নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খালিদ আলম

খালিদ আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বব্যাপী মৌলবাদ, মৌলবাদী ও চরমপন্থির ধারণা ও এর কতিপয় যুক্তি

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০৮

মৌলবাদ । কথাটি মূলত এসেছে ইংরেজি শব্দ Fundamentalism থেকে । বিশ্বব্যাপী শব্দটির অত্যন্ত আলোচিত-সমালোচিত । এর ব্যবহার নিয়ে রয়েছে নানান জলপনা কল্পনা। গুগলে খোজ নিয়েও এর সঠিক অর্থ বুঝে উঠা অত্যন্ত কষ্ঠকর। বিভিন্ন ব্যক্তি শব্দটির ব্যবহার নিয়ে নিজেদের যুক্ত তুলে ধরেছেন সেগুলো থেকে কিছু যুক্ত নিচে তুলে ধরছিঃ

বাংলাপিডিয়ার তথ্য মতে,
উৎপত্তিগত দিক থেকে মৌলবাদ (Fundamentalism) একটি খ্রিস্টীয় শব্দ হলেও বর্তমানে শব্দটি ইসলাম ধর্মসহ অন্যান্য ধর্মীয় চরমপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। মৌলবাদ শব্দটি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশে মৌলবাদ বলতে যেকোনো ইসলামি আন্দোলনকে নির্দেশ করে যারা কোরান ও শরিয়ার শিক্ষাকে কঠোরভাবে মেনে চলার পক্ষে মত প্রদান করে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে এবং ধর্মীয় রীতি-নীতি কঠোরভাবে মেনে চলার অর্থে ‘মৌলবাদ’ শব্দটির উৎপত্তি খ্রিস্টীয় ‘মৌলবাদী’ (Fundamentalists) শব্দ থেকে হয়েছে।

উনিশ শতকের শেষের দিকে ও বিশ শতকের শুরুতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে খ্রিস্টীয় মৌলবাদ লক্ষ্য করি। খ্রিস্ট মৌলবাদীরা প্রচন্ডভাবে আধুনিক নব্য প্রবর্তিত রীতি-নীতির বিরোধিতা করে, কারণ তারা মনে করে আধুনিকপন্থীরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে বাইবেলের বিশ্বস্ততা ও সঠিকতার ভিত্তি দুর্বল করেছে।

মৌলবাদী ধ্যান-ধারণা অনুশীলনের ক্ষেত্রে ইহুদিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং তারা সবচেয়ে জঙ্গি মনোভাবাসম্পন্ন। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইহুদিবাদকে সবচেয়ে জঙ্গি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইহুদিবাদীরা তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ তোরা এবং তালমুদ-এ উল্লিখিত ধর্মীয় আইন ও নৈতিক নির্দেশনাকে কঠোরভাবে মেনে চলার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দেয়। এই নির্দেশ অমান্যকারীকে সমাজচ্যুত করা হয়।

পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ, গণ দারিদ্র্য এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্থানচ্যুতির প্রেক্ষাপটের বিরুদ্ধে ‘শুদ্ধি’ নামে এক হিন্দু মৌলবাদী আন্দোলন শুরু হয়। দয়ানন্দ সরস্বতীর নেতৃত্বে শুদ্ধি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মে পূর্বে যে সকল হিন্দু ধর্মান্তরিত হয়েছে তাদের পুনঃধর্মান্তরিত করা। এই আন্দোলনের সাফল্য তাবলিগ জা’মাতকে শুদ্ধি আন্দোলনে পুনঃধর্মান্তরিত দরিদ্র মুসলমানদের ইসলামের মূলনীতি শিক্ষা দিতে আরো সক্রিয় করে তোলে।

ইরানে ব্যাপক ইসলামি বিপ্লবের (১৯৭৮-৭৯) পর পশ্চিমা দেশসমূহ ইসলামি মৌলবাদী ধারণা আবিষ্কার করে। ইরানের এই ইসলামি বিপ্লব যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত রেজা শাহ পহলবিকে (১৯১৯-৮০) ক্ষমতাচ্যুত করে এবং তাঁর সকল আধুনিক সংস্কারের বিলোপসাধন করে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, ইসলামের মূলনীতি ও বিদেশি প্রভাবমুক্ত ইসলামিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ইরানের বিপ্লব ছিলো ইরান থেকে আমেরিকার আধিপত্য উচ্ছেদ করা। আরো অবিশ্বাস্য বিষয় হচ্ছে, বলা হয় টুইন টাওয়ার ঘটনা (১১ সেপ্টেম্বর ২০০১) আল-কায়দা দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। এ দুটি অজুহাতসন্ধানী ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামি পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে বিস্তর লেখা-লেখি শুরু হয়, এবং এর ফলে পাশ্চাত্যে তথাকথিত ইসলামি মৌলবাদী ধারণা জন্মলাভ করে।

১. যুক্তি
মৌলবাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ- কোনো মতবাদের অবিকৃত মূলতত্ত্ব। যেকোনো বিশ্বাস,মতবাদ,আইনের সম্পূর্ণ পদানুসারী হওয়াই মৌলবাদ,আপনি তখনি একজন মৌলবাদী যখন আপনি কোনো নিয়মের সকল মূল বিষয় মেনে চলবেন! এক্ষেত্রে খেয়াল করবেন মৌলবাদ এর বহু প্রকারভেদ থাকতে পারে। যেমনঃ ধর্মীয় মৌলবাদ,রাজনৈতিক মৌলবাদ, আবার বৈজ্ঞানিক মৌলবাদ।

আপনি যখন আপনার ধর্মের সকল মূল স্তম্ভের সবকটি-ই মেনে চলবেন তখন আপনি একজন ধর্মীয় মৌলবাদী।একইভাবে আপনি রাজনীতির মূল বিষয়গুলো মেনে চলুন,তবে আপনি একজন রাজনৈতিক মৌলবাদী।বৈজ্ঞানিক মতবাদের আদর্শগুলো আপনি মেনে চলুন,তবে আপনি একজন বৈজ্ঞানিক মৌলবাদী।

সুতরাং,বোঝা যাচ্ছে যে মৌলবাদ কোন খারাপ গুণ নয়।বরংচ একটি ভাল গুন যা না থাকার মানে হল আপনি নিজেরই ১০ টি দাবির মধ্যে কিছু মানেন আর কিছু মানেন না।আপনার বিশ্বাসে,আপনার স্তম্ভে,আপনার পূর্ণ আস্থা এবং সে মোতাবেক চলাই হল মৌলবাদীতা।
অনেকেই মৌলবাদকে জঙ্গিবাদের সাথে এক করে ফেলেন! কিন্তু না।এই দুইটা বিষয়কে এক করা যাবে না।সাধারন দুটি রাসায়নিক-কে এক করলে সেখানে বিস্ফোরন ঘটতে পারে!

সো বি-কেয়ারফুল।
মৌলবাদ-কে আপনি নিজস্ব ব্যাপার ভাবতে পারেন।নিজ নিজ অবস্থান থেকে যখন আপনি যেকোন বিষয়ের সকল মূল বিষয়গুলো মেনে চলেন,তখন তা কল্যাণকর। কিন্তু আমি মনে করি,আপনি যখন যেকোন মৌলবাদের সমন্বয় করতে যাবেন তখনি জঙ্গিবাদ বলেন,বিরোধ বলেন,আর মতপার্থক্য বলেন এসবের সৃষ্টি হয়।

অতএব,মোদ্দাকথা হচ্ছে এই যে,স্ব-অবস্থান থেকে মৌলবাদ জরুরি কিন্তু "মৌলবাদের সমন্বয়" ভয়াবহ। কেননা,"মৌলবাদের সমন্বয়" থেকে জঙ্গিবাদের উত্থান অসম্ভব নয়।
সূত্র-( ফেসবুক সংসদ)

২.ডা: জাকির নায়েকের উদধৃতি দিয়ে মৌলবাদ কী এবং মৌলবাদী কে ও চরমপন্থি বিষয়ে একটি লেখায় যুক্তি দেয়া হয়েছে এমনভাবেই ---

মৌলবাদী শব্দের অর্থ হলো যেকোন নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর মূলনীতিগুলো মেনে চলা। মৌলবাদীরা যে যে ক্ষেত্রে মৌলবাদী, সেটা দেখে তারপর আপনার বিচার করতে হবে। যেমন ধরুন, একজন মৌলবাদী ডাকাত তার কাজ ডাকাতি করা। সে সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং অন্যদিকে একজন লোক মৌলবাদী ডাক্তার যে লোক হাজারও মানুষের জীবন বাঁচায়। সে সমাজের জন্য উপকারী, সব মৌলবাদীকেই এক মাপকাঠিতে মাপতে পারবেন না। আপনাকে দেখতে হবে যে, কোন ক্ষেত্রে মৌলবাদী। তারপর বলবেন সে ভাল না খারাপ। আমি আমার নিজের কথা বলতে পারি। আমি একজন মুসলিম এবং আমি একজন মৌলবাদী মুসলিম হিসেবে গর্বিত। কারণ আমি সব সময় ইসলামের মূলনীতিগুলো মেনে চলার চেষ্টা করি। আর আমি জানি যে, ইসলাম ধর্মে এমন কোন মূলনীতি নেই যা সামগ্রিকভাবে মানবতার বিরুদ্ধে যায়। ইসলাম ধর্মের বিছু মূলনীতি আছে, সেগুলোকে অমুসলিমরা মনে করে মানবতার বিরুদ্ধে। কিন্তু আপনি যদি সেই নীতিগুলোকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলেন, আর বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলেন, এমন একজনও নিরপেক্ষ লোকও পাবেন না, যে লোক ইসলাম ধর্মের একটিমাত্র মূলনীতি খুঁজে বের করবে, যেটি সামগ্রিকভাবে মানবতার বিরুদ্ধে যায়। এজন্য আমি একজন মৌলবাদী মুসলিম হিসেবে গর্বিত। ওয়েবস্টার ডিকশনারী পড়লে সেখানে দেখতে পাবেন এই মৌলবাদী শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল এজন প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানদের বুঝাতে।

অন্যদিকে বলা হয়েছে যে মৌলবাদী হলো একজন ব্যক্তি , যে ধর্মের প্রাচীন নিয়মগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করে, বিশেষভাবে ইসলামে এই কথাটি এখন জুড়ে দেয়া হয়েছে। যখনি আপনি মৌলবাদী কথাটি শুনবেন। আপনি কোন মুসলিমের কথা ভাববেন। সে চরমপন্থী, সে সন্ত্রাসী, মিডিয়া বলে বেড়ায় যে মুসলিমরা চরমপন্থী। আমি তা স্বীকার করবো যে আমি চরমপন্থী, চরমভাবে দয়ালু, চরমভাবে ক্ষমাশীল, চরমভাবে সৎ, চরমভাবে ন্যায়বান। তবে কোন সমস্যা নেই আমি হই চরম দয়ালু, চরম ন্যায়বান, চরম সৎ। অসুবিধা কোথায় ? আপনারা কেউ কি বলতে পারবেন যে, চরমভাবে সৎ হওয়াটা খারাপ? এমনভাবে কেউ কি আমাকে বলতে পারবে যে চরমভাবে ন্যায়বান হওয়া খারাপ দিক? কোরআন বলছে তোমরা চরম ন্যায়বান হও। আমরাতো আংশিকভাবে সৎ হবো না। যে লোক আমার বন্ধু তার কাছে সৎ থাকবো, আর যে আমার শত্রু তার কাছে সৎ থাকবো না।

পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ২৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, ইসলামে প্রবেশ করো সর্বাত্মকভাবে। তাহলে চরমপন্থী হতে অসুবিধা কোথায় ? কিন্তু আমাদের চরমপন্থী হতে হবে সঠিক নিয়মে। আমরা অন্যায় বা ভুল পথে চরমপন্থী হবো না। আমরা দয়া মায়াহীন হবো না। আমরা নিষ্ঠুর হবো না। আমরা চরমপন্থী হবো সঠিক উপায়ে এবং পবিত্র কোরআনও আমাদের সে কথাই বলছে।

৩.যদিও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিট একজন সহকারী অধ্যাপকের উদধৃতি বলা হয়েছে, মৌলবাদের সাথে ইসলামের কোন প্রকার সম্পর্ক নেই । এটি শুধু মাত্র খ্রিস্টান ধর্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তিনি ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন ঃ

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় যে, শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয় আমেরিকায় এবং ১৯২২ সালে׀ ১৮০০ সালের পর থেকে শুরু হয় বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের স্রোত ׀ সেই স্রোতধারায় ভেসে যাবার উপক্রম হয় খ্রিস্টধর্মের অনেক বিশ্বাস ও প্রচলিত ধারণা׀ নাস্তিক্যবাদের (aethism) প্রসার ব্যাপকতা লাভ করে ׀ তখন আমেরিকান খ্রিস্টানদের Protestant সমাজের একটি অংশ খ্রিস্টধর্মের হেফাজতের জন্য একটি আন্দোলন শুরু করে׀ এই আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন Milton এবং Lyman Stewart নামের দুই ভাই। তারা ছিলেন তেল ব্যাবসায়ী׀ তাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে ৬৪ জন লেখক (যাদের মধ্যে ছিলেন পণ্ডিত, পাদ্রী এমন কি মন্ত্রীও; কিন্তু কোনো মুসলমান— অবশ্যই নয়) ধারাবাহিকভাবে ১২টি ভলিউমে খ্রিস্টধর্মের মূল বিষয়াদি বর্ণনা করেন। এই ভলিউমগুলোর নাম দেয়া হলো The Fundamentals. ধীরে ধীরে ধর্ম-কর্ম ছেড়ে দেয়া অনেক খ্রিস্টান এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয় ׀ এই মতবাদের নাম দেয়া হল Fundamentalism (মৌলবাদ) এবং এই মতবাদে যারা বিশ্বাস স্থাপন করতে লাগল তাদেরকে বলা হল Fundamentalist বাংলায় যার সরাসরি অর্থ হয় ‘মৌলবাদী’।

নিরপেক্ষ পাঠক মাত্রই অকুণ্ঠ চিত্তে স্বীকার করবেন যে, এই Fundamentalism বা মৌলবাদের উত্পত্তির সঙ্গে কোরান-হাদিস-ইসলাম-মুসলমান এবং কোনো মুসলিম দেশের দূরতম সম্পর্কও নেই׀কিন্তু এটা বড়ই দুঃখজনক এবং আফসোসের বিষয় যে, মৌলবাদের জন্মস্হান এবং সংরক্ষণাগার আমেরিকা আজ মুসলমানদেরকে মৌলবাদী বলছে এবং মুসলিম দেশসমূহে মৌলবাদ খুঁজে বেড়াচ্ছে ׀অথচ কোথাও কেউ প্রতিবাদ করারও নেই। এর প্রধান কারণ ভীরুতা এবং অজ্ঞতা ׀ এই দুটো জগদ্দল পাথরের মত দুনিয়ার সকল মুসলমান এবং মুসলিম দেশসমূহের ওপর চেপে বসেছে׀

খোমেনির অনুসারী কিছু ইরানি ছাত্র ০৪-১১-১৯৭৯ ইংরেজিতে তেহরানস্থ আমেরিকান দূতাবাসে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ৬৬ জন আমেরিকানকে পণবন্দী করে׀ সুদীর্ঘ ৪৪৪ দিন বন্দীদশায় অতিবাহিত করার পরে ২১-০১-১৯৮১ তে তাদের মুক্তি পায়׀ ঐ সময়ে পশ্চিমা মিডিয়া খোমেনির ও ইরানের বিপ্লবের আদর্শকে `প্রচারের জন্য` ইসলামী মৌলবাদ (Islamic Fundamentalism)` পরিভাষাটি তৈরি করে׀ এ কথা সর্বজনবিদিত যে খোমেনি ছিলেন একজন কট্টর শিয়া׀ খোমেনির চিন্তা-চেতনা-মতবাদ ইত্যাদি ইসলামের শ্বাশত ধ্যান-ধারণার সাথে সাংঘর্সিক׀ সুতরাং এখানেও একথা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, `ইসলামী মৌলবাদ` আর `দ্বীন ইসলাম` কস্মিনকালেও এক জিনিস নয় ׀


মৌলবাদী নয় মুসলমান
মৌলবাদ একটি পারিভাষিক শব্দ যার রযেছে সুনির্দিষ্ট অর্থ׀ মসজিদ-মন্দির-গির্জার অর্থ যেমন সুনির্দিষ্ট, পাদ্রী–পুরোহিতকে ইমাম সাহেব বললে যেমন ভুল হয়, যুদ্ধকে জিহাদ বলা যেমন সত্যের অপলাপ, উপবাস যেরূপ রোজা হয় না, পীর-বুজুর্গকে সাধু-সন্ন্যাসী বলা যেমন ভুল ঠিক তেমনি একজন মুসলমানকে মৌলবাদী বলে অভিহিত করা চরম অসাধুতা׀ যারা এ কাজ করে তারাই জ্ঞানপাপী׀

একজন মুসলমানের পক্ষে নিজকে মৌলবাদী দাবি করা চরম অজ্ঞতার নিদর্শন׀ যে চুরি করে নাই সে কক্ষনো নিজকে চোর বলে স্বীকার করবে না, যতই সে রাগের মাথায় থাকুক না কেন׀ তদ্রুপ মৌলবাদের মানে জানা আছে এমন কোনো মুসলমান নিজকে কস্মিনকালেও মৌলবাদী ভাবতে নারাজ, স্বীকার করাতো দূরের কথা׀ বাস্তব হচ্ছে, মুসলমান মাত্রই মৌলবাদের বিরোধী׀

ধোঁকায় পড়ে অনেকে বলতে পারেন যে মৌলবাদী দ্বারা তারা ঐ সকল মুসলমানদেরকে বুঝাতে চাচ্ছেন যারা ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিষয়ের প্রতি আস্থাশীল׀ এটা এক মারাতামক বিভ্রান্তি׀ এর কোনো দরকারই নেই। আর আমাদের মহান প্রতিপালকও দ্বীনের রাহবারদের কী বলতে হবে তা শিখিয়ে দিয়েছেন “কথায় কে উত্তম ঐ লোক অপেক্ষা যে আল্লাহ্র প্রতি মানুষকে আহবান করে, নেক কাজ করে এবং বলে , ‘নিশ্চয়ই আমিতো মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত ’ (৪১: ৩৩)।”


৪. মুক্তমনা ব্লগার থেকে নেয়া ,

মৌলবাদ মানে গোঁড়া সম্প্রদায়। ইংরেজি ফান্ডামেন্টালিজম শব্দের বাংলা অর্থ ”মৌলবাদ” । ধর্মের আদি/মূল নীতি বা নিয়মগুলোর কঠোর অনুসরণই হল মৌলবাদ। এই ধারনাটির উৎপত্তি খ্রিস্টধর্মের প্রটেস্টান্ট থেকে। খ্রিস্টধর্মের ঊন-বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত নানা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে এই মৌলবাদ নিয়ে। বাইবেলে যা লেখা আছে তা শুধু আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করে মান্য করতে হবে, নাকি পরবর্তীতে সময়ের বাস্তব প্রেক্ষাপটে, মানব ইতিহাসের অগ্রগতির নিরিখে যুক্তি প্রয়োগ করে, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পর মান্য করতে হবে? মৌলবাদীরা যা কিছু গ্রহণ করে থাকেন তা সাধারণত উদার ধর্মতত্ত্বের বিরুদ্ধে ।

আর এক অর্থে, যে ব্যক্তি বা সম্প্রদায় নিজের মতের প্রতি গোঁড়া এবং অন্যের মতের প্রতি এতোটুকুও সহনশীল নয় সেই ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ও মৌলবাদী। বর্তমানে মৌলবাদ শুধু গোঁড়া ধর্মীয় মতবাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই। এই মৌলবাদ এখন সার্বজনীন সকল মতবাদের মধ্যে লক্ষণীয়। যেমন- আস্তিক, নাস্তিক, আঞ্চলিক, রাজনৈতিক, জাতিগত, বর্ণবাদী, জেন্ডারবাদী ইত্যাদি এবং সর্বত্র।

ঈহুদি মৌলবাদীরা মনে করে তারা ঠিক, অন্যরা বেঠিক। খ্রিষ্টান মৌলবাদীরা মনে করে তাদের ধর্মের মত বা বাণী ব্যতীত অন্য সব অগ্রহণযোগ্য। হিন্দু মৌলবাদীরা মনে করে তাদের ধর্মের বাণী সনাতন বা আদি তাই অন্য সব অগ্রহণযোগ্য। মুসলিম মৌলবাদীরা মনে করে তাদের ধর্মের বানী আধুনিক অন্য সব বাতিলযোগ্য। ঠিক এমনি করে প্রত্যেক ধর্মের মৌলবাদীরা মনে করে তাদের নিজেদের ধর্মের মত বা বানী ব্যতীত অন্য সব তাদের জন্য অগ্রহণযোগ্য। যদি বিষটা এই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকতো তাহলেও কোন কথা ছিল না। কিন্তু এক ধর্মের মৌলবাদীরা অন্য ধর্মের প্রতি কোন কালেই সহনশীল নয়, তার উপরে আবার সহিংস। শুধু অন্য ধর্ম কেন, নিজ ধর্মের উদার ধর্মতত্ত্ববাদীদের প্রতিও তারা সহনশীল নয়! বর্তমানে ইসলামী মৌলবাদীরা বিশ্বময় বিষফোঁড়া। তারপরে আছে বিষফোঁড়া ঈহুদী এবং হিন্দু মৌলবাদীরা। আর তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের জন্য।

এতো গেল আস্তিক মৌলবাদীদের কথা। এবার নাস্তিক মৌলবাদ। নাস্তিক মানে অবিশ্বাসী। যার ঈশ্বর বা আল্লাহর বা স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রতি কোন বিশ্বাস নাই, সেই নাস্তিক। একজন নাস্তিক মনেকরে সে মহাজ্ঞানী আর বাঁকিরা মহামূর্খ্য। সেই হিসাবে একজন নাস্তিক মানেই নীরব মৌলবাদের আর এক দৃশ্যমান রূপ। তবে নাস্তিক মৌলবাদীরা সহিংস নয়; তবে বিদ্বেষী। আর পৃথিবীতে আদতে অবিশ্বাসী বলে কেউ কি আছে? সবায় নিজেকে বিশ্বাস করে। নিজেকে বিশ্বাস করা মানেই ঈশ্বর বা আল্লাহ বা স্রষ্টাকে বিশ্বাস করা। তবে হ্যাঁ বিশ্বাস বা অবিশ্বাস এই সবের ঊর্ধ্বে আছে বদ্ধ পাগলেরা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.