![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার একটি দীর্ঘ ও ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস রয়েছে। অতি প্রাচীন কাল থেকে উপমহাদেশে স্থানীয় সরকারের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়। সাধারণত স্থানীয় সরকার বলতে এমন জনসংগঠনকে বুঝায় যা অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ভৌগোলিক সীমা রেখায় একটি দেশের অঞ্চল ভিত্তিতে জাতীয় সরকারের অংশ হিসেবে কাজ করে। স্থানীয় কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমম্বয়ে গঠিত সংস্থাকে স্থানীয় সরকার বলা হয়। জাতীয় সরকারের মত স্থানীয় সরকার সার্বভৌম কোন প্রতিষ্ঠান নয়। জাতীয় সরকার বিভিন্ন সার্কুলার ও নির্দেশের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। স্থানীয় সরকার নির্দিষ্ট এলাকার কর, রেট, ফিস, টোল প্রভৃতি নির্ধারণ ও আদায়ের ব্যাপারে জাতীয় সরকারের নির্দেশ অনুসরণ করে থাকে। ব্রিটিশ শাসন আমলের পূর্বে প্রাচীন ও মধ্য যুগীয় আমলে খ্রীষ্ট পূর্ব ১৫০০-১০০০ অব্দে গ্রাম পরিষদের উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া খ্রীষ্ট পূর্ব ৩২৪-১৮৩ অব্দে মৌর্য বা মৌর্য পূর্ব যুগে গ্রাম প্রশাসনের অস্তিত্বের স্বাক্ষর পাওয়া যায়। ব্রিটিশদের আগমনের পূর্বে তৎকালীন বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে অধিকাংশ গ্রামে পঞ্চায়েত প্রথা প্রচলিত ছিল। পঞ্চায়েতের সদস্য সংখ্যা ছিল ৫ জন। জনগণের মতামতের উপর ভিত্তি করে সামাজিক প্রয়োজনে পঞ্চায়েত প্রথার উদ্ভব ঘটে। তাই এগুলোর আইনগত কোন ভিত্তি ছিল না।
ব্রিটিশ শাসনামলে অর্থনৈতিক প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কারণে ও ব্রিটিশদের ভিত্তি আরও সুদৃঢ় করার জন্য লর্ড মেয়ো ১৮৭০ সালে চৌকিদারি আইন পাশ করেন। এর ফলে প্রথমবারের মত স্থানীয় সরকারের উদ্ভব হয় এবং পঞ্চায়েত প্রথার পুনরাবৃত্তি ঘটে। চৌকিদারি পঞ্চায়েতের সদস্য সংখ্যা ছিল পাঁচ জন এবং জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট পঞ্চায়েতের সকল সদস্যকে তিন বৎসরের জন্য নিয়োগ করতেন। চৌকিদারি পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে ১৮৮৫ সালে বঙ্গীয় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়। ইউনিয়ন কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ৫-৯ জন এবং গ্রামবাসী কর্তৃক নির্বাচিত হতেন এবং ইউনিয়ন কমিটির পাশাপাশি চৌকিদারি পঞ্চায়েত কাজ করতো। এর ফলে দ্বৈত শাসনের অসুবিধা সমূহ প্রকটভাবে দেখা দেয়। অতঃপর ১৯১৯ সালে চৌকিদারি পঞ্চায়েত ও ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। ইউনিয়ন বোর্ডের সদস্য ১/৩ অংশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক মনোনয়ন দান করতেন অবশিষ্ট সদস্যগণ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হতেন। সদস্যগণ তাদের মধ্য থেকে প্রেসিডেন্ট ও একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতেন। কার্যকাল ছিল ৩ (তিন) বৎসর। তবে ১৯৩৬ সাল হতে ৪ (চার) বৎসর করা হয় এবং মনোনয়ন প্রথা ১৯৪৬ সালে রহিত করা হয়।
মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ,১৯৫৯ এর অধীনে ইউনিয়ন কাউন্সিল গঠন করা হয় এবং সদস্য সংখ্যা ছিল ১০-১৫ জন। মোট সদস্যের ২/৩ অংশ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতো এবং অবশিষ্ট ১/৩ অংশ মহুকুমা প্রশাসক সরকারের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করতেন। ১৯৬২ সালে শাসনতন্ত্র প্রবর্তনের ফলে মনোনয়ন প্রথা রহিত করা হয়। সদস্যগণ তাদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করতেন। পরবর্তীতে ভাইস চেয়ারম্যানের পদটি বিলুপ্ত করা হয়। ইউনিয়ন কাউন্সিলের মেয়াদ ছিল ৫ বছর বাংলাদেশে স্থানীয় সরকারের যে কাঠামো রয়েছে তার সূচনা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে প্রণীত কিছু কিছু আইনের মাধ্যমে। অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগে শহর অঞ্চল এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়।
১৮৭০-১৮৮৫ চৌকিদারি পঞ্চায়েত এর প্রধান পদবী পঞ্চায়েত
১৯১৮ ইউনিয়ন কমিটি এর প্রধান পদবী পঞ্চায়েত
১৯১৯-১৯৩৫ ইউনিয়ন বোর্ড এর প্রধান পদবী প্রেসিডেন্ট
১৯৩৬-১৯৫৮ ইউনিয়ন বোর্ড এর প্রধান পদবী প্রেসিডেন্ট
১৯৫৯-১৯৬১ ইউনিয়ন কাউন্সিল এর প্রধান পদবী চেয়ারম্যান
১৯৬২ ইউনিয়ন কাউন্সিল এর প্রধান পদবী চেয়ারম্যান
১৯৬৩-১৯৭১ ইউনিয়ন কাউন্সিল এর প্রধান পদবী চেয়ারম্যান
১৯৭১ ইউনিয়ন ত্রাণ কমিটি এর প্রধান পদবী চেয়ারম্যান
১৯৭২ ইউনিয়ন পঞ্চায়েত এর প্রধান পদবী পঞ্চায়েত
১৯৭৩-১৯৭৫ ইউনিয়ন পরিষদ এর প্রধান পদবী চেয়ারম্যান
১৯৭৬-১৯৮২ ইউনিয়ন পরিষদ এর প্রধান পদবী চেয়ারম্যান
১৯৮৩-বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ এর প্রধান পদবী চেয়ারম্যান
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ ) আইন-২০০৯ মোতাবেক ইউনিয়ন পরিষদের কার্যাবলী নিম্নরূপঃ
১। পাঁচশালা ও বিভিন্ন মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরী।
২। পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ।
৩। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত।
৪। স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন।
৫। কৃষি, মৎস্য ও পশুসম্পদ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ।
৬। মহামারী নিয়ন্ত্রণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ।
৭। কর, ফি, টোল, ফিস ইত্যাদি ধার্যকরণ ও আদায়।
৮। পারিবারিক বিরোধ নিরসন, নারী ও শিশু কল্যাণ সম্পর্কিত প্রয়োজীয় কার্যক্রম সম্পাদন।
৯। খেলাধুলা, সামাজিক উন্নতি সংস্কৃতি ইত্যাদি কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও সহযোগিতা প্রদান।
১০। পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণে প্রয়োজীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
১১। আইন শৃংখলা রক্ষায় সরকারের অর্পিত দায়িত্ব পালন ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ।
১২। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধীকরণ।
১৩। সরকারি স্থান, উন্মুক্ত জায়গা, উদ্যান ও খেলার মাঠের হেফাজত করা।
১৪। ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তায় ও সরকারি স্থানে বাতি জ্বালানো।
১৫। বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ এবং বৃক্ষসম্পদ চুরি ও ধ্বংস প্রতিরোধ।
১৬। কবরস্থান, শ্মশান, জনসাধারণের সভার স্থান ও অন্যান্য সরকারি সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা।
১৭। জনপথ, রাজপথ ও সরকারি স্থানে অনধিকার প্রবেশ রোধ এবং এইসব স্থানে উৎপাত ও তাহার কারণ বন্ধ করা।
১৮। জনপথ ও রাজপথের ক্ষতি, বিনষ্ট বা ধ্বংস প্রতিরোধ করা।
১৯। গোবর ও রাস্তার আবর্জনা সংগ্রহ, অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
২০। অপরাধমূলক ও বিপজ্জনক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ।
২১। মৃত পশুর দেহ অপসারণ ও নিয়ন্ত্রণ এবং পশু জবাই নিয়ন্ত্রণ। ৭০৬০ বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, অক্টোবর ১৫, ২০০৯
২২। ইউনিয়নে নতুন বাড়ি, দালান নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ এবং বিপজ্জনক দালান নিয়ন্ত্রণ।
২৩। কূয়া, পানি তোলার কল, জলাধার, পুকুর এবং পানি সরবরাহের অন্যান্য উৎসের ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ।
২৪। খাবার পানির উৎসের দূষণ রোধ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সন্দেহযুক্ত কূপ, পুকুর বা পানি সরবরাহের অন্যান্য স্থানের পানি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
২৫। খাবার পানির জন্য সংরক্ষিত কূপ, পুকুর বা পানি সরবরাহের অন্যান্য স্থানে বা নিকটবর্তী স্থানে গোসল, কাপড় কাঁচা বা পশু গোসল করানো নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করা।
২৬। পুকুর বা পানি সরবরাহের অন্যান্য স্থানে বা নিকটবর্তী স্থানে শন, পাট বা অন্যান্য গাছ ভিজানো নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করা।
২৭। আবাসিক এলাকার মধ্যে চামড়া রং করা বা পাকা করা নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করা।
২৮। আবাসিক এলাকার মাটি খনন করিয়া পাথর বা অন্যান্য বস্তু উত্তোলন নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করা।
২৯। আবাসিক এলাকায় ইট, মাটির পাত্র বা অন্যান্য ভাটি নির্মাণ নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করা।
৩০। অগ্নি, বন্যা, শিলাবৃষ্টিসহ ঝড়, ভ‚মিকম্প বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় তৎপরতা গ্রহণ ও সরকারকে সার্বক্ষণিক সহায়তা প্রদান।
৩১। বিধবা, এতিম, গরীব ও দুঃস্থ ব্যক্তিদের তালিকা সংরক্ষণ ও সাহায্য করা।
৩২। সমবায় আন্দোলন ও গ্রামীণ শিল্পের উন্নয়ন ও উৎসাহ প্রদান।
৩৩। বাড়তি খাদ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩৪। গবাদিপশুর খোয়াড় নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৩৫। প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা।
৩৬। ইউনিয়নের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা, আরাম-আয়েশ বা সুযোগ সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩৭। ই-গভর্ণেন্স চালু ও উৎসাহিতকরণ।
৩৮। ইউনিয়ন পরিষদের মত সদৃশ কাজে নিয়োজিত অন্যান্য সংস্থার সাথে সহযোগিতা স¤প্রসারণ।
৩৯। সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে আরোপিত দায়িত্বাবলী।
০৮ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৫:৪২
রবিন.হুড বলেছেন: ঠিক বলেছেন। গ্রাম আদালত অনেক সমস্যা দূর করতে পারে।
২| ০৮ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৮:১৫
নাহল তরকারি বলেছেন: চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট, ডের্থ সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট সংগ্রহ ছাড়া কেউ ইউনিয়ন পরিষদে যায় না।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৫২
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: ইউনিয়ন পরিষদ শক্তিশালী করলে মানুষের কোটকাচারী দৌড়াদৌড়ি বন্ধ হবে।