![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মতামত কখনোই পুরোপুরি নিরপেক্ষ হতে পারে না। নির্দিষ্ট বিষয়ে মতামত জানানোর ক্ষেত্রে উপস্থিত সমস্ত তথ্যের উপর নির্ভর করতে হয়। তথ্যের পরিবর্তনে মতামতেও পরিবর্তন আসে। তথ্য যত সঠিক হয়, মতামত তত শক্ত হতে পারে। আর তথ্য যত ভুল হয়, মতামত তত দুর্বল এবং ক্ষেত্রবিশেষে অগ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। মতামতের অন্যতম প্রধান ও শক্তিশালী ভিত্তি হলো উপস্থিত সমস্ত তথ্য এবং সেসব তথ্যের নির্ভুল হওয়ার উপর।
আমার মতে মতামত প্রদানে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, ‘জ্ঞানীয় যোগ্যতা’। আমি সাধারণত দর্শন ও মনোবিজ্ঞান নিয়ে লিখে থাকি। এই বিষয়গুলো নিয়ে মোটামুটি নির্ভরযোগ্য প্রবন্ধ/নিবন্ধ লিখতে পারি; অন্তত আমার তাই মনে হয়। কিন্তু হুট করে যখন রাজনৈতিক ক্যানভাসে মতামত প্রদান করতে শুরু করবো তখন উক্ত বিষয়ে জ্ঞানীয় যোগ্যতা তূলনামূলক কম থাকায় ভুল হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
মতামত প্রদানে প্রয়োজন হয় প্রাসঙ্গিক ‘অভিজ্ঞতা’র-ও। দীর্ঘসময় ধরে একজন মানুষ যে বিষয়ে পড়াশোনা করছেন সে বিষয়ে তার মতামত তূলনামূলক গোছানো এবং সুন্দর ও সত্য হয়। আমার ক্ষেত্রে হঠাৎ অর্থনৈতিক বা ভূ-রাজনৈতিক প্রসঙ্গে প্রবন্ধ/নিবন্ধ উপহার দেওয়া অনেক বেশি অসুবিধার এবং ক্ষেত্রবিশেষে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে। কারণ আমি দর্শন ও মনোবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে যতটুকু পড়াশোনা করি ঠিক ততটুকু বা তার কাছাকাছিও পড়াশোনা করা হয়ে ওঠে না অর্থনীতি বা ভূ-রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে।
চতুর্থ বিষয় হলো, একজন লেখকের নৈতিক অবস্থান। আমার নৈতিক অবস্থান যদি হয় কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থনে তবে আমার রাজনৈতিক প্রসঙ্গ নিয়ে লেখালেখিতে ঐ রাজনৈতিক দল ছাড় পেয়ে যেতে পারে অথবা, আমি আমার নিজের অজান্তেই ঐ নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের দ্বারা ঘটে চলা অন্যায়ের জাস্টিফিকেশান দিয়ে দিতে পারি; যা একজন লেখকের নৈতিকতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন উঠতে পারে। এখানেই একজন লেখক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে ওঠেন এবং তিনি তার গ্রহণযোগ্যতাও হারিয়ে বসতে পারেন।
সর্বশেষ ও পঞ্চম বিষয়টি হলো, ‘মূল্যবোধ’। মূল্যবোধ হলো মানুষের আত্মার কম্পাস; যা তাকে বলে দেয় কোন দিকটি ‘সঠিক’, কোন জীবন ‘সার্থক’, এবং কোন সমাজ ‘কাম্য’। লেখালেখিতে মূল্যবোধ জিনিসটার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
উদাহরণস্বরূপ: বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে কর বৃদ্ধি অন্তত দুইভাগে দেখা যায়,
(এক) অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বের কারণে কর বৃদ্ধি করা ছাড়া সরকারের হাতে কোনো উপায় ছিলো না।
(দুই) কর বৃদ্ধি করার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন লাখ-লাখ মধ্যবিত্ত থেকে গরীব পরিবার।
উপরোক্ত দুই পরিস্থিতি-ই কিন্তু সত্য। এখানে সমস্যা হলো, আপনি প্রথম পরিস্থিতি আমলে নিলে অনেকে মনে করতে পারেন আপনি সরকারকে সমর্থন করছেন এবং দ্বিতীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় আপনি বাস্তবতা বিমুখ মানুষ। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই আপনার কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত আছে একটি শক্তিশালী মতামতে দাঁড় করানোর জন্য। এবং এখানেই একজন লেখকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এই দুই সত্যের মধ্যে যে কোন একটিকে গুরুত্ব দেওয়া।
আমি এখানে হয়তো লিখবো, কর বৃদ্ধির প্রয়োজন ছিলো কিন্তু যেহেতু আমি ক্লাস বিভাজন নিয়ে বেশি কাজ করি সেহেতু আমি চাইবো ভাতা/ভর্তুকি বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটু বেশি জোর দিতে। যাতে করে খুব বেশি দুর্দশায় ভুগতে না হয় কোনো পরিবার কে। কিন্তু IMF-তো এসব শর্তে রাষ্ট্র কে ঋণ দেবে না। সুতরাং একজন অর্থনীতিবিদ এখানে পুরোপুরি ভিন্ন মতামত প্রদান করতে পারেন। এবং এখান থেকেই শুরু হয় আসল খেলা!
মানে হলো, মতামতের এই ভিন্নতার কারণে একই ধরণের প্লাটফর্ম যেমন সোশ্যাল মিডিয়া বা ব্লগে বা ফোরামে ব্যাপক মানসিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে শত্রুতার সূত্রপাত ঘটতেও পারে। বিশেষ করে বাঙালী জাতটা তো আর সুবিধার নয়! সামান্য মতামতের কারণে এখানে খুন-খারাবি পর্যন্ত জায়েজ হয়ে পড়ে। ফলে সামাজিক অশান্তি মাত্রা ছাড়া পর্যায়ে পৌঁছে যায়। আমাদের মধ্যে রয়ে-সয়ে একটু বসে পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ করার সময়ই নাই। যদি থাকেও তবে চিন্তা করার যে শ্রম তা দিতে প্রস্তুত নই।
আর এজন্যই দেখবেন বাংলাদেশের চিন্তকদের মধ্যে একরকম ভীতি কাজ করে যেকোনো বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত সবার সামনে নিয়ে আসতে। আর একারণেই বেশিরভাগ চুপ থাকে, সহ্য করে, মেনে নেয়। এতে করে অন্যায় আরো বাড়ে।
আপনি চারপাশে যে মানুষগুলোকে দেখছেন এদের বেশিরভাগ জীবিত একেকজন রক্ত খেকো জম্বি। এদের মধ্যে চিন্তা করার মানসিকতা নাই। চিন্তা করার অনুশীলন নাই। বেশিরভাগ অটো-পাইলটে জীবন চালাচ্ছে। আপনি চিন্তা করছেন তার মূল্য আছে। আপনি চিন্তা করছেন মানে বর্তমান এই জম্বি দুনিয়ায় আপনি বেঁচে আছেন। আপনার মতামতের মূল্য আছে। হ্যাঁ, বাংলাদেশের মত দেশেও আপনার সামান্য একটি মতামতেরও মূল্য আছে।
যে মানুষগুলো আপনাকে চিন্তা করা হতে অনুৎসাহিত করছে তারা জেনে-বুঝেই এসব করছে। কারণ আপনার মতামতের মাধ্যমে একটা রাষ্ট্র তার সমস্যা খুঁজে পেতে পারে। আর যখন সমস্যা সে খুঁজে পাবে শুধুমাত্র তখনই তা সমাধান করা সম্ভব হবে।
আমি নিজেও একসময় ভাবতাম, এই যে দীর্ঘ প্রবন্ধ ও ব্লগ লিখে কি হয়! পাঠকও তো অনেক কম। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই সমস্ত মতামত রাষ্ট্র আমলে নেয়; হোক সেটা ০.০০০১%! আমি আজকে যা লিখছি আগামীকাল রাষ্ট্র তা ভাবছে এটুকুই সার্থকতা।
উদাহরণস্বরূপ: পিআর (PR) বা আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে আমরা হাতেগোনা কয়েকজন ব্লগার লেখালেখি করেছি। আজ গণমাধ্যমে সেটা নিয়ে অন্তত আলোচনা করছে, বিএনপির মত একটি বড় রাজনৈতিক দল পিআর (PR) নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে এবং এটাই আমাদের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। কারণ আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমেই একটি সুন্দর সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
শেষ করছি, খুবই কম জনপ্রিয় একটি মতামত জানিয়ে। জুলাই বিপ্লবের পর একাধিক আওয়ামীলীগ সমর্থক তাদের চাকুরী হারিয়েছেন। মানে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থন করায় তাদের চাকুরী হারাতে হয়েছে। এতে করে অজানা সংখ্যক পরিবার রীতিমতো ব্লিডিং করছে। এই সব পরিবারের অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে এ বিষয়ে বিশেষ কোনো লেখা চোখে পড়ছে না। আর রাষ্ট্রীয় ভাবে কিছু আওয়ামীলীগ সমর্থকদের পুনর্বাসন করার ইচ্ছেও দেখা যাচ্ছে না।
আমি ধরে নিচ্ছি, আওয়ামীলীগের ৯০% মানুষ দুর্নীতিবাজ ও অপরাধী। কিন্তু যদি ১০% মানুষও ভালো হয়, এবং বিনাকারণে তারা তাদের চাকুরী হারিয়ে থাকেন তাহলে সেটা কারোরই কাম্য নয়। আমাদের কারো কাছে এই পুরো বিষয়টি ঘিরে কোন ডাটা নাই। কিন্তু ঘটনাগুলো সত্য। দুর্নীতিবাজ ও অপরাধী হলে তাদের বিচার হোক। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পরপরই একাধিক ব্যক্তিকে জোর করে চাকুরীচ্যুত করা এবং সে স্থানে যাকে খুশি তাকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি সব জায়গায় স্পষ্ট নয়।
এখানে অন্তত দুটো অন্যায় ঘটেছে,
১. কোনরূপ স্ক্রিনিং না করেই একজন ব্যক্তিকে চাকুরীচ্যুত করা উচিত হয় নাই। হতে পারে ঐ একটা চাকুরীর উপর নির্ভরশীল ছিলো পুরো একটি পরিবার।
২. দ্রুত নিয়োগ দিতে গিয়ে নিয়োগ অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এবং এসব অনিয়মের বিবরণ আস্তেধীরে সামনে আসছে। বর্তমান সরকারের হাতে সময় আছে এসব বিষয়গুলো আমলে নেবার।
জুলাই বিপ্লবের পর দুই-এক জায়গায় পুনর্বাসনের ঘটনা সামনে আসলেও পুরো বিষয়টি আমাদের আলোচনার বাইরে আজও থেকে গেছে। বিনাকারণে যদি একজন ব্যক্তিও চাকুরীচ্যুত হয়ে থাকেন তবে তা জুলাই বিপ্লবের নীতিগত অবস্থান মোটেও সমর্থন করে না। উল্টো আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, যাদের গত বছরের আগষ্টেই চাকুরীচ্যুত করার কথা তারা বহাল তবিয়তে আজও তাদের সিটে বসে আছেন। মানে আমাদের কাছে এইসব ব্যক্তিদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পর্যন্ত আছে (অন দ্য রেকর্ড)।
যেকোনো অন্যায় ঘটলে তা নিরসনের দিকে খেয়াল না রাখলে সেটা পুনরায় ঘটতে পারে। শুধুমাত্র দল বা নির্দিষ্ট গ্রুপ বা ধর্ম পরিবর্তন হতেই থাকবে। আজ দায়িত্বে থাকা মানুষজন যদি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেন তবে একদিন এই ‘অনিয়ম’-ই চিরচেনা নিয়মে পরিণত হতে পারে। আর বিপ্লব/প্রতিবিপ্লব হয়ে উঠবে তার উত্তর। এতে করে আরো রক্ত ঝড়বে। কেউ ‘৭১ এর চেতনা বিক্রি করে খাবে তো কেউ ‘জুলাই ৩৬’-এর চেতনা বিক্রি করে খাবে।
আমরা সবাই ‘৭১ ও ‘জুলাই ৩৬’ এর মধ্যে অমিল খুঁজে বেড়াই। কিন্তু এই দুইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে ‘ন্যায়’ কায়েম করা, সমাজে বৈষম্য ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নায্যতা প্রতিষ্ঠা করা।
ছবি: Microsoft Designer
২| ০৮ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ১০:৪৪
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: অনেক দালাল এখনো বহাল তবিয়তে আছে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ১০:৩১
কাঁউটাল বলেছেন: বাংলার আমজনতাকে ৭১ এর নামে ধোকা দেয়া হয়েছে। জুলাই নিয়েও যাতে একই কাজ না হয় - সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।