![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
৩০শে জুন ক্যালেন্ডারের পাতায় একটি দিন, কিন্তু ইতিহাসের বুকে এক শিখার নাম, এক প্রতিরোধের প্রতীক। এই দিনটি কেবল ‘হুল দিবস’ নয়, এটি সাঁওতাল জাতির অগ্নিমন্ত্র, ব্রিটিশ শাসন ও জমিদার-মহাজনদের নির্মম শোষণের বিরুদ্ধে এক আত্মোৎসর্গী বিদ্রোহের অবিস্মরণীয় দিন। ১৮৫৫ সালের এই দিনে ভাগনাডিহির মাটিতে যখন সিধু ও কানহু মুর্মু পতাকা তুললেন, তখন সেটি ছিল এক জাতির চরম যন্ত্রণার অগ্নিপরীক্ষা। ‘হুল’ শব্দের অর্থই বিদ্রোহ। আর এই বিদ্রোহ ছিল সংগঠিত, সুপরিকল্পিত এবং স্পষ্টভাবে দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিক্রিয়া। প্রায় ৫০ হাজার সাঁওতাল একত্রিত হয়ে ঝাড়খণ্ডের ভূমিতে ঘোষণা করল: এই শাসন চলবে না, এই শোষণ আর না।
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়। বর্তমানের ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সাঁওতালরা হারাচ্ছিল জমি, বন, আর জীবিকার অধিকার। জমিদার-মহাজনদের নির্মম সুদের খাঁড়া, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উচ্চ করের বোঝা, এবং ইংরেজ প্রশাসনের অন্ধ অন্যায়ের সামনে নিঃসহায় এই জনগোষ্ঠী বারবার অপমানিত হচ্ছিল। আদালত ছিল কেবল ধনীদের জন্য, দারোগার ছিল নির্যাতনের একচেটিয়া অধিকার, আর থানায় নারী-পুরুষ কেউই ছিল না নিরাপদ। ঋণের ফাঁদ, জমির দখল, আর নারীর উপর লোলুপ দৃষ্টির তীব্র অভিজ্ঞতা মিলিয়ে সাঁওতালদের মধ্যে ধীরে ধীরে জমে উঠেছিল এক নীরব আগুন। এই আগুনই একদিন ফুঁসে উঠল বিদ্রোহের দাবানলে।
সিধু, কানহু, চাঁদ ও ভৈরব — এই চার ভাই শুধু নেতা ছিলেন না, ছিলেন মুক্তির দূত। তারা কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতার লোভে নয়, বরং জাতির অস্তিত্ব রক্ষার ডাকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন যুদ্ধের ময়দানে। ভাগনাডিহিতে সিধুর আহ্বানে জড়ো হয় ১০ হাজার সাঁওতাল। শোষণের বিরুদ্ধে উচ্চারিত হয় হুঙ্কার। চরমপত্র পাঠানো হয় ইংরেজ সরকার, জমিদার, দারোগা ও ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে। এরপর শুরু হয় মার্চ — কলকাতার দিকে, স্বাধীনতার লক্ষ্যে। ৭ই জুলাই, দিঘি থানার দারোগা ও মহাজন হত্যার মধ্য দিয়ে আগুনে ঘি ঢেলে দেন সাঁওতালরা। কানহুর কণ্ঠে ধ্বনিত হয় সেই ঐতিহাসিক ঘোষণা: "বিদ্রোহ শুরু হয়ে গেছে। এখন আর কোনো ইংরেজ নেই, সরকার নেই। সাঁওতালদের রাজত্ব শুরু হয়েছে !"
সাঁওতালরা থানা আক্রমণ করে, নীলকরদের কুঠি জ্বালিয়ে দেয়, ইংরেজ ঘাঁটি গুড়িয়ে দেয়। মুর্শিদাবাদ থেকে বীরভূম পর্যন্ত এক নতুন শাসনব্যবস্থার স্বপ্ন আঁকে তারা। কিন্তু ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বসে থাকেনি। কামান, ঘোড়া, হাতি, ১৫ হাজার সৈন্য নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুরো অঞ্চল জ্বলতে থাকে গ্রামের পর গ্রাম। জঙ্গলে পালিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। চাঁদ ও ভৈরব শহীদ হন বন্দুকযুদ্ধে, সিধুকে হত্যা করা হয় ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই, আর কানহুকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়। আনুমানিক ৩০ হাজার সাঁওতাল প্রাণ হারায় এই নিধনযজ্ঞে। কিন্তু কেউ আত্মসমর্পণ করেনি। মৃত্যু হয়েছিল, পরাজয় নয়।
এই বিদ্রোহের অভিঘাত এতটাই গভীর ছিল যে, ব্রিটিশ সরকার কিছুটা হলেও নতি স্বীকারে বাধ্য হয়। গঠিত হয় ‘সাঁওতাল পরগণা’। ১৮৭৬ সালে প্রণীত হয় ‘সাঁওতাল প্রজাস্বত্ব আইন’। স্থানীয় শাসনের জন্য স্বীকৃতি পায় মানঝি, পরানিক, পরগনারা। ১৮৮৫ সালের বেঙ্গল টেনান্সি অ্যাক্ট আদিবাসীদের জমির অধিকার রক্ষায় সুরক্ষা দেয় । হুল দিবস কেবল একটি দিন নয়, এটি একটি চেতনার নাম — যেখানে আত্মত্যাগ, সম্মান ও প্রতিরোধ এক হয়ে গেছে। আজকের দিনটি আমাদের স্মরণ করায়, যে সংগ্রাম একবার শুরু হয়, সে চেতনাগতভাবে কখনো শেষ হয় না।
কানহু মুর্মুর কণ্ঠে উচ্চারিত সেই বাণী : "আমি আবার ফিরে আসব, সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলব" :-আজও ধ্বনিত হয় প্রতিটি নিপীড়িত হৃদয়ে। এই দিন আমাদের বলে , যতদিন মানুষ বাঁচে, ততদিন শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুনও জ্বলে।
২| ০১ লা জুলাই, ২০২৫ সকাল ৭:০৩
কামাল১৮ বলেছেন: মহাজনদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠে শাওতালরা।বহু বছর পর কানুস্যান্যালের নেতৃত্বে নকশাল বাড়ীতে মহাজনদের ধান কেটে নিয়ে আসে সাঁওতালরা।সেখানে ১৮ জন মহাজনকে হত্যা করা হয় যারা বাঁধা দিতে এসেছিলো।সেই আন্দোলন বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পরে।শুরু হয় অত্যাচারি নিধন।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:৫৯
ওমর খাইয়াম বলেছেন:
তাদের অধিকার রক্ষার দরকার ছিলো; কিন্তু তীর ধনুক দিয়ে ইংরেজ ও ওদের জমিদারদের আক্রমণ করা ছিলো মহা ভুল।