নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“কলিমদ্দিকে আবার দেখা যায় ষোলই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাজারের চা স্টলে। তার সঙ্গীরা সবাই মুক্তি, সে-ই শুধু তার পুরনো সরকারি পোশাকে সকলের পরিচিত কলিমদ্দি দফাদার।”

কলিমুদ্দি দফাদার

“ঘুরছি আমি কোন প্রেমের ই ঘুর্নিপাকে, ইশারাতে শিষ দিয়ে কে ডাকে যে আমাকে”

কলিমুদ্দি দফাদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওয়ার মেমোরিয়াল‌ ও জাদুঘরে একদিন (কোরিয়া ডায়েরি)

১৬ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০২



সিউলে অবস্থিত কোরিয়ান ওয়ার মেমোরিয়াল ও মিউজিয়াম। সিউলের প্রান কেন্দ্র বাসা থেকে ওয়াকিং ডিসট্রেসে।‌ কোরিয়ার আরো কয়েকটি বড় শহরে ওয়ার মেমোরিয়াল জাদুঘর আছে; তবে সিউলের টা মনে হয় সবচেয়ে বড় আর সমৃদ্ধ।‌ বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত; ইন্ডোর এন্ড আউটডোর দুই অংশে জাদুঘর টি অবস্থিত। বড়-বড় সামরিক যান, বিমান, ট্যাংক,‌ কামানগুলো রাখা ছিল সব বাইরে। মুলত মধ্যযুগীয় কোরিয়ার জেসং ডাইনেস্টি, জাপানিজ কলোনিয়াল যুগ আর সর্বশেষ কোরিয়া যুদ্ধের সময় ব্যাবহারিত য্দ্ধাস্ত্র আর সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে যাদুঘর টি সাজানো। এর বাইরে যুদ্ধকালীন সময়ে বিশেষ করে কোরিয়া ওয়ারের সময় কোরিয়ান মানুষের দুর্ভোগ, দুঃখ-দুর্দশা আর কোরিয়া সমাজের সংকটের বিভংস সব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।



প্রথমে ঠুকতে চোখে পরে কোরিয়া ওয়ারে ব্যাবহৃত একটি এফ-২১ সেবার আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার প্রপেলার ফাইটার এয়ারক্রাফট। এগুলি আমেরিকার তৈরি কোরিয়ান যুদ্ধের সময় অনুদান দেওয়া। পাশেই আরো একটি এফ-4 ফেনটম রাখা ছিল। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় বহুল ব্যাবহৃত একটি যুদ্ধবিমান। কোরিয়ার বিমান বাহিনী সহ বিশ্বের বহু দেশ‌এটি‌ ব্যবহার করেছে। ট্যাংক, ট্রান্সপোর্ট এয়ারকারফট, যুদ্ধে ব্যবহৃত গাড়ি, কামান ছিল‌ আসে পাশেই।

কোরিয়ার যুদ্ধে ব্যবহৃত একটি M4 শেরম্যান ট্যাংক। তখনকার ট্যাংকগুলো আকারে এত বড় আর ভারী ছিল না।

একটি প্রপেলার চালিত বিমান। কার্গো, সামরিক মালামাল আর সৈন্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়।

একটি হাওয়াজার। দুরের লক্ষ বস্তুতে আঘাত আনতে এটি দিয়ে গোলা ছুঁড়ে।

মিউজিয়ামের ভিতরে আকর্ষণীয় ও চোখে দেখার মত আইটেম ছিল মধ্যে যুগীয় কোরিয়া নেভিতে ব্যবহৃত এই জাহাজটি। জাহাজটি অনুরূপ ডিজাইন থেকে বানানো একটি প্রটোটাইপ। ১৫৯৭ সালে কোরিয়ান এডমিরাল উই-সান-সিন মাত্র ১৩টি জাহাজ নিয়ে জাপানিজ নেভির ৩১ টি জাহাজ ডুবিয়ে পরাজিত করেছিল। এর উপর একটি বিখ্যাত মুভি আছে "দ্যা এডমিরাল"।


আমার অবশ্য আগ্রহ ছিল টার্টেল শিল্প নিয়ে। মধ্যে যুগীয় নৌ যুদ্ধে টার্টেল শিপ দিয়ে শত্রুর জাহাজগুলো ভেংগে ফেলা বা দিক পরিবর্তন করে দিত। এগুলো আকারে একটু বড়, ভারী অনেক মজবুত এবং ধীরগতির‌। কচ্ছপের মত ধীরগতির হওয়ায় নাম ছিল টার্টেল।
মিউজিয়াম কোন টার্টেল শিপ ছিল না।




দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কোরিয়ার যুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর টেকনোলজি ও মিলিটারির বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট। লঞ্চার, মেশিনগান, রেডিও ওয়্যারলেস।



একটি অংশে পর্যটকদের জন্য কোরিয়ার পতাকা আকার নিয়মাবলী এর অর্থ বিস্তারিত লিখা ছিল। তাঁদের আঁকা পতাকা গুলো পরবর্তীতে ওয়ালে লাগিয়ে দেওয়া হয় কিছুদিনের জন্য; এভাবে রিপিট হতে থাকে। ভিন্ন জাতির প্রতি শ্রদ্ধা ও আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি নিজে ও একটি পতাকা আঁকি।



ওয়ার মেমোরিয়াল মিউজিয়াম সবচেয়ে বেদনাদায়ক সেগমেন্টটি হচ্ছে, কোরিয়া ওয়ারের সময় ও পরবর্তী কোরিয়ান সামাজিক অবস্থার নির্মম বাস্তবতার আলোকচিত্র গুলো। যেমন দারিদ্র্য, ক্ষুদায় অনাহারে আমিরকান মিলিটারি ক্যাম্পগুলোর সামনে কোরিয়ান শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি, চকলেটের জন্য কারা কারি। ক্ষুধার তীব্র যন্ত্রণায় একটি শিশুর কুড়িয়ে খাওয়া বমির চিত্র ও ছিল। কোরিয়ার বিখ্যাত একটি খাবার বুদে চিগে (Budae Jjigae)  বা মিলিটারি বেস স্টু! এর ইতিহাস সেই কোরিয়া যুদ্ধের সাথে জড়িত। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য বেস ক্যাম্পগুলো থেকে কুরিয়ে আনা স্যাসেজ, চিজ, হটডগ, বিন আর কোরিয়ান নুডলস আর কিমচি সংমিশ্রণ একটি রেসিপি।




রাইফেল হাতে যুদ্ধরত অবস্থায় একজন কোরিয়ান যুবক।



তীব্র শীতে মিলিটারির টহল।

কোরিয়া যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ডগলাস ম্যাগঅর্থার। ইনি আমেরিকার প্রভাবশালী মিলিটারি ব্যাক্তিত ছিলেন। কোরিয়া যুদ্ধের সময় এশিয়ার দেশগুলোতে চায়নার কমিউনিস্টের প্রভাব ঠেকাতে চীনে পরমানু হামলার অনুমতি চেয়ে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট কে চিঠি ও দেন তিনি।

১৯৫০-৬০ দশকের কোরিয়া ছিল আফ্রিকার থেকে দারিদ্র্য জর্জরিত অঞ্চল। দক্ষিণ কোরিয়ার ৭০% ভাগ এলাকায় পাহাড়ী বনাঞ্চল চাষাবাদ অনুপোযোগী। এর উপর শীতের তীব্র ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে এত কষ্ট, দারিদ্র্য বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে কোরিয়ানদের টিকে থাকার সংগ্রাম আর একটি জেনারেশন আত্মত্যাগে আজকে আধুনিক সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে গত শতকের "দ্যা মিরাকেল অফ হান রিভার" বলে পরিচিতি পেয়েছে।

জন্মলগ্নের শুরুতে দক্ষিণ কোরিয়া আর বাংলাদেশের বাস্তবতা অনেকটা একই রকম ছিল। বরং বৈরি আবহাওয়া আর চাষাবাদ অনুপোযোগী অঞ্চল এবং  প্রাকৃতিক সম্পদহীন হওয়ায় কোরিয়ার  অর্থনীতৈক অবস্থা ছিল আরো শোচনীয়। কোরিয়ার অর্থনীতৈক অগ্রযাত্রা শুরুটা ছিল ৬০ দশকে জার্মানি, ইউরোপ, আমেরিকাতে দক্ষ শ্রমিক ও নার্স পাঠিয়ে‌। মুক্ত বাজার অর্থনীতি, জাপান, পশ্চিমা দেশগুলোর বিনিয়োগ কাজে লাগিয়ে কোরিয়া আজকে হাই-টেক ইনোভেশন, টেকনোলজি বেস অগ্রসর একটি দেশ। কে পপ (কোরিয়ান সংগীত) কোরিয়ান সংস্কৃতি প্রচার করে তারা আজকের  বিশ্বে একটি সফট সুপার পাওয়ার। অপরদিকে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলার মানুষ কখনো প্রকৃত স্বাধীনতা আর অর্থনৈতিক মুক্তির স্বাদ নিতে পারেনি।

ছবি: কিছু নিজের তোলা এন্ড
Naver কোরিয়া।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১:১৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.