নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি

মোঃ কায়েস খান মিলন

মোঃ কায়েস খান মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গজননী।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:০৬

_________________
রাতুল একজন টোকাই।ঘরে 'মা' ছাড়া আপন বলতে কেহ নাই তার।সারা দিন রাজ্যের ময়লা ছিঁড়া কাগজ,বোতল এসব জিনিস জোগাড় করে বিক্রি করে যা পায় তার সবটুকু মার আঁচলে ঢেলে দেয়।রাতুল যখন মায়ের আঁচলে তার পরিশ্রমের সব টুকু ফসল তুলে দেয়,তখন মায়ের চক্ষু গড়িয়ে দু ফোটা জল মাটিতে পড়ার আগে তার হাত খানা এগিয়ে ফোটা জল নিজের হাতে নেয়,এবং সেগুলা নিজের ময়লা কাপড়ে আতর হিসাবে মেখে নেয়।
,
আজকে রাতুল যখন রাস্তার ডাস্টবিন থেকে কিছু কাগজ কুড়িয়ে নিচ্ছিল,তখন ছিঁড়া কাগজের ভিড়ে একটা নকশা জাতীয় বা চিত্রকর্ম জাতীয় একটা কাগজ পেয়েছিল।কিন্তু আর সব কাগজের মত সে এই কাগজ টা তার থলে তে নিলো না।নকশাকৃত কাগজ টির বর্ণনা এরুপ যে,
____মহিলাটির দেহটি দীঘল ও শীর্ণ।পরনে ছেঁড়া কাপড়।খাবারের অভাবে শিশুদের পেট-পড়া,চোখ কোটর-গত।তাদের চোখে দু ফোটা করে অশ্রুজল।মনে হচ্ছে দীন-দুঃখিনী মা।চোখের জলে মায়ের মুখ ভেসে যাচ্ছে।হাতের মুষ্টিতে কিছু চাল ধরে আছেন।হয়ত ভাবছেন এ চালে কি মাস চালানো যাবে???
,
সেদিন রাতুল আর কোন কাজ করেনা।কাগজ টা নিয়ে সে মায়ের কাছে ফিরে গেল।মা কে কাগজ খানা দিয়ে বলল,
___দেখ মা!কাগজ টা কি ভারি সুন্দর।অপরুপ দেখতে দৃশ্য টি।
___হ্যাঁ খোকা!! কোথায় পেয়েছিস এই কাগজ টি?
___ঐ যে,পাড়ার উত্তর দিকে যে ডাস্টবিন টা আছে,সেখানে পেয়েছি।
,
এই কাগজ টা যিনি এঁকেছিলেন তিনি হয়ত এর মাহাত্ম্য বুঝতে পারবেন।কিন্তু এই আক্ষর-জ্ঞানহীন মা ছেলে হয়ত কিছুই বুঝতে পারবেনা।যদি আত্মিক বা দৈব্যকর্ণ প্রাপ্ত হয়ে বুঝতে চেষ্টা করেন তাহলে হয়ত বুঝতে সক্ষম।কারন মানুষের চিন্তাধারা খুব প্রকর।একটু চেষ্টা করলে কিছু বিষয়ে একটা না একটা ধারনা দিতে পারে মানুষ।
,
কিন্তু রাতুলের কুড়িয়ে পাওয়া চিত্রের বর্ণনা অনুসারে আমার দৈব্যকর্ণ প্রাপ্ত কিছু কথা।যা হয়ত সঠিক নাও হতে পারে।সবার চিন্তার জগত হয়ত সঠিক হতে পারেনা।
,
স্নেহময়ী মায়ের চিত্র সব দেশে একই।মাতৃহৃদয়ের গতিপ্রকৃতি সমান।স্নেহের উতলতা,ব্যাকুলতা,শঙ্কা,আভেগ,ভালবাসা কোন মা না অনুভব করে??কিন্তু দেশ ভেদে এর ধরন ভিন্ন হতেও পারে।যেমন__ফুল একই,কিন্তু দেশের মাটির গুণে সেটা ভিন্ন হয়।বাংলার মা শুধুই বাঙালীরই মা।এ দেশের মায়ের কথা মনে হলে চোখের সামনে ভেসে উঠে বাংলার সবুজ প্রকৃতি।বাঙালি মায়ের কখনও তাঁর সীতের তাপসী মূর্তি,কখনও মুখে ফুটে উঠে বসন্তের উচ্ছালতা,কখনও চোখে বর্ষার প্লাবন।আবার কখনও শীতের প্রশান্তিময় হাসি।তখন মনে হয়__মায়ের মুখে যেন উদার আকাশ ভেসে উঠে,চোখ দুটি জোড়া কমল,বুকে গঙ্গা-মধুমতীর ধারা।তাঁর গায়ে জেন বাংলার মাটির মিষ্টি গন্ধ লেগে আছে।তাকে জড়িয়ে ধরলে সেই মিষ্টি গন্ধ জেন আতরদান এর মত মনে হয়।
,
পাখী যেমন দিনের সিংহভাগ জানা-অজানা দেশে ঘুরে দিনের শেষে সায়ংকালে তার ছায়ানিবিড় ঘরে ফিরে আসে প্রশান্তি খুঁজে,তেমনি বাংলার রাখাল বালক,সারা দিনে মাঠের নিদাঘতপ্ত রোদে পুড়ে বেলা অবসানে যখন মায়ের কোলে মাথা রেখে চক্ষু পাতা এক করে তখন দিনের সব শ্লেষ যেন নিমিষেই অজানা সুরে মিশে যায়।গ্রাম-বাংলার কবিরাও বলে গেছিলেন এক সময়,___'মায়ের রাও পবনের বাও।'
,
বাঙলি মায়ের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট আছে,তাদের বুকে থাকে অঢেল স্নেহ,আর মুখে ঝরে সুখের হাসি।
,
কিন্তু কখনো কখনো মায়ের মাতৃমূর্তির পানে তাকিয়ে কেন যেন দু চোখ ভরে আসে চক্ষুজল।মায়ের স্নেহ ভরা মুখখানি বড় করুন।তার সোহাগে কোথাও যেন বেদনার ছোঁয়া।যখন সংসারে নেমে আসে অভাবের আকাশ।বাংলার মায়েদের মুখ হচ্ছে,শিশিরঢাকা চাঁদের মত,জলে ভেজা সবুজ প্রকৃতির মত।যার প্রকৃতিময় মুখখানার দিকে তাকালে অন্যরকম এটা প্রশান্তির ভাব দেখা যায়।
,
চক্ষুদয় স্নিগ্ধ অথচ সজল,মধুর অথচ ছলছল।যেন 'কাঁদিতে সৃজলা বিধি অভাগী মায়ের।এরুপ প্রকৃতির একটাই কারণ বলে সবাই ভাবে,'অভাবের সংসার' তাই।হতেও পারে,কিন্তু সঠিক নয়।
,
যাঁদের আবার সম্পদ নেই,তারাও শিশুকে নিয়ে স্বর্গ রচনায় ব্যস্ত থাকেন।শিশুকে ঘিরে মায়ের বুকে 'কত স্বপ্ন ভাসে,কত স্বপ্ন ভুনে,কত স্বপ্ন হাসে।আবার দেখা যায় কুঁড়েঘরে চাঁদের হাট বসে।
,
বাঙালী জননী হচ্ছে নদীমাতৃক বাংলার পর্ণ চিত্র।নদীগর্ভ'এ মানষ যেমন,তাদের আবর্জনা,বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ,কয়লা-কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ফেলে,তখন নদী এসব ফেলার অপরাধ কে অপরাধ বলে গণ্য না করে সব ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়,তেমনি বাঙালী জননী স্নেহের ঐ আতিশয্য অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের সহস্র অপরাধ কে অপরাধ বলে গণ্য না করে ছেলেকে বুকে টেনে নেয়। এরুপ দৃশ্য নিয়ে একটা ছন্দ আছে,বলি শোনেন।
'পরের ছেলে ছেলেটা,খায় যেন এতটা,
চলে যেন বাঁদরটা।
নিজের ছেলে ছেলেটি,খায় যেন এতটি
চলে যেন ঠাকুরটি।'
হঠাৎ মায়ের বাবা ডাক শোনে আমার ভাবনা জগতের ইতি ঘটলো।
,
আজ আর নয়।আবার দেখা হবে অন্যদিন,অন্য চরিত্রে,অন্য গল্পে,অন্য যায়গায়,অন্য দৃশ্যে।
,
____________খোদা হাফেজ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.