেছে।।

২০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:০৫

কেএসরথি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সচেতনহ্যাপী।

১০| ২৯ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:২৪

এহসান সাবির বলেছেন: ঈদের শুভেচ্ছা রইল।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৫৫

কেএসরথি বলেছেন: অনেক অনেক শুভেচ্ছা এহসান ভাই!

১১| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৫২

জল কনা বলেছেন: ^_^ ভাইয়া পরের পর্ব এর অপেক্ষায়!! :-/
তা-তাড়ি লিখেন :P

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৫

কেএসরথি বলেছেন: এই সিরিজটা থামিয়ে নতুন একটা সিরিজ লিখছি। :)

১২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫৩

ইমরান আশফাক বলেছেন: একদমে ৪টি র্পব পড়লাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.