নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খালিদ আলম

খালিদ আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রশ্নপত্র ফাঁস: সবকিছু ভেঙে পড়েছে..

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৯

মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কি ফাঁস হয়েছে? চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের একটা রিপোর্টে দেখলাম, একজনের সাক্ষাৎকার দেখানো হচ্ছে, পরীক্ষার্থী। তিনি বলছেন, তিনি প্রশ্ন পেয়েছিলেন এবং তা পরীক্ষার হলে মিলেও গেছে। নানা জনে আমার ফেসবুকের ইনবক্সে অভিযোগ করেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। রাস্তায় প্রতিবাদও হচ্ছে। তবে ফেসবুকে ছড়ানো ইনবক্স মেসেজের স্ক্রিনশট প্রমাণ হিসেবে ততক্ষণ পর্যন্ত একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়, যতক্ষণ না আইটি বিশেষজ্ঞ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হচ্ছে যে, এগুলো বানানো নয়।

আমি শুধু চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের খবরটা দেখেছি। একজন বলছেন, তিনি প্রশ্নপত্র পেয়েছিলেন। আমার উদ্বেগের জন্য এই একটা খবরই যথেষ্ট। আমি মনে করি, পুরো জাতিরই উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, একজন পরীক্ষার্থীও যদি বলেন, আমি পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র পেয়ে গিয়েছিলাম। এক বালতি দুধ নষ্ট করার জন্য যেমন এক ফোঁটা চোনাই যথেষ্ট, এবারের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কি হয়নি, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হওয়ার জন্য এই একজনের কথাই যথেষ্ট।

প্রশ্নপত্রের ফাঁস রোধ করা সত্যিই কঠিন। এর কারণ সার্বিক অবক্ষয় মূল্যবোধের। সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা—এটা অতীতকাল এবং এটা বহির্বিশ্বের। সমকালের স্বদেশে সততা সর্বোৎকৃষ্ট হতে পারে, সবচেয়ে কার্যকর নয়। আমরা যে আগে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হতাম, এখনো মেরিট লিস্টে থাকি, সে কথাটা ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের পক্ষে বুক ফুলিয়ে বলা অসম্ভব যে, আমাদের সচিবালয় বা যেকোনো সরকারি অফিসে কেউ দুর্নীতি করেন না। আমাদের সংবাদমাধ্যমও কি ধোয়া তুলসিপাতা? আমরা দেখছি, দুর্নীতিবাজরা সবখানে ভালো করে, আর আমরা ফুলের মালা নিয়ে তাঁদের গলায় পরাই। তাঁরা আমাদের উপদেশ দেন, ‘সৎ হও, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ো।’ আমরা হাততালি দিই।

কবি ইয়েটস লিখেছিলেন, ‘থিংস ফল অ্যাপার্ট’। একই নামে উপন্যাস লিখেছিলেন চিনুয়া আচেবে, আর বাংলায় উপন্যাস লিখেছিলেন হুমায়ুন আজাদ ‘সবকিছু ভেঙে পড়ে’। আমাদের মূল্যবোধের সবকিছু ভেঙে পড়ছে, তাসের ঘরের মতো। প্রশ্নপত্র ফাঁস সেই সার্বিক অবক্ষয়ের একটা সামান্য নমুনা কিংবা লক্ষণ। এটা রোগ নয়, এটা লক্ষণ।

প্রশ্নপত্র ফাঁস করি কেন? তাতে টাকা পাই। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা, তা ছাপানো, তা বিলি করা, তা হলে হলে পৌঁছানো—এতে অনেক মানুষ জড়িত, যেকোনো একজন যদি একটা কপিও বাইরে ছড়ান, তাহলে তা ছড়িয়ে পড়বে দাবানলের মতো, হু হু করে। ইন্টারনেটের যুগ। তথ্যপ্রযুক্তি দূর করেছে নিকট, পরকে করেছে আপন, দূরের প্রশ্নপত্রকে কাছে আনছে দ্রুত। একটা প্রশ্নপত্র লাখ টাকায়ও বিক্রি হয়। যিনি করেন, তিনি করবেন, এতে তাঁর সহজে টাকা আসবে। আর যিনি কিনছেন? তিনিও কিনবেন, কারণ ডাক্তার তাঁর ছেলে বা মেয়েকে হতেই হবে। এই দৌড়ই আমাদের সব সর্বনাশের মূলে। আমরা লালসার প্রতিযোগিতায়, লোভের প্রতিযোগিতায় ইঁদুর দৌড়ে শামিল হয়েছি। সফল আমাকে হতেই হবে।

ডাক্তারি পড়তেই হবে কেন? না পড়ে কী পড়ব? কোথায় চান্স পাব, বলতে পারেন? কোথাও চান্স না পেলে চান্স পাবে না, জীবন কি তাতে বৃথা হয়ে যাবে? আইনস্টাইন কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ একের পর এক স্কুল বদলেছেন, পাস করতে পারেননি। এ পি জে আবদুল কালাম হতে চেয়েছিলেন বিমানবাহিনীর পাইলট। বিমানবাহিনীর ভর্তি পরীক্ষায় তিনি হলেন নবম, আর নেওয়া হলো কিনা আটজনকে। তিনি নদীর ঢেউ গুনছেন, এই জীবন রেখে আমি কী করব। তখন দেখা পেলেন এক স্বামীজির, স্বামীজি তাঁকে বললেন, ‘হয়তো নিয়তি তোমার জন্য অন্য কোনো কিছু নির্ধারণ করে রেখেছে, হয়তো সেটা আরও ভালো হবে। যাও বৎস, ওঠো। নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করো।’ তিনি নতুন জীবন শুরু করলেন, নিয়তি তাঁকে শেষ পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতি পদ পর্যন্ত পৌঁছে দিল।

কাজেই আমি বলব, আমাদের এই অর্থহীন প্রতিযোগিতার বাইরে আসতে হবে। বিশেষ করে, ছেলেমেয়েদের, বিশেষ করে অভিভাবকদের।
আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা বোর্ডের যাঁরা পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের বলব, ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর পরামর্শটা নিন, পাঁচ সেট প্রশ্নপত্র তৈরি করুন। পরীক্ষার দিন সকালে খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে, ই-মেইল করে, ফোন করে জানানো হবে, কোন সেট আসবে। পাঁচ সেটের প্রশ্নে পুরো সিলেবাস কভার করা থাকবে। যাহ, পুরো বই মুখস্থ করে যা। এই সহজ বুদ্ধিটা কেন নিচ্ছেন না পরীক্ষা পরিচালকেরা?

গত কয়েক দিনে ঢাকার অনেক কটা স্কুলে আমাকে যেতে হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞেস করি, ‘তোমরা কী হতে চাও?’ ৯০ জন ডাক্তার, ৫ জন ইঞ্জিনিয়ার, বাকি ৫ জন এটা-ওটা। ভয়াবহ ব্যাপার! একটা দেশের সবাই ডাক্তার হতে চাইছে কেন?
জীবনের সার্থকতা কিসে? ডাক্তার হওয়ায়! তাহলে চে গুয়েভারা ডাক্তার হয়েও বিপ্লবী হতে গেলেন কেন? সবার ডাক্তার হতে চাওয়ার দরকার নেই, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ারও দরকার নেই। জীবন সবার জন্য সোনার মেডেল রেখেছে। আমরা যারা ডাক্তার নই, তারাও জীবনে খারাপ কিছু করছি না

http://www.prothom-alo.com/opinion

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৯

তাশফিয়া নওরিন বলেছেন: Sotto kotha vai but amra khub kom lok bujta pari aiso

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.