![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মূল+ষ্ণ = মৌল।আক্ষরিক অর্থে এ(মৌল) সম্পর্কিত মানসিকতা বা মতবাদই মৌলবাদ।মৌলবাদের ইংরেজী প্রতিশব্দ ফান্ডামেন্টালিজম।এর বাংলা প্রতিশব্দ মৌলবাদ নামে পরিচিত হলেও এ নিয়ে মতদ্বৈততা আছে বিজ্ঞজনদের মাঝে।অনেকে বলেন, শব্দটির বাংলা হওয়া উচিত ছিল ভৈত্তিকতা (ফান্ডামেন্টাল >ভিত্তি > ভৈত্তিকতা) ।ভিত্তিকে আঁকড়ে থাকার যে মানসিকতা তাকেই ভৈত্তিকতা বলা যায়।এই ‘ভিত্তি’ কোন বিশেষ চিন্তাপদ্ধতি,মতাদর্শ,ধর্মমত ইত্যাদির ভিত্তি হিসাবে যে কথাবার্তা বলা হয় তাকেই বোঝায়।আমরা এই ভৈত্তিকতা অর্থেই মৌলবাদ শব্দটি ব্যবহার করি।সংকীর্ণ অর্থে ঠিক এ জায়গাটিকেই (ধর্মের আদি ও অকৃত্রিম অবস্থা মেনে চলা)চিহ্নিতকরে ধর্মের এজাতীয় মানসিকতা সম্পন্ন গ্রুপকে মুসলিম-মৌলবাদী, হিন্দু-মৌলবাদী ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করা হয়, যদিও মৌলবাদের প্রকৃত সংজ্ঞা থেকে তা বহুদূরে।
ইংরেজী শব্দ ‘ফান্ডমেন্টালিজম’ এর অনুপ্রেরনায়ই বাংলা ‘মৌলবাদ’ শব্দের সৃস্টি।আবার ফান্ডামেন্টালিজম শব্দের উতপত্তি হলো মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে।ওয়েবস্টারের অভিধানগুলি অনুসারে -মৌলবাদ মার্কিন প্রোটাস্ট্যান্টদের আপন শ্রেষ্ঠত্ব উদ্ভুত রক্ষনশীলতা।যেহেতু ফান্ডামেন্টালিজমের জন্ম মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে তাই মার্কিন অভিধানের অর্থই গ্রহনীয়।
মৌলবাদ বা ফান্ডমেন্টালিজম বিগত শতাব্দীতে আমেরিকার প্রোটেস্টান্ট-খৃস্টান গোষ্ঠীগুলির মধ্যে উদ্ভব হয়েছিল।এদের কিছু চারিত্রিক বৈশিস্ট্যও ছিল যেমন- ধুমপান না করা, মদ জাতীয় পানিয় ব্যবহার না করা,নাচ বা পার্টিতে অংশগ্রহন না করা,সিনেমা-নাটক নাদেখা ইত্যাদি।এরা এসকল নিয়মাবলী বা কাজগুলি খুব কঠোরভাবে পালন করত/মেনেচলত বা করে/চলে।এদের নিজস্ব ফান্ডামেন্টালিস্ট কলেজ ও বাইবেল ইনস্টিটিউট রয়েছে।ছোট ছোট গ্রুপ গুলির মধ্যে উপাসনা পদ্ধতিতে কিছু পার্থক্য থাকলেও মূলত: ধর্মের ক্ষেত্রে এরা যাজকের ভূমিকাকে(পোপতন্ত্র) অস্বীকার করে।
এরা বাইবেলকে অপরিবর্তনীয় বিতর্কাতীত ও সর্বোচ্চ গ্রন্থ হিসাবে স্বীকার করে এবং সর্বোপরি বাইবেলের কোনরূপ সমালোচনা বা পরিবর্তনকে সহ্য করে না।একই সংগে খৃস্টানধর্মের প্রাচীন আচার পদ্ধতিকে নুতন করে প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারটিকে ওরা প্রয়োজনীয় মনেকরে করে।এর সংগে আধুনিকতা/ মডার্নিজম, আধুনিক মতাদর্শগত বিতর্ক,যুক্তিবাদ ইত্যাদি এবং বিশেষত বিবর্তনবাদ ও এই ধরনের আধুনিক দৈত্য/ডেমনদের ঘৃণার সংগে পরিহার করার মানসিকতা এঁদের বিশেষ চারিত্রিক বৈশিস্ট্য।
প্রকৃতপক্ষে ১৮৯৫ সালে খৃস্টান সংস্কারপন্থীরা অ্যাংলো-স্যাক্সন প্রোটাস্ট্যান্টদের অগ্রাহ্যকরে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্ব ও স্বীকৃতি দেয়ার কথা যখন ঘোষনা করে তখন -(১)খৃস্টান ধর্ম পুস্তকগুলির অপরিবর্তনীয় ও আক্ষরিক ব্যাখ্যাকে এবং সেগুলির চরম অবস্থাকে খৃস্টানধর্মের মূলভিত্তি হিসাবে গ্রহন করা।(২)জেসাস/যিশু/ইসা(আ) শিগগিরই সশরীরে দ্বিতীয়বার আবির্ভূত হতে যাচ্ছেন- এ সম্পর্কিত বিশ্বাস।(৩)কুমারী মায়ের গর্ভে(ভার্জিন মেরী)তাঁর জন্ম সম্পর্কিত বিশ্বাস।(৪)পূনরভ্যুত্থান/রিজারেকশন সম্পর্কিত বিশ্বাস এবং(৫)প্রায়শ্চিত্ত - এই পাঁচটি মূল সূত্রকে চিরন্তন সত্য বলে ব্যাখ্যা করে প্রোটাস্ট্যান্ট গ্রুপগুলি “The Fundamentals : A testimony to the truth” নামক বার খন্ডের বিখ্যাত পুস্তকমালা প্রকাশ করে এবং সেই থেকেই ওরা ‘দি ফান্ডামেন্টালিস্ট’ বা ‘মৌলবাদী’ বলে পরিচিত হয়।
দেখা যাচ্ছে আমেরিকাতেই সর্বপ্রথম ‘আমেরিকান প্রোটেস্টানিজম’ থেকে রক্ষণশীল ধর্মীয় আন্দোলনের ভিতর দিয়ে “ফান্ডামেন্টালিজম” এর ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।এটা সম্পূর্নরূপে মার্কিন খৃস্টিয়-প্রোটাস্ট্যান্টদের ধর্মীয় রক্ষনশীলতা যার ইশ্বরপ্রদত্ত দাবী হলো- প্রোটাস্ট্যান্ট ধর্মই বিশ্বের শ্রেষ্ঠধর্ম,তাই ইশ্বরের ইচ্ছা মোতাবেক পৃথিবীর সকলের ওপর প্রভূত্ব করার অধিকার একমাত্র মার্কিনীদের।এবং বিগত কয়েক দশকের কার্যকলাপ বিবেচনা করলে মনে হয় মার্কিনীরা এই তত্ত্বের সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় এই খৃস্টান মৌলবাদ সৃস্টির পিছনে কাজ করেছে- “যিশুর ‘দ্বিতীয় আগমন’ হতে চলেছে এবং পরবর্তী একহাজার বছর ধরে অপার শান্তির যুগ আসছে” এমন একটি বিশ্বাস থেকে।এ ধারনাটি ১৮৩০-৪০ সালের দিকে আমেরিকা-ইওরোপে প্রচন্ড আলোড়ন ও উত্তেজনার সৃস্টিকরে।এ থেকেই শুরু হয় মিলেনারিয়ান আন্দোলন।আর সময়ের আবর্তে এই মিলেনারিয়ান আন্দোলনের হাত ধরেই খৃস্টান ফান্ডমেন্টালিজমের উত্থান।আরও পিছনে গেলে দেখা যাবে সম্ভবত নতুন পৃথিবী আমেরিকার ইওরোপীয়(বিশেষত ইংলিশ)সেটলার ‘পিউরিটান খৃস্টান সমাজের’ হাত ধরেই এর সূচনা এবং আরেকটু পিছনে গেলে দেখা যাবে ইওরোপীয় রেঁনেসাস বা ধর্মসংস্কার আন্দোলন এর মূল সূতিকাগার।আসলে এই সমস্ত ঘটনাপ্রবাহ একই সূত্রে গাঁথা।
বাংলা ভাষায় মৌলবাদ শব্দটির ব্যবহার খুব বেশী দিনের নয়।উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগের আগে বাংলার কোন প্রতিষ্ঠিত লেখক,প্রাবন্ধিক,কবি বা সমাজসংস্কারক কারো লেখাতেই মৌলবাদ শব্দটির ব্যবহার দেখা যায় না।এমনকি আমরা দেখেছি ১৯০০ শতাব্দীর আগে ইংরেজীতেও শব্দটির অস্তিত্ব ছিল না।‘মুসলিম মৌলবাদ’/হিন্দু মৌলবাদ শব্দগুলি জনপ্রিয় হয়েছে মূলত: এ অঞ্চলের কিছু মুসলিম ও হিন্দু (শিবসেনা, আরএসএস, তালেবান, আলকায়দা)গ্রুপের কার্যাকলাপের ফলে।তবে শব্দটির অপপ্রয়োগই বেশী হচ্ছে।আধুনিক মুসলিম মৌলবাদের শুরু ইরান বা আফগানিস্তানে সত্তর দশকের শেষের দিকে।কিন্তু দেখা যায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর একশ্রেনীর ইংরেজী শেখা আধুনিক(!)মানুষ সাধারনভাবে মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্র, ইমাম-মোয়াজ্জিন,মিলাদ ও বিষেশাদি পড়ানো মৌলভী এবং অতিমাত্রায় নামাজ-কালাম পড়া মুসলিমকে কাঠমোল্লা,ধর্মান্ধ,কুসংস্কারাচ্ছন্ন ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করত এবং সম্ভবত পঁচাত্তর পরবর্তীকালে ইসলামধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল বিশেষত জামাতের রাজনীতি শুরুর পর(1976 এরপর)মৌলবাদ শব্দটির ব্যবহার জোরেসোরে ও যত্রতত্র শুরু হয়েছে।এখন বিষযটি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে,দেশের নতুন প্রজন্মের মধ্যে এমন অনেক প্রগতিবাদী তরুন-তরুনী আছে যারা মুসলিমদের টুপি,দাড়ি,নামাজ,রোজা,এমনকি দাঁত মেছওয়াক করাকেও মৌলবাদী আচরণ বলে মনেকরে।সামগ্রিকভাবে এখন শিল্প, সাহিত্য,নাটক,নভেল যাতেই ইসলামের গন্ধ পাওয়া যায় তাকেই মৌলবাদ আখ্যায়িত করার একটা রেওয়াজ/ট্রাডিশন বেশ জোরেশোরেই চালু হয়ে গেছে।আসলে ওরা ধর্মীয় গোড়ামি আর মৌলবাদকে এক করে ফেলেছে।কিন্তু এ দুটি কখনোই এক বিষয় নয়।
প্রকৃতপক্ষে সর্বকালেই মুসলিম বিশ্বে মৌলবাদ((ধর্মের আদি ও অকৃত্রিম অবস্থা মেনে চলা অর্থে) এক স্বত:সিদ্ধ আকাঙ্খা।ইসলামের জন্মলগ্নে যা কিছু ছিল তার আক্ষরিক পুন:প্রকাশ ও পুন:প্রবর্তন চাই- ইসলামের ইতিহাসে বারবার উঠেছে এই দাবী।ইসলামীকরণ যেহেতু একটি নিত্যঘটমান ধারা তাই আরব মরুভূমি থেকে এই ধর্ম যত আরব বহির্ভূত পৃথিবীতে ছড়িয়েছে,যত ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ও জনগোষ্ঠির পরশে এসেছে ইসলামি ধর্মতাত্ত্বিকগন অনুভব করেছেন আরবের ইসলাম আর এই ইসলাম এক নয়।ততই তাঁরা শুদ্ধিকরণের দিকে ঝুঁকেছেন।আর বলেছেন আক্ষরিক অর্থে ধর্মপালন করার অর্থই হলো ধর্ম রক্ষা করা।
একটি কথা মনে রাখা আবশ্যক,ইসলামি মৌলবাদের সাথে খৃস্টিয় মৌলবাদের মৌলিক পার্থক্য হলো- খৃস্টিয় মৌলবাদ যেখানে নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বর দ্বারা পৃথিবী শাসন করতে চায়, ইসলামি মৌলবাদ সেখানে রাসুল(সা) বা খুলাফায়েরাশেদিনের প্রতিষ্ঠিত ন্যায় ভিত্তিক সমাজকে পূন:প্রতিষ্ঠিত করতে চায় মাত্র।কোরআনে পরধর্মের প্রতি বিদ্বেষের কোন স্থান নেই।কোরআন শুধু মুসলিমের মুক্তির কথা বলে না,সমগ্র মানব জাতির কথা বলে।একারনে দেশে যারা ইনসাফভিত্তিক রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়,তা বাস্তবায়নে তাদের মধ্যে যুগোপযোগী চিন্তার অভাব থাকতে পারে,সীমাবদ্ধতা ও অযোগ্যতা থাকতে পারে কিন্তু তাদের ভাবনা বা আকা
©somewhere in net ltd.