নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যত মত তত পথ

কাজী মাহমুদ রুম্মান

১২৩৪৫৬

কাজী মাহমুদ রুম্মান › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাচীন মিশরীয়দের পরকাল ভাবনা ও তার প্রভাব :

০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৩০



মানুষ কি করে আত্মা, পরকাল সম্পর্কে ভাবতে শিখেছে? অন্যান্য প্রানীর মতো মানুষের মৃত্যুও অবধারিত ছিল সর্বকালে।তাহলে মানুষের সাথে অন্যান্য প্রানীর পার্থক্য কি ? সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেন, অন্যান্য প্রানীর থেকে মানুষের এই স্বাতন্ত্রবোধ এবং অনন্ত জীবনের আকুতিই সৃস্টি করেছে আত্মার এবং পরকালের ভাবনা।আর এই ভাবনাই মানুষকে নিয়ে গেছে উচ্চ থেকে উচ্চতর স্তরে।সৃস্টি হয়েছে পরকাল বিষয়ক নানা মতবাদ।ক্রমান্বয়ে সেখানে ঠাঁই পেয়েছে জাগতিক ভাল-মন্দের পরিনতি এবং ইনসাফ-সুবিচারের তীব্রআকুতি।নিশ্চিতভাবেই এটা মানুষের বিবেক জাগ্রত হওয়ার প্রমান।

পরকাল বিষয়ক সুসংগঠিত ভাবনার প্রকাশ সর্বপ্রথম দেখা যায় মিশরীদের ইতিহাসে।মৃত্যুর পর ভালো-মন্দের হিসাব নিকাশ সংক্রান্ত ধারনাও সর্বপ্রথম মিশরীয় সমাজেই দেখা যায়।মিশরীয় পিরামিডে উতকীর্ণ বাণী এবং অন্যান্য প্রাচীন কাগজপত্র(হায়ারোগ্রাফি) থেকে এরকম ধারনাই পাওয়া যায়।

মিশরীয় শাসনকর্তা আখনাতুন এর শাসনামলেই মিশরে সর্বপ্রথম তৌহিদের/একত্ববাদের একটা রূপ গড়ে ওঠে।এটা তিনহাজার বছর আগেকার কথা।এরপর পূর্ব মিশরে পরকালের হিসাব-নিকশের ধারনার সূত্রপাত হয়।এর একহাজার বছর পর ব্যবিলনীয়দের(কালাদীয় সভ্যতার যুগে) মাঝে গড়ে ওঠে পরকালের ধারনা।তবে মৃত ব্যক্তিদের ফয়সলা করার মতো স্বাধীন আদালতের ধারনা সেখানে তখনো অনুপস্থিত।

যে সময়ের কথা বলছি তখন মিশরীয়দের প্রধান দেবতা ওরিসিস।এই দেবতার পুজা সারা মিশরেই ছড়িয়ে পড়েছিল এবং পরিনত হয়েছিল জাতীয় পুজায়।ওরিসিস পুজার প্রথম ভিত্তি ছিল-মানুষ সে যেই হোক না কেন মৃত্যুর পর তাকে খোদায়ী আদালতে দুনিয়ার কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে।এটা রাজা বাদশা থেকে সমাজের অন্তজশ্রেনী সকলের জন্যই বাধ্যতামূলক।মানুষ পরকালে যে বিচারের সম্মুখীন হবে তার স্বরূপ হচ্ছে, দুনিয়ার অর্থ-বিত্ত, শানশওকতের কোন বিবেচনা তাতে থাকবে না।

ওরিসিস নিজেই সেই বিচারের ভার গ্রহন করেছিলেন।আর একাজে তাকে সাহায্য করত থোট(thought), আনুবিস(anobis),হোরিস(horus), এবং মিথ/মাইথ(myth) নামক চারজন দেবতা/দেবী।থোট ছিলেন জ্ঞানের দেবতা,আনুবিস মৃত ব্যক্তিদের কাফন-দাফনের জন্য দায়িত্বীল এবং পরকালে তাদের নেতা,হোরীস হলো ওরিসিস ও ইজিসয়ের পুত্র আর মিথ ছিলেন বাস্তবতা ও সুবিচারের দেবী।তারসাথে আরও থাকতেন ৪২জন বিচারপতি।সেটাকে ততকালীন মিশরের ৪২টি বিভক্ত অঞ্চলের প্রতীক বলে মনেকরা হয়েএকেকজন বিচারপতি যেন একেকটা অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

কোন মৃত ব্যক্তিকে হাজির করা হলে আনুবিস তাকে গ্রহন করত এবং তার হৃদপিন্ড বের করে দাড়িপাল্লায়/মীযানের একপাশে স্থাপন করত।এখানে দাড়ি পাল্লয় স্থাপিত হৃদপিন্ড যেন মৃত ব্যক্তির সারা জীবনের কর্মের প্রতিকৃতি।অপর পাশে দেয়া হতো মাইথদেবীর পালক(বাস্তবতা ও সুবিচার)।অত:পর থোট দেবী মীযানের পাশে এসে দাঁড়াতেন।তার ডানহাতে থাকত কলম আর বামহাতে থাকত বাধানো বই/বালাম বই।এতে রেকর্ড করা হতো পরিমাপের ফলাফল।সে এটা ওরিসিসের হাতে অর্পন করত।
বিচার বিভাগ যদি এ রায় দিতেন যে,মৃত ব্যক্তির খারাপ কাজের চেয়ে ভাল কাজের পরিমান বেশী তবে তাকে দান করা হবে চিরন্তন সুখ-স্বাচ্ছন্দের উপকরণ আর সে হবে ওরিসিসের মত।আর যদি বিচার বিভাগ থেকে এরায় দেয়া হয় যে,মৃত ব্যক্তি জীবদ্দশায় খারাপ কাজ বেশী করেছে তবে তার শাস্তি হবে এই যে,তাকে হিংস্র জন্তু বিদীর্ণ করে খাবে।অথবা তাকে নিক্ষেপ করা হবে জলন্ত অগ্নিকুন্ডে অথবা দেয়া হবে অন্য ধরনের শাস্তি।থোটের কাছে দাঁড়ানো থাকত ইমাবিথ নামের এক হিংস্র জন্তু,যার মাথা হচ্ছে কুমিরের মতো আর শরীর সিংহের মতো।মৃত ব্যক্তিকে গিলে খাওয়ার হুকুম হলে সে সাথে সাথেই আদেশ পালন করত।

একাহিনীর প্রধান গুরুত্ব হলো, এ থেকে পরকাল সম্পর্কে প্রাচীন মিশরীয়দের দৃস্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে।এরই ধারাবাহিকতা আমরা দেখতে পাই পারবর্তীকালে সে অঞ্চলে প্রচারিত জরথ্রুস্ট এবং পরবর্তী সমস্ত সেমেটিক ধর্মে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:০৭

ফাহাদ মুরতাযা বলেছেন: আপনার সেফ হওয়ার আগের লেখা গুলা মুছে আবার রিপোস্ট করেন, তাইলে অন্যরা পড়তে পারবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.