নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এক দেশে ছিলো এক রাজকন্যা....তার নাম ছিলো কঙ্কাবতী.....

কঙ্কাবতী রাজকন্যা

কঙ্কাবতী রাজকন্যা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নোলা

০২ রা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৫৬


মা বলতেন, নোলা, নোলা, নোলা। এত্ত খায় তবুও নোলা কমে না, দুই চক্ষে যা পড়বে তাই খাওয়া চাই...কুটি ভেঙ্গে দুটি করার ক্ষমতা নেই অথচ সাতবেলা রাশ রাশ খাওয়া। রাক্ষসী খাই খাই স্বভাব। বাবারে বাবা, অবাক হয়ে যাই! মনে হয় পেটে রাক্ষস ঢুকেছে! যত্তসব! এই বয়সে এত খাই! এক পা কবরে দিয়ে রয়েছেন তবুও খাই খাই স্বভাব যায় না। সেই রাত থাকতে উঠেই মুড়ি চাবাচ্ছেন, ছোলা চাবাচ্ছেন, পান্তা থেকে শুরু করে পোলাও কোর্মা কালিয়া কোপ্তা কিচ্ছুতেই অরুচি নেই। সর্ব সংসার গিলে খাবেন উনি। বিশ্ব বঞ্মান্ড গিলে খাবেন, সবার আগে খাবেন এই আমাকেই। হাড় জ্বালিয়ে খাবেন আমার। রক্ত, মাংস হাড্ডি চুষে খাবেন....

কি সর্বনাশ! মাকেই খেয়ে ফেলবেন! চমকে উঠতাম আমি! অনর্গল বকে চলতেন মা। কোনো রকম দাঁড়ি, কমা, যতি চিহ্নের ধার না ধেরেই অনর্গল বকে যেতেন তিনি। কাকে শুনাতেন তা বুঝতাম না আমি। আশে পাশে ধারে কাছে নিজেকে ছাড়া আর কাউকেই দেখতে পেতাম না সে সব সময়ে। সকাল ৮ টায় বের হয়ে সেই রাত ১০টায় বাড়ি ফিরতেন বাবা। বোনেদেরও সব বিয়ে হয়ে গেছে। মধ্যবিত্ত কম বেতনের সরকারী চাকুরে বাবার সংসারে মাকে সাহায্য করবার মত কোনো কাজের লোকজনও ছিলো না। মায়ের গয়না আর সঞ্চয় যা ছিলো বড় ২ বোনকে বিয়ে দিতে গিয়ে প্রায় সবই নিঃশেষ হয়ে শূন্যের কোঠায় ঠেকেছিলো। বড় ভাইয়া তার বিয়ের এক বছরের মাথায় আলাদা সংসার তুলেছে ভিন্ন শহরে। সংসারে সেই সূর্য্যদ্যয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মা একাই সব দিক সামলাতেন। বাঁতের ব্যাথা আর ক্রনিক শ্বাসকষ্টে প্রায়ই হাঁপিয়ে উঠতেন তিনি তবে কর্মবহুল দিনগুলোতে প্রায় সকাল থেকে রাত অব্দি যখন তখন চলতো তার শাপ শাপান্ত, চেপে রাখা রাগের বহিঃপ্রকাশ।

-আমারও কপাল। সোনা দিয়ে বান্ধানো কপাল আমার! ওরে হীরা দিয়ে বান্ধানো! সাতকূল গিয়ে এক কূলে ঠেকা এই আপদ এসে জুটেছে আমার ঘাড়ে। কেন এত যে তোর পেয়ারের তিন কন্যা আছেন তাদের কাছে থাকতে পারিস না!! যত দরদ তো কথায় কথায় উথলে ওঠে তাদের জন্য! থাকতে পারিস না কেন তাইলে তাদের কাছেই! থাকবি কেমন করে ! এই হাতীর খোরাক যোগাবে কে? দেবে দু'দিনের মাঝেই লাত্থি দিয়ে বের করে.... কেনো? গেছিলি না ? তেজ দেখায় যে লম্ফ দিয়ে গেলি সেবার, সাত দিন না পেরুতেই তো ফিরে আসলি? নাহ উনার স্বামীর ভিটা ছাড়া মন টিকে না, নিজের পালঙ্কে না শুলে ঘুম আসে না। আসল খবর তো জানাই আছে, কাক চিল বসতে না পারা কুরুক্ষেত্রের সে সংসারে দু'দিনও টিকতে পারিস নাই। জানি জানি সবই জানি। জানতে কিছুই আর বাকী নাই আমার। সবাইকে চেনা আছে। যেমন মা তেমনি কন্যারাও....


অবাক হয়ে শুনতাম আমি ! কখনও মেঝের উপর উপুড় হয়ে দুগালে হাত দিয়ে, কখনও বা পড়ার টেবিলে বসে বসে পেন্সিল মুখে। কখনও বা দুপুরের খাবারের পর বাধ্যতামূলক ঘুম দুপুরের বিছানায় ঘুমুতে যাবার আগে ঘুম ঘুম অথবা নির্ঘুম চোখে। মা যখন বলতেন, রাক্ষসী খাই খাই স্বভাবের কমতি নেই বা মনে হয় পেটে রাক্ষস ঢুকেছে, চমকে উঠতাম আমি! মনে মনে কল্পনায় ভয় পেয়ে যেতাম যে আমার অশীতিপর বৃদ্ধা দাদীমার চিমশে পড়া পেটের মাঝে তিন/চারটা রাক্ষস লাফালাফি করছে। অথবা মা যখন বলতেন, দাদীমা নাকি এক পা কবরে দিয়ে আছেন, কল্পনায় দেখতে পেতাম একটি খোলা কবরের মাঝে হাড় জিরজিরে লিকলিকে পা ডুবিয়ে মিটমিটে চোখে বসে আছেন দাদীমা! ভয়ে শিউরে উঠতাম আমি। মাঝে মাঝে ভাবতাম এমন লিকলিকে দাদীমাকে মা হাতীর খোরাক যোগান বলেন কেনো? দাদীমা কি হাতী? হাতীরা তো কলাগাছ খায়। দাদীমাকে তো কখনও কলাগাছ খেতে দেখিনি।

কতই বা বয়স ছিলো তখন আমার? ১০/১২ হবে। সকালে স্কুল যাবার সময় দেখতাম, দাদীমা তার নিজের বিছানায় বসে জুলজুল চোখে তাকিয়ে আছে। স্কুলব্যাগটা কাঁধে নিলেই মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাত ইশারায় কাছে ডাকতো দাদীমা। মুখে লেগে থাকতো ফোঁকলা দাঁতের এক মুখ মন ভোলানো হাসি। আমি এমনিতে তাকে বেশ পছন্দই করতাম তবে ভুলেও সেই মন ভুলানো হাসির ফাঁদে পড়তাম না আমি কারণ কাছে গেলেই দাদীমা তার শীর্ণ হাতে খপ করে টিফিন বক্স খুলে যা পাবেন তাই তুলে নেবেনই এ কথা ততদিনে জানা হয়ে গিয়েছিলো আমার। আর এ দৃশ্য মা যেদিন প্রথম দেখেছিলেন সেদিন তো পুরাই রণচন্ডিনী মূর্তী ধারণ করেছিলেন উনি। সেদিন থেকেই কড়া নিষেধ ছিলো স্কুল টাইমে দাদীমার আশে পাশে না ভেড়ার।

দাদীমাকে ঠিক বুঝতাম না আমি। জন্ম থেকেই একই রকম দেখে এসেছি দাদীমাকে। লিকলিকে শরীর, খনখনে গলা। হাত, পা, মুখের চামড়া কুঁচকে ঝুলে পড়েছে। উঠে দাঁড়ালেও হাঁটতো ঝুঁকে ঝুঁকে। কিছু পরে পরেই খাবারের সন্ধানে রান্নাঘরে ঢুকতো বা খাবার ঘরের আশে পাশে ঘুর ঘুর করতো। তাকের উপর তুলে রাখা মুড়ির টিন, টোস্ট বিস্কিটের শূন্য টিন হাতড়াতো। সংসারে তেমন স্বচ্ছলতা না থাকায় প্রায় দিনই বিস্কিট বা মুড়ির টিন ফাঁকা থাকতো। তারপরও দাদীমা ক্লান্তিহীন ভাবে একের পর এক খুঁজে চলতেন একটু বা একমুঠো খাবার। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজা শেষ হলেই মায়ের নানা কটুক্তি স্বত্বেও বা শত অবহেলার পরেও তারই স্মরনাপন্ন হতেন।

- ও বউ দে না দু' টুকরো শশা কুঁচিয়ে ... অধিকাংশ দিন মা তার কথায় কান দিতেন না। দাদীমা ঘ্যান ঘ্যান করতেন, " দে না এক মুঠো মুড়ি তেল হাত বুলিয়ে? " সংসারের বহুমুখী কাজের মাঝে হেঁসেল নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন মা। সংসারের বেহাল অবস্থায় বা কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এ সংসার নিয়ে খুব একটা সুখী ছিলেন না তিনি। তবুও আমার মনে হয় তার সকল অশান্তির মাঝে বিরাট বড় অংশ জুড়েই ছিলো দাদীমার এই খাই খাই বিরক্তিটা। মুখ ঝামটে উঠতেন মা, " আচ্ছা দেখছেন না? এখন আমি মাছ কুঁটছি? এই ছাই মাখা হাতে এক রাশ কুঁচো মাছ ছেড়ে আমি মুড়ি মাখতে বসবো! আপনি কি আপনার আক্কেলের মাথা মুন্ডু খেয়েছেন? যান ঘরে গিয়ে শুয়ে থাকেন..." মায়ের বাক্যবাণে তিষ্ঠতে না পেরে দাদীমা উঁকি দিতেন আমার ঘরে। সেই ভূবন ভোলানো হাসি দিয়ে আমাকে ভুলাবার চেষ্টা করতেন, খুব সন্তর্পণে আঁচলের তলা থেকে ২টাকা বা পাঁচ টাকার নোট বের করে এদিক ওদিক তাকিয়ে লুকিয়ে বলতেন,

- দাদুভাই, যা না এক দৌড়ে মোড়ের দোকান থেকে দুটি জিলাপি নিয়ে আয় না.... ঘাড় নাড়তাম আমি, পারবোনা যে সেই অপরাগতা জানিয়ে দিতাম,
- মা বকবে। আমি পারবোনা দাদীমা।
- আরে কিচ্ছু হবেনা। মা জানতেই পারবেনা । যা না ?
আমি কোনোমতেই রাজী হতাম না যখন তখন দাদী শাপ শাপান্ত করতে বসতেন,
- হাড়ে হারামজাদী হয়েছে একটা। যেমন মা তেমনি ছা। বিছুটি পাতার ঝাঁড়ে কি আর মাধবীলতা গজাবে? জাঁত হারামী। সব ধ্বংশ হয়ে যাবে। পটপট করে মরবি তোরা একের পর এক বুঝলি?? হাড় পটপটি রোগে মরবি। মুখে রক্ত উঠে মরবি...

আমি মন দিয়ে শুনতাম দাদীমার বাক্যগুলোও। মায়ের বাক্যবাণে আমি ভীত হয়ে পড়তাম কিন্তু দাদীমার ফোকলা দাঁতের আজব সব শাপ শাপান্ত শুনে ভীষন হাসি পেতো আমার। আমি খিলখিল করে হাসতাম। আমার হাসি দেখে দাদীমা আরও খেপে উঠতেন। মারতে যেতেন আমাকে। আমি দৌড়ে পালাতাম। দূরে গিয়ে হাসতাম। সবখানে ব্যর্থ হয়ে দাদীমা তার কুঁচকানো চাদর পাতা চৌকিটায় গিয়ে কাঁদতে বসতেন।

মাঝে মাঝে আমার দয়াও হত। খাবার দেখে তার লোভী চোখের চকচকে চাউনি আর আনন্দিত মুখের হাসি দেখবার জন্যই বুঝি আমি মায়ের হাতে বানানো, খুব উঁচুতে তুলে রাখা মুড়ির মোয়া বা নারকেলের নাড়ু লুকিয়ে পেড়ে এনে মাঝে মাঝেই দাদীমার হাতে তুলে দিতাম । দাদীমার নিস্প্রভ হয়ে আসা চোখের মনি দুটো জ্বলজ্বল করে উঠতো। ভীষন আনন্দিত হয়ে উনি হাত বাড়াতেন। তারপর দাঁতহীন মুখে তারিয়ে তারিয়ে খেতেন সেই অমূল্য খাবার। মাঝে মাঝে স্কুল থেকে ফিরে আমি বাঁচিয়ে রাখা টিফিনের অংশটুকু মায়ের চোখ বাঁচিয়ে তার হাতে তুলে দিতাম। ভীষন খুশি হয়ে আমার মাথায় হাত বুলাতেন দাদীমা।

এই খাবারের প্রতি অপরিসীম লোভের কারণেই একদিন মৃত্যু হলো তার। বারান্দায় রোদে দেওয়া কুলের আঁচারের বোয়াম খুলে প্রায় আধা বোতল শেষ করে ফেললেন তিনি একদিনেই। এরপর এই বয়সী শরীরে এই ধকল আর নিতে পারলেন না। সন্ধ্যা থেকেই শুরু হলো ডায়েরিয়া। শিওরে সারারাত জেগে রইলেন বাবা। আঁচারের বয়ামের এই বিধ্বংসী কান্ড দেখবার পরেও দাদীমার এ অবস্থা দেখে সেবা শুশ্রুসার ত্রুটি করেননি মাও। তবুও ভোরের দিকে দাদীমা এই পৃথিবীর সকল লোভ লালসা, আশা ভরসা ত্যাগ করে, তার এত বছরের স্বামীর ভিটে, কুঁচকানো চাদরের চৌকি, এক ছেলে ও তিন মেয়ে এবং কিছু নাতি নাতকূড় রেখে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন।

দাদীমার মৃত্যুর পর হঠাৎ এক আশ্চর্য্য রকম নীরবতা নেমে আসলো পুরো বাড়িটা জুড়ে। অষ্টপ্রহর সংসার ও দাদীমাকে নিয়ে অভিযোগ করা মায়ের চারিপাশ জুড়ে নেমে আসলো এক আশ্চর্য্য শীতলতা। দাদীমা বেঁচে থাকতে প্রায়ই মা বলতেন, এ আপদ মরলে বাঁচি। আমার হাড় জুড়োয়। কিন্তু দাদীমার মৃত্যুর পর সত্যিই কি তার হাড় জুড়িয়েছিলো? মায়ের কাছে এ প্রশ্নের উত্তর আমার আর জানা হয় না। দাদীমার শূন্য চৌকিটার দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে আমার ভীষন মন খারাপ হয়ে উঠতো। বেঁচে থাকতে যে ছিলো একজন মূল্যহীন মানুষ, তার অমুল্য অন্তর্ধান পুরো বাড়িটাকেই যেন শূন্য করে দিয়ে গিয়েছিলো।


দাদীমা নিয়ে যে কোনো স্মৃতিতেই আমার এই দৃশ্যগুলিই মনে পড়ে। এভাবেই দাদীমার মৃত্যুর পর ও বাড়িতেই আরও কয়েক বছর কেটে গেলো বেশ নিরুপদ্রপেই। এস.এস. সি এর ঠিক আগ দিয়ে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে আনলেন হঠাৎ একদিন। কনে দেখা আলোর এক অদ্ভুত সুন্দর বিকেলে আমার বিয়ে হয়ে গেলো আমার চাইতে পনেরো বছরের বড়ো সৌদী প্রবাসী এক যুবকের সাথে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের আমি এরপর বেশ সুখেই ছিলাম। সুখে থাকা যাকে বলে আর কি। ইচ্ছে মত শখ মেটাতে পারা। ভালো খেতে পাওয়া। পরতে পারা। ইচ্ছে হলে শপিং এ ঘুরে আসা এবং শুধু হাতে নয়, শখের বা প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি হাতে নিয়ে ফিরতে পারাটাও।

বিয়ের পরও আমি বছর খানেক বাবার বাড়িতেই ছিলাম। আমার প্রবাসী স্বামী আমাকে পাঁকাপাকিভাবে সৌদীতে নিতে একটু ঝামেলা হওয়াতেই এই বিলম্ব। তবে সেই বছর খানেক সময়ে বাবার বাড়িতে আমার সমাদর বেড়ে গিয়েছিলো কয়েক শত গুন বেশি। এর কারণ আমার আরও বড় দুই বিবাহিত বোন বা বিবাহিত ভাই যা বাবা মাকে কখনও দিতে পারেনি আমার দুদিনের প্রবাসী স্বামী তাই দিয়েছিলো তাদেরকে। অপরিসীম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং মমতা। বাবা মায়ের জন্যই উনি এ বাড়ির প্রথম রঙ্গিন টিভিটি কিনে আনেন। আমার স্বামীর সৌজন্যবোধ, দায়িত্বজ্ঞান, শ্রদ্ধা বা মমতায় আমি নিজেও অভিভূত হয়েছিলাম। তাই আমার সাথে আমার স্বামীর বয়সের এই বিস্তর ফারাকটা আমার কাছে কোনো সমস্যার কারণই মনে হয়নি।

এই প্রবাসে পাকাপাকিভাবে আসার আগ দিয়ে যে বছরখানেক সময়টা আমি সেখানে ছিলাম বাবা মাসহ আমাদের খাবার, পোশাক হতে শুরু করে সংসারের অনেক খরচই উনি মিটিয়ে দিতেন। আমার বাবা লজ্জা পেতেন, কিন্তু আমার স্বামী শুনতেন না। উনি এতিম ছিলেন এবং আমার মা বাবাকে নিজের বাবা মাই মনে করতেন। বছর খানেক পর আমি যখন ও বাড়ি ছেড়ে চলে এলাম এই সুদূর পরবাসে, আমার কেনো যেন সেদিন হঠাৎ দাদীমাকে খুব মনে পড়ছিলো। আসলে শুধু সেদিনই না বিশেষ যে কোনো আনন্দ বেদনার দিনেই আমার দাদীমাকে মনে পড়তো। আমার বিয়ের পর আমার স্বচ্ছল দিনগুলোতে প্রায়ই আমার মনে হত আজ যদি দাদীমা বেঁচে থাকতেন...


প্রথমদিনে এই প্রবাস জীবন আমার দূর্বিসহ লাগতো। সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যবসায়িক কাজে আমার স্বামীর ভীষন ব্যাস্ততায় কেটে যেত। ধীরে ধীরে আমি এই চার দেওয়ালের বদ্ধ পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। আমার কোল জুড়ে আসে আমার সন্তান। তাকে নিয়ে ব্যাস্ততায় কাঁটে আমার দিনগুলোও। এখানে আসার মাস ছয়েকের মাথায় খবর পাই বাবা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আমার বিধবা মা নিরুপায় হয়ে উঠেছেন আমার একমাত্র বড় ভায়ের বাড়িতে। আমাদের ও বাড়ি এখন তালাবন্ধ পড়ে রয়েছে। আমার ভীষন কষ্ট হয়। পলেস্তারা ওঠা, শেওলা ছাওয়া আমাদের ছাই ছাই দেওয়ালের সারাজীবনের সেই এক টুকরো বাড়ির মমতা আমাকে ভীষন টানে। ভালো লাগে না আমার এই বিলাসী জীবন, মখমলের সোফা, দামী জাজিম বসানো খাঁট- পালঙ্ক, আসবাব। কিচ্ছু ভালো লাগে না আমার। মনে হয় সব ছেড়ে ছুড়ে এক ছুটে চলে যাই আমার বালিকা বেলায় ফেলে আসা সেই সোনা রঙ দিনগুলোতে..

মা প্রায়ই ফোনে কান্নাকাটি করেন। আমাকে দেখার জন্য, জামাইকে দেখার জন্য তার মন কাঁদে। অভিযোগ করেন আমার সন্তান, তার নাতীকে একবারের জন্যও কেনো দেখাতে আনলাম না আমরা। অভিযোগে অভিযোগে কেঁটে যায় আরও কয়েক বছর। ভায়ের কাছে শুনি, মা নানা রকম শাররিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চোখে দেখছেন না আজকাল। কানেও শুনতে পান না ঠিকঠাক। কথাবার্তাও ঠিক মত বুঝতে পারেনা আজকাল ইত্যাদি, ইত্যাদি ও ইত্যাদি। মাঝে মাঝে উনি টাকা চেয়ে বসেন। আমার ভীষণ লজ্জা করে। আমি ভাইকে বলে দিয়েছি যা লাগে যেন আমার কাছে চান। জামাইকে না বলেন। আমি বুঝি ভায়ের সংসারেও স্বচ্ছলতা নেই। সেখানেও অভাব। এই অভাবের সংসারে মায়ের চিকিৎসাসহ অন্যান্য খরচ মিটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।

নাবিল, আমার সন্তানের বয়স এখন দু বছর। দেশে এসেছি আমি। ও বাড়ি তালাবদ্ধ। উঠেছি ভায়ের বাড়িতে । আমাকে দেখে ভাই ভাবী, ভায়ের বাচ্চারা মহা খুশি। ওদের জন্য স্যুটকেস ভরে উপহার এনেছি আমি। তাছাড়াও তারা কে কি চায়, কার কি প্রয়োজন আছে তা মিটাবার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো বলে নিজেই ঠিক করে এসেছি আমি। মা যেন আমাকে দেখে আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন। এ ক'বছরে ভীষন বুড়িয়ে গেছেন উনি। চোখের ছানি কাটাতে হবে। ডায়াবেটিকস ধরা পড়েছে। কানে প্রায় শুনতে পান না বললেই চলে। ভাই ভাবী, তাদের ছেলে মেয়েরা আমাকে যত্ন আত্তির ত্রুটি করছে না। ওদের অবস্থা স্বচ্ছল নয় জানতাম তাই বলে এতটা হত দরিদ্র আগে বুঝিনি। মনে মনে ঠিক করি এবার থেকে নিয়মিত ওদের জন্য কিছু পাঠাবো। তা' ছাড়া মা রয়েছেন। তার জন্যও তো কিছু খরচা আছেই। আমার আগমন উপলক্ষে আজ পোলাও, মুরগীর ভূনা, খাসীর মাংস রান্না করা হয়েছে। আমার ভীষন লজ্জা করছিলো। নিশ্চয় এসব বাজার করতে ভায়ের ভীষন কষ্ট হয়েছে।

রাতের বেলা বেশ এতদিন বাদে এত সব দেশী খাবার খেয়ে তৃপ্তি করে শুয়েছি। ভাবী রান্নাঘরে বাসন পত্তর সামলাচ্ছেন। হঠাৎ ভাবীর বড় মেয়েটার গলা শুনতে পাই-

- মা দাদী বলছেন, আজ ঠিক মত খেতে পারেন নি, জীবটা কেমন কষ কষ করছে। একটু পায়েস আছে নাকি?

ভাবী রাগত গলা চেপে ভেংচে ওঠেন,
- এহ জীবটা কষ কষ কচ্ছেন। ঠিক মত খেতে পান নি। গবাগব এক রাশ গিলে এখন আল্লাদী নেকামী কচ্ছেন। ঢং দেখলে গা জ্বলে যায়। নোলা, নোলা, বুঝলি এসব বলে নোলা, এক রাশ গিলেও নোলা থামে না। যতক্ষন আছে সামনে ততক্ষন সমানে চালাবেন। বাবারে বাবা এই বয়সে এত খাওয়া কেনো? দুই চোখে যা পড়বে তাই খাওয়া চাই, সাতবেলা রাশ রাশ খাওয়ারও কমতি নেই। রাক্ষসী খাই খাই স্বভাব। অবাক হয়ে যাই! এই বয়সে এত খাই! এক পা কবরে দিয়ে রয়েছেন তবুও খাই খাই স্বভাব যায় না....মনে হয় পেটে রাক্ষস ঢুকেছে .......

চমকে উঠি আমি!
ফিরে যাই বহুদিন আগের বালিকাবেলায়....
প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয় না....
কাউকেই না.......

দীর্ঘশ্বাস পড়ে আমার। চোখ বুজে দেখতে পাই সেই ভূবন ভুলানো তোবড়ানো মুখের হাসি...

মন্তব্য ৫৪ টি রেটিং +১৩/-০

মন্তব্য (৫৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:২০

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: লাস্ট বেশ অনেক দিনের মধ্যে ব্লগে আমার পড়া সবচেয়ে উন্নতমানের গল্প এটা। উফফ! কি অসাধারণ গাঁথুনি একেকটি চরিত্রের! গল্পের নায়িকা নীরব দর্শক হয়ে নিজের জীবনকেই সিনেমার মতো দেখে গিয়েছে। তার চোখ দিয়ে দেখলাম কতকিছু; জীবনের কত মোর, কত বাঁক, কত আবেগ, কত পাওয়া না পাওয়া, কর্মফল! কোন চরিত্রের ওপরেই কোন বিরক্তি নেই। অভাব অনটনে কত কষ্টে যে একেকটি দিন কাটে সবার! তাতে এমন জ্বালাময়ী ব্যবহার খুবই স্বাভাবিক। সবার মনের দুঃখ, আবেগ, জীবনযুদ্ধ ছুঁয়ে গেল।

দাদীর চোখ দিয়েও এ গল্পটি পড়তে ভীষন ইচ্ছে হচ্ছিল কেন যেন। সেই দাদীর মধ্যেও বাস করে এক বালিকা! সেই বালিকাবেলায় ফিরে গিয়ে দাদীও নায়িকার মতোই নীরবে নানাকিছু ভেবে যায়! তার চোখে সংসারটা কেমন, তার সংসার জীবনের স্মৃতিচারণ কেমন হতো ভাবছিলাম পড়তে পড়তে।

সামুতে শুধু একটিই লাইক দেবার সুযোগ আছে বিধায় তাই দিচ্ছি। নাহলে অগণিত লাইক দিয়ে যেতাম।
পূর্বের প্রতিমন্তব্যে লেখাটির ব্যাপারে জানানোর জন্যে ধন্যবাদ, সেজন্যেই পড়ার সুযোগ হলো।

ভালো থাকুন।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৩১

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: এখন সময় অশান্ত। গল্প বা কবিতা পড়ার মত মানসিকতা অনেকেরই নেই জানি। আমাদের সবারই মন বিক্ষিপ্ত। উদ্বিগ্ন। তবুও লিখে ফেললাম এ গল্প। আসলে কাউকে দেখা একটি বিশেষ চরিত্র থেকেই গল্পটির সৃষ্টি। বয়স হয়ে গেলে অনেককেই দেখেছি এমন শিশুসুলভ আচরণ করতে।

দুঃখের সংসারে এসবের কোনো দাম নেই।


এছাড়াও জানেনই প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয় না। প্রকৃতির পরিহাস অথবা স্বাভাবিক পুনরাবৃত্তি । ফিরে ফিরে আসে..

অসংখ্য ধন্যবাদ সামু পাগলা। আপনার অসাধারণ কমপ্লিমেন্ট আমার চিরজীবন মনে থাকবে।

২| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৫০

আখেনাটেন বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার এই লেখা ব্লগে দেখে অসীম ধৈর্য নিয়ে পড়া শুরু করে শেষও করলাম। না, ঠকিনি।

কী চমৎকার শব্দ ও বাক্যের গাঁথুনী। যদিও শত শত গল্প পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে শেষে কি ঘটতে যাচ্ছে আগেই টের পেয়েছিলুম। তথাপিও বর্ণনার গুণে আপনার এ লেখা অসাধারণই বলতে হয়। না হলে শেষ করা আমার পক্ষে দূরহ হত।

বহুদিন পর ব্লগে। শুভেচ্ছা নিবেন। যদিও ব্লগ এখন টগবগ করে ফুটছে বাচ্চা ভয়ঙ্করদের সাহসীকতায়।

শুভকামনা ব্লগার রাজকন্যা।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৪৭

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: হ্যাঁ বাচ্চাদের এই অসম সাহসী ভয়ংকর উদ্যোগে ও উদ্যোমে আমি মুগ্ধ! এখন গল্প লেখার সময় নয় এটাও জানি। তবুও মাথার ভেতরে কিছু বিষয় যখন গেঁথে থাকে, তখন তা না উগড়ানো পর্যন্ত শান্তি পাই না। যদিও নানা ব্যস্ততায় লিখতেই বসার সময় পাই না।
অসংখ্য ধন্যবাদ আখেনাটেন ভাই।
ভালো থাকুন।

৩| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২৩

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



আপনার সাথে প্রথম পরিচয়টি হলো চমৎকার একটি গল্প দিয়ে; গল্পের গাঁথুনি, চরিত্রের বিন্যাস এবং প্লট বেশ ভাল লেগেছে। গল্পে ধারাবাহিকতা ও সাবলীল বর্ণনা ছিল। ++++++++

০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৫২

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ কাওসারভাই।
তবে এ লেখাতে আমার অনুভব বা অনুভূতির সাথে লেখাটা মেলাতে পারিনি। মানে আমি সাটিসফায়েড নই।আরও কিছু যেন বলার ছিলো।

৪| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: মনোমুগ্ধকর।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৫৩

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ রাজীবভাই।

৫| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৩১

জেন রসি বলেছেন: গল্পের বাইরে থেকে গল্প দেখা।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৫৪

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: কে বলেছে বাইরে থেকে লেখা?

ভেতরেও থাকতে পারি। কে জানে?

৬| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৫১

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: গল্পটার অনুভূতিগুলো আমাকে মুহুর্তে থমকে দিয়েছিলো কাল। আমার ছোটবোন আছে, বিয়ে হয়ে গেছে। মুহুর্তে ওর কথা মনে পড়লো। বাবাকে অন্য ছুতোয় কল করলাম। শান্তি পেলাম তার গলার আওয়াজ শুনে।


আপনার গল্পের অনুভুতি কতটা বিমুর্ত হয়েছে সে ধারনা আপনারও নেই। অনুরোধ যাই ঘটুক জীবনে, ব্লগে ফেসবুকে যেখানেই হোক ডোন্ট স্টপ রাইটিং

০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৫৯

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: বাবা কোথায় আছেন?
ভায়ের সংসারে?
বয়স হলে কেনো যেন তারা শিশুর মতন অবুঝ হয়ে যাই।
আর আমরা বড়রা তাদের আচরণে ভীষন বিরক্ত হই।


আপনার অশেষ ভালোলাগার মন্তব্যে অশেষ কৃতজ্ঞতা।

লিখতে চেষ্টা করবো। মনে রাখবো আপনার উপদেশ বা অনুরোধ।

৭| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৫৭

মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: চরিত্রবিন্যাস, শব্দচয়ন আর গল্প বলার ঢং-এ অনন্য।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৫

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ মনিরুলভাই।

৮| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:০২

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: বাবা দেশে... বোন শ্বশুড় বাড়ি। আমরা ১ ভাই ১ বোন। আর আমি ভবঘুরে উদাসীন

০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৭

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: বাবা একা থাকেন? এটাও কি ধরণের কষ্ট সে আমি দেখেছি।
শেষ বয়সে মনে হয় মানুষ অনেকটাই মূল্য হারায়। তার সামনে বসে দু'কথা বলার সময়ও আর কারো থাকে না। পেছনে পড়ে থাকে সোনালী অতীত। আর সামনেটা শুধুই ধূসর বিবর্ণ।

৯| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:২৭

জেন রসি বলেছেন: গল্পে একটা নির্লিপ্ত ভাব আছে। ভাবটা ভালো লেগেছে। সে জন্যই বললাম বাইরে থেকে দেখা গল্প।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৯

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: তার মানে আমি একজন নির্লিপ্ত গল্প লেখক হতে পেরেছি শেষ পর্যন্ত ।

১০| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৩০

জেন রসি বলেছেন:
কিছুটা হলেও পারছেন। তার একটা কারন হতে পারে অনুভবের বাইরে থেকে লেখা। গল্পটা পড়েও তাই মনে হয়েছে।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৫

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: অনুভব না করলে কেমনে লেখা যায়?


শুধুই দেখে দেখে? নাকি ভেবে বা কল্পনা করে?


আমার মতে কল্পনায় কিছু অনুভবের বিষয় রয়েছে।

তবে আবার আমার ক্ষেত্রে আমি আরেকটি বিষয় অনুধাবন করেছি তা হলো সম্পূর্ণ বীপরিত পরিবেশে বসেও বা বীপরিত মনোভাব পোষন করেও পুরোপুরি উল্টো দিকটা ভেবেও লিখতে বসা।

১১| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৩৯

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: শুভসন্ধ্যা আপু,

প্রথমে নাবিলকে আমার অন্তরের ভালোবাসা, আর আপনার মায়ের প্রতি রইল শ্রদ্ধা। এবার বলি, ভীষণ সুন্দর লিখেছেন। আপনার সেই বালিকাবেলার সোনামোড়া দিনগুলি থেকে আজ প্রবাসের বিলাসিনী পর্যন্ত। দাদীমার আচার খাওয়া ও চলে যাওয়া , আপনার প্রবাসে বিয়ে ও একবছর বাদে বিদেশে গমন। বাবার চলে যাওয়া, আপনার দেশে প্রত্যাগমন, ভাবির মায়ের প্রতি আচরণ, সবমিলিয়ে নিখুত শব্দ বিনুনি। ভালো লাগা রেখে গেলাম। ++

শুভকামনা জানবেন।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৩৪

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ পদাতিকভাই। নাবিল আমার সন্তান না। এটা আমার মায়ের গল্পও না। এটা আমার দেখা একজনের তথা সমগ্র বাংলাদেশের পরিচিত কিছু পারিবারিক দৃশ্য।

১২| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:১৪

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: সুমনার গল্প পড়ে কমেন্ট করেছি এখানে। হলিশিট!

এসব গল্প পড়ার মতো মানসিক শক্তি আমার নেই। কারন কিছু ছবি বেশ পরিচিত লাগে।

কিন্তু আপনার দুটো গল্পতেই একটা জিনিস কমন পেলাম বাল্যবিবাহ আর প্রবাসী পাত্র। ব্যাক্তিগত কারন খুঁজবো না, শুধু জানতে চাই বাল্যবিবাহ আপনি কি চোখে দেখেন? সমাজ ধর্ম অর্থনৈতিক দুরবস্থা নিরাপত্তা এগুলো বাদ, আপনি নিজে একজন মানবিক সত্বা হিসেবে কি চোখে দেখেন! আপনার মতামত কি?

০৩ রা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৪৬

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: বাল্যবিবাহ আমি খুবই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি।

শারীরিক ও মানসিক পূর্ণতাপ্রাপ্তির আগেই বাল্যবিবাহ এবং এতে সন্তান জন্মদানকালীন মাতৃমৃত্যুর হার বাড়া বা
জীবন সম্পর্কে অনভিজ্ঞ বালিকা শাররিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হওয়া। পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাওয়া।পেশা বা জীবিকার সংগ্রামে পিছিয়ে পড়া এসবই বাল্যবিবাহের কুফল।

ব্যাক্তিগতভাবে বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েগুলোকে আমার জীবনের সকল সম্ভাবনার পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া ভুক্তভূগী মনে হয়। কিছু ব্যাতিক্রম রয়েছে বটে তবুও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মনে হয় একটি বালিকার সুকুমার বৃত্তিগুলোকে গলা টিপে হত্যা করা হয় এই চাপিয়ে দেওয়া বিয়ের মাধ্যমে।

১৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৫২

করুণাধারা বলেছেন: ওয়েলকাম ব্যাক রাজকন্যা! দারুন একটা গল্প সহ প্রত্যাবর্তন, কিন্তু এই উত্তেজনাময় দিনে অনেক ব্লগারেরই চোখে গল্পটা পড়ে নি, অনেকেই জানলেন না যে, এই চমৎকার গল্পটা মিস করে গেছেন! :(

গল্প নিয়ে কিছু বলার ছিল কিন্তু এখন সময় নেই। আশা করছি পরে আবার ফিরব। ততক্ষণ পর্যন্ত আবার শুভকামনা........... :D

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:০২

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: ঠিক তাই আপু।
আমিও জানি এ সময় গল্প পড়ার নয়।
এ সময় অন্য কোনো গল্পের।

আমিও সে গল্পেই বুঁদ হয়ে আছি। তবে লেখাটা মাথায় ঘুর ঘুর করছিলো তাই লিখে ফেলা।
আমিও চাই এ গল্পের চেয়ে সেই গল্পটাই সবাই পড়ুক এবং হাতে কলমে শিক্ষা পাক সে গল্প হতেই।

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

১৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৪৮

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: ওহে রাজকন্যা! এতদিন পর উপস্থিতির জানান দিলেন? আমার চেয়েও বেশি অনিয়মিত? নাহ্, এভাবে চলে নাকি?

লেখাটা পড়লাম। নির্মম সত্যটা খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। প্রকৃতির এই যে বিচার এটা কিন্তু অবশ্যম্ভাবী। কেউ পার পায় না। তারপরও আমরা এ থেকে শিক্ষা নেয়ার চেষ্টা করি না। আফসোস!

পুনশ্চঃ আবারও ডুব দিয়েছেন মনে হচ্ছে। নাকি আমার ধারণা ভুল?

০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৬

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: না ডুব দেইনি।
আরও কিছু লেখার চেষ্টা করছি।
আপনাদের কি খবর?
হাফসা আপু আরও অনেককেই দেখছি না।

১৫| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:১৭

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: ডুব দেননি দেখে খুশি হলাম। নতুন লেখার জন্য অপেক্ষায় রইলাম। আমাদের খবর বলতে আমার খবর হল আমি ভালোই আছি। ইদানীং ব্লগে একটু কম কম আসা হচ্ছে। আর বাকিদের সাথে যোগাযোগ নেই। হাফসা আপু বেশ কিছুদিন আগে এসেছিলেন আবার ডুব দিয়েছেন। তাঁর পড়াশোনার চাপ আছে হয়ত। পুরনোরা ফিরে আসলে ভালোই লাগে। অনেকেই দীর্ঘদিন অনুপস্থিত। আশা করি সবাই আবার ফিরে আসবেন!
আপনার নতুন লেখা কবে দিচ্ছেন? বেশি দেরী করবেন না তো?

০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২৪

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন:
লেখা হলেই দিয়ে দেবো সম্রাটভাই।

ভালো থাকবেন।

১৬| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৪১

ভাইয়ু বলেছেন: প্রকৃতি কখনো কারো কাছে ঋণী থাকে না ৷ খব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন ৷ লেখাটা দারুন ছিলো.।

২০ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৫৮

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: অজস্র ধন্যবাদ।

১৭| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৩৬

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন:




শিক্ষনীয় গল্প। গল্পের বুনন সুন্দর। চিত্রগুলো বাস্তব মনে হয়েছে।

২০ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:৫৯

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: এত শুধু বাস্তব নয় অতি বাস্তব। আমাদের সংসারেরই চিত্র..

১৮| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪৩

শকুন দৃিষ্ট বলেছেন: প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয় না ....
কাউকেই না .......

বাহ্‌! রাজকন্যার বরাবরের ন্যায় রাজকন্যার মতই রাজসিক প্রত্যাবর্তন। গল্প পূর্বের মত্ই সাবলিল-সুন্দর, বর্ণণাচ্ছটাও সহজ-সরল-প্রাণ্জল, রেশ রয়ে যায় মনে ভাল-লাগার এক ঘোরের, তাও আবার লম্বা-কালের ত'রে। কবিগুরুর কথায় -

মনে রয়ে গেল মনের কথা . . . কেন মুদে আসে আঁখির পাতা ।।

সমাজ-সংসারের এই সব ছোট-ছোট ঘটনা-পন্জিগুলোকে এমন সুন্দর, মাধুর্য্য-মন্ডিত মনে হয় কখন জানেন? তার কাঠামো বা ভিত (স্ট্রাকচার) আর বলার ভঙ্গিমা/উপস্থাপনা তথা পরিবেশনার কারনে। সত্যি বলতে কি - এ দুটোর দুটোই আপনার অনেক শক্ত, শক্তিশালী ও মজবুত।

আপনি পারবেন অনেক দূর যেতে ...

ভাল থাকুন, শুভকামনা সবসময়।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২১

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ শকুনভাই।

নিশ্চয় ভালো আছেন।

১৯| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৯

করুণাধারা বলেছেন: আবার ফিরলাম, এটা আবার বলার জন্য যে, আপনার ক্ষমতা আছে খুব সুন্দর করে গল্প বলার। তো, এই গল্প বলার ক্ষমতা অবহেলিতদের সাহায্যার্থে ব্যবহার করলে খুব ভালো হবে। অবহেলিত বলছি আমাদের দেশের দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চাদের। এই বয়সী বাচ্চাদের জন্য কোন গল্প- সাহিত্য লেখা হয়নি তেমন, একমাত্র লীলা মজুমদারের কিছু গল্প আছে। এগুলো ছোট ছোট বাচ্চাদের খুব উপভোগ করতে দেখেছি। এদেশে শিশু সাহিত্য বলে যা আছে তা মূলত কিশোরসাহিত্য। আজকাল স্বপ্নবাজ সৌরভ তার রাশিয়ান গল্পের ঝাঁপি খুলে বসেছে, কি চমৎকার গল্প!! এই ধরনের গল্প আপনিও লিখতে পারেন, কারণ আপনার আছে শিশুদের জন্য ভালোবাসা আর লেখার মুনশিয়ানা। এই বয়সের বাচ্চারা এমনই যে, ভাষা বা জাতিগত কোন অপরিচয় এদের কল্পনা শক্তিকে আটকাতে পারে না। তাই বিড়ালের বেহালা বাজানো, চাঁদের উপর গরুর লাফ দেয়া- এইসব জিনিস বাংলাদেশের শিশু আর বিলেতের শিশু একই রকম ভাবে উপভোগ করে।

আশা করি ভেবে দেখবেন আমার প্রস্তাব খানা। আপনি নিশ্চয়ই পারবেন।

রাজকন্যার জন্য শুভকামনা!!!

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৫

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: করুনাধারা আপু, অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি জানিনা আমি পারবো কিনা তবে অবশ্যই এই প্রস্তাব আমার মনে থাকবে। সময় ও সুযোগ করে নিতে চেষ্টা করবো অবশ্য অবশ্য।

আপনার জন্যও শুভকামনা। ভালো থাকবেন অনেক অনেক।

২০| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৮

রাকু হাসান বলেছেন: আমার মন্তব্য যেন সামু পাগলা বলে দিয়েছেন ।তাঁর মন্তব্যে লাইক । গল্পটি আবারও পড়বো । প্রিয়তে স্থান দিলাম ।
অনেক ভালো মানের গল্প । উন্নত উপস্থাপনা ।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৭

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ রাকু হাসান। ভালো থাকবেন।

২১| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৫৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম।

প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয় না।
চরম সত্য!

দারুন মুগ্ধপাঠ :)

+++++++++++

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৭

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভৃগুভাই।

২২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২২

জুন বলেছেন: আপনার লেখায় বাস্তবতা ফুটে রয়েছে । ভালোলাগলো রাজকন্যা ।
+

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:০০

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপা।

২৩| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫৭

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: চমৎকার লিখাটি পড়তে পারিনি দেশে ছিলাম। অনেক সুন্দর লিখনী যা বরাবরই আমাকে মুগ্ধ করে। ভাল থাকবেন প্রিয় লিখিকা।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:০৬

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ সুজনভাই।

২৪| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:১৩

কাতিআশা বলেছেন: খুব ভালো লাগলে আবার তোমার লেখা পেয়ে রাজকন্যা!..।মাঝে মাঝে্ই ডুব মারো, কেন?...

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:১১

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কাতিআশা।

ডুব মারি নাতো ।


আসা হয় না আসলে।

কেমন আছেন আপু?

২৫| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৭

ওয়াহেদ সবুজ বলেছেন: মুগ্ধকর! এ রকম লেখা আরও আরও লিখিত হোক। শুভ কামনা!

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৯

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: লেখার চেষ্টা করি।

মাথায় কত কিছুই ঘোরে। শুধু সময়, সুযোগ আর ভাষায় আনা হয় না।

ধন্যবাদ সবুজভাই।

২৬| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আপনি কি নিয়ে ব্যস্ত ? আগের মত আর ব্লগে আসেন না গল্প পোস্ট দেন না।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৯

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: জীবন নিয়েই ব্যস্ত। গল্প পোস্ট দিয়েছি তো মাইদুলভাই। নাতালিয়া আমার নতুন গল্পের নাম।

২৭| ২৮ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৩

আনু মোল্লাহ বলেছেন: চমৎকার গল্প লেখেন আপনি।
শুভেচ্ছা নিবেন।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৫

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: ধন্যবাদ ! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.