নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশে চাকুরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর জন্য আন্দোলন চলছে।সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুসারে বর্তমানে চাকুরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতিদের জন্য ৩২ বছর। অন্যদিকে অবসর বয়স যযথাক্রমে সাধারণদের জন্য ৫৯ এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/ নাতিদের জন্য ৬০ বছর। বাংলাদেশে সরকারি চাকুরীতে তরুণ দের আগ্রহ বেড়েছে ২০০৯ সালের পর থেকে। পে স্কেল বাড়ানোর পর এবং বিসিএস ক্যাডার হলে প্রচুর সম্মান,প্রভাব এবং প্রতিপত্তি হবে বিভিন্ন মোটিভেশনাল স্পীকার দের মাধ্যমে জানতে পেরে তরুণ সমাজ ঝাপিয়ে পড়ে। বিসিএসের পাশাপাশি অন্য সরকারি জবের প্রতি তরুণ দের আগ্রহ বাড়তে থাকে। বাংলাদেশে কোনো কালেই সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ ফেয়ার ছিলো না। ২০০৯ সালের আগে বিভিন্ন সরকারি চাকুরির পরীক্ষায় প্রচুর দলীয় লোক ঢোকানো এবং নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে। পরীক্ষার্থী রা সেইম সমস্যা শেখ হাসিনার রেজিমের সময় ও ফেইস করে। প্রশ্ন ফাঁস,নিয়োগ বাণিজ্য, তদবীর, ঘুষ দিয়ে চাকুরি নেয়া এসব ও বাড়তে থাকে। যেহেতু আগের তুলনায় বেশি পরীক্ষার্থী এক্সাম দিচ্ছে তাই নিউজ, প্রিন্ট এবং মিডিয়াতে এসব প্রশ্নফাঁস, নিয়োগ বাণিজ্যের খবর আসতে থাকে যা পরীক্ষার্থী দের হতাশ করে তুলে। তবে সরকারি চাকুরিতে এক্সাম দিতে দিয়ে যে সমস্যা সবচেয়ে বেশি ফেইস করতে হয় তা হলো কোটার সমস্যা। প্রায় ৫৬% কোটা বলবৎ ছিলো ২০১৮ সালের পূর্বে। ভালো রিটেন এবং ভাইভা দিয়েও আপনার জব হবে না কিন্তু কোটার কারণে অন্যজন আপনার থেকে খারাপ এক্সাম দিয়েও জব পেয়ে যাবে। এই বিষয়টি পরিক্ষার্থী দের আরো ক্ষুব্ধ করে তুলে। পাশাপাশি ২০১২ বা ২০১৩ সাল থেকে আন্দোলন শুরু হয় চাকুরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার জন্য। কিন্তু হাসিনা সরকার এসব সমস্যার প্রতি বিন্দুমাত্র নজর না দিয়ে গণ হারে পাবলিক ভার্সিটি এবং প্রাইভেট ভার্সিটি অনুমোদন দিয়ে গেছে। এতে প্রতিবছর লাখো গ্রাজুয়েট পাশ করে কিন্তু সে অনুপাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। হাসিনা সরকার ছোট, মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শেষ করে দিয়েছে বড়ো ব্যবসায়ী দের কথায়।এর মধ্যে সুখবর ছিলো ২০০৮/২০০৯ সাল থেকে অনলাইনে ফ্রিলান্সিং এর মাধ্যমে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয়। শিক্ষিতদের যেখানে চাকুরী নাই সেখানে যারা গ্রাজুয়েশন পাশ করেনি তারা সবাই মধ্যপ্রাচ্যে, ইউরোপে গণহারে যাওয়া শুরু করে।পূর্বেও অনেকে যেত কিন্তু ২০১৩/২০১৪ সালের দিকে এই প্রবণতা আরো বেড়ে যায়। এইভাবে কিছু কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা হলেও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য দেশে তেমন কোনো কর্মসংস্থান এর সুযোগ হাসিনা রেজিম তৈরি করতে পারেনি। অন্যদিকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা দিন দিন প্রাইভেট নির্ভর হয়ে যাওয়ায় কিছু মেধাবী যুবক কোচিং ব্যবসায় নামে। এইভাবে অস্থায়ী ভাবে শিক্ষিত কিছু লোকের কর্মসংস্থান হয়। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা নিম্নমানের যা কিছু দক্ষতা হীন বেকারের জন্ম দেয় তা বুঝতে হলে আপনাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। এত বাজে সিলেবাস এবং সেশন জটে শিক্ষার্থীদের চার বছরের অনার্স কোর্স ৬ বছরে শেষ হতো। এই শিক্ষার্থীদের এক বিশাল অংশ ভার্সিটিতে উঠেও বিভিন্ন স্যার দের কাছে প্রাইভেট পড়া লাগতো এবং এখনো লাগে। ক্লাসে টিচার ঠিক মতো আসে না আর অল্প কিছুক্ষণ ক্লাস নিয়ে সাজেশন ধরায় দিয়ে স্যারের দায়িত্ব খতম। শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই গাইড বই এবং টুকলি করে পাশ করে। যেহেতু চার বছরের কোর্স ছয় বছরে শেষ হয় সেখানে প্রায় অনেকের ২৬/২৭/২৮ বছর লেগে যায় অনার্স পাশ করতে। চাকুরিতে প্রবেশের বয়স ত্রিশ বছর হওয়াতে এবং পাবলিক ইউনিভার্সিটির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দক্ষতাহীন জাতীয় ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের আবার নতুন করে ইংরেজি, ম্যাথ শিখতে শিখতে ত্রিশ বছর পার হয়ে যায়। প্রাইভেট সেক্টর এর জব নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার! বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেক্টর হতে শুরু করে বেশির ভাগ প্রাইভেট জবে এমপ্লয়িদের গোলাম মনে করা হয়। একদিকে অনার্স পাশের পর বেতন কম, খাটুনি বেশি, আবার জাতিগত ভাবে অলস এবং নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে চাওয়ার কারণে বেসরকারি চাকুরির প্রতি আগ্রহ নাই তেমন। এসব বিষয়ে হাসিনা রেজিমের কোনো মাথাব্যাথা দেখি নাই। উনার সরকারের কাজ হলো দেশে সবাইকে সার্টিফিকেট ধারী শিক্ষিত বানাবেন। কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা না হলেও চলবে। সমাজ কাঠামো সংস্কার হওয়ার কারণে নারী গ্রাজুয়েটদের সংখ্যা ও বেড়ে যাচ্ছিল। মেয়েদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোটা পদ্ধতি ও চালু ছিলো। কিন্তু শিক্ষার মান নিম্নমুখী হওয়াতে এবং বেসরকারি চাকুরিতে এমপ্লয়ীদের যথাযথ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না করায় প্রাইভেট ব্যাংক বাদে কেউ তেমন বেসরকারি জব করতে চায় না। বড়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পূর্বে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো তে জব করতে আগ্রহী হলেও ২০১৩/২০১৪ সালের পর পে স্কেল এবং সুযোগ সুবিধা বাড়াতে এখন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব ছেড়ে দিয়ে বিসিএস এর প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করে। এতে করে সরকারি চাকুরিতে তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা যায়। কোটা এবং নিয়োগ বাণিজ্য তখন মেধাবীদের পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায়। যার প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলন শুরু হয়।সরকার বিরক্ত হয়ে বলি বা চাপে পড়ে ৯ম- ১২তম গ্রেডে কোটা বাতিল করে। ১৩তম-২০তম গ্রেডে তখন ও কোটা প্রথা থেকে যায়। কিন্তু প্রশ্নফাঁস এবং নিয়োগ বাণিজ্য রুখতে সরকার ফেইল করে বা সরকারের সদিচ্ছার অভাব ছিলো। দলীয় লোক ঢুকানোর ধান্দা ছিলো জেলা কোটা এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটার মাধ্যমে। ৯ম -১০ম গ্রেডে যেহেতু কম্পিটিশন বেশি মধ্যম মানের পরিক্ষার্থী রা ১৩-২০ গ্রেড এর চাকুরির জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করে। ১৩তম এবং ১৪তম গ্রেডের যোগ্যতা গ্রাজুয়েশন এবং ১৫তম-২০তম গ্রেডে যোগ্যতা ইন্টার বা এসএসসি পাশ হলেও গ্রাজুয়েট ধারীরা পেনশন, এককালীন টাকা পাওয়ার লোভে, উপরি ইনকামের কারণে ১৫তম-২০তম গ্রেডে এক্সাম দেয়া শুরু করে। কিছুদিন আগে রেলের ওয়েম্যান পদের নিয়োগে যারা চাকুরি পায় সবাই গ্রাজুয়েশন কম্পলিট করা পাবলিক ভার্সিটির ছাত্র।ওয়েম্যান পদের গ্রেড হচ্ছে ১৭ কি ১৮ তম! বেতন খুবই অল্প এবং গ্রাজুয়েট ধারী হওয়ার পরও সবাই এসব চাকুরির এক্সাম দিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে! নিয়োগ বাণিজ্য এবং প্রশ্নফাঁস চলতে থাকে।এখন যেসকল শিক্ষার্থী সেশন জটে পড়েছে আবার মেধাও ততো ভালো না কিন্তু সরকারি চাকুরি লাগবে তারা সবাই মিলে চিন্তা করে চাকুরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করা দরকার। বিভিন্ন উন্নত দেশে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়স বেশি কিন্তু বাংলাদেশে কেনো কম তা দিয়ে চাকুরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করতে হবে তার পক্ষে যুক্তি দেন। কোটার যে সমস্যা ছিলো তা হাসিনা রেজিম পতনের আগে সকল প্রকার সরকারি চাকুরতে ৭% বলবৎ করে গিয়েছেন। ৩৫ এর আন্দোলনের প্রতি শেখ হাসিনার বরাবর ক্ষুব্ধ ছিলেন। বারবার আন্দোলন হওয়ার পরও শক্ত ভাবে তিনি না করে দিয়েছেন। এতে ৩৫ প্রত্যাশীরা হতাশ হয়ে পড়ে। এহাসিনা সরকার পতনের পর ৩৫ প্রত্যাশীদের মনোবল চাঙা হয়। সবাই আন্দোলনের মাধ্যমে ইন্ট্রাম সরকার থেকে দাবী আদায় করে নিচ্ছে দেখে তারাও চিন্তা করে এখনই উপযুক্ত সময়। ইন্ট্রাম সরকার কে তারা আল্টিমেটাম দেয়। ইন্ট্রাম সরকারের ভিত যেহেতু৷নড়বড়ে তারাও ৩৫ প্রত্যাশীদের খুশি করতে বয়স বাড়ানোর পক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করে।খুব সম্ভবত আগামী সোমবার এই ব্যাপারে ঘোষণা আসছে। সরকারি চাকুরি তে প্রবেশের বয়স বাড়লে কার লাভ কার ক্ষতি তা দেখে নেয়া যাক:
১- যারা সরকারি রানিং জব হোল্ডার তারা এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন।উনারা ইচ্ছামতো জব সুইচ করবেন। প্রেজেন্ট জব থাকা অবস্থায় আরো ভালো জবে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। করোনার পর থেকে ব্যয় কমানোর জন্য এমনিতে সারকুলার কম হচ্ছে সেখানেও সরকারি জব হোল্ডারদের থাবা পড়বে।
২- ছোটো বড়ো মিলিয়ে ১০/২০ টি সারকুলারের এক্সাম আগস্ট বিপ্লবের কারণে এখনও হয়নি। বয়স বাড়লে রিসারকুলার হতে পারে সেক্ষত্রে এক্সাম নিতে অনেক লেইট হবে।সাধারণত সারকুলারের পর মিনিমাম ৬ মাস লাগে এক্সাম নিতে। আল্লাহ জানে এতদিন ভ্যাকেন্সী পদে কারা জব করে!
৩- বিবাহিত মেয়েদের কিছুটা সুবিধা হবে।অনেকের দ্রুত বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে জবের এক্সাম দিতে পারেন না।তাদের সুবিধা হবে।
৪-দলীয় লোকদের সুবিধা হবে। বিএনপি - জামাতের ছেলেপুলে হাসিনা রেজিমের কারণে ১৫ বছর তেমন জব পায় নাই। তাদের হয়তো পুনর্বাসন করা হবে।
৫- প্রাইভেট সেক্টর জবের আরো ক্ষতি হবে। মানুষের আগ্রহ আরো কমে যাবে। সবাই সরকারি চাকুরির পিছে সময় ব্যয় করবে।
৬- দেশে কি পরিমাণ গ্রাজুয়েট প্রতিবছর বের হচ্ছে এবং পূর্বের কতো জন বেকার আছে, সরকারি বেসরকারি কি পরিমাণ ভ্যাকেন্সী খালি আছে তা নিয়ে বিস্তর গবেষনার দরকার ছিলো। প্রথমে বেসরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করে পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে পারতো। তা না করে ঢালাও ভাবে বয়স বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা উদ্দেশ্য প্রণোদিত!
সব মিলিয়ে বলা যায় সামনের দিন গুলো তে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা আরো বাড়বে। যাদের এবিলিটি আছে তারা বিদেশ চলে যাবে বাদবাকিরা সবাই সরকারি চাকুরির পিছে সময় ব্যয় করে দিন শেষ খালি হাতে ফিরবে। জীবন যৌবন সব শেষ করবে।
©somewhere in net ltd.