![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস (OHCHR) সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি স্থায়ী মিশন স্থাপনের জন্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এই ঘোষণার পরপরই দেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিশেষ করে বিষবৃক্ষ মহলে একধরনের অস্বস্তি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে তারা এই মিশনকে দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ, সামাজিক অবক্ষয় বা পশ্চিমা আধিপত্যের অংশ বলে বিবেচনা করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো : এই প্রতিক্রিয়াগুলো বাস্তবভিত্তিক, নাকি এগুলো ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা থেকে জন্ম নেওয়া প্রতিরোধমূলক চিৎকার?
বিষবৃক্ষ মহলের প্রধান যুক্তি হচ্ছে : OHCHR কেবলমাত্র যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতেই মিশন স্থাপন করে। অথচ বাস্তবতা হলো, বর্তমান বিশ্বের ১৮টি OHCHR মিশনের মধ্যে মাত্র চারটি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রয়েছে যেমন: সিরিয়া, ইয়েমেন, সুদান ও ফিলিস্তিন। বাকি ১৪টি দেশ যেমন: মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, কলম্বিয়া, নাইজার, তিউনিশিয়া ইত্যাদি দেশে কোনো যুদ্ধ নেই, বরং সেখানে দমননীতি, বিচারহীনতা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণের মতো সমস্যা নিয়েই মিশন কাজ করছে। সুতরাং বাংলাদেশে যুদ্ধ নেই বলে এখানে মিশনের দরকার নেই এই যুক্তি একটি সরলীকরণ, যা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
আরেকটি জোরালো ভীতি ছড়ানো হচ্ছে যে, এই মিশন বাংলাদেশে LGBTQ+ অধিকারের প্রসার ঘটাবে। বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। তিউনিশিয়াতে ২০১১ সালে OHCHR মিশন স্থাপিত হওয়ার ১৫ বছর পরেও সেখানে সমকামিতা এখনো দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। বুরকিনা ফাসোতেও ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপ্রধান সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, সেখানে OHCHR মিশন থাকা সত্ত্বেও। এমনকি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেও পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে যে, এই মিশন দেশের প্রচলিত আইন ও সামাজিক কাঠামোর বাইরে কোনো সামাজিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে না। তাহলে ভয়টা আসলে কীসের ?
আরও একটি হাস্যকর অভিযোগ হলো, এই মিশনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বাধীন করে ফেলা হবে। এমন ধারণা কেবল রাজনৈতিক চাতুরী নয়, বরং একটি দুর্বল জাতীয়তাবাদী গুজব যা বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য ছড়ানো হচ্ছে। তিনটি পার্বত্য জেলা নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের ভাবনাই কতটা অবাস্তব, তা আর বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়ে না।
বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে এমনও যে, OHCHR ফিলিস্তিন নিয়ে নাকি কোনো প্রতিবাদ করে না, তাই বাংলাদেশের জন্য তাদের দরদ প্রশ্নবিদ্ধ। বাস্তবে, OHCHR নিয়মিত ফিলিস্তিন নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে এবং ফ্রাঞ্চেসকা আলবানেসের মতো প্রতিনিধি সরাসরি ইসরায়েলের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের নিন্দা করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এক শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত। তাই এটিও একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার।
তাহলে আসল অস্বস্তির জায়গাটা কোথায় ? কেন বিষবৃক্ষ মহলে এতটা প্যানিক করছে? কারণ, এই মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ক্ষমতায়ন ঘটবে। তারা জানে, এতদিন তাদের সফট পাওয়ার বা low-intensity cultural jihad জাতীয় কার্যকলাপ যেমন: মাজার ভাঙা, নারী খেলাধুলায় বাধা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ঠেকানো, সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা বা ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস এগুলো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের আওতায় চলে আসবে। রিপোর্ট হবে, তদন্ত হবে, নাম প্রকাশিত হবে। এতদিন যা ছিল দেশের ভেতরের ব্যাপার, এখন তা হয়ে যাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন।
এই মিশনের একটি বড় উদ্দেশ্য হলো ভবিষ্যতের সম্ভাব্য রাজনৈতিক পালাবদলের পর যাতে গণহত্যা, প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বা শুদ্ধি অভিযান না ঘটে, সেই ব্যবস্থা আগে থেকেই গড়ে তোলা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বহুবার বলেছেন: “ক্ষমতা হারালে রক্তের বন্যা বইবে।” তার এই বক্তব্যের মধ্যেই রয়েছে সেই আতঙ্কের ইঙ্গিত যে, তারা জানেন কতটা নির্যাতন তারা চালিয়েছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে বিদেশি দূতাবাসগুলোও একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছে : সরকার বদল হলে কি বাংলাদেশে গণহত্যা ঘটবে ? আজ তা না ঘটলেও আগামীতে যে ঘটবে না, সে নিশ্চয়তা কে দেবে ?
তাই পশ্চিমা বিশ্ব এই মিশন বসিয়ে চাচ্ছে যেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। যে কেউ ক্ষমতায় থাকুক, যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর ভয়কে উপেক্ষা করে হিটলারি প্রতিশোধ চালাতে না পারে। এটা কেবল মানবিক কৌশল নয়, বরং রাজনৈতিক কৌশলও যাকে বলে ড্যামেজ কন্ট্রোল ফ্রম আফটারশক। যারা দমননীতি চালাতে সুযোগ খুজতেসে বা বিষবৃক্ষ সামাজিক প্রকল্প বাস্তবায়নে লিপ্ত ছিল, তাদের জন্য এটি একটি শক্ত বার্তা: সব কিছু বদলে গেলেও, তুমি নজরদারির বাইরে নয়। এই OHCHR মিশন আসলে কারো জন্য আশ্রয়, নিরাপত্তা, সুবিচার আবার কারো জন্য মুখোশ খুলে যাওয়ার আতঙ্ক। এটিই বাস্তবতা।
বাংলাদেশের জনগণের উচিত এই মিশনের রাজনৈতিক ও মানবিক মাত্রা দুই-ই গভীরভাবে বোঝা। অযৌক্তিক গুজব বা ভ্রান্ত আতঙ্কের জালে না পড়ে তথ্য ও বিশ্লেষণের আলোয় নিজের অবস্থান নির্ধারণ করা। এই মিশনের সফলতা নির্ভর করবে দেশের ভেতরকার জবাবদিহিতা, নাগরিক সচেতনতা এবং আন্তর্জাতিক চাপের ভারসাম্যের উপর।
২১ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: গেট ওয়েল সুন ।
২| ২১ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ১০:১২
জুল ভার্ন বলেছেন: জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কাজটা কি, যার জন্য অফিস থাকতে হবে!
২১ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: কাজতো আছেই জনাব।
৩| ২১ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:১৪
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: যারা মানুষ খুন করবেনা, যারা গুম করবেনা, যারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবেনা, যারা প্রতিপক্ষকে দমন করতে রাষ্ট্রিয় যন্ত্র ব্যবহার করবেনা তাদের কোন ভয় নেই; তারপরও কেন যেন বিষয়টা আমার পছন্দ হচ্ছেনা।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ৯:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: ভাই আমার শরীরটা ভালো নেই।
জ্বর নেই। কিন্তু প্রচন্ড শরীর ব্যথা। প্রেসার ওঠা নামা করছে। ডায়বেটিকস পাইপ লাইনে। দোয়া প্রার্ত্থী।