![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কেমন সেটা আমি নিজেই জানি না । বোঝার চেষ্টা করছি । মানুষের কষ্ট দেখতে পারি না!! স্বপ্ন এর ব্যাপারে আমার অতিরিক্ত পক্ষপাত আছে । নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে না পারলেও আমি সব সময় অন্য কারো স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করি । আমি খুব ই আবেগি । এতো টা আবেগ মানুষের থাকা উচিৎ নয় । মাঝে মাঝে মানুষ কে নির্মল আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করি । রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ভাল লাগে । চা- কফি এর প্রতি একটা আলাদা টান আছে । এই জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছি তার সাথে অনেক কিছুই হারিয়েছি । অতীত কে মনে রাখি । পৃথিবীর সবাইকে সুখি দেখতে চাই ।
আজ সকাল থেকেই শ্রেয়সী খুব উত্তেজিত । কল্যাণ বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর থেকেই সে ব্যাপার টা টের পায় । শ্রেয়সী আর কল্যাণ এর দাম্পত্য জীবন ৮ বছরের । এর মধ্যে তাদের একটা বাচ্চা মারা যায় । এর পর থেকেই বাচ্চা দের প্রতি শ্রেয়সী অনেক টান অনুভব করে । পাশের বাসার বাচ্চা টা কে সে ই দেখাশোনা করে বলতে গেলে!! এখন তার নিজের বাচ্চা হবে এটা চিন্তা করেই সে খুব সুখ পাচ্ছে । একি সাথে সে ভয় ও পাচ্ছে, কল্যাণ এর এখন কোন কাজ কর্ম নেই । বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । এই টানাটানির সংসারে নতুন আরেকটি মুখের খরচ বহন করতে তারা পারবে তো!
শ্রেয়সী অনেকবার কল্যাণ কে বলেছে, তাকে একটি কাজ খুঁজে দেওয়ার জন্য । কিন্তু কল্যাণ এর এক কথা সে বেচে থাকতে শ্রেয়সী কে কখনো কাজ করতে দিবে না । ভালবেসে কল্যাণ বিয়ে করেছিল শ্রেয়সী কে । শত অভাব অনটনের মধ্যেও তাদের সে ভালোবাসা এখন ও অটুট আছে ।
শ্রেয়সী নিজের এক তলা টিনশেড এর ভাড়া বাসার রুম এ গিয়ে শুয়ে পরল । দুপুরে রান্না করা দরকার । কিন্তু ঘরে একদানা চাল ও নেই । কল্যাণ কখন আসবে কে জানে?? শুয়ে শুয়ে অনেক কথা চিন্তা করতে লাগলো সে । কল্যাণ । কলেজ এ একদম ই আলাদা একটা ছেলে ছিল । অন্য কোন ছেলের সাথে সে কখনো কল্যাণ কে তুলনা করতে পারে নি । অসম্ভব মেধাবী ছাত্র ছিল কল্যাণ । শ্রেয়সী ই আগে প্রপোজ করেছিল কল্যাণ কে । কল্যাণ সেদিন কিছুই বলে নি । কিন্তু পরদিন কলেজ এ ক্লাস শেষ করে কল্যাণ একটা চিঠি দেয় তাকে । তার পর থেকেই শুরু তাদের পথচলা । কল্যাণ এর ভবিষ্যৎ এমন হওয়ার কথা ছিল না । কিন্তু কল্যাণ এর বাবা শ্রেয়সী কে মানতে না চাওয়ায় সে আলাদা সংসার পেতেছে । বাবা মায়ের সাথে এখন তাদের কোন সম্পর্ক নেই । কল্যাণ তার পরে একদিন ঘোষণা করল যে, বাবার টাকা দিয়ে আমি যা বিদ্যা অর্জন করেছি তা খরচ করে আমি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে না । ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল কল্যাণ এর । সেই গান কেই এখন জীবিকা'র মাধ্যম হিসেবে গ্রহন করেছে সে। যদিও সে কোথাও থিতু হতে পারছে না । তাকে অনেক গুলো কাজ ছেড়ে দিতে হয়েছে একমাত্র তার নাক উঁচু স্বভাবের কারনে । এখন আবার কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছে সে । কোন টিউশুনি কিংবা কোন প্রোগ্রাম এ গান গাওয়ার সুযোগ যদি পাওয়া যায় । তিন মাসের ঘর ভাড়া বাকি পরে আছে । বাড়ির মালিক প্রতিদিন একবার করে আসছেন ।
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ সে কল্যাণের গলা শুনল । এইত কল্যাণ বাসায় ঢুকল । ঘেমে নেয়ে অবস্থা কাহিল । আর এই একটি মাত্র শার্ট ছাড়া আর তেমন কোন ভাল পোশাক ও তার নেই । কল্যাণ কে বসতে বলে শ্রেয়সী বেরিয়ে গেল ঠাণ্ডা পানি আনার জন্য । পাশের বাসার ভাবি কে গিয়ে বলল, ভাবি একটু ফ্রিজ এর ঠাণ্ডা পানি দেওয়া যাবে? যাকে বলা হল তিনি যথেষ্ট বিরক্ত হয়ে বললেন যে, ঠাণ্ডা পানি নেই। তবে তার দিকে তাকিয়ে শ্রেয়সী বুঝল যে ঠাণ্ডা পানি আছে কিন্তু তাকে দেওয়া হবে না। সে কলে গেল পানি আনতে । অনেকক্ষণ চেপে সে একটু ঠাণ্ডা পানি উঠিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো কল্যাণ এর জন্য । তার খুব কান্না পেয়ে গেল । সময়ে সময়ে তার মনে হয় তার জন্যই বুঝি কল্যাণ এর আজ এই অবস্থা!!
এই সময় সে তার পেটে অনাগত মানুষটির উপস্থিতি আরেকবার টের পেল । সে কল্যাণ কে পানি তা দেওয়ার সাথে সাথেই কল্যাণ এক চুমুকে পানি শেষ করল । শ্রেয়সী কি বলে শুরু করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না ।
শোন, শ্রেয়ান আসছে?
-শ্রেয়ান কে?
আরে তোমার মনে নেই যে তুমি বলেছিলে আমাদের পরে আর একটি বাচ্চা হলে তুমি শ্রেয়ান নামে রাখবে । সে ছেলে হোক আর মেয়ে হোক!
-হ্যাঁ বলেছিলাম । কিন্তু এখন সে কথা উঠছে কেন??
আমাদের বাবু আসছে । বলেই শ্রেয়সী খুব লজ্জা পেয়ে গেল ।
আর কল্যাণ এর মুখ গম্ভীর হয়ে গেল । তার দিকে চোখ পরতেই শ্রেয়সী নিজেকে সামলে নিল ।
এই তুমি খুশি হউ নি??
- না। কথা সেটা না। এখন আমাদের যে অবস্থা তাতে আমরা আরেকজন কে কিভাবে আমাদের মধ্যে আনব?
আরে তুমি এতো চিন্তা করো না তো! একটা না একটা ব্যাবস্থা হবেই । আচ্ছা আমি একটা কাজ করি না!!
-দেখ, তুমি এই কথাটা আর কখনই আমার সামনে বলবানা । আমি বেচে থাকতে তোমাকে কখনই কাজ করতে দিব না । তাহলে আমার নিজেকে ব্যর্থ মানুষ বলে মনে হবে ।
তো এখন কি করব??
- তুমি বাচ্চা টিকে এবরশন করে ফেল
কি বলছ কি তুমি??
- যা বলছি টা আমাদের ভালোর জন্যই বলছি ।
শ্রেয়সী কান্নায় ভেঙ্গে পরে । সে বলতে থাকে যে না আমি আমার বাবু কে ফেলতে পারব না । যতো কষ্টই হোক আমি আমার বাবু কে পৃথিবীর আল দেখাবই ।
-তুমি একটু বুজতে চেষ্টা করো ।
না। আমি কোন কিছু বুঝতে চাই না । আমার এক কথা । আমি আমার বাবু কে যে করেই হোক পৃথিবীর আলো দেখাব ।
কল্যাণ বুঝল এখন আর কথা না বাড়ানোই ভাল । সে আর কোন কথা বলল না । ছুপছাপ শুয়ে পড়ল ।
রাতে কল্যাণ শ্রেয়সী কে কি বুঝাল টা সে ই ভাল জানে । পরদিন সকালে কল্যাণ এর সাথে শ্রেয়সীকেও বের হতে দেখা গেল তার শতছিন্ন প্রায় আটপৌরে শাড়ি টা পরে । কল্যাণ এর হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে শ্রেয়সী যেন এই হাত টা কে সে আর কোনদিন ও ছাড়বে না । স্রেয়শির চোখের কোণে মুক্তোর দানার মত পানি জমতে দেখা গেল । কিন্তু এই পানি সুখের না দুখের টা জানার বা জানতে চাওয়ার মত কারো সময় নেই এই ব্যস্ত শহরে.........
©somewhere in net ltd.