নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলো –অন্ধকারে যাই- মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয়,- কোন এক বোধ কাজ করে! স্বপ্ন নয়- শান্তি নয়-ভালোবাসা নয়, হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়! আমি তারে পারি না এড়াতে, সে আমার হাত রাখে হাতে; সব কাজ তুচ্ছ হয়,-পণ্ড মনে হয়। -জীবনানন্দ দাশ

কুশন

আমার জন্ম ফরিদপুরের সালতা গ্রামে। বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। আমার বাবা একজন কৃষক। বাবার সাথে বহুদিন অন্যের জমিতে কাজ করেছি।

কুশন › বিস্তারিত পোস্টঃ

লিন্ডার সাথে যেভাবে পরিচয় আমার

২৯ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১০:২৫


ছবিঃ রুজভেল্ট আইল্যান্ড।

নিউ ইয়র্ক শহরের দক্ষিনে নিউ জার্সি। নিউ জার্সি এলাকাতেই আমার অফিস। ম্যানহাটনের কাছেই আমার বাসা। বাসা ভাড়া অনেক। আমার বেতনও অনেক। তাই খুব একটা বেগ পেতে হয় না। অফিসে থাকাকালীন আমি বারান্দায় গিয়ে কফি খাই। সিগারেট খাই। বারান্দায় গেলেই একটা মেয়েকে দেখা যায়। মেয়েটা সুন্দর। খুব বেশী সুন্দর। মেয়েটাকে দেখতে আমার ভালো লাগে। এজন্য কফির মগ হাতে নিয়ে আমি বারান্দায় দিনের মধ্যে অনেকবার যাই। মেয়েটা জানালার কাছেই বসে থাকে। সারাক্ষণ ল্যাপটপের দিকে তার চোখ। আমার দিকে খুব একটা টাকায় না। আমার বারান্দা থেকে মেয়েটার অফিস রুমের দূরত্ব পনের ফিট হবে। সাইন বোর্ড দেখে বুঝেছি মেয়েটা মবিল কোম্পানীতে কাজ করে। আমি মনে মনে ভাবি মেয়েটা যে পরিমান সুন্দর অনায়াসেই সিনেমাতে সুযোগ পাবার কথা। তেলের কোম্পানীতে কাজ করার কি দরকার!

তিন মাস শুধু মেয়েটাকে দূর থেকে দেখেই যাচ্ছি। আমার বস জন টমাস একদিন আমাকে ডেকে নিয়ে বলল, তুমি যে দিনের বেশির ভাগ সময় বারান্দায় ব্যয় করছো সেটা কি বুঝতে পারছো? এত কফি খেও না। পায়খানার সমস্যা হবে। আমি হেসে ফেললাম। টমাস বলল, সরাসরি মেয়েটার কাছে যাও। যদি মেয়েটার বয় ফ্রেন্ড না থাকে তাহলে সে তোমাকে সময় দিবে। তুমি ভালো চাকরী করো। তোমার দামী গাড়ি আছে। নিজের একটা বাড়িও আছে। ওই মবিল কোম্পানীতে আমার বন্ধু কাজ করে, তুমি যদি চাও তো আমি মেয়েটার সব খোঁজ খবর জেনে তোমাকে জানাতে পারি। আমি বললাম, জন তুমি আমার জন্য এতটা কেন করবে? জন বলল, তোমাকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি। জানি। তুমি ভালো ছেলে। তোমাকে আমি পছন্দ করি কারন তুমি বুদ্ধিমান এবং পরিশ্রমী।

আমার মন খারাপ হলে আমি জ্যাকসন হাইটস যাই। দেশের কথা ভাবলে আমার মন খারাপ হয়। মা বাবার কথা মনে পড়লে- খুব মন খারাপ হয়। এই শহরে আমার কোনো বন্ধু নেই। আমার কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। জ্যাকসন হাইটস জায়গাটা শুধু বাঙ্গালীদের জন্য। এখানে এলে মনে হয় নিজের দেশের কাওরান বাজারে এসেছি। অনেক বাঙ্গালীকে লুঙ্গি পরে জ্যাকসন হাইটে হাঁটতে দেখেছি। পান চিবাতে চিবাতে পানের পিক ফেলতে দেখেছি। সব রকম বাঙ্গালী খাবার পাওয়া যায়। তবে জ্যাকসন হাইটস নিজের গাড়ি করে যাই না। গাড়ি নিয়ে দুই দুইবার আমার শিক্ষা হয়েছে। গাড়ি পার্কিং এর জায়গার বড় অভাব। আধা ঘন্টা গাড়ি নিয়ে ঘুরেছি কিন্তু গাড়ি পার্ক করার সামান্য জায়গা খুঁজে পাই না। এরপর যতবার গিয়েছি অন্যের গাড়িতে গিয়েছি। আমেরিকা হলো গাড়ির শহর। এরা স্ত্রীর চেয়ে গাড়িকে বেশি ভালোবাসে। আমি খেয়াল করে দেখেছি- এরা যত বার স্ত্রী বদলাবে ততবার গাড়ি বদলাবে। আজ স্থির করেছি বাঙ্গালী পাড়ায় যাবো।

জ্যাকসন হাইটস যাওয়া হলো না। ৭৪ নাম্বার স্ট্রিট এর সামনে দেখি মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। সুন্দর একটা সাদা শার্ট আর স্কার্ট পড়া। মনে হয় মেয়েটা কোথাও যাবে। ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করছে। আমি খুব সাহস করে মেয়েটার কাছে গিয়ে বললাম- কেমন আছো? আমাকে চিনতে পেরেছো? আমি তোমাকে চিনি। মেয়েটা বলল, হ্যাঁ আমি তোমাকে চিনি। তুমি কামকাজ বাদ দিয়ে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো। কাজে ফাঁকি দিলে তোমার চাকরী চলে যাবে। আমি বললাম, তোমার হাতে কি সময় আছে? আমরা কোথাও বসে কি এক মগ কফি খেতে খেতে কথা বলতে পারি? মেয়েটি হেসে ফেলল। খুব সুন্দর হাসি। যে হাসি দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। মেয়েটি বলল, আজ আমার অফিস ছুটি। আমি বললাম জানি। তাহলে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমার সাথেই থাকো। মেয়েটা বলল- তুমি কি আমার নাম জানো? আমি বললাম- না জানি না। এবং বাংলায় বললাম, তোমার নাম জরিনা, সকিনা হলেও কিছু যায় আসে না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। মনে ধরেছে। মেয়েটা বলল, কি বলছো? কিছুই তো বুঝলাম না।

লিন্ডাকে বলেছি আজ আমাদের দেশের খাবার তোমাকে খাওয়াবো। ট্যাক্সি নিলাম। আমার ভাগ্য খারাপ- ট্যাক্সি ড্রাইভার বাঙ্গালী। ব্যাটা মনে হয় বুঝতে পেরেছে আমিও বাঙ্গালী। বারবার গাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি সাধারনত বাঙ্গালীদের এড়িয়ে চলি। কোনো বাঙ্গালীর সাথে দেখা হলেই সবার আগে জানতে চায় কোন অঞ্চল থেকে এসেছি। আরেহ ভাই আমি কুমিল্লা বা চাঁদপুর যেখান থেকেই আসি না ক্যান তোর কি? তুই নিজের কাজ কর। আলগা পীরিত দেখানোর কিছু নাই। এতদিন ধরে এ দেশে আছি অথচ একজন বাঙ্গালী আরেকজন বাঙ্গালীকে দেখেই চিনে ফেলে। নিজেকে লুকানো যায় না। বাঙ্গালীদের সাথে দেখা হলেই নিজের দেশের রাজনীতি বা কোনো বিষয় নিয়েই কথা বলতে আমার ভালো লাগে না। অবশ্য আমেরিকাতে বাঙ্গালী চেনা সবচেয়ে সহজ। প্রতিটা বাঙ্গালীদের বাড়ির সামনে অথবা পেছনে নানান রকম সবজির বাগান থাকবে। বাঙ্গালীরা আগ্রহ নিয়ে চাষবাস করে। তবে আমি বাঙ্গালীদের দেখলেই চিনতে পারি না। যতবার বাঙ্গালী ভেবেছি, পড়ে দেখি তাঁরা ভারতীয়। না হয় পাকিস্তানী।

গাড়িতে আমি চুপ করে বসে থাকলাম। ড্রাউভার শালার জন্য লিন্ডার সাথে কোনো কথাই বললাম না। শালা আমার গলা শুনেই পুরো বুঝে যাবে আমি বাঙ্গালী। তখন শালা মাথা চুলকাতে চুকাতে জিজ্ঞেস করবে ভাইজানের বাড়ি কোন অঞ্চলে? আমার বাড়ি মানিকগঞ্জ। সাটুরিয়া থানা। সেই সুযোগ আমি ড্রাইভার শালাকে দিবো না। লিন্ডা বলল, চুপ করে আছো যে! তোমার কি মাথা ধরেছে? আমি একটা হাসি দিলাম। হাসি দিয়ে বুঝালাম মাথা ধরে নি। খুব ভালো আছি। শালা আবার লুকিং গ্লাস দিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে। শালাকে একটা থাপ্পড় দিলে কেমন হয়! মেজাজ খারাপ করে রুজভেল্ট এভিনিউতে নেমে গেলাম। ফুটপাতে প্রচুর ভিড়। লিন্ডার হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে। কোনো চিন্তা ভাবনা না করেই আমি লিন্ডাকে নিয়ে একটা ল্যাটিনো বারে ঢুকে গেলাম। লিন্ডা খুব অবাক হয়ে বলল- তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এলে কেন? কি অদ্ভট মানুষ তুমি! আমি শুধু বললাম স্যরি। ক্ষমা করো আমায়।

(চলবে)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১০:৩৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



গল্প, জীবনের ঘটনা?

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭

কুশন বলেছেন: জ্বী স্যার।

২| ২৯ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১১:৩৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: চাঁদগাজী সাহেবের প্রশ্নের উত্তর জানতে আমারও জানতে ইচ্ছা হয়।


সেই সুযোগ আমি ড্রাইভার শালাকে দিবো না।
ড্রাইভার সুযোগটা পেলে সমস্যা কি!!!

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৩৮

কুশন বলেছেন: জ্বী জীবনের গল্প।

দেশী লোকজন বিদেশে গেলেও বদমাইশি করে।

৩| ৩০ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৭:১৫

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: @মরুভূমির জলদস্যু < ভাই জান খি বোকা?

ড্রাইভারের সাথে লেখকের সম্পর্ক - শলা দুলাভইয়ের।
ড্রাইভার যদি আবার দুলাভাইয়ের (অপ)কর্ম তার বোন কে বলে দেয়?
আমনে তারে বাচাইবেন?

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৩৯

কুশন বলেছেন: এত বুদ্ধি নিয়ে ঘুমান কি করে?

৪| ৩০ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: ড্রাইভার কে শালা বলে গালি দেওয়ার কারন বুঝলাম না।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৩৯

কুশন বলেছেন: মন চেয়েছে তাই গালি দিয়েছি।

৫| ৩০ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:৫০

আমি পরাজিত যোদ্ধা বলেছেন: অসাধারণ লেখা, কিন্তু ড্রাইভার এবং বাংগালি কে নিচু জাত হিসেবে দেখানো দেখানো হয়েছে, সব বাংগালি ড্রাইভার - আপনি কোন এলাকার এটা জানতে চায় না ফর সিওর, এর দুইটা কারন হতে পারে; প্রথম: আপন দামি গাড়ি ব্যাবহার করেন এই জন্য হয়তো আপনি টাক্সি ততোটা ব্যাবহার করেন না। দ্বিতীয়: সেই কম সংখ্যক রাইড গুলতে বাংগালি ড্রাইভার গুলো আপনাকে আপনার এলাকা জিজ্ঞেস করেছে কারন আপনার ট্যাক্সি ড্রাইভার এর কপাল খারাপ, যাই হোক আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষারত!! ভালো থাকবেন।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৪০

কুশন বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

৬| ১৯ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৫:২৫

ফয়সাল রকি বলেছেন: দেশী খাবারের কথা বলে ল্যাটিনো বার! কীয়েক্টা অবস্থা!

২০ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:১০

কুশন বলেছেন: আরেহ মাঝে মাঝে মাথা একেবারে কাজ করে না। বাঙ্গালী তো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.